কারও ক্ষতি কারও লাভ
বাংলাদেশে হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক
কর্মসূচি নতুন নয়। এ ধরনের কর্মসূচি ঘোষণার সময় সংশ্লিষ্টরা কারা কারা এর
আওতামুক্ত থাকবে, তার একটি তালিকা প্রদান করে। এতে খাবার দোকান খোলা রাখা,
সাংবাদিকদের বহন করা যানবাহন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে দেওয়া এবং এ ধরনের আরও
কিছু বিষয় উল্লেখ থাকে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলই তৈরি
পোশাকশিল্পকে হরতালের আওতামুক্ত ঘোষণা প্রদান করে। হরতাল সমর্থকরা রাজপথে
পিকেটিং করার সময় সব ক্ষেত্রে যে এসব নির্দেশ অনুসরণ করে, সেটা বলা যাবে
না। বিশেষ করে আন্দোলন বেগবান থাকার সময়ে রাজপথে জঙ্গিপনার প্রকাশ একটু
বেশিই ঘটত। সাম্প্রতিক আন্দোলনের সময়েও আমরা এ ধরনের জঙ্গিপনা দেখছি। তবে
এবারের জঙ্গিপনার ধরন ভিন্ন। বিরোধীরা একের পর এক হরতাল ও অবরোধ ডেকে
চলেছে। কিন্তু তাদের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা নেই রাজপথে। পরিবর্তে রয়েছে
প্রকৃতই জঙ্গি মনোভাবাপন্ন কর্মী_ যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেয়। বাসে
যাত্রীদের পুড়িয়ে মারে। খাদ্যদ্রব্যবাহী যানবাহন ধ্বংস করে দেয়। মঙ্গলবার
সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত একটি খবরের শিরোনাম ছিল :'পাবনার খামারিরা
পথে বসার উপক্রম'। দেশের দুধ উৎপাদনের প্রধান এলাকা বৃহত্তর পাবনা।
লক্ষাধিক খামারি এ কাজে যুক্ত। হরতাল-অবরোধ এলে তারা বাজারজাত করার জন্য
উৎপাদিত দুধ ঢাকা এবং অন্যান্য শহরে পাঠাতে পারে না। এতে যে কেবল তাদের
ক্ষতি সেটা নয়। দুধ শিশুদের অপরিহার্য পানীয়। বড়দেরও এর প্রয়োজন পড়ে। তাহলে
কেন হরতালকারীরা দুগ্ধবাহী যানবাহন চলাচল বিঘি্নত করবে? দোকানে আমদানি করা
টিনজাত দুধ পাওয়া যায় এবং এর দামও চড়া। এ পণ্য দিনের পর দিন তাকে সাজিয়ে
রাখা যায়। কিন্তু মিল্ক ভিটা, আড়ং বা প্রাণের প্যাকেট দুধের ক্ষেত্রে সেটা
ঘটে না। এর উৎপাদকদের দিনে দিনেই তা বাজারজাত করতে হয়। অন্যথায় নষ্ট হয়ে
যায়। এর ফলে বিদেশি দুধের ব্যবসায়ীদের সুবিধা হয়। হরতাল-অবরোধে দোকানে
দেশীয় তরল দুধ না মিললেও আমদানি করা দুধ ঠিকই কিনতে পাওয়া যায়। এ ধরনের
রাজনীতি কারও জন্য ক্ষতি ডেকে আনে, কারও জন্য অশেষ লাভের উৎস হয়।
No comments