আলোর দিশারী
২০১৩
সালে আইট্রিপলই রিজিয়ন-১০ ওমেন ইন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রফেশনাল ভলান্টিয়ার
অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন বাংলাদেশি নারী ড. সেলিয়া শাহনাজ। আন্তর্জাতিকভাবে
সম্মানজনক এ পুরস্কার প্রাপ্তি ও অন্যান্য বিষয়ে কথা বলেছেন নাদিম মজিদ
পিএইচডি শেষ করে বাংলাদেশে ফেরার পর উপলব্ধি করেন, আমাদের দেশে প্রকৌশল
শিক্ষা, গবেষণা এবং পেশায় নারীদের উপস্থিতি কম। তাই, দেশের মেয়েদের
প্রকৌশল পেশায় উদ্বুদ্ধ করতে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ওমেন ইন
ইঞ্জিনিয়ারিং (ডবি্লউআইই), আইট্রিপলই বাংলাদেশ শাখা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারদের সর্ববৃহৎ পেশাগত সংগঠন
আইট্রিপলই। আমরা বলছি ড. সেলিয়া শাহনাজের কথা। নারীদের ইলেকট্রিক্যাল
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার জন্য এবং এ দেশে কর্মরত নারী ইলেকট্রিক্যাল
ইঞ্জিনিয়ারদের অভিজ্ঞতা এবং অর্জনকে বিশ্বদরবারে পেঁৗছে দিতে তিনি হাতে নেন
বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৩ সালে এশিয়া
প্যাসিফিক রিজিয়নে ডবি্লউআইই প্রফেশনাল ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড নামে
সম্মানজনক আন্তর্জাতিক পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হন। এশিয়া প্যাসিফিক জোনে
আইট্রিপলইয়ের সদস্য রাষ্ট্র ২৫টি। শাহনাজ বলেন, 'তরুণ ছাত্রীদের গবেষণার
কাজে উদ্বুদ্ধ করার জন্য রিসার্চ ওয়ার্কশপ করেছি। তাদের উপস্থাপন ক্ষমতা
বৃদ্ধি করার জন্য পোস্টার পেপার প্রেজেন্টেশনের ব্যবস্থা করেছি। তাদের
কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি করার জন্য ল্যাট্রেক্স নামক ডকুমেন্ট তৈরির
সফটওয়্যার শেখানোর ওয়ার্কশপ আয়োজন করেছি। আন্তর্জাতিক স্কলার নিয়ে এসে
সেমিনার আয়োজন করেছি, যাতে আমাদের ছাত্রী এবং তরুণ নারী প্রকৌশলীরা নতুন
প্রযুক্তি সম্পর্কে আপডেটেড থাকে। ডবি্লউআইইয়ের বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করার
জন্য প্রস্তাব লিখে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এশিয়া প্যাসিফিক রিজিয়নে আমি
সর্বোচ্চ সাপোর্ট ফান্ড বিজয়ী হয়েছি। আমার গবেষণা এবং ফলাফল বিভিন্ন
আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে উন্নয়নশীল দেশের নারীদের জন্য উৎসাহজনক হিসেবে
বিবেচিত হয়েছে।'
শাহনাজ কানাডায় পিএইচডি করার সূত্রে সেখানকার অভিজ্ঞত তুলে ধরে তিনি বলেন, 'কানাডার পরিবার, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং কর্মক্ষেত্রে নারী প্রকৌশলীদের সঙ্গে অন্যদের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহযোগিতামূলক। সেখানে নারী হওয়ার কারণে ফিল্ড পরিদর্শন ও কার্যপরিচালনা, যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশনে কোনো নিরাপত্তা সমস্যায় পড়তে হয় না। তদুপরি সরকারিভাবে প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি খাতে গবেষণায় ফান্ড প্রস্তাব করলে নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয় ।'
ডবি্লউআইইয়ের চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ড. শাহনাজ। তিনি বলেন 'আমি আমার দায়িত্ব পালনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। আমাদের সদস্যদের উৎসাহিত করতে স্লোগান হিসেবে নেওয়া হয়েছে, পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন : দক্ষতা, মনোভাব এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা। আমাদের সদস্যদের সঙ্গে সভা, ই-মেইল, ওয়েবসাইট এবং ফেসবুকের মাধ্যমে জ্ঞানের আদান-প্রদান করি। যে কোনো সমস্যা সমাধানে আলোচনা করি। প্রতিযোগিতা, গবেষণা এবং পেশাগত কাজে কোনো সদস্য ভালো ফলাফল করলে তাকে পুরস্কার দিয়ে উৎসাহিত করি। এভাবে ভালো কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করার মাধ্যমে একটি বড় প্লাটফরম তৈরি হয়েছে। এসব কাজ করতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি।'
কাজের উৎসাহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমার বাবা এমএ খালেক ভুঁইয়া পাবলিক রিলেশন্স এবং পাবলিকেশন্স বিশেষজ্ঞ। তিনি বিটিটিবির পরিচালক ছিলেন। মা ড. সেলিমা খালেক ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। তারা দু'জনে আমাকে সবসময় প্রেরণা দিয়ে আসতেন। বিশেষত আমার মায়ের প্রগতিশীল মানসিকতা, যত্ন এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সুপরামর্শ আমার চলার পথে প্রেরণা দিয়েছে। বিয়ের পর আমার স্বামীর অতুলনীয় উৎসাহ, কার্যকরী উপদেশ এবং শর্তহীন সহযোগিতা আমাকে সবসময় অনুপ্রাণিত করে আসছে।'
বাংলাদেশে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে শিক্ষা, গবেষণা এবং পেশায় পথিকৃৎ নারী ড. সেলিয়া শাহনাজ ১৯৭৬ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি বুয়েটে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার স্বামী ড. শেখ আনোয়ারুল ফাত্তাহ একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। চার মাস বয়সী শেখ শাহীর ফাত্তাহ তাদের একমাত্র ছেলে।
২০১৩ সালের আইট্রিপলই রিজিয়ন-১০ ডবি্লউআইই প্রফেশনাল ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড পুরস্কার দেওয়া হবে ২০১৪ সালের মার্চ মাসে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে। একটি দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সুষম উন্নয়ন ব্যবস্থা। সুষম উন্নয়ন ব্যবস্থার জন্য অত্যাবশ্যক নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ এবং এগিয়ে যাওয়া। ড. সেলিয়া শাহনাজদের মতো নিবেদিত প্রাণদের মহৎ উদ্যোগ এবং কর্মতৎপরতা সফল হোক।
১৯৯১ সালে অগ্রণী বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৯৩ সালে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন সেলিয়া শাহনাজ। ঢাকা বোর্ডে সম্মিলিত মেধায় অর্জন করেছিলেন তৃতীয় স্থান। আর মেয়েদের মধ্যে প্রথম। ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনার্সে পড়ার বিষয় হিসেবে বেছে নেন ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং। ২০০০ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ২০০১ সালে বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ২০০৩ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে ২০০৯ সালে কানাডার কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করা বুয়েটের প্রথম নারী শিক্ষক। তার আন্তর্জাতিকমানের ৬০টিরও বেশি গবেষণাপত্র রয়েছে। গবেষণাকাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ২০০৮ সালে চীনে অনুষ্ঠিত আইট্রিপলই আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেরা প্রকাশনার জন্য পুরস্কৃত হন। টেলিকমিউনিকেশন এবং ডিজিটাল সিগনাল প্রসেসিংয়ে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ সমাধানে নিরলসভাবে সাধনা করে আসছেন।
শাহনাজ কানাডায় পিএইচডি করার সূত্রে সেখানকার অভিজ্ঞত তুলে ধরে তিনি বলেন, 'কানাডার পরিবার, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং কর্মক্ষেত্রে নারী প্রকৌশলীদের সঙ্গে অন্যদের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহযোগিতামূলক। সেখানে নারী হওয়ার কারণে ফিল্ড পরিদর্শন ও কার্যপরিচালনা, যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশনে কোনো নিরাপত্তা সমস্যায় পড়তে হয় না। তদুপরি সরকারিভাবে প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি খাতে গবেষণায় ফান্ড প্রস্তাব করলে নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয় ।'
ডবি্লউআইইয়ের চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ড. শাহনাজ। তিনি বলেন 'আমি আমার দায়িত্ব পালনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। আমাদের সদস্যদের উৎসাহিত করতে স্লোগান হিসেবে নেওয়া হয়েছে, পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন : দক্ষতা, মনোভাব এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা। আমাদের সদস্যদের সঙ্গে সভা, ই-মেইল, ওয়েবসাইট এবং ফেসবুকের মাধ্যমে জ্ঞানের আদান-প্রদান করি। যে কোনো সমস্যা সমাধানে আলোচনা করি। প্রতিযোগিতা, গবেষণা এবং পেশাগত কাজে কোনো সদস্য ভালো ফলাফল করলে তাকে পুরস্কার দিয়ে উৎসাহিত করি। এভাবে ভালো কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করার মাধ্যমে একটি বড় প্লাটফরম তৈরি হয়েছে। এসব কাজ করতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি।'
কাজের উৎসাহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমার বাবা এমএ খালেক ভুঁইয়া পাবলিক রিলেশন্স এবং পাবলিকেশন্স বিশেষজ্ঞ। তিনি বিটিটিবির পরিচালক ছিলেন। মা ড. সেলিমা খালেক ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। তারা দু'জনে আমাকে সবসময় প্রেরণা দিয়ে আসতেন। বিশেষত আমার মায়ের প্রগতিশীল মানসিকতা, যত্ন এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সুপরামর্শ আমার চলার পথে প্রেরণা দিয়েছে। বিয়ের পর আমার স্বামীর অতুলনীয় উৎসাহ, কার্যকরী উপদেশ এবং শর্তহীন সহযোগিতা আমাকে সবসময় অনুপ্রাণিত করে আসছে।'
বাংলাদেশে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে শিক্ষা, গবেষণা এবং পেশায় পথিকৃৎ নারী ড. সেলিয়া শাহনাজ ১৯৭৬ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি বুয়েটে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার স্বামী ড. শেখ আনোয়ারুল ফাত্তাহ একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। চার মাস বয়সী শেখ শাহীর ফাত্তাহ তাদের একমাত্র ছেলে।
২০১৩ সালের আইট্রিপলই রিজিয়ন-১০ ডবি্লউআইই প্রফেশনাল ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড পুরস্কার দেওয়া হবে ২০১৪ সালের মার্চ মাসে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে। একটি দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সুষম উন্নয়ন ব্যবস্থা। সুষম উন্নয়ন ব্যবস্থার জন্য অত্যাবশ্যক নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ এবং এগিয়ে যাওয়া। ড. সেলিয়া শাহনাজদের মতো নিবেদিত প্রাণদের মহৎ উদ্যোগ এবং কর্মতৎপরতা সফল হোক।
১৯৯১ সালে অগ্রণী বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৯৩ সালে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন সেলিয়া শাহনাজ। ঢাকা বোর্ডে সম্মিলিত মেধায় অর্জন করেছিলেন তৃতীয় স্থান। আর মেয়েদের মধ্যে প্রথম। ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনার্সে পড়ার বিষয় হিসেবে বেছে নেন ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং। ২০০০ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ২০০১ সালে বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ২০০৩ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে ২০০৯ সালে কানাডার কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করা বুয়েটের প্রথম নারী শিক্ষক। তার আন্তর্জাতিকমানের ৬০টিরও বেশি গবেষণাপত্র রয়েছে। গবেষণাকাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ২০০৮ সালে চীনে অনুষ্ঠিত আইট্রিপলই আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেরা প্রকাশনার জন্য পুরস্কৃত হন। টেলিকমিউনিকেশন এবং ডিজিটাল সিগনাল প্রসেসিংয়ে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ সমাধানে নিরলসভাবে সাধনা করে আসছেন।
No comments