দিল্লি বৈঠকে অভিন্ন নদীগুলো নিয়ে আমাদের দাবি -পানিসম্পদ by পাভেলপার্থ
দুনিয়ার ২০০টির বেশি নদী-অববাহিকা দুনিয়ার মোট ভূমির ৫০ শতাংশ। প্রতিটি অববাহিকাই ভৌগোলিকভাবে দু-তিনটি রাষ্ট্রের অধীন এবং যেখানে দুনিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষের বসতি। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, নীল, নাইজার, কঙ্গো, জাম্বেসি, দানিয়ুব, রাইন, টাইগ্রিস, মেকং, পারানা-প্যারাগুয়ের মতো অভিন্ন আন্তর্জাতিক নদীগুলোর রয়েছে বৃহত্তম অববাহিকা। এসব আন্তর্জাতিক বৃহত্তম নদী-অববাহিকার জন্য কোনো ন্যায্য, সমতাকেন্দ্রিক, নদীর প্রতিবেশবান্ধব, বিশ্বস্ত, সর্বোপযোগী উদ্যোগ ও যৌথ নীতি-পরিকল্পনা করা খুবই কঠিন ব্যাপার। প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নদীর উত্সমুখের কাছাকাছি উজানের রাষ্ট্রগুলো থেকে পানি অধিকারের জায়গায় বঞ্চিত থেকে যায় ভাটির দিকের রাষ্ট্রগুলো। ভারত-বাংলাদেশ কোনো দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও উন্নয়ন পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রেও দুটি দেশের অভিন্ন নদীকেন্দ্রিক সম-অধিকারের বিষয়টি যথাযথভাবে বিবেচনায় রাখাও হয়তো একটি ‘জটিল’ ব্যাপার। কিন্তু এই ‘জটিল’ ব্যাপারটিকে দ্বিরাষ্ট্রিক আমলাতান্ত্রিক ‘জটিলতা’র ভেতর দিয়ে বিবেচনা না করে দুটি দেশের প্রাণ ও প্রকৃতির সর্বস্বান্ত হওয়া ও নদীগুলোর ন্যায়বিচারের জায়গা থেকে ভাবা দরকার। জলবায়ু বিপর্যয়ের এ সময়ে এই উদ্যোগ আসন্ন দিল্লি বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারতের কেন্দ্রীয় মনোযোগ ও বিবেচনা হিসেবেই শুরু হতে পারে। এরই মধ্যে জানা গেছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে দিল্লি বৈঠকে তিস্তা নদীর পানি বণ্টনসহ বাংলাদেশের ৫৪টি অভিন্ন সীমান্ত নদীবিষয়ক প্রস্তাব কার্যকরভাবে তুলে ধরবেন। ভাটির দেশ হিসেবে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, কেবল তিস্তা নয়, দিল্লি বৈঠক উজান-ভাটির সব অভিন্ন নদীজীবনের রক্তাক্ত আখ্যান বিবেচনা করবে, নিশ্চিত করবে অভিন্ন জলধারার ন্যায্য সুরক্ষা।
এক লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বাংলাদেশের ২৩০টি নদীর মধ্যে ৫৭টি প্রধান নদীর উত্স সীমান্তবর্তী রাষ্ট্র ভারত ও মিয়ানমারের পাহাড়ি অঞ্চল। উজান থেকে ভাটিতে বয়ে যাওয়া জলপ্রবাহের মাধ্যমে বাংলাদেশের নদীপ্রণালী এক জটিল জলসার্কিট তৈরি করেছে, যা দুনিয়ার অন্য কোনো নদীপ্রণালী দিয়ে বোঝা সম্ভব নয়। ১৯৫৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান পানি ও শক্তি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়। সে কর্তৃপক্ষ ১৯৬৪ সালে বিদেশি ও দেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়োজিত করে ২০ বছর মেয়াদি পানি উন্নয়নের জন্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কিন্তু এ পর্যন্ত দেশে বন্যা, জলাবদ্ধতা, পাহাড়ি ঢল, অকাল বন্যা, খরা-পানিশূন্যতা নিয়ে পানি ব্যবস্থাপনার বিষয়ে কোনো কর্ম-উদ্যোগ দেশের অভিন্ন সীমান্ত জলধারাগুলোয় প্রতিবেশীয় রাজনৈতিক অধিকারের জায়গা থেকে নিশ্চিত করা হয়নি। উজান ও ভাটির উভয় রাষ্ট্রই অন্যায়ভাবে অভিন্ন নদীগুলো শাসন করেছে, উন্নয়নের নামে নৃশংস কায়দায় খর্ব করেছে অভিন্ন জলধারার গতি-প্রকৃতি।
১৯৭২ সালে গঠিত ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন এখন পর্যন্ত দেশের সব অভিন্ন নদ-নদীর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেনি। যৌথ নদী কমিশনে ভারত বরাবরই কর্তৃত্ববাদী ভূমিকা বজায় রাখে, অথচ থাকার কথা সমমর্যাদাসম্পন্ন বন্ধুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সম্পর্ক। যৌথ নদী কমিশনের বাংলাদেশ শাখা ভারতের অসন্তুষ্টি এড়ানোর জন্য গঙ্গা ও ফারাক্কা বিষয়ে সাম্প্রতিক তথ্য ও উপাত্ত নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে নিরুত্সাহিত করে। বলা যায়, সর্বশেষ ফারাক্কা চুক্তি স্বাক্ষরের মাত্র কয়েক মাস পর, ১৯৯৬-৯৭ সালের শুকনো মৌসুমে গঙ্গার প্রবাহ ছয় হাজার কিউসেকে নেমে আসে, যা গঙ্গার পানিপ্রবাহের এ যাবত্কালের সর্বনিম্ন রেকর্ড। ভারত, নেপাল, চীন (তিব্বত) ও বাংলাদেশের আড়াই হাজার কিলোমিটার নিয়ে বিস্তৃত গঙ্গা ৫০ কোটি মানুষের জীবিকার উত্স। পৃথিবীর জনসংখ্যার আট ভাগের এক ভাগ এই নদীর ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৪১ ভাগ মানুষ গঙ্গার পানির ওপর নির্ভরশীল। গঙ্গা-অববাহিকায় বাংলাদেশের ৪০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল—যা দেশের মোট এলাকার ৩৬ ভাগ—এই অভিন্ন গঙ্গা নদীর পানির ওপর নির্ভরশীল। গঙ্গা নদী থেকে বাংলাদেশের মোট প্রবাহিত মিঠাপানির ১৮ শতাংশ আসে। ব্রহ্মপুত্র থেকে দেশের ভূপৃষ্ঠের পানিপ্রবাহের ৬৭ ভাগ আসে এবং মেঘনার মাধ্যমে ১৫ ভাগ আসে। শুকনো মৌসুমে গঙ্গার পানিপ্রবাহ দ্রুত পড়ে যায়, ভারত উজানে গঙ্গার পানি একতরফা প্রত্যাহারের ফলে আমাদের উত্তরাঞ্চলে দেখা দেয় খরা ও বিপর্যয়। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫৪টি সীমান্ত নদীতে ভাঙনের ফলে বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত ভূমি হারাচ্ছে। হাওরাঞ্চল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে মেঘালয়ের পাহাড়ি বালিতে। ১৯৯৬ সালে নেপালের সঙ্গে মহাকালী চুক্তি সইয়ের বছর ভারত-বাংলাদেশ গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু পরে বাংলাদেশের সঙ্গে অভিন্ন নদীগুলো নিয়ে কোনো ধরনের নীতিগত আলোচনা ছাড়াই ২০০২ সালে ভারত পাঁচ হাজার ৬০০ বিলিয়ন ভারতীয় রুপির আন্তনদী সংযোগ প্রকল্পের (আরএলপি) পরিকল্পনা ঘোষণা করে। পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুর রাজ্যে বরাক নদীর ওপরে বিতর্কিত টিপাইমুখ জলবিদ্যুত্ উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে, যার ফলে নিশ্চিহ্ন হওয়ার আশঙ্কায় দিন গুনছে বাংলাদেশের মেঘনা অববাহিকা। কুশিয়ারা-সুরমা-মেঘনা মিলেই দেশের দীর্ঘতম নদীপ্রণালী, যার মূল উত্স বরাক নদী। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশও অভিন্ন নদ-নদী আপন কায়দায় রক্ষা করতে পারেনি। কখনো জলবিদ্যুত্ উত্পাদনের নামে, কখনো বাঁধ-স্লুইসগেট-ব্যারেজ-কালভার্ট-রাস্তা-সেতু-নদী ভরাট-ইজারা-দখল-নগরায়ণের মাধ্যমে বিরাট ক্ষতি করা হয়েছে দেশের নদীপ্রণালীর।
আসন্ন দিল্লি বৈঠকে অভিন্ন নদীর বিষয়ে আলোচনায় বসার আগে বাংলাদেশকে নিজের ভূগোলের ভেতর বয়ে চলা অভিন্ন নদী বিষয়ে স্পষ্ট-ন্যায্য-নদীবান্ধব উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের নদীনির্ভর জনগণের প্রস্তাব ও সুপারিশকে গুরুত্ব দিয়ে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর বিষয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনায় বসা জরুরি। টিপাইমুখ বাঁধ, আন্তনদী সংযোগ প্রকল্পসহ ভারত ভূগোলের সঙ্গে সম্পর্কিত দেশের সব অভিন্ন নদীর বিষয়েই সরকারকে দিল্লি বৈঠকে নদীবান্ধব সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জাতিসংঘ নদী কনভেনশন, রামসার ঘোষণা, আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য সনদগুলো বিবেচনা করে যৌথ নদী কমিশনকে কার্যকর করাসহ জলবায়ু বিপর্যয়ের বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে দিল্লি বৈঠক সফল করার জন্য সরকারের প্রতিবেশবান্ধব প্রস্তুতি জরুরি। সাত হাজার কিলোমিটার লম্বা পৃথিবীর দীর্ঘতম নদী নীল তিন মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার অববাহিকা তৈরি করেছে, যেখানে ১৫০ মিলিয়ন মানুষের বাস। বুরুন্ডি, কঙ্গো, মিসর, ইরিত্রিয়া, কেনিয়া, ইথিওপিয়া, রুয়ান্ডা, সুদান, তানজানিয়া, উগান্ডার মতো ১০টি রাষ্ট্র এই নদীর পানি ব্যবহার করে। আর আমাদের মাত্র দুটি রাষ্ট্র ৫৪টি অভিন্ন নদীর বিষয়ে কি কোনো কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না নতুন বছরের সূচনালগ্নে?
পাভেল পার্থ: প্রতিবেশবিষয়ক গবেষক।
animistbangla@yahoo.com
এক লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বাংলাদেশের ২৩০টি নদীর মধ্যে ৫৭টি প্রধান নদীর উত্স সীমান্তবর্তী রাষ্ট্র ভারত ও মিয়ানমারের পাহাড়ি অঞ্চল। উজান থেকে ভাটিতে বয়ে যাওয়া জলপ্রবাহের মাধ্যমে বাংলাদেশের নদীপ্রণালী এক জটিল জলসার্কিট তৈরি করেছে, যা দুনিয়ার অন্য কোনো নদীপ্রণালী দিয়ে বোঝা সম্ভব নয়। ১৯৫৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান পানি ও শক্তি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়। সে কর্তৃপক্ষ ১৯৬৪ সালে বিদেশি ও দেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়োজিত করে ২০ বছর মেয়াদি পানি উন্নয়নের জন্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কিন্তু এ পর্যন্ত দেশে বন্যা, জলাবদ্ধতা, পাহাড়ি ঢল, অকাল বন্যা, খরা-পানিশূন্যতা নিয়ে পানি ব্যবস্থাপনার বিষয়ে কোনো কর্ম-উদ্যোগ দেশের অভিন্ন সীমান্ত জলধারাগুলোয় প্রতিবেশীয় রাজনৈতিক অধিকারের জায়গা থেকে নিশ্চিত করা হয়নি। উজান ও ভাটির উভয় রাষ্ট্রই অন্যায়ভাবে অভিন্ন নদীগুলো শাসন করেছে, উন্নয়নের নামে নৃশংস কায়দায় খর্ব করেছে অভিন্ন জলধারার গতি-প্রকৃতি।
১৯৭২ সালে গঠিত ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন এখন পর্যন্ত দেশের সব অভিন্ন নদ-নদীর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেনি। যৌথ নদী কমিশনে ভারত বরাবরই কর্তৃত্ববাদী ভূমিকা বজায় রাখে, অথচ থাকার কথা সমমর্যাদাসম্পন্ন বন্ধুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সম্পর্ক। যৌথ নদী কমিশনের বাংলাদেশ শাখা ভারতের অসন্তুষ্টি এড়ানোর জন্য গঙ্গা ও ফারাক্কা বিষয়ে সাম্প্রতিক তথ্য ও উপাত্ত নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে নিরুত্সাহিত করে। বলা যায়, সর্বশেষ ফারাক্কা চুক্তি স্বাক্ষরের মাত্র কয়েক মাস পর, ১৯৯৬-৯৭ সালের শুকনো মৌসুমে গঙ্গার প্রবাহ ছয় হাজার কিউসেকে নেমে আসে, যা গঙ্গার পানিপ্রবাহের এ যাবত্কালের সর্বনিম্ন রেকর্ড। ভারত, নেপাল, চীন (তিব্বত) ও বাংলাদেশের আড়াই হাজার কিলোমিটার নিয়ে বিস্তৃত গঙ্গা ৫০ কোটি মানুষের জীবিকার উত্স। পৃথিবীর জনসংখ্যার আট ভাগের এক ভাগ এই নদীর ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৪১ ভাগ মানুষ গঙ্গার পানির ওপর নির্ভরশীল। গঙ্গা-অববাহিকায় বাংলাদেশের ৪০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল—যা দেশের মোট এলাকার ৩৬ ভাগ—এই অভিন্ন গঙ্গা নদীর পানির ওপর নির্ভরশীল। গঙ্গা নদী থেকে বাংলাদেশের মোট প্রবাহিত মিঠাপানির ১৮ শতাংশ আসে। ব্রহ্মপুত্র থেকে দেশের ভূপৃষ্ঠের পানিপ্রবাহের ৬৭ ভাগ আসে এবং মেঘনার মাধ্যমে ১৫ ভাগ আসে। শুকনো মৌসুমে গঙ্গার পানিপ্রবাহ দ্রুত পড়ে যায়, ভারত উজানে গঙ্গার পানি একতরফা প্রত্যাহারের ফলে আমাদের উত্তরাঞ্চলে দেখা দেয় খরা ও বিপর্যয়। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫৪টি সীমান্ত নদীতে ভাঙনের ফলে বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত ভূমি হারাচ্ছে। হাওরাঞ্চল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে মেঘালয়ের পাহাড়ি বালিতে। ১৯৯৬ সালে নেপালের সঙ্গে মহাকালী চুক্তি সইয়ের বছর ভারত-বাংলাদেশ গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু পরে বাংলাদেশের সঙ্গে অভিন্ন নদীগুলো নিয়ে কোনো ধরনের নীতিগত আলোচনা ছাড়াই ২০০২ সালে ভারত পাঁচ হাজার ৬০০ বিলিয়ন ভারতীয় রুপির আন্তনদী সংযোগ প্রকল্পের (আরএলপি) পরিকল্পনা ঘোষণা করে। পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুর রাজ্যে বরাক নদীর ওপরে বিতর্কিত টিপাইমুখ জলবিদ্যুত্ উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে, যার ফলে নিশ্চিহ্ন হওয়ার আশঙ্কায় দিন গুনছে বাংলাদেশের মেঘনা অববাহিকা। কুশিয়ারা-সুরমা-মেঘনা মিলেই দেশের দীর্ঘতম নদীপ্রণালী, যার মূল উত্স বরাক নদী। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশও অভিন্ন নদ-নদী আপন কায়দায় রক্ষা করতে পারেনি। কখনো জলবিদ্যুত্ উত্পাদনের নামে, কখনো বাঁধ-স্লুইসগেট-ব্যারেজ-কালভার্ট-রাস্তা-সেতু-নদী ভরাট-ইজারা-দখল-নগরায়ণের মাধ্যমে বিরাট ক্ষতি করা হয়েছে দেশের নদীপ্রণালীর।
আসন্ন দিল্লি বৈঠকে অভিন্ন নদীর বিষয়ে আলোচনায় বসার আগে বাংলাদেশকে নিজের ভূগোলের ভেতর বয়ে চলা অভিন্ন নদী বিষয়ে স্পষ্ট-ন্যায্য-নদীবান্ধব উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের নদীনির্ভর জনগণের প্রস্তাব ও সুপারিশকে গুরুত্ব দিয়ে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর বিষয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনায় বসা জরুরি। টিপাইমুখ বাঁধ, আন্তনদী সংযোগ প্রকল্পসহ ভারত ভূগোলের সঙ্গে সম্পর্কিত দেশের সব অভিন্ন নদীর বিষয়েই সরকারকে দিল্লি বৈঠকে নদীবান্ধব সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জাতিসংঘ নদী কনভেনশন, রামসার ঘোষণা, আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য সনদগুলো বিবেচনা করে যৌথ নদী কমিশনকে কার্যকর করাসহ জলবায়ু বিপর্যয়ের বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে দিল্লি বৈঠক সফল করার জন্য সরকারের প্রতিবেশবান্ধব প্রস্তুতি জরুরি। সাত হাজার কিলোমিটার লম্বা পৃথিবীর দীর্ঘতম নদী নীল তিন মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার অববাহিকা তৈরি করেছে, যেখানে ১৫০ মিলিয়ন মানুষের বাস। বুরুন্ডি, কঙ্গো, মিসর, ইরিত্রিয়া, কেনিয়া, ইথিওপিয়া, রুয়ান্ডা, সুদান, তানজানিয়া, উগান্ডার মতো ১০টি রাষ্ট্র এই নদীর পানি ব্যবহার করে। আর আমাদের মাত্র দুটি রাষ্ট্র ৫৪টি অভিন্ন নদীর বিষয়ে কি কোনো কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না নতুন বছরের সূচনালগ্নে?
পাভেল পার্থ: প্রতিবেশবিষয়ক গবেষক।
animistbangla@yahoo.com
No comments