বিবেকের কণ্ঠস্বর চিরনিদ্রায়
মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের প্রতি জাতির শেষ শ্রদ্ধা |
(সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের কফিনে শেষ শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ)
ভাষাসংগ্রামী, সাবেক প্রধান বিচারপতি, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান
উপদেষ্টা, সর্বজনশ্রদ্ধেয় মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বনানী কবরস্থানে
চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন। সোমবার বাদ আসর গুলশানের আজাদ মসজিদে দ্বিতীয়
জানাজা শেষে তার মরদেহ বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। আজ বাদ আসর গুলশানের
আজাদ মসজিদে তার কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে সকালে তার মরদেহ ইউনাইটেড
হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসভবনে নেওয়া হয়। সকালেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
তার বাসভবনে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় তিনি বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর
রহমানের কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করেন এবং সুরা ফাতেহা পাঠ করেন।
প্রধানমন্ত্রী দেশবরেণ্য এই ব্যক্তিত্বের স্ত্রী ইসলামা রহমানসহ তার তিন
মেয়ে ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান এবং তাদের সঙ্গে কিছু সময়
কাটান। এর পর তার মরদেহ নিয়ে আসা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এখানে
সর্বস্তরের মানুষ শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মুক্তচিন্তা, অদ্ভুত সারল্য আর
দৃঢ় ব্যক্তিত্বে জাতির অন্যতম অভিভাবক হয়ে ওঠা এই মহান মানুষের প্রতি। পরে
তার মরদেহ নেওয়া হয় বাংলা একাডেমিতে। সেখানে দোয়া মাহফিলের পর মরদেহ নেওয়া
হয় তার দীর্ঘ সময়ের কর্মস্থল সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে। এখানেই তার প্রথম
জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।তবে ভাষাসংগ্রামী, সাবেক এই প্রধান বিচারপতি ও সাবেক
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়নি।
এ ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সমকালকে বলেন,
মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ মৃত্যুবরণ করলে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ার আদেশ
রয়েছে। বাকিদের ক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় মর্যাদা
দেওয়ার বিষয়টি নির্ধারিত হয়।
শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধা :ভাষাশহীদদের স্মৃতির বেদি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। সোমবার সেখানে এসেছিলেন ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষার লড়াইয়ের সেই দামাল ছেলেদের একজন। আগেও অনেকবার এসেছেন প্রভাতফেরির মিছিলে, নাগরিক কোনো অনুষ্ঠানে কিংবা বন্ধু, স্বজন বা জাতির কোনো কৃতী সন্তানকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। তাকে বারবার দেখেছে সবাই, মৃদু হাসির দৃঢ় ব্যক্তিত্বের সৌম্য পুরুষকে। এবার তিনি কফিনে বন্দি হয়ে এলেন, শেষ শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে ছেয়ে গেল তার কফিন। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সত্যিই শুভানুধ্যায়ী, বন্ধু-স্বজনের ঢল নেমেছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সকাল ১১টার কিছু সময় পর তার মরদেহ পেঁৗছায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এর আগে থেকেই শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বিপুল মানুষ অপেক্ষমাণ ছিলেন এখানে। সবার আগে শ্রদ্ধা জানান ভাষার লড়াইয়ে তার সহযোদ্ধা রওশন আরা বাচ্চু। শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের কয়েকজন তার সামনে দাঁড়ালে তিনি চোখ মোছেন। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলেন, 'শেলী ভাই অনেক বড় মানুষ। তার মতো মানুষ হয় না।' প্রয়াত বিচারপতির বড় মেয়ে রুবাবা রহমান বুশরা বলেন, 'বাবা একজন বড় মানুষ ছিলেন, খুব ভালো পিতা ছিলেন। দেশের মানুষ তার প্রতি যে বিপুল ভালোবাসা ও সম্মান দেখিয়েছে, তার জন্য আমার পরিবারের সদস্যরা কৃতজ্ঞ।
এর পর একে একে আসেন নতুন সরকারের মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, নুরুল ইসলাম নাহিদ ও আসাদুজ্জামান নূর, প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন। বিশিষ্টজনের মধ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, শিক্ষাবিদ-সাহিত্যিক অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান, এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, সহসভাপতি মাহফুজা খানম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, শিল্পী রফিকুন নবী, সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী, সিপিডির ডিস্টিংগুইসড ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর রশীদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, সমকালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার, কর্মজীবী নারীর শিরীন আখতার, সাবেক এমপি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনসহ নানা শ্রেণী-পেশার অসংখ্য মানুষ। শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, গণফোরাম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, ওয়ার্কার্স পার্টি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, গণজাগরণ মঞ্চ, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, জাতীয় কবিতা পরিষদ, নজরুল চর্চা কেন্দ্র, এশিয়াটিক সোসাইটি, পদাতিক, একুশে চেতনা পরিষদ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, ক্ষেতমজুর সমিতি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, মণি সিংহ-ফরহাদ ট্রাস্ট, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র মৈত্রী, বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সমাপনী বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু। তিনি বলেন, মেধায়, মননে, প্রকাশে একজন প্রকৃত বাঙালি ছিলেন বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। নিষ্ঠায়, সততায়, ব্যক্তিত্বে তিনি হয়ে উঠেছিলেন জাতির অভিভাবক। অদ্ভুত সারল্যের দৃঢ়চিত্তের এই বাঙালি সন্তানকে জাতি চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
শোকবইতে বিশিষ্টজন যা লিখলেন :কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি সেখানে রাখা শোকবইতে স্মৃতিচারণ করে স্বাক্ষর করেন অনেকেই। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক অধ্যাপক আনিসুজ্জামান লেখেন, তিনি ধার্মিক মানুষ ছিলেন। তিনি রবীন্দ্রনাথের অনুরাগী ছিলেন; লিখেছেন গবেষণাধর্মী অনেক বই। তিনি মাতৃভাষার প্রতি অনুরাগী ছিলেন, ১৯৫২ সালে ভাষার লড়াইয়ে তিনি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিলেও নেমেছিলেন। প্রখ্যাত আইনজীবী ড. কামাল হোসেন লিখেন, বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের মতো একজন বড় মাপের মানুষকে আমরা আমাদের মধ্যে পেয়েছিলাম। তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের পক্ষে তার লেখনীর মাধ্যমে প্রেরণা দিয়েছেন। জাতি তাকে আজীবন মনে রাখবে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, বিচার বিভাগে যেমন তার অবদান অসামান্য, তেমনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবেও তার ভূমিকা গৌরবোজ্জ্বল ছিল। সবকিছু ছাপিয়ে মননশীল লেখক হিসেবে তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য এক উচ্চতায়।
বাংলা একাডেমিতে কিছুক্ষণ :কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে তার মরদেহ নিয়ে আসা হয় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। এখানে তাকে শ্রদ্ধা জানান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। এখানে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে বড় মেয়ে রুবাবা রহমান বুশরাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্য ছাড়াও বাংলা একাডেমির পরিচালক শাহীদা খাতুন, আবদুল হাইসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রথম জানাজা :বাদ জোহর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের। জানাজায় অংশ নেন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনসহ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্টের বিচারপতিরা, আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বিএনপির সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান, অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম, প্রখ্যাত আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রফিকুল হক তালুকদার রাজাসহ আইনজীবীরা, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার এ কে এম শামসুল ইসলামসহ সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী। জানাজা শেষে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার প্রধান বিচারপতির নির্দেশক্রমে বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দুপুর ২টা থেকে দিনের পরবর্তী সময় পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে ছুুটি ঘোষণা করেন।
শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধা :ভাষাশহীদদের স্মৃতির বেদি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। সোমবার সেখানে এসেছিলেন ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষার লড়াইয়ের সেই দামাল ছেলেদের একজন। আগেও অনেকবার এসেছেন প্রভাতফেরির মিছিলে, নাগরিক কোনো অনুষ্ঠানে কিংবা বন্ধু, স্বজন বা জাতির কোনো কৃতী সন্তানকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। তাকে বারবার দেখেছে সবাই, মৃদু হাসির দৃঢ় ব্যক্তিত্বের সৌম্য পুরুষকে। এবার তিনি কফিনে বন্দি হয়ে এলেন, শেষ শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে ছেয়ে গেল তার কফিন। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সত্যিই শুভানুধ্যায়ী, বন্ধু-স্বজনের ঢল নেমেছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সকাল ১১টার কিছু সময় পর তার মরদেহ পেঁৗছায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এর আগে থেকেই শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বিপুল মানুষ অপেক্ষমাণ ছিলেন এখানে। সবার আগে শ্রদ্ধা জানান ভাষার লড়াইয়ে তার সহযোদ্ধা রওশন আরা বাচ্চু। শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের কয়েকজন তার সামনে দাঁড়ালে তিনি চোখ মোছেন। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলেন, 'শেলী ভাই অনেক বড় মানুষ। তার মতো মানুষ হয় না।' প্রয়াত বিচারপতির বড় মেয়ে রুবাবা রহমান বুশরা বলেন, 'বাবা একজন বড় মানুষ ছিলেন, খুব ভালো পিতা ছিলেন। দেশের মানুষ তার প্রতি যে বিপুল ভালোবাসা ও সম্মান দেখিয়েছে, তার জন্য আমার পরিবারের সদস্যরা কৃতজ্ঞ।
এর পর একে একে আসেন নতুন সরকারের মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, নুরুল ইসলাম নাহিদ ও আসাদুজ্জামান নূর, প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন। বিশিষ্টজনের মধ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, শিক্ষাবিদ-সাহিত্যিক অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান, এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, সহসভাপতি মাহফুজা খানম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, শিল্পী রফিকুন নবী, সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী, সিপিডির ডিস্টিংগুইসড ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর রশীদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, সমকালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার, কর্মজীবী নারীর শিরীন আখতার, সাবেক এমপি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনসহ নানা শ্রেণী-পেশার অসংখ্য মানুষ। শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, গণফোরাম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, ওয়ার্কার্স পার্টি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, গণজাগরণ মঞ্চ, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, জাতীয় কবিতা পরিষদ, নজরুল চর্চা কেন্দ্র, এশিয়াটিক সোসাইটি, পদাতিক, একুশে চেতনা পরিষদ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, ক্ষেতমজুর সমিতি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, মণি সিংহ-ফরহাদ ট্রাস্ট, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র মৈত্রী, বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সমাপনী বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু। তিনি বলেন, মেধায়, মননে, প্রকাশে একজন প্রকৃত বাঙালি ছিলেন বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। নিষ্ঠায়, সততায়, ব্যক্তিত্বে তিনি হয়ে উঠেছিলেন জাতির অভিভাবক। অদ্ভুত সারল্যের দৃঢ়চিত্তের এই বাঙালি সন্তানকে জাতি চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
শোকবইতে বিশিষ্টজন যা লিখলেন :কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি সেখানে রাখা শোকবইতে স্মৃতিচারণ করে স্বাক্ষর করেন অনেকেই। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক অধ্যাপক আনিসুজ্জামান লেখেন, তিনি ধার্মিক মানুষ ছিলেন। তিনি রবীন্দ্রনাথের অনুরাগী ছিলেন; লিখেছেন গবেষণাধর্মী অনেক বই। তিনি মাতৃভাষার প্রতি অনুরাগী ছিলেন, ১৯৫২ সালে ভাষার লড়াইয়ে তিনি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিলেও নেমেছিলেন। প্রখ্যাত আইনজীবী ড. কামাল হোসেন লিখেন, বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের মতো একজন বড় মাপের মানুষকে আমরা আমাদের মধ্যে পেয়েছিলাম। তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের পক্ষে তার লেখনীর মাধ্যমে প্রেরণা দিয়েছেন। জাতি তাকে আজীবন মনে রাখবে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, বিচার বিভাগে যেমন তার অবদান অসামান্য, তেমনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবেও তার ভূমিকা গৌরবোজ্জ্বল ছিল। সবকিছু ছাপিয়ে মননশীল লেখক হিসেবে তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য এক উচ্চতায়।
বাংলা একাডেমিতে কিছুক্ষণ :কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে তার মরদেহ নিয়ে আসা হয় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। এখানে তাকে শ্রদ্ধা জানান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। এখানে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে বড় মেয়ে রুবাবা রহমান বুশরাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্য ছাড়াও বাংলা একাডেমির পরিচালক শাহীদা খাতুন, আবদুল হাইসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রথম জানাজা :বাদ জোহর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের। জানাজায় অংশ নেন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনসহ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্টের বিচারপতিরা, আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বিএনপির সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান, অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম, প্রখ্যাত আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রফিকুল হক তালুকদার রাজাসহ আইনজীবীরা, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার এ কে এম শামসুল ইসলামসহ সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী। জানাজা শেষে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার প্রধান বিচারপতির নির্দেশক্রমে বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দুপুর ২টা থেকে দিনের পরবর্তী সময় পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে ছুুটি ঘোষণা করেন।
No comments