বিএনপির চট্টগ্রাম সম্মেলন -এ ধরনের বিশৃঙ্খলা কাম্য ছিল না


বিএনপির চট্টগ্রাম শাখার সম্মেলন যেভাবে পণ্ড হলো, তাতে দলটির অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা ও গণতান্ত্রিক চর্চার ক্ষেত্রে দুর্বলতার দিকটিই স্পষ্ট হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে এ ধরনের মারামারি ও গোলযোগ কোনোভাবেই প্রত্যাশিত ছিল না। সম্মেলনে উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চেষ্টা সত্ত্বেও এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারা আর কিছু নয়, দলের চেয়ে উপদলীয় প্রবণতারই জয়।
সাধারণ নির্বাচন হলো গণতন্ত্রের জীবনীশক্তি, আর দলের অভ্যন্তরীণ নির্বাচন তথা সম্মেলন হলো রাজনৈতিক দলের নবায়িত হওয়ার সুযোগ। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা বরং পুরোনো ধারার দলাদলি প্রবণতারই প্রকাশ ঘটাল। একটি গণতান্ত্রিক দলে ভিন্নমত ও নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। দুঃখজনকভাবে চট্টগ্রামে বিএনপির সম্মেলনে সে ধরনের কিছু দেখা গেল না। যা দেখা গেল তা শক্তির প্রদর্শনী ছাড়া আর কিছুই নয়। এ ধরনের কিছু ঘটতে পারে তা দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আগেই অনুমান করা উচিত ছিল। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া বা এ ধরনের কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক করে দেওয়া যেত। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছ থেকে কঠোর সংকেত গেলে হয়তো এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যেত।
বিএনপি বা আওয়ামী লীগ বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের কাউন্সিল দলগুলোর নিজস্ব বিষয় হলেও তা জাতীয় রাজনীতির মধ্যে অভিঘাত ফেলে। গণতন্ত্র যে কারণে রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে বিকশিত হয়, সে কারণেই সুস্থ রাজনৈতিক চর্চা ও দলীয় শৃঙ্খলা গণতন্ত্রের বিকাশেরই শর্ত। তাই বড় দলের ভেতর গণতন্ত্র চর্চা করা না-করার বিষয়টি কেবল দলের নিজস্ব বিষয় নয়। দলের মধ্যে ব্যক্তির প্রাধান্য এবং সিদ্ধান্ত প্রণয়নে সর্বস্তরের কর্মীদের অংশগ্রহণের অভাব যে আখেরে দলের অভ্যন্তরীণ সংহতিরই ক্ষতি করে, বিএনপির চট্টগ্রাম সম্মেলন পণ্ডের ঘটনা তারই ইঙ্গিত হয়ে রইল।
১৬ বছর পর বিএনপির কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আগে তৃণমূল পর্যায়ের কাউন্সিল শেষ করতে হবে। চলমান এ ধরনের কাউন্সিল শেষে কেন্দ্রীয় সম্মেলন হওয়ার কথা আগামী ৮ ডিসেম্বর। সম্মেলন করে গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য নির্বাচন কমিশনের দেওয়া সময়সীমা মেনেই সম্মেলনের এই তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) অনুসরণে তা যাতে যথাযথভাবে যথাসময়েই সম্পন্ন হয়, সে বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব আরও সজাগ থাকবেন, এটাই প্রত্যাশিত। আশা করা যায়, নির্বাচন কমিশনের শর্ত অনুযায়ী এই অধ্যাদেশ মেনে দল পরিচালনার নীতিকে যুগোপযোগী ও স্বচ্ছ করা হবে এবং এ ধরনের বিশৃঙ্খল কার্যকলাপের পুনরাবৃত্তি আর দেখতে হবে না।

No comments

Powered by Blogger.