খবর- চলন্ত ট্রেনের নিচে মেয়েকে নিয়ে মা'য়ের আত্মহত্যা

‘ট্রেন ছাড়তে না-ছাড়তেই বাচ্চা কোলে মেয়েটি প্লাটফর্ম থেকে নেমে পড়লেন। ইঞ্জিনটা খুব কাছাকাছি ছিল। দ্রুত বাচ্চাকে শুইয়ে দিলেন রেললাইনের ওপরে, এরপর রাখলেন নিজের মাথা। দেখলাম, খুব ধীরগতিতে ইঞ্জিনটা...।’

এটুকু বলেই দুই হাতে চোখ-মুখ ঢেকে কথা আর শেষ করতে পারলেন না শাহরিয়ার আলম।
গত ১ নভেম্বর ২০১০  সোমবার সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে ট্রেনের চাকায় কাটা পড়ে শিশুসন্তানসহ মা শাহানা ইসলামের মৃত্যুর প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন শাহরিয়ার। ৬ নম্বর প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে ঘিরে ধরা মানুষের সামনে এভাবেই ঘটনার বিবরণ দিচ্ছিলেন তিনি। রেললাইনের ওপরে তখনো পড়ে ছিল মা ও সাড়ে তিন মাসের মেয়ের খণ্ডিত দেহ।
প্লাটফর্মে লোকের জটলা থেকে একজন বলে উঠলেন, ‘এতগুলো মানুষ এই ঘটনা দেখল, কেউ ঠেকাতে পারল না?’ আরেকজন বললেন, ‘বাচ্চাটিকেও কি বাঁচানো যেত না?’ ভিড় ঠেলে শাহরিয়ারের মতো আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বললেন, ‘ইঞ্জিনটা তখন এত কাছে চলে এসেছিল যে কিছুই করার ছিল না। আর ওই মহিলা যে এভাবে ট্রেনের নিচে মাথা দেবেন, তা কি কেউ জানত নাকি?’
কমলাপুর জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী হোসেন খান বলেন, ঢাকা থেকে খুলনার পথে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি গতকাল ঠিক সময়েই স্টেশন ছেড়ে যায়। সকাল পৌনে আটটার দিকে ট্রেনটি ৬ নম্বর প্লাটফর্ম ছেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিকের রেললাইনের ওপরে শিশুসন্তানকে নিয়ে মাথা পেতে দেন এক গৃহবধূ। মা ও সন্তান ইঞ্জিনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। এর প্রায় ২০-২৫ মিনিট পরই তাঁর স্বামী এসে লাশ শনাক্ত করেন।
‘এত কম সময়ে কী করে তিনি খবর পেলেন’—প্রশ্ন করতেই পাশে বসা নিহত গৃহবধূর স্বামী আজহারুল ইসলামকে দেখিয়ে দিলেন ওসি। আজহারুল ইসলাম বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নকশা প্রণয়নকারী। ভাড়া থাকেন সবুজবাগ থানার দক্ষিণ গোড়ানে, একটি ছয়তলা বাড়ির নিচতলায়। খালি পায়ে লুঙ্গি পরে তিনি বসে ছিলেন জিআরপি থানার বেঞ্চিতে। মুখের দিকে তাকাতেই বললেন, ‘শাহানা মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল। পাবনা মানসিক হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আহসানুল হাবীব তার চিকিৎসা করছিলেন। সে মাঝেমধ্যেই আনমনা হয়ে যেত। আকাশের দিকে চেয়ে থাকত, হঠাৎ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেত। কয়েক দিন আগে ট্রেনে করে চট্টগ্রামে চলে গিয়েছিল। পরে তাকে খুঁজে আনি। একবার সারা রাত গাবতলী টার্মিনালে বসে ছিল। এসব ঘটনার পর থেকে ওকে পাহারায় রাখা হতো। একা বাড়ির বাইরে বের হতে দেওয়া হতো না। কিন্তু আজ ভোরে সে একাই বাসার তালা খুলে মেয়ে নিশাতকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে আসে।’ আজহারুল জানান, শাহানার এমন আচরণের কারণে তাঁর ছোট শ্যালিকা প্রভা (১০) বোনের সঙ্গে ঘুমাত। তিনি ঘুমোচ্ছিলেন পাশের ঘরে। সকাল সাতটার দিকে তিনি উঠে দেখেন বিছানা খালি। সঙ্গে সঙ্গে তিনি শ্যালক ঢাকার বিআরবি কেবেলর কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানকে ফোন করেন। ঘটনা আন্দাজ করে হাবিবুর রহমানকে গাবতলীতে পাঠিয়ে তিনি নিজে আসেন কমলাপুরে। ততক্ষণে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।
শাহানার ভাই হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বললেন, তাঁরা এক ভাই তিন বোন। শাহানা সবার বড়। বাড়ি কুষ্টিয়া সদর উপজেলায়। শাহানা কুষ্টিয়া ইসলামী কলেজ থেকে ইসলামি শিক্ষায় এমএ পাস করেন। কয়েক বছর আগে তাঁর প্রথম বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু সে বিয়ে টেকেনি। পরে আজহারুলের সঙ্গে ২০০৭ সালে বিয়ে হয়। হাবিবুর বলেন, ‘বেশি বয়সে বাচ্চা হওয়ার কারণে শাহানার শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এর মধ্যে গত বছর মা এবং দুই মাস আগে বাবা মারা যাওয়ায় সে আরও বেশি ভেঙে পড়ে। সমস্যাগুলো প্রবল হয়ে ওঠে। নিজের বাচ্চার প্রতি তেমন যত্ন নিত না। যেখানে-সেখানে ফেলে রাখত।’ তিনি বললেন, ‘ওকে সাধারণত তালা দিয়ে রাখা হতো, আজ কেমন করে যেন নিজেই তালা খুলে বেরিয়ে আসে।’
জানতে চাইলে শাহানার চিকিৎসক অধ্যাপক আহসানুল হাবীব প্রথম আলোকে বললেন, ‘মেয়েটি চিকিৎসা নিচ্ছিল। তার মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও ছিল।’
শাহানা ও তাঁর সাড়ে তিন মাসের শিশুসন্তানের মৃত্যুর ঘটনায় জিআরপি থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মৃতদেহ শাহানার স্বজনদের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে।
============================
গল্প- 'সেদিন অফিসে যায়নি আন্দালিব' by হাবিব আনিসুর রহমান  বিজ্ঞান আলোচনা- মানবযকৃৎ উদ্ভাবনে বিজ্ঞানীরা সফল  খবর- দিলমা রুসেফ । নারী গেরিলা থেকে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট  আলোচনা- 'সকল গৃহ হারালো যার' by তসলিমা নাসরিন  রাজনৈতিক আলোচনা- 'বিষয় কাশ্মীর-ইনসাফ ও স্বাধীনতা by অরুন্ধতী রায়  ইতিহাস- 'ক্রিস্টোফার কলম্বাসের ডায়েরি' by শাহাদুজ্জামান  বিজ্ঞান আলোচনা- নাসা আজীবনের জন্য মঙ্গলে মানুষ পাঠাবে  ফিচার- ‘বাইশ্যা নাচ' by মৃত্যুঞ্জয় রায়  আদিবাসী আলোচনা- 'বেদিয়া নাকি সাঁওতাল' by সালেক খোকন  আলোচনা- 'পর্যটন ও জীববৈচিত্র্য:প্রেক্ষাপট-বাংলাদেশ হেমায়েত উদ্দীন তালুকদার  খবর- নাগোয়া সম্মেলনে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ঐতিহাসিক চুক্তি  খবর- ছয় দশক পর দুই কোরিয়ার স্বজনদের পুনর্মিলন


প্রথম আলো এর সৌজন্যে

এই খবর'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.