বিশ্ব সম্প্রদায়ের পরামর্শে গুরুত্ব দিন
পাঁচ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচন
দারুণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ এবং দেশ-বিদেশে তেমন গ্রহণযোগ্য হবে না_ এমন মত
নানাভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, বাংলাদেশের
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকলে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হতো।
তিনি আলোচনার মাধ্যমে এমন পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে জনগণ
তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ পায়। এ অভিমতে দশম সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিশ্ব
সংস্থার মহাসচিবের হতাশার প্রতিফলন স্পষ্ট। ক্ষমতাসীন মহল থেকে বলা হচ্ছে,
বিভিন্ন দেশে এর চেয়ে অনেক খারাপ ভোট আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গ্রহণ করেছে।
কিন্তু এটাও নিশ্চয়ই সবার জানা যে, বাংলাদেশে গত দুই দশকে কয়েকবারই
উৎসবমুখর পরিবেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং গণতন্ত্রের
অভিযাত্রার ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালেও এ ধরনের একটি নির্বাচন প্রত্যাশিত ছিল।
নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় বলা
হয়েছে, বিরোধীরা যে 'অস্বচ্ছ নির্বাচনের' অভিযোগ তুলছে, সরকারের সে বিষয়টি
পুনর্বিবেচনা করা উচিত। একইভাবে হতাশা ব্যক্ত করেছে ব্রিটেন ও কানাডা এবং
কমনওয়েলথ। হংকংভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন এশিয়ান হিউম্যান রাইটস নির্বাচনকে
'জালিয়াতির নির্বাচন' হিসেবে অভিহিত করেছে। বিভিন্ন দেশের সংবাদপত্রের
প্রতিবেদনেও দেখা যায় বাংলাদেশ সম্পর্কে একই ধরনের নেতিবাচক অভিমত। আওয়ামী
লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার এবং নির্বাচন কমিশন এসব মতামত উপেক্ষা করে 'সবকিছুই
ঠিকঠাক' মনে করে চললে ভুল করবে। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য
নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধ্যবাধকতা ছিল_ এ যুক্তি অনেকেই মেনে নিতে রাজি
ছিলেন। কিন্তু জাল ভোট দিয়ে ভোটের বাক্স ভরে ফেলার ঘটনা কেউ মেনে নেবে না।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ হতে পারত বিএনপি। তারা নির্বাচনে
না আসায় প্রায় সব আসনেই ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে ক্ষমতাসীনদের
মনোনীত প্রার্থীরা। কিন্তু যে ১৪৭ আসনে নির্বাচন হয়েছে তার অনেক আসনেও দেখা
গেছে চরম অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা। নির্বাচন কমিশন নিজের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা
প্রয়োগের বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেনি। স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও
চলেছে সরকারের মর্জি-মেজাজ অনুসারে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, একটি বিশ্বাসযোগ্য
নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষেরই আন্তরিক প্রয়াস ছিল বলে মনে
হয়নি। বিরোধীরা নির্বাচন বর্জন এবং প্রতিহতের আহ্বান জানিয়েছে। তারা
রাজপথের আন্দোলনে বাধাগ্রস্ত হয়েছে এবং কেবল সহিংসতার পথেই নির্বাচন ভণ্ডুল
করতে সচেষ্ট ছিল। তাদের এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কেউ
সমর্থন করতে পারে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেমন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন
অনুষ্ঠানে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে, একইভাবে নিন্দা করেছে সহিংসতার।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, হিংসাকে কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। বাংলাদেশে গত
কয়েক সপ্তাহে নির্বাচন বিরোধী পক্ষ যেভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছে এবং
বেআইনি সহিংসতা চালিয়েছে, বিশেষ করে স্কুল-কলেজসহ সরকারি ভবনে যেভাবে
অগি্নসংযোগ করেছে, তারও নিন্দা জানিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। দেশবাসী আশা করবে,
সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবে। একের ভুল পদক্ষেপ, সহিংস
কর্মকাণ্ড কিংবা অন্যায় আচরণ অন্যপক্ষের একই ধরনের প্রতিক্রিয়ার যুক্তি হতে
পারে না। আমাদের অবশ্যই বিশ্ববাসীর মতামতকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করতে
হবে। সর্বোপরি ভাবতে হবে দেশের স্বার্থের কথা। রাজনৈতিক রেষারেষিতে
বাংলাদেশ আজ বিপর্যয়ের কিনারায়। অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক
অঙ্গনে ভাবমূর্তি তলানিতে। এ অবস্থায় সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দ্রুত একটি
গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সমাধান সূত্র খুঁজে বের করতে না পারলে আরও
বড় ক্ষতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
No comments