কলেজ শিক্ষককে দিগম্বর করা নিয়ে তোলপাড়
সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) মুজিবুর রহমান
ফকিরের সমর্থকরা মুমিনুনেছা কলেজের অধ্যাপক এবং গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী
লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ (৫৯)-কে দিগম্বর করেছে। এ
ঘটনায় ময়মনসিংহ ও গৌরীপুরে তোলপাড় চলছে। হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে
গ্রেপ্তার করার দাবিতে ময়মনসিংহ মুমিনুনেছা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক ও
শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল শেষে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক ও
পুলিশ সুপারকে স্মারকলিপি দিয়েছে। এদিকে গৌরীপুরে এ ঘটনায় বিচারের দাবিতে
সর্বস্তরের মানুষ বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সমাবেশ করে গৌরীপুরে আজ
মঙ্গলবার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে। এ ঘটনার শিকার শিক্ষক ফরিদ বাদী
হয়ে গৌরীপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। গৌরীপুর সার্কেল এএসপি সালাহ
উদ্দিন তালুকদার জানান মামলাটি তদন্ত চলছে। এদিকে গতকাল দুপুর ১২টা থেকে
২টা পর্যন্ত গৌরীপুর সরকারি কলেজের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।
বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে পুলিশ বাধা দেয়। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি
হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন ও গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী
লীগের নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আহাম্মদ খান সেলভী ও পৌর আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও
শিক্ষক-শিক্ষার্থী সহ সর্বস্তরের মানুষ। নেতৃবৃন্দ জানান, জড়িতদের
গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
এই ঘৃণ্য ঘটনার শিকার শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ময়মনসিংহ মুমিনুন্নিসা সরকারি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। সাবেক প্রতিমন্ত্রীর নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করার অভিযোগ এনে ওই শিক্ষককে এভাবে জনসম্মুখে হেনস্থা করা হয় বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। তবে এ ঘটনার সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন না। স্থানীয় সূত্র জানায়, রোববার বিকালে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফিরছিলেন ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। এ সময় উপজেলার কলতাপাড়া এলাকায় তাল্লু স্পিনিং মিলের সামনে প্রতিমন্ত্রীর ২০-২৫ জন লোক তার গতিরোধ করে। এ সময় তার বিরুদ্ধে সাবেক প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে সমালোচনার অভিযোগ এনে তাকে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে শার্ট ও প্যান্ট খুলে নেয়া হয়। পরে তাকে মুজিবুর রহমান ফকিরের রাজনৈতিক কার্যালয়ে নিয়ে আটকে রাখা হয়। ফরিদ উদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রীর ক্যাডাররা আমাকে সবার সামনে প্রকাশ্যে দিবালোকে শার্ট ও প্যান্ট খুলে নিয়ে দিগম্বর করে। পাশাপাশি আমার সঙ্গে থাকা সাড়ে ১১ হাজার টাকা ও মোবাইল সেট ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। পরে মোবাইল সেট ফেরত দিয়ে দেয়। তিনি বলেন, এমপি’র ক্যাডাররা আমাকে শাসিয়ে বলেছেন গৌরীপুরে থাকলে এমপি’র বিরুদ্ধে কোন কথা বলা যাবে না। কেউ এমপি’র সমালোচনা করলে এরকম পরিণতি হবে। শিক্ষক আরও বলেন, আমি নিজে ১৯৮৫ সাল থেকে ’৯১ পর্যন্ত গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। নিজের দল এখন ক্ষমতায়। অথচ আমাকে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে অপমান-অপদস্থ করা হয়েছে। অথচ আমি যখন গৌরীপুরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছি তখন ক্যাপ্টেন মুজিব থানা আওয়ামী লীগের সদস্যও ছিলেন না। তিনি বলেন, স্থানীয় এমপি মুজিবুর রহমান ফকির উপজেলার বিভিন্ন মাদরাসা থেকে নিয়োগের জন্য টাকা নিচ্ছেন। উপজেলার কিল্লা বুকাইনগর সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার দু’জন প্রভাষকের বেতন আটকে রেখে তিনি ৩ লাখ করে টাকা দাবি করেন। আমি এ ঘটনার প্রতিবাদ করেছি। এ কারণেই ক্যাডার লেলিয়ে দিয়ে আমাকে এভাবে হেনস্থা করেছেন মুজিব ফকির।
No comments