কাঁচা টমেটো পাকাতে ছিটানো হচ্ছে হরমোন by আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ
টমেটো পাকার মৌসুম শুরুর আগেই রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে হরমোন দিয়ে কচি টমেটো পাকানো হচ্ছে। বেশি দামের আশায় একশ্রেণীর কৃষক ও ব্যবসায়ী এই টমেটো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠাচ্ছেন। ক্রেতারাও হয়তো পুষ্টি ও স্বাদের আশায় চড়া দামে কিনছেন এই টমেটো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিপক্ব টমেটোতে খাদ্যের সব উপাদান ঠিকমতো তৈরি হয় না। তার ওপর কচি টমেটোয় যে প্রক্রিয়ায় রং ধরানো হচ্ছে, তাতে ভিটামিন ও স্বাদ দুটোই নষ্ট হচ্ছে।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলায় টমেটোর চাষ সবচেয়ে বেশি হয়। এবার এই এলাকায় দুই হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ করা হয়েছে। এ থেকে ৮২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন টমেটো উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। গতবার চার হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল।
ফুল আসার পর ৩৫ থেকে ৪০ দিনে টমেটো পরিপক্ব হয়। কৃষকেরা বেশি লাভের আশায় ১৮ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই টমেটো তুলে ফেলছেন। গত মঙ্গলবার গোদাগাড়ীতে গিয়ে উপজেলার রাজাবাড়ি কলেজ মাঠ, বসন্তপুর, বিজয়নগর, গোপালপুর ও পবার আন্ধারকোঠা এলাকায় রাস্তার ধারে প্রকাশ্যে টমেটো বিছিয়ে তাতে ওষুধ ছিটাতে দেখা গেছে। বিজয়নগর মাঠে টমেটোতে হরামোন ছিটাচ্ছিলেন কৃষক ও টমেটো ব্যবসায়ী মাইনুল ইসলাম। তিনি জানান, তাঁরা ১৫ দিন ধরে টমেটো তুলছেন। তিনি বলেন, হরমোন না দিলে গাছে টমেটো একসঙ্গে পাকে না। একটি-দুটি করে পাকে। পাখি সে টমেটো খেয়ে ফেলে।
কীভাবে রং ধরাতে হয় জানতে চাইলে মাইনুল ইসলাম বলেন, গাছ থেকে টমেটো তোলার পর ওষুধ ছিটিয়ে রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। তারপর খড় ও পলিথিন দিয়ে তিন দিন ঢেকে রাখা হয়, যাতে কুয়াশা ও আলো-বাতাস না লাগে। টমেটোর রং আসতে এক সপ্তাহ সময় লাগে। এর মধ্যে মোট দুবার ওষুধ ছিটাতে হয়। প্রথমবার ছিটানোর তিন দিন পর আরেকবার।
এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চাষি ও ব্যবসায়ীরা টমেটোতে ইথেফোন-জাতীয় হরমোন ব্যবহার করছেন। একটি প্রতিষ্ঠানের এ-জাতীয় ওষুধের ব্যবহারবিধিতে লেখা রয়েছে, ফুল আসার আগে মাত্র একবার ব্যবহার করতে হবে। অথচ টমেটো গাছ থেকে তুলে দুবার ইথেফোন ব্যবহার করা হচ্ছে।
উপজেলার সাবেক কৃষি কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বর্তমানে শস্য উৎপাদন বিশেষজ্ঞ হিসেবে মাগুরায় বদলি হয়ে গেছেন। ২০০৯ সালে তিনি গোদাগাড়ীর কৃষকদের এই হরমোনের ব্যবহারের বিরুদ্ধে সচেতন করার জন্য প্রচারপত্র বিলি করেছিলেন। মঙ্গলবার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শুধু পরিপক্ব টমেটোতেই খাদ্যের উপাদান পরিমাণমতো পাওয়া যায়। তাপে ও বাসি হলে টমেটোর ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। এমনিতেই কচি টমেটোয় এসব পুষ্টিমান পরিমাণমতো তৈরি হয় না, তার ওপর রোদে শুকানো ও পাঁচ থেকে সাত দিন স্তূপ করে রাখায় যে ভিটামিন থাকে, তা-ও নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া অল্প পরিমাণে হলেও এই হরমোন মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, পুষ্ট টমেটো স্বাভাবিক উপায়ে পাকলে তার যে স্বাদ ও পুষ্টিমান পাওয়া যায়, এই টমেটোতে সেই পরিমাণে হয়তো পাওয়া যাবে না। তবে হরমোন দুই পিপিএম মাত্রার বেশি হলে দেহের জন্য ক্ষতিকর। এখানে কৃষকেরা যে মাত্রায় ব্যবহার করছেন, তা শূন্য দশমিক ৯১ পিপিএম। তিনি জানান, এখন কৃষকেরা এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা মণ দরে টমেটো বিক্রি করতে পারছেন। কিছুদিন পর তাঁরা আর সেই দাম পাবেন না।
No comments