মানসম্মত শিক্ষার দিকনির্দেশনা চাই -শিক্ষা by মধুমিতা চক্রবর্তী
শিক্ষানীতি নিয়ে অনেক খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ ছিল। সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতায় গৃহীত সিদ্ধান্ত নিরঙ্কুশ হয়, নির্ভরযোগ্য হয়। সব দায়দায়িত্ব একা সরকার কিংবা সরকার মনোনীত বিশেষজ্ঞদের বহন করতে হয় না। এভাবে সর্বজনস্বীকৃত একটা নীতিমালা প্রণীত হলে পরবর্তী সময় সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে নীতিমালা বদলে যাওয়ার আশঙ্কাটাও থাকে না।
কিন্তু এত বিস্তৃত একটা বিষয়ে আগাম কোনো মন্তব্য করতে যাওয়াটাও খুব কঠিন কাজ। দেশপ্রেমিক, নিঃস্বার্থ, বিদগ্ধ ব্যক্তিরা মিলে প্রচণ্ড খাটাখাটুনি করে যেটা দাঁড় করিয়েছেন, ব্যক্তিগতভাবে তার এক বা একাধিক অংশের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করা যতটা সহজ, নিশ্চিত কোনো ভবিষ্যদ্বাণী করা ততটা সহজ বলে মনে হয় না। বাংলাদেশে এই একটাই সম্ভবত ক্ষেত্র, যাকে ঘিরে প্রতিটি সরকারের আমলেই এবং প্রায় প্রতিনিয়তই একের পর এক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পরিবর্ধন-পরিমার্জন, পরিবর্তনের অন্তহীন প্রচেষ্টা চলতে থাকে। এত দিনে তবু একটা কিছু স্থায়ী সুরাহা হতে যাচ্ছে—এ রকম একটা আশাবাদ নিয়ে তাই শুধু প্রতীক্ষায় রয়েছি।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, প্রকৃতিপ্রেমী, পরম শ্রদ্ধেয় দ্বিজেন শর্মার ‘আমলাতান্ত্রিক গাঁট’ শিরোনামের লেখাটি পড়ে নীতিমালাবহির্ভূত অথচ শিক্ষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত বিষয়টির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের পাশাপাশি নিজস্ব মূল্যায়ন তুলে ধরার লোভ সংবরণ করা গেল না।
প্রশ্ন নীতি বা পরিকল্পনা নিয়ে নয়, প্রশ্ন থেকে যায় বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে। খোলনলচে সুদ্ধ বদলানো না গেলে সে ক্ষেত্রে ঝুঁকির আশঙ্কা থেকেই যায়। দ্বিজেন শর্মার বর্ণনায় সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যথার্থ চিত্রই ফুটে উঠেছে। সরকারি চাকরিতে বদলির বিধান অতি সাধারণ একটি ঘটনা। যিনি শিরীষ গাছগুলো লাগিয়েছেন, গাছ পাহারা দিয়ে বসে থাকার উপায় তাঁর নেই। কিন্তু তাই বলে সৃজনশীল বা উন্নয়নমূলক কাজের ধারাবাহিকতা থাকবে না? তাহলে প্রতিবারই তো সেই শূন্য থেকে শুরু করতে হয়। আবার বদলির বিধান সবার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য না হওয়ায় একই প্রতিষ্ঠানে প্রচুর শিকড় ছড়িয়ে কেউ কেউ বিশাল মহীরুহ হয়ে ওঠেন, প্রতিষ্ঠানকে তখন তাঁরা পৈতৃক সম্পত্তির মতো ভাবেন। বর্ধন-সংরক্ষণ দূরে থাক, গাছের একটি পাতাও তাঁদের ইশারা ছাড়া নড়তে পারে না। তাই মূলোত্পাটন কিংবা মূলতন্ত্রের অবাধ বিস্তার কোনোটাই কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। মূলোত্পাটন ভালো কাজের গতিরোধ করে আর মূলের অবাধ বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অবৈধ ক্ষমতায়নেরও বিস্তার ঘটে। শিক্ষা কার্যক্রমে সরাসরি এই বিষয়গুলোর প্রভাব রয়েছে। অনার্স-মাস্টার্স পাঠদানে দক্ষ একজন শিক্ষককে হঠাত্ করে কোনো এক অচেনা ছোট্ট কলেজে বদলি করা হলে সেই শিক্ষকের ‘উল্টোরথ’ তখন হতাশার গহ্বরে মুখ থুবড়ে পড়ে। তেমনি একই কলেজে বছরের পর বছর যিনি একই ভঙ্গিতে চর্বিত-চর্বণে অভ্যস্ত, তাঁর চিন্তায়-চেতনায় খোলা হাওয়ার ঝাপটা লাগে না। এভাবে গোটা পদ্ধতির মধ্যেই এক ধরনের স্থবিরতা এসে যায়। এ রকম অবস্থায় ‘সকল কুঞ্জ-কানন ঘুরে’ যত মহার্ঘ্য উপাদানই জড়ো করা হোক না কেন, সুফল প্রাপ্তির ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ থেকে যায়।
দুঃশাসন, দুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, পলায়ন, পশ্চাত্গমন—যত ধরনের ত্রুটি আছে, গোটা ব্যবস্থার মধ্যে সবকিছু একেবারে জেঁকে বসেছে। অনেকটা ‘বায়োলজিক্যাল সিস্টেম’-এর অনুকরণে তারই প্রতিলিপিকরণ ঘটতে থাকে। তাই অতীতেও দেখা গেছে, বিচ্ছিন্নভাবে নেওয়া বিভিন্ন গঠনমূলক পদক্ষেপ মাঝপথে থমকে গেছে অথবা ‘কাজীর গরু’র মতো চালু থেকেছে। এ ক্ষেত্রে তাই বাস্তবায়ন-উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিতকরণের ব্যবস্থাকে নীতিমালার অংশ করে নেওয়া উচিত।
দ্বিজেন শর্মার একটি হতাশাব্যঞ্জক মতের ক্ষেত্রে আমি অবশ্য দ্বিমত পোষণ করি। শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন-কাঠামো নির্ধারণের মাধ্যমে তাঁদের আর্থিক দৈন্য নিরসনের উদ্যোগ নিলে প্রাইভেট কোচিংয়ের ভয়াবহ দৌরাত্ম্য অনেকখানি কমবে বলে আমার বিশ্বাস, প্রাচুর্যের অসম প্রতিযোগিতার এই বাজারে শিক্ষকেরা তো আর ‘লাউটা, কুমড়োটা’র সওদাগরি দিয়ে দিন কাটাতে পারেন না! কারও ব্যক্তিগত অসততা, অসাধুতা, লোভ, দুর্নীতিপরায়ণতা চিহ্নিত করার ব্যবস্থাগুলোও অবশ্য পদ্ধতিগত হওয়া চাই। নইলে দু-একটি পচা আমের জন্য ঝুড়িশুদ্ধ আম নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
চরিত্র গঠনের জন্য একসময় ধর্মকে শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছিল। এখন এর সঙ্গে আরও কিছু সংযোজনের সময় এসেছে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে মর্যাদাবোধ, কর্তব্যপরায়ণতা, সমাজসচেতনতা, দেশপ্রেম জাগ্রত করার উপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ করা একান্ত জরুরি। পরিবারের ছোট-বড় সবার সঙ্গে, প্রতিবেশীর সঙ্গে, পরিবেশ-পারিপার্শ্বের সঙ্গে নিজেকে সাবলীলভাবে সম্পৃক্ত রাখার শিক্ষা নিয়ে যেন বেড়ে উঠতে পারে আমাদের শিশুরা, তারও পদ্ধতিগত ব্যবস্থা রাখা উচিত। শিক্ষার্থীদের মনোবিশ্লেষণ এবং মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা সমাধানেরও পর্যাপ্ত সুযোগ থাকা উচিত।
কিছুদিন আগে, শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত অতি বড় একটি প্রতিষ্ঠানের গুদামে তখন আগুন জ্বলছে। পত্রিকার প্রতিবেদনে নাশকতামূলক কার্যের আভাস পাওয়া গিয়েছে। ক্রন্দনরত এক প্রেস মালিকের জবানিতে ‘সরকারের একটা শুভ উদ্যোগ, আমাদের এত পরিশ্রম। বিনামূল্যে বই পাওয়ার জন্য লক্ষ-কোটি শিক্ষার্থী অভিভাবকের প্রতীক্ষা সব ধূলিসাত্ হয়ে যাচ্ছে।’ শিক্ষাক্ষেত্রের সমস্যা যে কতটা ভয়াবহ, সর্বব্যাপী তারই এক নিকৃষ্ট উদাহরণ এই ঘটনাটি। বিন্দুমাত্র দেশপ্রেম থাকলে ব্যক্তিগোষ্ঠী কিংবা রাজনৈতিক কোনো স্বার্থেই এমন ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটাতে পারে না কেউ। এ রকম ভয়ঙ্কর কালো থাবা যা একাত্তরে দেখেছি, আজকের দিনেও তা-ই আমাদের তাড়া করে ফিরছে! ভয় নেই, আমাদের আছে অপ্রতিরোধ্য বিজয়ের উত্তরাধিকার। একাত্তরের মতোই সব অশুভ শক্তির কালো থাবা গুঁড়িয়ে দেবে আমাদের নতুন প্রজন্ম। নিজের বিবেকের কাছে সেই অঙ্গীকারে আবদ্ধ থাকতে হবে দেশপ্রেমিক প্রত্যেক নাগরিককে। শুভ-সুন্দরের প্রত্যাশায় সবার মধ্যে গড়ে তুলতে হবে বজ্র-কঠিন ঐক্য। শিক্ষানীতির পূর্ণাঙ্গ আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে তেমনই একটি শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে ওঠার প্রত্যাশা রাখি।
মধুমিতা চক্রবর্তী: সহযোগী অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ।
সংশোধনী
গত সোমবার ‘ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক’ শীর্ষক সম্পাদকীয়র পঞ্চম প্যারায় ভুলক্রমে ‘তিস্তামুখ’ ছাপা হয়েছে, আসলে হবে ‘টিপাইমুখ’ এবং আনিসুল হকের ‘অরণ্যে রোদন’ কলামের দ্বিতীয় প্যারায় ছাপা হয়েছে ‘১৯৭১’, পড়তে হবে ‘১৯৫১’। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত। —বি. স.
কিন্তু এত বিস্তৃত একটা বিষয়ে আগাম কোনো মন্তব্য করতে যাওয়াটাও খুব কঠিন কাজ। দেশপ্রেমিক, নিঃস্বার্থ, বিদগ্ধ ব্যক্তিরা মিলে প্রচণ্ড খাটাখাটুনি করে যেটা দাঁড় করিয়েছেন, ব্যক্তিগতভাবে তার এক বা একাধিক অংশের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করা যতটা সহজ, নিশ্চিত কোনো ভবিষ্যদ্বাণী করা ততটা সহজ বলে মনে হয় না। বাংলাদেশে এই একটাই সম্ভবত ক্ষেত্র, যাকে ঘিরে প্রতিটি সরকারের আমলেই এবং প্রায় প্রতিনিয়তই একের পর এক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পরিবর্ধন-পরিমার্জন, পরিবর্তনের অন্তহীন প্রচেষ্টা চলতে থাকে। এত দিনে তবু একটা কিছু স্থায়ী সুরাহা হতে যাচ্ছে—এ রকম একটা আশাবাদ নিয়ে তাই শুধু প্রতীক্ষায় রয়েছি।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, প্রকৃতিপ্রেমী, পরম শ্রদ্ধেয় দ্বিজেন শর্মার ‘আমলাতান্ত্রিক গাঁট’ শিরোনামের লেখাটি পড়ে নীতিমালাবহির্ভূত অথচ শিক্ষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত বিষয়টির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের পাশাপাশি নিজস্ব মূল্যায়ন তুলে ধরার লোভ সংবরণ করা গেল না।
প্রশ্ন নীতি বা পরিকল্পনা নিয়ে নয়, প্রশ্ন থেকে যায় বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে। খোলনলচে সুদ্ধ বদলানো না গেলে সে ক্ষেত্রে ঝুঁকির আশঙ্কা থেকেই যায়। দ্বিজেন শর্মার বর্ণনায় সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যথার্থ চিত্রই ফুটে উঠেছে। সরকারি চাকরিতে বদলির বিধান অতি সাধারণ একটি ঘটনা। যিনি শিরীষ গাছগুলো লাগিয়েছেন, গাছ পাহারা দিয়ে বসে থাকার উপায় তাঁর নেই। কিন্তু তাই বলে সৃজনশীল বা উন্নয়নমূলক কাজের ধারাবাহিকতা থাকবে না? তাহলে প্রতিবারই তো সেই শূন্য থেকে শুরু করতে হয়। আবার বদলির বিধান সবার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য না হওয়ায় একই প্রতিষ্ঠানে প্রচুর শিকড় ছড়িয়ে কেউ কেউ বিশাল মহীরুহ হয়ে ওঠেন, প্রতিষ্ঠানকে তখন তাঁরা পৈতৃক সম্পত্তির মতো ভাবেন। বর্ধন-সংরক্ষণ দূরে থাক, গাছের একটি পাতাও তাঁদের ইশারা ছাড়া নড়তে পারে না। তাই মূলোত্পাটন কিংবা মূলতন্ত্রের অবাধ বিস্তার কোনোটাই কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। মূলোত্পাটন ভালো কাজের গতিরোধ করে আর মূলের অবাধ বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অবৈধ ক্ষমতায়নেরও বিস্তার ঘটে। শিক্ষা কার্যক্রমে সরাসরি এই বিষয়গুলোর প্রভাব রয়েছে। অনার্স-মাস্টার্স পাঠদানে দক্ষ একজন শিক্ষককে হঠাত্ করে কোনো এক অচেনা ছোট্ট কলেজে বদলি করা হলে সেই শিক্ষকের ‘উল্টোরথ’ তখন হতাশার গহ্বরে মুখ থুবড়ে পড়ে। তেমনি একই কলেজে বছরের পর বছর যিনি একই ভঙ্গিতে চর্বিত-চর্বণে অভ্যস্ত, তাঁর চিন্তায়-চেতনায় খোলা হাওয়ার ঝাপটা লাগে না। এভাবে গোটা পদ্ধতির মধ্যেই এক ধরনের স্থবিরতা এসে যায়। এ রকম অবস্থায় ‘সকল কুঞ্জ-কানন ঘুরে’ যত মহার্ঘ্য উপাদানই জড়ো করা হোক না কেন, সুফল প্রাপ্তির ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ থেকে যায়।
দুঃশাসন, দুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, পলায়ন, পশ্চাত্গমন—যত ধরনের ত্রুটি আছে, গোটা ব্যবস্থার মধ্যে সবকিছু একেবারে জেঁকে বসেছে। অনেকটা ‘বায়োলজিক্যাল সিস্টেম’-এর অনুকরণে তারই প্রতিলিপিকরণ ঘটতে থাকে। তাই অতীতেও দেখা গেছে, বিচ্ছিন্নভাবে নেওয়া বিভিন্ন গঠনমূলক পদক্ষেপ মাঝপথে থমকে গেছে অথবা ‘কাজীর গরু’র মতো চালু থেকেছে। এ ক্ষেত্রে তাই বাস্তবায়ন-উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিতকরণের ব্যবস্থাকে নীতিমালার অংশ করে নেওয়া উচিত।
দ্বিজেন শর্মার একটি হতাশাব্যঞ্জক মতের ক্ষেত্রে আমি অবশ্য দ্বিমত পোষণ করি। শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন-কাঠামো নির্ধারণের মাধ্যমে তাঁদের আর্থিক দৈন্য নিরসনের উদ্যোগ নিলে প্রাইভেট কোচিংয়ের ভয়াবহ দৌরাত্ম্য অনেকখানি কমবে বলে আমার বিশ্বাস, প্রাচুর্যের অসম প্রতিযোগিতার এই বাজারে শিক্ষকেরা তো আর ‘লাউটা, কুমড়োটা’র সওদাগরি দিয়ে দিন কাটাতে পারেন না! কারও ব্যক্তিগত অসততা, অসাধুতা, লোভ, দুর্নীতিপরায়ণতা চিহ্নিত করার ব্যবস্থাগুলোও অবশ্য পদ্ধতিগত হওয়া চাই। নইলে দু-একটি পচা আমের জন্য ঝুড়িশুদ্ধ আম নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
চরিত্র গঠনের জন্য একসময় ধর্মকে শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছিল। এখন এর সঙ্গে আরও কিছু সংযোজনের সময় এসেছে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে মর্যাদাবোধ, কর্তব্যপরায়ণতা, সমাজসচেতনতা, দেশপ্রেম জাগ্রত করার উপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ করা একান্ত জরুরি। পরিবারের ছোট-বড় সবার সঙ্গে, প্রতিবেশীর সঙ্গে, পরিবেশ-পারিপার্শ্বের সঙ্গে নিজেকে সাবলীলভাবে সম্পৃক্ত রাখার শিক্ষা নিয়ে যেন বেড়ে উঠতে পারে আমাদের শিশুরা, তারও পদ্ধতিগত ব্যবস্থা রাখা উচিত। শিক্ষার্থীদের মনোবিশ্লেষণ এবং মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা সমাধানেরও পর্যাপ্ত সুযোগ থাকা উচিত।
কিছুদিন আগে, শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত অতি বড় একটি প্রতিষ্ঠানের গুদামে তখন আগুন জ্বলছে। পত্রিকার প্রতিবেদনে নাশকতামূলক কার্যের আভাস পাওয়া গিয়েছে। ক্রন্দনরত এক প্রেস মালিকের জবানিতে ‘সরকারের একটা শুভ উদ্যোগ, আমাদের এত পরিশ্রম। বিনামূল্যে বই পাওয়ার জন্য লক্ষ-কোটি শিক্ষার্থী অভিভাবকের প্রতীক্ষা সব ধূলিসাত্ হয়ে যাচ্ছে।’ শিক্ষাক্ষেত্রের সমস্যা যে কতটা ভয়াবহ, সর্বব্যাপী তারই এক নিকৃষ্ট উদাহরণ এই ঘটনাটি। বিন্দুমাত্র দেশপ্রেম থাকলে ব্যক্তিগোষ্ঠী কিংবা রাজনৈতিক কোনো স্বার্থেই এমন ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটাতে পারে না কেউ। এ রকম ভয়ঙ্কর কালো থাবা যা একাত্তরে দেখেছি, আজকের দিনেও তা-ই আমাদের তাড়া করে ফিরছে! ভয় নেই, আমাদের আছে অপ্রতিরোধ্য বিজয়ের উত্তরাধিকার। একাত্তরের মতোই সব অশুভ শক্তির কালো থাবা গুঁড়িয়ে দেবে আমাদের নতুন প্রজন্ম। নিজের বিবেকের কাছে সেই অঙ্গীকারে আবদ্ধ থাকতে হবে দেশপ্রেমিক প্রত্যেক নাগরিককে। শুভ-সুন্দরের প্রত্যাশায় সবার মধ্যে গড়ে তুলতে হবে বজ্র-কঠিন ঐক্য। শিক্ষানীতির পূর্ণাঙ্গ আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে তেমনই একটি শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে ওঠার প্রত্যাশা রাখি।
মধুমিতা চক্রবর্তী: সহযোগী অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ।
সংশোধনী
গত সোমবার ‘ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক’ শীর্ষক সম্পাদকীয়র পঞ্চম প্যারায় ভুলক্রমে ‘তিস্তামুখ’ ছাপা হয়েছে, আসলে হবে ‘টিপাইমুখ’ এবং আনিসুল হকের ‘অরণ্যে রোদন’ কলামের দ্বিতীয় প্যারায় ছাপা হয়েছে ‘১৯৭১’, পড়তে হবে ‘১৯৫১’। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত। —বি. স.
No comments