শ্রমবাজারে অশনিসংকেত-কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে
বাংলাদেশের জন্য আর একটি দুঃসংবাদ। আমিরাতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার সংকুচিত হতে যাচ্ছে। এমনিতেই মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে এসেছে। এখন আমিরাতে অবস্থানরত অবৈধ হয়ে পড়া অভিবাসীদের দেশে ফিরে আসতে হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আমিরাত সরকার অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দানের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিতে যাচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে বৈধতা লাভে ব্যর্থ হলে ফিরে আসতে হবে সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশি অনেক শ্রমিককে।নানা কারণেই বাংলাদেশের জনশক্তি বিদেশে গিয়ে অবৈধ হয়ে যায়। একদিকে দেশে কর্মসংস্থানের অভাব, ফলে জনশক্তি বিদেশে পাঠিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হয়। বাড়তি আয়ের লক্ষ্যে বিদেশে পাড়ি জমালেও কাঙ্ক্ষিত কাজ না পেয়ে বা খরচ উঠে না আসায় অনেককে বিদেশে থেকে যেতে বাধ্য হতে হয়। আবার বিদেশে যাওয়ার সময় অনেককে প্রতারণার শিকারও হতে হয়। যে কাজের কথা বলে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হয়, দেখা গেছে সেখানে গিয়ে তারা সেই কাজ পাচ্ছে না। অনেকে বিদেশে গিয়ে বুঝতে পারে, তারা প্রতারণার শিকার। তখন বাধ্য হয়েই অনেককে অবৈধ হতে হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত হওয়ায় প্রতিবছর অসংখ্য লোক বিদেশে পাড়ি জমায়। কাজের সন্ধানে বিদেশে যাওয়া এই শ্রমিকের অনেকে দক্ষ, অনেকে অদক্ষ। অনেকে আবার তেমন লেখাপড়া জানে না। প্রতারকচক্র এই অদক্ষতা ও শিক্ষাগত দুর্বলতার সুযোগ নেয়। বিদেশে যেখানে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি করা হয়েছে, সেখানেই এ দেশের জনশক্তি সুনাম কুড়িয়েছে। কিন্তু কিছু অসৎ ব্যবসায়ীর কারণে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। অনেকে কাঙ্ক্ষিত আয় না হওয়ায় বিদেশে থেকে যায় বা থেকে যেতে বাধ্য হয়। আমিরাতের ক্ষেত্রে যে ঘটনা ঘটেছে, তা এর ব্যতিক্রম কিছু নয়। সেখানে আড়াই লক্ষাধিক অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী রয়েছে বলে জানা গেছে। বৈধ কাগজপত্রের অভাবে এই অভিবাসীরা ঠিকমতো কাজ পাচ্ছে না। এখন আমিরাত সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ভিসা নবায়ন করিয়ে নিতে পারলে এই জনশক্তি সেখানে বৈধ হয়ে যাবে। অন্যথায় ফিরে আসতে হবে দেশে।
একসঙ্গে আড়াই লক্ষাধিক জনশক্তি দেশে ফিরে এলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের চাপ পড়বে, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখার বড় সহায় প্রবাসীদের রেমিট্যান্সে আকস্মিক ধস নামার আশঙ্কা দেখা দেবে। যেখানে এমনিতেই কর্মসংস্থানের অভাব, সেখানে নতুন করে আড়াই লক্ষাধিক লোক দেশের অর্থনীতিতে যে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করবে, সেটা বলাই বাহুল্য। কিছু অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সি ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে, কখনো ভ্রমণ ভিসায় বিদেশে লোক পাঠায়। এসব অবৈধ অভিবাসী দেশে ফিরে আসে না। আবার অনেকে বেশি টাকা উপার্জনের আশায় এক প্রতিষ্ঠান ছেড়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গিয়ে অবৈধ হয়ে পড়ে।
আমিরাত সরকারের ঘোষণা অবশ্যই বাংলাদেশের অর্থনীতি ও শ্রমবাজারের জন্য অশনিসংকেত। কাজেই এখনই জোর তৎপরতা চালাতে হবে। সেখানে বাংলাদেশের দূতাবাসকে সক্রিয় হতে হবে। সরকারকে এ ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে। কূটনৈতিক তৎপরতার ভেতর দিয়ে এ সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে বের করতে হবে।
No comments