মহানবীর জীবন ও কর্ম হোক পাথেয়
প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদের (সা.)
স্মারকবিজড়িত দিন ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আমরা সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই ও
বিশ্ব মানবতার জন্য শুভ কামনা করছি। হিজরি সালের রবিউল আউয়াল মাসের ১২
তারিখে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক এবং খোদা প্রেরিত শেষ রাসূল ও নবী হজরত
মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিব ইবনে হাশিম (সা.) আরবের
পবিত্র মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আবার ৬২ বছর বয়সে এই দিনেই মদিনায়
ওফাত লাভ করেছিলেন। তার জন্ম ও নবুয়ত লাভের মধ্য দিয়ে সাম্য, মৈত্রী ও
ন্যায্যতার বাণী নিয়ে বিশ্বে এক নতুন ধর্মের আবির্ভাব ঘটেছিল। নবুয়ত লাভের
পর মাত্র ২২ বছরে তিনি যে ধর্ম সম্প্রসারিত করেছিলেন, তা আজও দিকে দিকে
সম্প্রসারিত হয়ে চলছে। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রেও তার সংস্কার মহান
নজির হয়ে আছে। মহানবী (সা.) কুসংস্কারে জর্জরিত ও সংঘাতে লিপ্ত আরব জাহানকে
আইয়ামে জাহেলিয়া বা অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগের অভিশাপ থেকে মুক্ত করে শান্তি ও
সৌহার্দ্যের পতাকাতলে একত্র করেছেন; বেদুইন-যাযাবরদের মধ্যে প্রতিষ্ঠা
করেছেন অনুকরণীয় শাসনব্যবস্থা। পরস্পরবিরোধী আরব গোষ্ঠীগুলো তার নেতৃত্বেই
প্রথমবারের মতো অভিন্ন ধর্ম ও সমাজের পতাকাতলে সমবেত হয়েছিল। জীবনে বহু
অন্যায়-অত্যাচার, আঘাত-আক্রমণ সয়ে পথ চলতে হয়েছে তাকে। জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে
হিজরত করতে হয়েছে মদিনায়। কিন্তু কখনও মানুষের প্রতি বিদ্বেষ কিংবা হিংসার
সামান্যতম প্রকাশ তার মধ্যে দেখা যায়নি। বাধ্য না হলে তিনি প্রতিপক্ষের
বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেননি। তার প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রে ধর্ম-বর্ণ-মত
নির্বিশেষ সবার জন্য নিরাপত্তা ও আশ্রয় নিশ্চিত হয়েছিল। সহনশীলতা,
সৌহার্দ্য, শান্তি, ঐক্য, প্রগতির সমন্বয়ে এক অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী
ছিলেন তিনি। আজকের দিনে তার প্রকৃত আদর্শকে সবার সামনে তুলে ধরাটা আজ যে
কোনো সময়ের চেয়ে জরুরি। কেননা, বিশ্ব আজ হিংসা-বিদ্বেষে আচ্ছন্ন;
যুদ্ধবিগ্রহ মানবতাকে পরাভূত করতে উদ্যত। এ অবস্থায় মহানবীর (সা.) আদর্শ
সবার জন্য পাথেয় হতে পারে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা চাই, বাংলাদেশসহ গোটা
মুসলিম বিশ্ব ইসলামের প্রকৃত আদর্শ সামনে রেখে কর্তব্য ঠিক করবে। এখন
ইসলামের নামে চরমপন্থার যে বিস্তার বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে, তারা হজরত
মুহাম্মদের (সা.) সি্নগ্ধ জীবনাচরণ ও সুমহান বাণীর মর্ম বুঝতে পারবে এবং
হিংসা ও সংঘাত নয়, শান্তি ও সৌহার্দ্যের ছায়াতলে স্থান নেবে। দল, মত,
ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে অন্যদেরও এই মহান ব্যক্তিত্বের যিনি একই সঙ্গে ধর্ম
প্রবর্তক ও সমাজ সংস্কারক, জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানাই আমরা।
No comments