গঙ্গাঋদ্ধি থেকে অতীশ দীপঙ্কর by সিরাজুল ইসলাম আবেদ
বিক্রমপুরে প্রত্নতাত্তি্বক খননের পর প্রাপ্ত ১২শ' বছরের প্রাচীন বৌদ্ধবিহার |
উয়ারী-বটেশ্বরের
আবিষ্কার বদলে দেয় আমাদের নগর সভ্যতার ইতিহাস। নরসিংদীর এ প্রত্মপীঠ খননে
প্রাপ্ত প্রত্ননিদর্শন ও অবকাঠামো পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বিশ্লেষণ করে
গবেষকরা সিদ্ধান্তে এসেছেন, এটি প্রাচীন গঙ্গাঋদ্ধি সভ্যতার হারিয়ে যাওয়া
নগর বা বাণিজ্যকেন্দ্র। ধারণা করা হচ্ছে, এটিই গঙ্গাঋদ্ধির রাজধানী গাঙ্গে।
গ্রিক ভূগোলবিদ টলেমি যাকে বর্ণনা করেছেন বাণিজ্যকেন্দ্র সৌনগড়া হিসেবে।
প্রাচীন এ নগর গড়ে উঠেছিল আড়াই হাজার বছর আগে। যার নিরলস গবেষণা, অনুসন্ধান
ও খননে আমাদের সভ্যতার অনন্য এ অধ্যায়ের উন্মোচন_ তিনি জাহাঙ্গীরনগর
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান।
২০১০ সাল থেকে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন উদ্যোগ নেয় প্রাচীন বঙ্গ ও
সমতটের রাজধানী বিক্রমপুরের প্রত্নতাতি্বক খনন, গবেষণা ও অনুসন্ধানের।
প্রাচীন ও প্রাক-মধ্যযুগের উন্নত নগর সভ্যতার ইঙ্গিতবাহী এই প্রত্নপীঠও
সাধারণের কাছে উন্মোচিত হচ্ছে সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের হাত ধরেই।
স্থানীয় লেখক ও প্রত্ন অনুসন্ধানী মুহম্মদ হাবিবুল্লাহ পাঠান প্রথম উয়ারী-বটেশ্বরকে প্রাচীন গঙ্গাঋদ্ধি সভ্যতার বাণিজ্যিক কেন্দ্র বলে তার এক লেখায় তুলে ধরেন। এরপর সুফি মোস্তাফিজুর রহমান এবং তার সঙ্গে একদল প্রত্নতত্ত্বের শিক্ষার্থীর নিরলস পরিশ্রমে আজ এ উপমহাদেশের দ্বিতীয় প্রাচীন নগর হিসেবে বিবেচিত উয়ারী-বটেশ্বর।
কৃষিজমি, বাগবাগিচা ও ঘরবাড়ির নিচে চাপা পড়ে আছে আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন একটি নগর। উয়ারী-বটেশ্বর অঞ্চলে ৫০টি প্রত্নস্থান থেকে আবিষ্কৃত হচ্ছে প্রাগৈতিহাসিক যুগের পাথর ও প্রস্তুরীভূত জীবাশ্ম, কাঠের হাতিয়ার, তাম্র-প্রস্তর সংস্কৃতির গর্ত-বসতি এবং বাংলাদেশের ইতিহাস নতুন করে লেখার তাৎপর্যপূর্ণ সব প্রত্নবস্তু। উয়ারী-বটেশ্বর ছিল বাংলাদেশের প্রাচীনতম মহাজনপদ। দুর্গ-নগরটি ছিল সেই মগা জনপদের রাজধানী। এটি গড়ে উঠেছিল সুপরিকল্পিতভাবে। এরই মধ্যে এখান থেকে আবিষ্কৃত হয়েছে মাটির দুর্গ-প্রাচীর, পরিখা, পাকা রাস্তা, পার্শ্ব রাস্তাসহ ইটনির্মিত অনন্য স্থাপত্য কীর্তি। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় অবস্থিত উয়ারী-বটেশ্বর ছিল একটি নদীবন্দর ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকেন্দ্র। ভারতীয় উপমহাদেশের আদি-ঐতিহাসিককালের অনেক নগর এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল উয়ারী-বটেশ্বরের। ২৩০০ বছরের প্রাচীন বিশ্ববিখ্যাত সিল্ক রুটের সঙ্গেও যে উয়ারী-বটেশ্বর সংযুক্ত ছিল, নানা নিদর্শনগত প্রমাণ থেকে সম্প্রতি তা উজ্জ্বল হয়ে উঠতে শুরু করেছে। উয়ারী-বটেশ্বরে বিকশিত হয়েছিল স্বল্প মূল্যবান পাথরের নয়নাভিরাম পুঁতি তৈরির কারখানা। এখানে আবিষ্কৃত উপমহাদেশের প্রাচীনতম ছাপাঙ্কিত রৌপ্য মুদ্রা ও মুদ্রাভাণ্ডার, অনন্য স্থাপত্যকীর্তি, হরেক রকমের পুঁতি, সুদর্শন লকেট ও মন্ত্রপূত কবচ, বাটখারা, পোড়ামাটি ও ধাতব শিল্পবস্তু, অলঙ্কার, মৃৎপাত্র, চিত্রশিল্প ইত্যাদি শিল্পীর দক্ষতা, উন্নত শিল্পবোধ ও দর্শনের পরিচয় বহন করে।
শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্করের জন্মভূমি বজ্রযোগিনী ও রামপালের তিনটি গ্রামের ৯টি স্থানে খননের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিক্রমপুরের খননকাজ। টানা তিন বছর খননে প্রাচীন এ জনপদে আবিষ্কৃত হয়েছে একটি বৌদ্ধবিহার। এ পর্যন্ত মাটির তলে চাপা পড়া বৌদ্ধবিহারটির পাঁচটি ভিক্ষুকক্ষ উন্মোচিত হয়েছে। চাপা পড়া বিহারটির স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে বিহারটির একটি দেয়াল উত্তর দিকে, আরেকটি দেয়াল পশ্চিম দিকে ধাবমান। বিক্রমপুর অঞ্চলের আনুমানিক অষ্টম-নবম শতাব্দীর, অর্থাৎ ১২০০ বছর আগের বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি স্মরণীয় ঘটনা। এই অমূল্য আবিষ্কার বিক্রমপুরকে শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের ইতিহাসে নতুন করে জায়গা দেবে। সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'এখন জরুরি প্রয়োজন এই প্রত্নপীঠগুলোর সঠিক সংস্কার ও সংরক্ষণের।' এর জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। তার চেয়েও বড় প্রয়োজন সাধারণ মানুষকে এ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ও সচেতন করা। বর্তমান বছরে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তিনি কাজ করছেন। তিনি বলেন, 'এ লক্ষ্যে আমরা শুধু গবেষণার মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখছি না। প্রত্নস্থানগুলোকে একই সঙ্গে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। উয়ারী-বটেশ্বরে একটি সাইট মিউজিয়াম ও বৌদ্ধ পদ্ম মন্দিরের ওপর অনসাইট মিউজিয়ামের কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক আবদুল কাদির মোল্লা আমাদের এ কাজে এগিয়ে এসেছেন। তিনি প্রায় ৮০ লাখ টাকা দিয়ে মিউজিয়ামের জন্য সাড়ে চার বিঘা জমি কিনে দিয়েছেন। বিক্রমপুরেও একটি সাইট মিউজিয়ামের কাজ আমরা এ বছর করব। প্রতিটি পর্যায়ের সামাজিক যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমেই এগিয়ে চলেছে আমাদের কাজ। সাধারণ মানুষের ভালোবাসা পেলেই সম্ভব এই প্রত্নসম্পদ রক্ষা করা।' সাধারণকে সচেতন করতে তারা বিতরণ করছেন, তথ্য ও ছবি সম্বলিত বুকলেট, পোস্টার, বই প্রভৃতি। প্রত্নপীঠে নির্মিত হচ্ছে টয়লেট ও পানির সুবিধাসহ ক্ষণিক বিশ্রামের জায়গা।
স্থানীয় লেখক ও প্রত্ন অনুসন্ধানী মুহম্মদ হাবিবুল্লাহ পাঠান প্রথম উয়ারী-বটেশ্বরকে প্রাচীন গঙ্গাঋদ্ধি সভ্যতার বাণিজ্যিক কেন্দ্র বলে তার এক লেখায় তুলে ধরেন। এরপর সুফি মোস্তাফিজুর রহমান এবং তার সঙ্গে একদল প্রত্নতত্ত্বের শিক্ষার্থীর নিরলস পরিশ্রমে আজ এ উপমহাদেশের দ্বিতীয় প্রাচীন নগর হিসেবে বিবেচিত উয়ারী-বটেশ্বর।
কৃষিজমি, বাগবাগিচা ও ঘরবাড়ির নিচে চাপা পড়ে আছে আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন একটি নগর। উয়ারী-বটেশ্বর অঞ্চলে ৫০টি প্রত্নস্থান থেকে আবিষ্কৃত হচ্ছে প্রাগৈতিহাসিক যুগের পাথর ও প্রস্তুরীভূত জীবাশ্ম, কাঠের হাতিয়ার, তাম্র-প্রস্তর সংস্কৃতির গর্ত-বসতি এবং বাংলাদেশের ইতিহাস নতুন করে লেখার তাৎপর্যপূর্ণ সব প্রত্নবস্তু। উয়ারী-বটেশ্বর ছিল বাংলাদেশের প্রাচীনতম মহাজনপদ। দুর্গ-নগরটি ছিল সেই মগা জনপদের রাজধানী। এটি গড়ে উঠেছিল সুপরিকল্পিতভাবে। এরই মধ্যে এখান থেকে আবিষ্কৃত হয়েছে মাটির দুর্গ-প্রাচীর, পরিখা, পাকা রাস্তা, পার্শ্ব রাস্তাসহ ইটনির্মিত অনন্য স্থাপত্য কীর্তি। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় অবস্থিত উয়ারী-বটেশ্বর ছিল একটি নদীবন্দর ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকেন্দ্র। ভারতীয় উপমহাদেশের আদি-ঐতিহাসিককালের অনেক নগর এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল উয়ারী-বটেশ্বরের। ২৩০০ বছরের প্রাচীন বিশ্ববিখ্যাত সিল্ক রুটের সঙ্গেও যে উয়ারী-বটেশ্বর সংযুক্ত ছিল, নানা নিদর্শনগত প্রমাণ থেকে সম্প্রতি তা উজ্জ্বল হয়ে উঠতে শুরু করেছে। উয়ারী-বটেশ্বরে বিকশিত হয়েছিল স্বল্প মূল্যবান পাথরের নয়নাভিরাম পুঁতি তৈরির কারখানা। এখানে আবিষ্কৃত উপমহাদেশের প্রাচীনতম ছাপাঙ্কিত রৌপ্য মুদ্রা ও মুদ্রাভাণ্ডার, অনন্য স্থাপত্যকীর্তি, হরেক রকমের পুঁতি, সুদর্শন লকেট ও মন্ত্রপূত কবচ, বাটখারা, পোড়ামাটি ও ধাতব শিল্পবস্তু, অলঙ্কার, মৃৎপাত্র, চিত্রশিল্প ইত্যাদি শিল্পীর দক্ষতা, উন্নত শিল্পবোধ ও দর্শনের পরিচয় বহন করে।
শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্করের জন্মভূমি বজ্রযোগিনী ও রামপালের তিনটি গ্রামের ৯টি স্থানে খননের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিক্রমপুরের খননকাজ। টানা তিন বছর খননে প্রাচীন এ জনপদে আবিষ্কৃত হয়েছে একটি বৌদ্ধবিহার। এ পর্যন্ত মাটির তলে চাপা পড়া বৌদ্ধবিহারটির পাঁচটি ভিক্ষুকক্ষ উন্মোচিত হয়েছে। চাপা পড়া বিহারটির স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে বিহারটির একটি দেয়াল উত্তর দিকে, আরেকটি দেয়াল পশ্চিম দিকে ধাবমান। বিক্রমপুর অঞ্চলের আনুমানিক অষ্টম-নবম শতাব্দীর, অর্থাৎ ১২০০ বছর আগের বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি স্মরণীয় ঘটনা। এই অমূল্য আবিষ্কার বিক্রমপুরকে শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের ইতিহাসে নতুন করে জায়গা দেবে। সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'এখন জরুরি প্রয়োজন এই প্রত্নপীঠগুলোর সঠিক সংস্কার ও সংরক্ষণের।' এর জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। তার চেয়েও বড় প্রয়োজন সাধারণ মানুষকে এ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ও সচেতন করা। বর্তমান বছরে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তিনি কাজ করছেন। তিনি বলেন, 'এ লক্ষ্যে আমরা শুধু গবেষণার মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখছি না। প্রত্নস্থানগুলোকে একই সঙ্গে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। উয়ারী-বটেশ্বরে একটি সাইট মিউজিয়াম ও বৌদ্ধ পদ্ম মন্দিরের ওপর অনসাইট মিউজিয়ামের কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক আবদুল কাদির মোল্লা আমাদের এ কাজে এগিয়ে এসেছেন। তিনি প্রায় ৮০ লাখ টাকা দিয়ে মিউজিয়ামের জন্য সাড়ে চার বিঘা জমি কিনে দিয়েছেন। বিক্রমপুরেও একটি সাইট মিউজিয়ামের কাজ আমরা এ বছর করব। প্রতিটি পর্যায়ের সামাজিক যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমেই এগিয়ে চলেছে আমাদের কাজ। সাধারণ মানুষের ভালোবাসা পেলেই সম্ভব এই প্রত্নসম্পদ রক্ষা করা।' সাধারণকে সচেতন করতে তারা বিতরণ করছেন, তথ্য ও ছবি সম্বলিত বুকলেট, পোস্টার, বই প্রভৃতি। প্রত্নপীঠে নির্মিত হচ্ছে টয়লেট ও পানির সুবিধাসহ ক্ষণিক বিশ্রামের জায়গা।
No comments