বাঙালি এক নম্বর, সাঁওতাল দুই নম্বর -এই আজব ও লজ্জাকর জাতিভেদ চলতে পারে না
কামেল মারান্ডি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীরা তাঁর কাছ থেকে বিদ্যা গ্রহণ করে; তিনি তাদের মনুষ্যত্বের শিক্ষা দেন, মানুষের সমতার কথা বলেন। তাতে কারও কোনো আপত্তি দেখা যায়নি। কিন্তু কামেল মারান্ডি শিক্ষক হলেও জাতিতে সাঁওতাল। নিজের জাত-পরিচয় তিনি যত না মনে রাখেন, তার চেয়ে বেশি মনে রাখে সাঁওতাল সমাজের চারপাশে ঘিরে থাকা বাঙালি সমাজ। তাই সম্মানিত শিক্ষক হলেও হোটেলে তাঁকে খাবার দেওয়া হয় না। যদিও বা কখনো দেওয়া হয়, তখন ব্যবহার করা হয় ‘দুই নম্বর থালাবাসন’; অর্থাৎ যে পাতে বাঙালিরা খায় তা এক নম্বর, আর সাঁওতালদের জন্য বরাদ্দ আলাদা করা দুই নম্বর বাসনকোসন। বিংশ শতাব্দীতে বসে, মানুষে মানুষে মেশামেশির এই বিশ্বায়নের যুগে এখনো বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিকৃষ্ট জাতিভেদ-প্রথা সংস্কৃতির মধ্যে মিশে আছে; এই সত্য কঠিন ও লজ্জাজনক।
রাজশাহীর তানোর উপজেলায় কেবল কামেল মারান্ডিই নন, সব সাঁওতালকেই প্রতিনিয়ত এমন অপমান আর লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়। গত রোববারের প্রথম আলোর সংবাদে দেখা যাচ্ছে, সেখানকার শিক্ষিত কি অশিক্ষিত, শিক্ষক কি ছাত্র—কেউই এই অভিশাপ থেকে মুক্ত নন। তানোর ডিগ্রি কলেজ ছাত্রাবাসের যে সাঁওতাল শিক্ষার্থীরা অন্যদের সঙ্গে এক ক্লাসে বসেন, এক ছাত্রাবাসে থাকেন; কেবল খাওয়ার বেলায় তাঁদের থালাবাসন আলাদা করে দেওয়া হয়। দুঃখে, অভিমানে, প্রতিবাদে তাই গত মাসে সেখানকার ১১ জন সাঁওতাল ছাত্র ছাত্রাবাস ছেড়ে চলে যান। কিন্তু কোথায় যাবেন তাঁরা? তাঁদের প্রতি হীন দৃষ্টি দেওয়ার মতো মানুষ তো সবখানেই। এটি কেবল বৈষম্য নয়, অপমানকর অস্পৃশ্যতা।
কামেল মারান্ডিকে খাবার না দেওয়ার প্রতিবাদে তানোরের মুক্তমনা মানুষেরা মানববন্ধন করেছেন, জেলা প্রশাসন থেকে হোটেল ব্যবসায়ীদের সতর্কও করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যে বাঙালি হোটেল ব্যবসায়ী ও তাদের বাঙালি খদ্দেররা কিংবা ছাত্রাবাসের যে বাঙালি ছাত্ররা সাঁওতালদের সঙ্গে খেতে নারাজ, তাদের হীন মানসিকতার বদল তো শাসিয়ে করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলন, সরকারের সজাগ দৃষ্টি এবং গণমাধ্যমের জাতপাতবিরোধী প্রচার। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কলকাতার শিক্ষিত আধুনিক সমাজ ত্যাগ করে শেষ জীবনে সাঁওতালপল্লিতে গিয়ে শান্তি খুঁজেছিলেন। এর শত বছর পরও সাঁওতালসহ বাংলাদেশের আদিবাসী নাগরিকদের সমান মনে না করার মানসিকতা টিকে থাকা তাই খুবই লজ্জাকর ব্যাপার।
সব মানুষের রক্তই যেমন সমান লাল, তেমনি বাঙালি এবং সাঁওতালসহ সব আদিবাসীও মানুষ হিসেবে সমান। এই সত্য ভুলে যাওয়া সভ্যতাবিরোধী কাজ।
রাজশাহীর তানোর উপজেলায় কেবল কামেল মারান্ডিই নন, সব সাঁওতালকেই প্রতিনিয়ত এমন অপমান আর লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়। গত রোববারের প্রথম আলোর সংবাদে দেখা যাচ্ছে, সেখানকার শিক্ষিত কি অশিক্ষিত, শিক্ষক কি ছাত্র—কেউই এই অভিশাপ থেকে মুক্ত নন। তানোর ডিগ্রি কলেজ ছাত্রাবাসের যে সাঁওতাল শিক্ষার্থীরা অন্যদের সঙ্গে এক ক্লাসে বসেন, এক ছাত্রাবাসে থাকেন; কেবল খাওয়ার বেলায় তাঁদের থালাবাসন আলাদা করে দেওয়া হয়। দুঃখে, অভিমানে, প্রতিবাদে তাই গত মাসে সেখানকার ১১ জন সাঁওতাল ছাত্র ছাত্রাবাস ছেড়ে চলে যান। কিন্তু কোথায় যাবেন তাঁরা? তাঁদের প্রতি হীন দৃষ্টি দেওয়ার মতো মানুষ তো সবখানেই। এটি কেবল বৈষম্য নয়, অপমানকর অস্পৃশ্যতা।
কামেল মারান্ডিকে খাবার না দেওয়ার প্রতিবাদে তানোরের মুক্তমনা মানুষেরা মানববন্ধন করেছেন, জেলা প্রশাসন থেকে হোটেল ব্যবসায়ীদের সতর্কও করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যে বাঙালি হোটেল ব্যবসায়ী ও তাদের বাঙালি খদ্দেররা কিংবা ছাত্রাবাসের যে বাঙালি ছাত্ররা সাঁওতালদের সঙ্গে খেতে নারাজ, তাদের হীন মানসিকতার বদল তো শাসিয়ে করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলন, সরকারের সজাগ দৃষ্টি এবং গণমাধ্যমের জাতপাতবিরোধী প্রচার। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কলকাতার শিক্ষিত আধুনিক সমাজ ত্যাগ করে শেষ জীবনে সাঁওতালপল্লিতে গিয়ে শান্তি খুঁজেছিলেন। এর শত বছর পরও সাঁওতালসহ বাংলাদেশের আদিবাসী নাগরিকদের সমান মনে না করার মানসিকতা টিকে থাকা তাই খুবই লজ্জাকর ব্যাপার।
সব মানুষের রক্তই যেমন সমান লাল, তেমনি বাঙালি এবং সাঁওতালসহ সব আদিবাসীও মানুষ হিসেবে সমান। এই সত্য ভুলে যাওয়া সভ্যতাবিরোধী কাজ।
No comments