সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ
রোববার বাংলাদেশের নতুন মন্ত্রিসভা শপথ
গ্রহণ করেছে। শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ
করেছেন। আমরা নতুন মন্ত্রিসভার সাফল্য কামনা করি। তবে এটা নিশ্চিত করেই বলা
যায়, ৪৯ সদস্যের মন্ত্রিসভাকে সফলতা পেতে হলে অনেক কঠিন বাধা জয় করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে ভরসার দিকটি হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী প্রথম পদক্ষেপটি ভালো
ফেলেছেন এবং আমাদের গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের তা দৃষ্টি এড়ায়নি।
বিগত মন্ত্রিসভায় যেসব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বিতর্কিত হয়েছেন কিংবা
কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দক্ষতা দেখাতে পারেননি, তারা বাদ পড়েছেন। সম্ভবত
প্রধানমন্ত্রী একটি নূ্যনতম মানদণ্ড নির্ধারণ করে দিতে চেয়েছেন এবং সবাইকে
তা অতিক্রম করতে হবে। তবে এটাই যথেষ্ট নয়। দেশ-বিদেশে সবার কাছে এখন প্রধান
প্রশ্ন_ দশম সংসদ এবং নতুন সরকার কতদিন স্থায়ী হবে। ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত
নির্বাচন যেভাবে সম্পন্ন হয়েছে সেটা দেশে কিংবা বিদেশে তেমন গ্রহণযোগ্যতা
পায়নি বলেই এ প্রশ্ন। নতুন মন্ত্রীরা মুহূর্তের জন্য এটা বিস্মৃত না হলেই
দেশের মঙ্গল। এ থেকে জরুরি করণীয়ও স্পষ্ট হয়ে যায়_ সবার অংশগ্রহণে অবাধ ও
সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান। বিএনপি সংসদ নির্বাচন ভণ্ডুল করতে ব্যর্থ হয়েছে_
এটা ভেবে আত্মপ্রসাদ লাভ করা যাবে বটে; কিন্তু তাতে রাজনীতির অঙ্গনে
স্থিতিশীলতা আনা যাবে না। আশা থাকবে, নতুন মন্ত্রিসভা এ বিষয়টিকেই প্রধান
চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করবে। তাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে, অশান্ত
রাজনীতির কারণে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি
হয়েছে, সেটা যত দ্রুত সম্ভব স্বাভাবিক করা। অর্থনীতির চাকা সচল করতেই হবে। এ
ক্ষেত্রে বিরোধী দলের সহযোগিতাও গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতির লাভ-ক্ষতির
হিসাব-নিকাশের নিরিখে বলা যায়, এ কাজ কঠিন। কারণ এ ধরনের সহযোগিতা সরকারকে
বৈধতা দিতে পারে এবং এ সুযোগকে সরকার ভিত মজবুত করার জন্য কাজে লাগাবে, এমন
ধারণা স্বাভাবিক। কিন্তু বিরোধীদের যদি এমন আস্থায় আনা যায় যে, সরকারপক্ষ
গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে আন্তরিক এবং নতুন নির্বাচনের জন্য তাদের
দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে না, তাহলে দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে ইতিবাচক
প্রভাব পড়তে পারে। এমন পরিবেশ সৃষ্টির জন্য দুই পক্ষকেই সচেষ্ট হতে হবে।
সরকারপক্ষকে বিরোধীদের জন্য গণতান্ত্রিক উপায়ে পরিচালিত সব ধরনের কর্মকাণ্ড
নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে দিতে হবে। আর বিরোধীদের তরফে হিংসাশ্রয়ী পন্থা
অনুসরণ থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার
কাজ সমাপ্ত করাও হবে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। প্রধান বিরোধী পক্ষের
সঙ্গে সরকারের সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হলে এ কাজ সহজ হয়ে যেতে পারে। বিএনপি
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তার দলের আঁতাতকে কৌশলগত
বলেছেন এবং সময়মতো তা ছিন্ন করার আভাস দিয়েছেন। কথা ও কাজে মিল রাখার সময়
এসেছে বলেই আমরা মনে করি। সরকারের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ দলীয়
নেতাকর্মীদের অনিয়ম-দুর্নীতি-টেন্ডারবাজির প্রতি জিরো টলারেন্স প্রদর্শন।
আগের শাসনামলে এটা সম্ভব হয়নি এবং সে জন্য কতটা খেসারত দিতে হয়েছে সেটা
আওয়ামী লীগের নেতাদের অজানা নয়। তার পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়। আন্তর্জাতিক
সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জনের জন্যও সরকারকে সচেষ্ট হতে হবে। নানা কারণেই
তাদের উল্লেখযোগ্য অংশ সরকারের প্রতি বিরূপ এবং তা কাটাতে কিছু ইতিবাচক
সংকেত প্রেরণ জরুরি।
No comments