নগরের ৪০ স্থানে গোয়েন্দা নজরদারি by একরামুল হক
জামায়াত-শিবিরের আকস্মিক হামলা ঠেকাতে নগরের ৪০টি স্থানে পুলিশের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও সংগঠনের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এমন স্থানগুলোতে সার্বক্ষণিক থাকবে গোয়েন্দা দল।
এ ছাড়া গত শনিবার সকালে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য থানা পুলিশ কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁদের কাছে পাঠানো হয়েছে হামলায় অংশ নেওয়া জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবের ভিডিও ফুটেজও।গত শনিবার নগরের ষোলশহর ও প্রবর্তক মোড় এলাকায় জামায়াত-শিবিরের হামলায় পুলিশসহ অনেক পথচারী আহত হন। এ সময় পুলিশের একটিসহ গণপরিবহনের গাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় জামায়াতে ইসলামের মহানগর আমির ও সাংসদ শামসুল ইসলাম এবং সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরীসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করে পুলিশ।
পুলিশ সূত্র জানায়, জামায়াত-শিবিরের আকস্মিক হামলার ঘটনায় পুলিশ প্রশাসন কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়ে। ওই দিন বেতার যন্ত্রের মাধ্যমে যোগাযোগব্যবস্থায় কিছুটা ঘাটতি দেখা যায়, যে কারণে পুলিশ সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে ছুটে যেতে পারেননি। এই সুযোগে গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশ সদস্যদের হামলার ঘটনা ঘটে। লুট হয় আনসার সদস্যের গুলি ও বেতারযন্ত্র।
নাম প্রকাশ না করে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, নগর পুলিশের বিভিন্ন থানা ও কর্মকর্তাদের জন্য ৫০০ নতুন বেতারযন্ত্র স্থাপন করা হচ্ছিল। সরিয়ে নেওয়া হচ্ছিল পুরোনো ৪০০ বেতারযন্ত্র। নতুন বেতারযন্ত্রের সঙ্গে পুরোনোগুলোর যোগাযোগ স্থাপন করা যাচ্ছিল না, যে সুযোগটা নিয়েছে জামায়াত-শিবির।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ফজরের নামাজের পর রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকে। এই সময়টাকে তাণ্ডবের জন্য বেছে নিতে পারে জামায়াত-শিবির। এসব তাণ্ডব ঠেকাতে ৪০টি জায়গায় গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে। এ ছাড়া বিভিন্ন মোড়ে পুলিশের নিরাপত্তা চৌকি (চেকপোস্ট) বসিয়ে তল্লাশি চালানো হবে। জানা যায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরই নগরের বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক মেস বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। ফলে স্থান বদল করছেন শিবিরের নেতা-কর্মীরা। বিশেষ করে শহরতলীতে তাঁদের বিচরণ বেড়েছে বলে পুলিশের গোয়েন্দা তথ্যে জানা গেছে। ওইসব স্থান থেকে ফজরের নামাজের পর তাঁরা শহরমুখী হয়ে হামলা চালায়। এ ছাড়া নগরের বিভিন্ন বাসাবাড়িতেও সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিচ্ছে। তাঁদের অবস্থান শনাক্ত করতে বিভিন্ন থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যুদ্ধাপরাধের ঘটনায় আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামের শীর্ষ নেতাদের বিচারের রায় ডিসেম্বরে ঘোষণা হতে পারে। রায় ঘোষণার সময় একটি নৈরাজ্যের সৃষ্টি করতে পারে জামায়াত-শিবির, যা পুলিশ কর্মকর্তাদের আশঙ্কা।
জামায়াতের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, পুলিশ প্রকাশ্যে মিছিল-সমাবেশ করতে না দিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। তখন পুলিশ আরও দিশেহারা হয়ে পড়বে। এ জন্য জামায়াত বা শিবির দায়ী থাকবে না। তবে এ বিষয়ে জানতে জামায়াতের আমির ও সাংসদ শামসুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
পুলিশ সূত্রগুলো জানায়, ১৮ দলীয় জোটের সাম্প্রতিক কর্মসূচিতে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ জামায়াত-শিবিরের লোকজন অংশ নিয়ে আসছে। প্রকাশ্য কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেওয়া হচ্ছে না বলে জামায়াতের যে অভিযোগ তা ঠিক নয়। গত সপ্তাহেও ১৮ দলের কর্মসূচিতে জামায়াত-শিবিরের বিপুল নেতা-কর্মী অংশ নেয়।
সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কা সম্পর্কে জানতে চাইলে নগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যেকোনো পরিস্থিতি আইনগতভাবে মোকাবিলা করব। আর জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। এ জন্য পুলিশ যা কিছু করার দরকার সব করবে। সেইভাবে পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’
No comments