এবার '৯৬ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটবে না by ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ
সাক্ষাৎকার (সাক্ষাৎকার গ্রহণ :শেখ রোকন)
সমকাল : সদ্য সমাপ্ত হলো দশম সাধারণ নির্বাচন। আপনার প্রতিষ্ঠান এবং জাতীয় পর্যবেক্ষকদের জোট ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ এবার নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে। আপনাদের মূল্যায়ন কী?
নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ : এ ব্যাপারে আমরা ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন তৈরি করেছি এবং প্রাথমিক বিবৃতি দিয়েছি। এ ব্যাপারে সংক্ষেপে বলতে গেলে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ না থাকায় এবং সার্বিক নিরাপত্তাজনিত শঙ্কার কারণে ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা কম ছিল। ফলে ভোট প্রদানের হার কম ছিল এবং বেশ কিছু সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। এবার যেহেতু অর্ধেকের বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হয়েছে এবং সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে যেহেতু শঙ্কা ছিল ইডবি্লউজি ব্যাপকভিত্তিক পর্যবেক্ষণের বদলে সীমিত পর্যবেক্ষণ করে। এই প্রক্রিয়ায় আমাদের কার্যক্রম ভোট প্রদানের হার এবং ভোটকেন্দ্রের বাইরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি দেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। সার্বিকভাবে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ না করায় আমরা এবার অনিয়ম বা জালিয়াতি ঘটনা সম্পর্কে কিছু বলতে পারছি না।
সমকাল : আপনারা কতটি প্রতিষ্ঠান এবার নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন। এই পরিসর কতটা বিস্তৃত ছিল?
কলিমউল্লাহ : ইডবি্লউজি বা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের ২৬টি সদস্য এনজিও ছাড়াও সদস্য নয় এমন সাতটি এনজিও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অংশ নেয়। সংখ্যালঘু বা আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা থেকে ওই সাতটি এনজিওকে অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম আমরা। আপনি জানেন, এবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৪৭টি আসনে। আমরা পর্যবেক্ষণের জন্য ৪৩টি জেলার ৭৫টি সংসদীয় এলাকা বাছাই করি। এগুলোর ১,৯৫০টি ভোটকেন্দ্রে ৯,৭৫০ জন পর্যবেক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা গ্রহণ করি। তবে নির্বাচন কমিশন থেকে ৮,৬৯৯ জনের জন্য অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড পাই। তবে তার মধ্যেও ২২৫ জনকে নিরাপত্তাজনিত কারণে এবং নির্বাচনী কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার কারণে আমরা পর্যবেক্ষণ কাজে ব্যবহার করতে পারিনি।
সমকাল :আমরা দেখছি, এবারের নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পর্যবেক্ষক আসেনি বললেই চলে। তারপরও আপনারা পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?
কলিমউল্লাহ : দেখুন, এটা আমাদের দেশ। এখানকার নির্বাচন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া_ এসব ক্ষেত্রে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর নির্ভর করব কেন? নিজেদের গরজেই আমরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছি। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, জানিপপ থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণের কাজ চলছে। এটা গত বছর মে মাসে শুরু হয়েছে। চলবে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত। ফলে দীর্ঘমেয়াদি এই পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ায় মূল যেদিন, সেই ভোট গ্রহণের দিন পর্যবেক্ষণ না করার কোনো মানে হয় না।
সমকাল :আমরা দেখেছি, এবার 'আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক' বলতে দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দেশ থেকে চারজন মাত্র এসেছেন। এর ফলে এই নির্বাচনের আইনগত বৈধতা নিয়ে কি প্রশ্ন উঠতে পারে?
কলিমউল্লাহ : নির্বাচনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ প্রপঞ্চ, সন্দেহ নেই। কিন্তু আপনাকে এর উত্তর পেতে হলে বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকাতে হবে। দেখা যায় প্রথম পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। ফাদার টিমের নেতৃত্বে সিসিএইচআরবি এই পর্যবেক্ষণ করে। ১৯৯১ সালে পঞ্চম সাধারণ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক আসে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এনডিআই বা ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট আসে এবং স্থানীয় বা জাতীয় পর্যায়ে পর্যবেক্ষক গ্রুপ তৈরির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখে। তাদের এখানে অবস্থানকালীন সময়ে আমাদের অনেকের সঙ্গে এসব বিষয়ে কথাবার্তা হয়। ১৯৯৫ সালে আমরা গঠন করি জানিপপ। পরবর্তীকালে ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকমণ্ডলীর মনোযোগ আরও বাড়ে। কিন্তু ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলগুলো অংশ না নেওয়ায় আন্তর্জাতিক গ্রুপগুলো উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। তখন বাংলাদেশে তিনটি নির্বাচন পর্যবেক্ষক গ্রুপ ছিল_ সিসিএইচআরবি, ফেমা ও জানিপপ। জানিপপ তখন সদ্য প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান। ফলে নিরাপত্তা ও ক্যাপাসিটি বিবেচনায় আমরা ঘোষণা দেই যে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করব না। বাকি দুটি প্রতিষ্ঠান পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয়; ১৯ ফেব্রুয়ারি ফেমার পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেওয়া হয় যে এর গ্রহণযোগ্যতা নেই, বাতিল করতে হবে। সিসিএইচআরবিও একই ধরনের মত দেয়।
সমকাল :কিন্তু তারপরও তো ওই নির্বাচনের ভিত্তিতে সরকার গঠিত হয়েছিল।
কলিমউল্লাহ :হ্যাঁ, হয়েছিল। কিন্তু প্রতিক্রিয়া তখন অন্য জায়গায় দেখা যায়। মার্চের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন রিলেশন্স কমিটির দুই প্রভাবশালী সদস্য সিনেটর রিচার্ড লুগার ও সিনেটর ক্লেবন প্যাল সেক্রেটারি অব স্টেটের কাছে একটি চিঠি পাঠায়। সেখানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট সমাধানে তিনটি শর্ত যুক্ত করে। প্রথমত, বিএনপি ক্ষমতা ছেড়ে দেবে, তবে তাদের সেইফ এক্সিট দিতে হবে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ছেড়ে দিতে হবে এবং পরবর্তী সব নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সার্টিফায়েডে হতে হবে। আপনার মনে থাকার কথা, পরবর্তীকালে এগুলোই ঘটেছিল। যে কারণে পদত্যাগ করার পরও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি কোনো ঝামেলার মুখে পড়েনি। বরং সাড়ম্বরে 'জাতীয়তাবাদী মঞ্চ' তৈরি করেছিল। আর ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পর্যবেক্ষকদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল। এরপর ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক গ্রুপগুলো ব্যাপক মাত্রায় অংশ নেয়। জাতীয় পর্যবেক্ষক গ্রুপেরও সংখ্যা বাড়ে। ২০০৬ সালে গঠিত হয় ইডবি্লউজি। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আইআরআই বা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে তাদের অফিস স্থাপন করে। ইইউ, কমনওয়েলথ, এনডিআই তো ছিলই। ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের পর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সাধারণ নির্বাচন কেমন হয়, সে ব্যাপারেও গোটা বিশ্বেরই আগ্রহ ছিল।
সমকাল : এবার কেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পর্যবেক্ষকরা আগ্রহ প্রকাশ করেননি?
কলিমউল্লাহ :একটা বড় বিষয় হচ্ছে নিরাপত্তাজনিত অনিশ্চয়তা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আগেই একটি এসেসমেন্ট টিম পাঠিয়েছিল। পরিস্থিতি দেখে তাদের প্রতীতি জন্মেছে যে, এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। একইভাবে কমনওয়েলথ পর্যবেক্ষক গ্রুপ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক গ্রুপও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের এনডিআই, আইআরআইও নিরাপত্তার ভরসা পায়নি।
সমকাল :নির্বাচনের আগে সহিংস পরিস্থিতি একটি বড় বিষয়, বোঝা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক না আসার আর কী কী কারণ থাকতে পারে?
কলিমউল্লাহ : আর একটি কারণ হচ্ছে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সবার অংশগ্রহণমূলক না হওয়া। অধিকাংশ আসনে যখন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী নির্বাচিত হওয়াও এই নির্বাচনের গুরুত্ব কমিয়ে দিয়েছে।
সমকাল : আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক না আসায় নির্বাচনের বৈধতা কি প্রশ্নের মুখে পড়বে?
কলিমউল্লাহ :আমি তা মনে করি না। কারণ নির্বাচন পর্যবেক্ষণই হচ্ছে মূল কথা। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে কি-না সেটাই মূল কথা। পর্যবেক্ষকরা আন্তর্জাতিক বা জাতীয় সেটা বিষয় নয়। আরেকটি বিষয় আছে, আমরা যখন দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করি, তখন আমরা জাতীয় পর্যবেক্ষক। কিন্তু যখন বিদেশে যাই তখন তো আমরাও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক। যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেসব পর্যবেক্ষক এখানে আসেন, তারাও তো তাদের দেশের জাতীয় পর্যবেক্ষক। আর আমাদের জাতীয় পর্যবেক্ষকদেরও গত দুই দশকে দক্ষতা, পেশাদারিত্ব, অভিজ্ঞতা বেড়েছে। সংগঠন বিস্তৃত হয়েছে। জানিপপ থেকে আমরাও তো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মিসর, মোজাম্বিক, জাম্বিয়া, নাইজেরিয়া, তিমুর, লেসোথো, গণচীনের হংকং, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, নেপাল প্রভৃতি দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছি। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতায় আমরা এখন সমৃদ্ধ। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক যেসব পর্যবেক্ষক গ্রুপের নাম সবাই জানেন, তাদের সবার সঙ্গে আমাদের যৌথ কার্যক্রম ও কর্মসূচি রয়েছে। আমাদের বলতে পারেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক গ্রুপেরই 'সিস্টার কনসার্ন'।
সমকাল : তার মানে, পর্যবেক্ষক জাতীয় না আন্তর্জাতিক নির্বাচনী বৈধতার ক্ষেত্রে সেটা ব্যাপার নয়?
কলিমউল্লাহ : না, পর্যবেক্ষণই ম্যাটার করে। পর্যবেক্ষক কোথাকার সেটা ম্যাটার করে না।
সমকাল :কেউ কেউ মনে করছেন, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক না আসার পেছনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রেসক্রিপশন না মানার বিষয়টিও রয়েছে। আপনি কী মনে করেন?
কলিমউল্লাহ :হ্যাঁ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি এর পেছনে কাজ করেছে। তবে এবারের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আগ্রহ কমে যাওয়ার দায় কেবল সরকারের নয়। বিরোধীদলীয় জোটেরও দায় রয়েছে। কমবেশি হতে পারে, কিন্তু উভয় দলকেই দায়িত্ব নিতে হবে। আমি তো ঠাট্টা করে বর্তমান পরিস্থিতিকে বলি 'দুই দল প্রযোজিত চলচ্চিত্র'।
সমকাল :বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষত ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে মতভেদ স্পষ্ট হলো, সেটা কি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বৈধতার প্রশ্নে গুরুতর হয়ে দেখা দেবে?
কলিমউল্লাহ :আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে ভারত বা চীনের অবস্থান বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বাংলাদেশ হচ্ছে তাদের ব্যাকইয়ার্ড। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে 'মনরো ডকট্রিন' রয়েছে। এর মূল কথা হচ্ছে, আমেরিকা ইজ ফর আমেরিকানস। একই ডকট্রিনে এশিয়া তো এশিয়ানদের হওয়ার কথা। ভারত ও চীন কোনোভাবে চাইবে না যে এখানে তাদের প্রভাব ছাপিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বাড়ূক। এখন ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট ফর ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্টাল।
সমকাল :১৯৯৬ সালের একতরফা নির্বাচনের পর যে আমেরিকান প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সংকটের সমাধান হয়েছিল, সেটা তো আপনিই বললেন।
কলিমউল্লাহ : সেদিন আর নেই। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরপরই নব্বই দশকে যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রভাববলয় ছিল, সেটা আর আগের মতো নেই। অন্যদিকে ভারত ও চীন এখন আঞ্চলিক শক্তি তো বটেই, তারা পরাশক্তি হওয়ার পথে রয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র চাইলেই এখন আর যে কোনো সমাধান সম্ভব নয়। দূরবর্তী পরাশক্তির উপদেশ বা ভর্ৎসনার চেয়ে বাংলাদেশের জন্য এখন আঞ্চলিক শক্তির অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ।
সমকাল :তার মানে, ১৯৯৬ সালের একতরফা নির্বাচনের পর যে পুনর্নির্বাচন করতে হয়েছিল সেটা হচ্ছে না?
কলিমউল্লাহ :আমি মনে করি না, এবার ১৯৯৬ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে। যদি আরও স্পষ্ট করে বলি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলনের কলা আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে খেয়ে ফেলেছে। এখন আছে খোসা। সেই খোসা নিয়ে খেলতে গিয়ে এবার বিএনপির পা হড়কে গিয়েছে।
সমকাল :দেখা যাক, ভবিষ্যতে বিষয়গুলো সম্ভবত আরও স্পষ্ট হবে। আমাদের সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
কলিমউল্লাহ :ধন্যবাদ।
নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ : এ ব্যাপারে আমরা ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন তৈরি করেছি এবং প্রাথমিক বিবৃতি দিয়েছি। এ ব্যাপারে সংক্ষেপে বলতে গেলে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ না থাকায় এবং সার্বিক নিরাপত্তাজনিত শঙ্কার কারণে ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা কম ছিল। ফলে ভোট প্রদানের হার কম ছিল এবং বেশ কিছু সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। এবার যেহেতু অর্ধেকের বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হয়েছে এবং সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে যেহেতু শঙ্কা ছিল ইডবি্লউজি ব্যাপকভিত্তিক পর্যবেক্ষণের বদলে সীমিত পর্যবেক্ষণ করে। এই প্রক্রিয়ায় আমাদের কার্যক্রম ভোট প্রদানের হার এবং ভোটকেন্দ্রের বাইরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি দেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। সার্বিকভাবে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ না করায় আমরা এবার অনিয়ম বা জালিয়াতি ঘটনা সম্পর্কে কিছু বলতে পারছি না।
সমকাল : আপনারা কতটি প্রতিষ্ঠান এবার নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন। এই পরিসর কতটা বিস্তৃত ছিল?
কলিমউল্লাহ : ইডবি্লউজি বা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের ২৬টি সদস্য এনজিও ছাড়াও সদস্য নয় এমন সাতটি এনজিও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অংশ নেয়। সংখ্যালঘু বা আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা থেকে ওই সাতটি এনজিওকে অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম আমরা। আপনি জানেন, এবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৪৭টি আসনে। আমরা পর্যবেক্ষণের জন্য ৪৩টি জেলার ৭৫টি সংসদীয় এলাকা বাছাই করি। এগুলোর ১,৯৫০টি ভোটকেন্দ্রে ৯,৭৫০ জন পর্যবেক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা গ্রহণ করি। তবে নির্বাচন কমিশন থেকে ৮,৬৯৯ জনের জন্য অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড পাই। তবে তার মধ্যেও ২২৫ জনকে নিরাপত্তাজনিত কারণে এবং নির্বাচনী কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার কারণে আমরা পর্যবেক্ষণ কাজে ব্যবহার করতে পারিনি।
সমকাল :আমরা দেখছি, এবারের নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পর্যবেক্ষক আসেনি বললেই চলে। তারপরও আপনারা পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?
কলিমউল্লাহ : দেখুন, এটা আমাদের দেশ। এখানকার নির্বাচন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া_ এসব ক্ষেত্রে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর নির্ভর করব কেন? নিজেদের গরজেই আমরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছি। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, জানিপপ থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণের কাজ চলছে। এটা গত বছর মে মাসে শুরু হয়েছে। চলবে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত। ফলে দীর্ঘমেয়াদি এই পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ায় মূল যেদিন, সেই ভোট গ্রহণের দিন পর্যবেক্ষণ না করার কোনো মানে হয় না।
সমকাল :আমরা দেখেছি, এবার 'আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক' বলতে দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দেশ থেকে চারজন মাত্র এসেছেন। এর ফলে এই নির্বাচনের আইনগত বৈধতা নিয়ে কি প্রশ্ন উঠতে পারে?
কলিমউল্লাহ : নির্বাচনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ প্রপঞ্চ, সন্দেহ নেই। কিন্তু আপনাকে এর উত্তর পেতে হলে বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকাতে হবে। দেখা যায় প্রথম পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। ফাদার টিমের নেতৃত্বে সিসিএইচআরবি এই পর্যবেক্ষণ করে। ১৯৯১ সালে পঞ্চম সাধারণ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক আসে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এনডিআই বা ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট আসে এবং স্থানীয় বা জাতীয় পর্যায়ে পর্যবেক্ষক গ্রুপ তৈরির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখে। তাদের এখানে অবস্থানকালীন সময়ে আমাদের অনেকের সঙ্গে এসব বিষয়ে কথাবার্তা হয়। ১৯৯৫ সালে আমরা গঠন করি জানিপপ। পরবর্তীকালে ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকমণ্ডলীর মনোযোগ আরও বাড়ে। কিন্তু ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলগুলো অংশ না নেওয়ায় আন্তর্জাতিক গ্রুপগুলো উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। তখন বাংলাদেশে তিনটি নির্বাচন পর্যবেক্ষক গ্রুপ ছিল_ সিসিএইচআরবি, ফেমা ও জানিপপ। জানিপপ তখন সদ্য প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান। ফলে নিরাপত্তা ও ক্যাপাসিটি বিবেচনায় আমরা ঘোষণা দেই যে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করব না। বাকি দুটি প্রতিষ্ঠান পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয়; ১৯ ফেব্রুয়ারি ফেমার পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেওয়া হয় যে এর গ্রহণযোগ্যতা নেই, বাতিল করতে হবে। সিসিএইচআরবিও একই ধরনের মত দেয়।
সমকাল :কিন্তু তারপরও তো ওই নির্বাচনের ভিত্তিতে সরকার গঠিত হয়েছিল।
কলিমউল্লাহ :হ্যাঁ, হয়েছিল। কিন্তু প্রতিক্রিয়া তখন অন্য জায়গায় দেখা যায়। মার্চের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন রিলেশন্স কমিটির দুই প্রভাবশালী সদস্য সিনেটর রিচার্ড লুগার ও সিনেটর ক্লেবন প্যাল সেক্রেটারি অব স্টেটের কাছে একটি চিঠি পাঠায়। সেখানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট সমাধানে তিনটি শর্ত যুক্ত করে। প্রথমত, বিএনপি ক্ষমতা ছেড়ে দেবে, তবে তাদের সেইফ এক্সিট দিতে হবে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ছেড়ে দিতে হবে এবং পরবর্তী সব নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সার্টিফায়েডে হতে হবে। আপনার মনে থাকার কথা, পরবর্তীকালে এগুলোই ঘটেছিল। যে কারণে পদত্যাগ করার পরও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি কোনো ঝামেলার মুখে পড়েনি। বরং সাড়ম্বরে 'জাতীয়তাবাদী মঞ্চ' তৈরি করেছিল। আর ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পর্যবেক্ষকদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল। এরপর ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক গ্রুপগুলো ব্যাপক মাত্রায় অংশ নেয়। জাতীয় পর্যবেক্ষক গ্রুপেরও সংখ্যা বাড়ে। ২০০৬ সালে গঠিত হয় ইডবি্লউজি। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আইআরআই বা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে তাদের অফিস স্থাপন করে। ইইউ, কমনওয়েলথ, এনডিআই তো ছিলই। ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের পর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সাধারণ নির্বাচন কেমন হয়, সে ব্যাপারেও গোটা বিশ্বেরই আগ্রহ ছিল।
সমকাল : এবার কেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পর্যবেক্ষকরা আগ্রহ প্রকাশ করেননি?
কলিমউল্লাহ :একটা বড় বিষয় হচ্ছে নিরাপত্তাজনিত অনিশ্চয়তা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আগেই একটি এসেসমেন্ট টিম পাঠিয়েছিল। পরিস্থিতি দেখে তাদের প্রতীতি জন্মেছে যে, এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। একইভাবে কমনওয়েলথ পর্যবেক্ষক গ্রুপ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক গ্রুপও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের এনডিআই, আইআরআইও নিরাপত্তার ভরসা পায়নি।
সমকাল :নির্বাচনের আগে সহিংস পরিস্থিতি একটি বড় বিষয়, বোঝা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক না আসার আর কী কী কারণ থাকতে পারে?
কলিমউল্লাহ : আর একটি কারণ হচ্ছে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সবার অংশগ্রহণমূলক না হওয়া। অধিকাংশ আসনে যখন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী নির্বাচিত হওয়াও এই নির্বাচনের গুরুত্ব কমিয়ে দিয়েছে।
সমকাল : আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক না আসায় নির্বাচনের বৈধতা কি প্রশ্নের মুখে পড়বে?
কলিমউল্লাহ :আমি তা মনে করি না। কারণ নির্বাচন পর্যবেক্ষণই হচ্ছে মূল কথা। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে কি-না সেটাই মূল কথা। পর্যবেক্ষকরা আন্তর্জাতিক বা জাতীয় সেটা বিষয় নয়। আরেকটি বিষয় আছে, আমরা যখন দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করি, তখন আমরা জাতীয় পর্যবেক্ষক। কিন্তু যখন বিদেশে যাই তখন তো আমরাও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক। যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেসব পর্যবেক্ষক এখানে আসেন, তারাও তো তাদের দেশের জাতীয় পর্যবেক্ষক। আর আমাদের জাতীয় পর্যবেক্ষকদেরও গত দুই দশকে দক্ষতা, পেশাদারিত্ব, অভিজ্ঞতা বেড়েছে। সংগঠন বিস্তৃত হয়েছে। জানিপপ থেকে আমরাও তো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মিসর, মোজাম্বিক, জাম্বিয়া, নাইজেরিয়া, তিমুর, লেসোথো, গণচীনের হংকং, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, নেপাল প্রভৃতি দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছি। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতায় আমরা এখন সমৃদ্ধ। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক যেসব পর্যবেক্ষক গ্রুপের নাম সবাই জানেন, তাদের সবার সঙ্গে আমাদের যৌথ কার্যক্রম ও কর্মসূচি রয়েছে। আমাদের বলতে পারেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক গ্রুপেরই 'সিস্টার কনসার্ন'।
সমকাল : তার মানে, পর্যবেক্ষক জাতীয় না আন্তর্জাতিক নির্বাচনী বৈধতার ক্ষেত্রে সেটা ব্যাপার নয়?
কলিমউল্লাহ : না, পর্যবেক্ষণই ম্যাটার করে। পর্যবেক্ষক কোথাকার সেটা ম্যাটার করে না।
সমকাল :কেউ কেউ মনে করছেন, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক না আসার পেছনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রেসক্রিপশন না মানার বিষয়টিও রয়েছে। আপনি কী মনে করেন?
কলিমউল্লাহ :হ্যাঁ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি এর পেছনে কাজ করেছে। তবে এবারের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আগ্রহ কমে যাওয়ার দায় কেবল সরকারের নয়। বিরোধীদলীয় জোটেরও দায় রয়েছে। কমবেশি হতে পারে, কিন্তু উভয় দলকেই দায়িত্ব নিতে হবে। আমি তো ঠাট্টা করে বর্তমান পরিস্থিতিকে বলি 'দুই দল প্রযোজিত চলচ্চিত্র'।
সমকাল :বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষত ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে মতভেদ স্পষ্ট হলো, সেটা কি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বৈধতার প্রশ্নে গুরুতর হয়ে দেখা দেবে?
কলিমউল্লাহ :আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে ভারত বা চীনের অবস্থান বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বাংলাদেশ হচ্ছে তাদের ব্যাকইয়ার্ড। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে 'মনরো ডকট্রিন' রয়েছে। এর মূল কথা হচ্ছে, আমেরিকা ইজ ফর আমেরিকানস। একই ডকট্রিনে এশিয়া তো এশিয়ানদের হওয়ার কথা। ভারত ও চীন কোনোভাবে চাইবে না যে এখানে তাদের প্রভাব ছাপিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বাড়ূক। এখন ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট ফর ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্টাল।
সমকাল :১৯৯৬ সালের একতরফা নির্বাচনের পর যে আমেরিকান প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সংকটের সমাধান হয়েছিল, সেটা তো আপনিই বললেন।
কলিমউল্লাহ : সেদিন আর নেই। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরপরই নব্বই দশকে যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রভাববলয় ছিল, সেটা আর আগের মতো নেই। অন্যদিকে ভারত ও চীন এখন আঞ্চলিক শক্তি তো বটেই, তারা পরাশক্তি হওয়ার পথে রয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র চাইলেই এখন আর যে কোনো সমাধান সম্ভব নয়। দূরবর্তী পরাশক্তির উপদেশ বা ভর্ৎসনার চেয়ে বাংলাদেশের জন্য এখন আঞ্চলিক শক্তির অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ।
সমকাল :তার মানে, ১৯৯৬ সালের একতরফা নির্বাচনের পর যে পুনর্নির্বাচন করতে হয়েছিল সেটা হচ্ছে না?
কলিমউল্লাহ :আমি মনে করি না, এবার ১৯৯৬ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে। যদি আরও স্পষ্ট করে বলি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলনের কলা আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে খেয়ে ফেলেছে। এখন আছে খোসা। সেই খোসা নিয়ে খেলতে গিয়ে এবার বিএনপির পা হড়কে গিয়েছে।
সমকাল :দেখা যাক, ভবিষ্যতে বিষয়গুলো সম্ভবত আরও স্পষ্ট হবে। আমাদের সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
কলিমউল্লাহ :ধন্যবাদ।
No comments