উপকূলে আশার ‘রংধনু’ by মেখ্যাইউ মারমা
চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলের চিকিৎসাসেবাবঞ্চিত মানুষজনের জন্য এর চেয়ে বড় সুসংবাদ আর কী হতে পারে? অসুখবিসুখের সময় এখন থেকে তারা দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা পাবেন। তা-ও সম্পূর্ণ নিখরচায়।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের সমুদ্র উপকূল এবং চরাঞ্চলে বসবাসরত অধিবাসীদের কাছে এই সেবা নিয়ে হাজির হচ্ছে ভাসমান হাসপাতাল ‘রংধনু’। ১৪ নভেম্বর বুধবার সকালে চট্টগ্রামের মেরিন ওয়ার্কশপ ঘাটে (টিএম ঘাট) উদ্বোধন করা হয় রংধনুর কার্যক্রম। আর এই হাসপাতালটির প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছে বেসরকারি সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ। দক্ষিণ চট্টগ্রামের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা পতেঙ্গা, আনোয়ারা, সন্দ্বীপ, কক্সবাজার, মহেশখালি, কুতুবদিয়ায় এই হাসপাতালটি চিকিৎসাসেবা দেবে।হাসপাতালটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, প্রত্যন্ত এলাকার সুবিধাবঞ্চিত এবং ঝুঁকিপ্রবণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রাথমিক, মাঝারি ও জটিল এই তিন পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেবে রংধনু। একই সঙ্গে বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চলে যেকোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে তাৎক্ষণিক সেবার জন্য জাহাজটি প্রস্তুত থাকবে। হাসপাতালে প্রাথমিক ও মাঝারি পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে চোখ, দাঁত, নারী ও প্রসূতি এবং রোগনির্ণয় বিভাগ থাকবে। এ ছাড়া রোগীদের রাখার জন্য থাকবে ওয়ার্ড। এক কথায় নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ) ছাড়া পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালের সব সুবিধাই থাকছে রংধনুতে।
বছরের নির্দিষ্ট সময়ে পৃথক ক্যাম্প আয়োজন করে চোখ, দাঁত ও মাড়ি এবং শিশু ও প্রসূতিদের শল্য চিকিৎসার মতো মাঝারি পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হবে। থাকবে প্লাস্টিক সার্জারির মতো জটিল পর্যায়ের চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থাও। এই হাসপাতালে বাংলাদেশি চিকিৎসক ছাড়াও সারা বছরই থাকবে ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, লন্ডনের অভিজ্ঞ চিকিৎসকের দল। ঘুরে ফিরে পালাবদল করে বছরে তিনবার এইসব দেশের চিকিৎসকেরা ক্যাম্প স্থাপন করে উপকূল অঞ্চলে বসবাসরত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসা দেবেন।
ফ্রেন্ডশিপের প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী পরিচালক রুনা খান প্রথম আলোকে জানান, উপকূলে বসবাসরত প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য ফ্রেন্ডশিপ বিগত এক দশক ধরে নানা কাজ করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় ভাসমান হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়েছে।’ রংধনু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উপকূলের খুব কাছাকাছি রংধনু নোঙর ফেলে রাখবে যাতে দক্ষিণাঞ্চলের জনগোষ্ঠী সহজেই সেবা পেতে পারে। ছোট জলযান দিয়ে ওই ভাসমান হাসপাতালে রোগী আনা নেওয়া করা হবে। প্রতি সপ্তাহে ফ্রেন্ডশিপের কমিউনিটি মেডিকস এবং প্যারামেডিকসের উপস্থিতিতে স্যাটেলাইট ক্লিনিক পরিচালিত হবে।
ফ্রেন্ডশিপের কর্মকর্তারা জানান, রংধনুর রংধনুতে পরিণত হওয়ার একটা ছোট ইতিহাস রয়েছে। পরিবেশ সংগঠন গ্রিনপিস ইন্টারন্যাশনালের রেইনবো ওয়ারিয়ার-২ জাহাজটিকেই নতুন রূপ দিয়ে রংধনুতে পরিণত করা হয়েছে। গ্রিনপিসের রেইনবো ওয়ারিয়ার-২ এর কাজ ছিল সারা পৃথিবীব্যাপী পারমানবিক কার্যক্রম ও অবাধে তিমি শিকার বন্ধে জনমনে সচেতনতা তৈরি করা।
চলতি বছরের ১৬ আগস্ট গ্রিনপিস ইন্টারন্যাশনাল রেইনবো ওয়ারিয়র-২ জাহাজটি ফ্রেন্ডশিপের কাছে হস্তান্তর করে। গত ২৮ আগস্ট জাহাজটি চট্টগ্রামের বন্দরে ভিড়ে। বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিনের তত্ত্বাবধানে নেদারল্যান্ডসের দাতাসংস্থা এসকে ফাউন্ডেশন ও কর্ড এইড, হংকংয়ের কাডুরি চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশন এবং লুক্সেমবার্গের ফ্রেন্ডশিপ ইন্টারন্যাশনালের অর্থায়নে এটিকে হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়।
বর্তমানে লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল ও এমিরেটস ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল নামের রংধনুর আরও দুটি ভাসমান হাসপাতাল গাইবান্ধা এবং কুড়িগ্রাম জেলার জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে।
No comments