স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আপনার বাহিনীকে সামলান
গত কয়েক দিনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকলাপের যে বিবরণ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, তাতে আমরা দারুণভাবে উদ্বিগ্ন এবং অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে পুলিশের হাতে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এবং তিনটি ঘটনায়ই পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তা ছাড়া পুলিশের গুলিতে মুন্সিগঞ্জে এক জেলেও নিহত হয়েছেন।
এর আগে গত ২৭ জুন হরতালের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ঘটনা ঘটেছে এবং দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টিও এর নিন্দা জানিয়েছে। উপরন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঊর্ধ্বমুখী পরিসংখ্যান তো রয়েছেই। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য সংরক্ষণ হিসাব অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম ছয় মাসে ৬১ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আলোচিত তিনটি মৃত্যুর ঘটনার মধ্যে বেশ কিছু ভয়ংকর ব্যাপার রয়েছে। তিনটি ঘটনায়ই ঘুষ চাওয়া এবং চাহিদার পরিমাণ অনুযায়ী টাকা না পাওয়ায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনটি মৃত্যুর ক্ষেত্রেই পুলিশি ভাষ্যের সঙ্গে পারিপার্শ্বিকতার মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে অন্তর্ধানের ঘটনা ঘটছে। স্বজনদের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করে নিয়ে গেছে বলা হলেও তারা তা অস্বীকার করছে। অন্তর্ধানকারী সেসব ব্যক্তি হয় নিখোঁজ রয়েছে অথবা কারও কারও লাশ পরে পাওয়া গেছে, যাকে পুলিশের পক্ষ থেকেই ‘গুপ্তহত্যা’ বলা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের ত্রৈমাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায়ও বিষয়টি আলোচিত হয় এবং এ ধরনের হত্যা বন্ধের জোর দাবিও আসে পুলিশ কর্মকর্তাদের তরফ থেকে। স্পষ্টই বোঝা যায়, তাদের অভিযোগের তীর র্যাবের দিকে। তারও আগে পুলিশের এসআই গৌতম কুমার রায় হত্যার জের ধরে হায়দার নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে র্যাব-পুলিশের মধ্যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়, যা সামাল দিতে আইজিপিকে মধ্যস্থতা বৈঠক করতে হয়।
বিদ্যমান এমন বাস্তবতায় আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আপনারা নির্বাচনী ইশতেহারে অঙ্গীকার করেছিলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা হবে। ক্ষমতায় এসে নতুন ব্যাখ্যা হাজির করে প্রমাণ করার চেষ্টা শুরু করলেন যে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘আত্মরক্ষার্থে গুলি’ করছে। আর তাতে চিহ্নিত কিছু সন্ত্রাসী মারা যাচ্ছে। এখন দেখুন, আপনার সেই বক্তব্যে আপনার বাহিনীগুলো কতটা প্রশ্রয় পেয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তারা এমনকি একে অন্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে নেমেছে। যেন মনে হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আর জনতার মধ্যে যুদ্ধ চলছে। কিন্তু এটা তো কোনো পুলিশি রাষ্ট্র নয়। তাহলে বুঝতে হয়, যা ঘটছে তা আপনাদের নির্দেশেই ঘটছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এমন অবস্থা সৃষ্টি হলে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে তার জবাবদিহি তো আমাদেরও করতে হয়! কিন্তু এ দায় আমরা কেন নেব?
ইতিমধ্যে এ ঘটনাগুলো তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে, যেমনটা এর আগেও অসংখ্যবার করা হয়েছে। কিন্তু জনপ্রতিনিধি হিসেবে আপনার নিশ্চয়ই ভালো জানার কথা, এ ধরনের তদন্ত উদ্যোগের প্রতি জনসাধারণের বিন্দুমাত্র আস্থা নেই। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের দিয়েই যদি তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়, তবে তাতে আস্থা থাকে কী করে বলুন? তা ছাড়া এ ধরনের অতীত ঘটনার তদন্ত ফলাফল তো জনগণকে সেভাবে জানানোও হয়নি।
পরিবহনকর্মী মজিবরের শিশুসন্তান ইকবালের কথা একবার চিন্তা করেছেন! বাবা তাকে নিয়ে গেলেন ফুটবল কিনে দিতে। তারপর সে নিজের চোখের সামনে দেখল, বাবাকে পুলিশ ফুটবলের মতো লাথি মারছে, পরদিন নদীতে ভাসতে দেখল বাবার লাশ। আপনারা যে ভাষ্য তাকে শোনালেন, তার সত্য-মিথ্যা তার চেয়ে ভালো আর কে জানে! একবার ভেবে দেখুন তো, আপনারা যারা রাষ্ট্রযন্ত্রের চালকের আসনে বসে আছেন, ওই ছোট্ট শিশুটিকে আপনারা কী বার্তা দিলেন!
আপনি নিশ্চয়ই পত্রিকায় দেখেছেন, পুলিশের আচরণ সম্পর্কে শিশুটির বর্ণনা প্রসঙ্গে পুলিশের মিরপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপকমিশনার সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের বক্তব্য। তিনি বলেছেন, ‘সাত বছর হোক আর পাঁচ বছরই হোক, তার কথা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। তারা ছোট থেকেই ক্রাইমের সঙ্গে থাকতে থাকতে সে রকম হয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে আমার বিষয়টি সত্য বলে মনে হয় না।’ কিন্তু আপনি হয়তো দেখেননি, প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ওই প্রতিবেদনের বিপরীতে জনৈক পাঠক মন্তব্য লিখেছেন, ‘পুলিশের মহামান্য উপকমিশনার মতামত দিয়েছেন, আমাদের অবশ্যই তাঁর মহামূল্যবান মতামতকে সেলাম ঠুকে গ্রহণ করতে হবে...এখন সাহারা আপা মহামান্য পুলিশ কমিশনারকে সমর্থন করে দু-চারটি কথা বললেই মামলা ডিসমিস।’
মাননীয় মন্ত্রী, সময় এসেছে, আপনার বাহিনীকে সামলান, এখনই!
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক): মানবাধিকার ও আইন-সহায়তা সংগঠন।
এর আগে গত ২৭ জুন হরতালের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ঘটনা ঘটেছে এবং দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টিও এর নিন্দা জানিয়েছে। উপরন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঊর্ধ্বমুখী পরিসংখ্যান তো রয়েছেই। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য সংরক্ষণ হিসাব অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম ছয় মাসে ৬১ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আলোচিত তিনটি মৃত্যুর ঘটনার মধ্যে বেশ কিছু ভয়ংকর ব্যাপার রয়েছে। তিনটি ঘটনায়ই ঘুষ চাওয়া এবং চাহিদার পরিমাণ অনুযায়ী টাকা না পাওয়ায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনটি মৃত্যুর ক্ষেত্রেই পুলিশি ভাষ্যের সঙ্গে পারিপার্শ্বিকতার মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে অন্তর্ধানের ঘটনা ঘটছে। স্বজনদের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করে নিয়ে গেছে বলা হলেও তারা তা অস্বীকার করছে। অন্তর্ধানকারী সেসব ব্যক্তি হয় নিখোঁজ রয়েছে অথবা কারও কারও লাশ পরে পাওয়া গেছে, যাকে পুলিশের পক্ষ থেকেই ‘গুপ্তহত্যা’ বলা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের ত্রৈমাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায়ও বিষয়টি আলোচিত হয় এবং এ ধরনের হত্যা বন্ধের জোর দাবিও আসে পুলিশ কর্মকর্তাদের তরফ থেকে। স্পষ্টই বোঝা যায়, তাদের অভিযোগের তীর র্যাবের দিকে। তারও আগে পুলিশের এসআই গৌতম কুমার রায় হত্যার জের ধরে হায়দার নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে র্যাব-পুলিশের মধ্যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়, যা সামাল দিতে আইজিপিকে মধ্যস্থতা বৈঠক করতে হয়।
বিদ্যমান এমন বাস্তবতায় আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আপনারা নির্বাচনী ইশতেহারে অঙ্গীকার করেছিলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা হবে। ক্ষমতায় এসে নতুন ব্যাখ্যা হাজির করে প্রমাণ করার চেষ্টা শুরু করলেন যে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘আত্মরক্ষার্থে গুলি’ করছে। আর তাতে চিহ্নিত কিছু সন্ত্রাসী মারা যাচ্ছে। এখন দেখুন, আপনার সেই বক্তব্যে আপনার বাহিনীগুলো কতটা প্রশ্রয় পেয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তারা এমনকি একে অন্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে নেমেছে। যেন মনে হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আর জনতার মধ্যে যুদ্ধ চলছে। কিন্তু এটা তো কোনো পুলিশি রাষ্ট্র নয়। তাহলে বুঝতে হয়, যা ঘটছে তা আপনাদের নির্দেশেই ঘটছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এমন অবস্থা সৃষ্টি হলে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে তার জবাবদিহি তো আমাদেরও করতে হয়! কিন্তু এ দায় আমরা কেন নেব?
ইতিমধ্যে এ ঘটনাগুলো তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে, যেমনটা এর আগেও অসংখ্যবার করা হয়েছে। কিন্তু জনপ্রতিনিধি হিসেবে আপনার নিশ্চয়ই ভালো জানার কথা, এ ধরনের তদন্ত উদ্যোগের প্রতি জনসাধারণের বিন্দুমাত্র আস্থা নেই। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের দিয়েই যদি তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়, তবে তাতে আস্থা থাকে কী করে বলুন? তা ছাড়া এ ধরনের অতীত ঘটনার তদন্ত ফলাফল তো জনগণকে সেভাবে জানানোও হয়নি।
পরিবহনকর্মী মজিবরের শিশুসন্তান ইকবালের কথা একবার চিন্তা করেছেন! বাবা তাকে নিয়ে গেলেন ফুটবল কিনে দিতে। তারপর সে নিজের চোখের সামনে দেখল, বাবাকে পুলিশ ফুটবলের মতো লাথি মারছে, পরদিন নদীতে ভাসতে দেখল বাবার লাশ। আপনারা যে ভাষ্য তাকে শোনালেন, তার সত্য-মিথ্যা তার চেয়ে ভালো আর কে জানে! একবার ভেবে দেখুন তো, আপনারা যারা রাষ্ট্রযন্ত্রের চালকের আসনে বসে আছেন, ওই ছোট্ট শিশুটিকে আপনারা কী বার্তা দিলেন!
আপনি নিশ্চয়ই পত্রিকায় দেখেছেন, পুলিশের আচরণ সম্পর্কে শিশুটির বর্ণনা প্রসঙ্গে পুলিশের মিরপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপকমিশনার সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের বক্তব্য। তিনি বলেছেন, ‘সাত বছর হোক আর পাঁচ বছরই হোক, তার কথা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। তারা ছোট থেকেই ক্রাইমের সঙ্গে থাকতে থাকতে সে রকম হয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে আমার বিষয়টি সত্য বলে মনে হয় না।’ কিন্তু আপনি হয়তো দেখেননি, প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ওই প্রতিবেদনের বিপরীতে জনৈক পাঠক মন্তব্য লিখেছেন, ‘পুলিশের মহামান্য উপকমিশনার মতামত দিয়েছেন, আমাদের অবশ্যই তাঁর মহামূল্যবান মতামতকে সেলাম ঠুকে গ্রহণ করতে হবে...এখন সাহারা আপা মহামান্য পুলিশ কমিশনারকে সমর্থন করে দু-চারটি কথা বললেই মামলা ডিসমিস।’
মাননীয় মন্ত্রী, সময় এসেছে, আপনার বাহিনীকে সামলান, এখনই!
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক): মানবাধিকার ও আইন-সহায়তা সংগঠন।
No comments