ডিজিটাল বাংলাদেশ এক বিরাট চ্যালেঞ্জ -তথ্যপ্রযুক্তি by মশিউল আলম
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ আইন ২০০৯ অনুযায়ী ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের কোনো অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন নয়, কিন্তু বাস্তবে এখনো অনুসারী ছাত্রসংগঠন। খবর বেরিয়েছে, ছাত্রলীগ ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। এর সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনায় কম্পিউটার-প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে অঙ্গীকার ঘোষণা করেছে, ছাত্রলীগের এ সিদ্ধান্ত সেটাকে মহিমান্বিত করার প্রয়াস বলে ধারণা করা যায়। সম্ভবত আওয়ামী লীগ নিজে ও তার সব অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনও ছাত্রলীগের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ডিজিটাল যুগে প্রবেশের উদেযাগ নেবে।
কথা হলো, ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে কী। আওয়ামী লীগ সরকার ‘রূপকল্প ২০২১: ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে যে ‘জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি নীতিমালা ২০০৯’ গ্রহণ ও তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন ২০০৯’ (সংশোধিত) পাস করেছে, তার লক্ষ্য কী? নীতিমালায় উদ্দেশ্যের তালিকায় লেখা হয়েছে: উত্পাদনশীলতা বাড়ানো, জনসেবা প্রদানে স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা, জবাবদিহিতা ও অধিকতর দক্ষতা অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানি বাড়ানো, সব নাগরিকের জন্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা ইত্যাদি। এসবের মধ্য দিয়ে আমরা যে বড় লক্ষ্যে পৌঁছাব, সেটা হলো ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করা। আরও দূরপ্রসারী লক্ষ্য: ৩০ বছরের মধ্যে এই দেশকে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সারিতে নিয়ে যাওয়া। সামাজিক সাম্য বা সোশ্যাল ইকুইটির কথাও বলা হয়েছে: সবাইকে নিয়ে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়পরায়ণতা, সাম্য, লিঙ্গসমতা, সমসুযোগ ও সম-অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
নীতিমালার আওতায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, সব মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনের জন্য মোট ৩০৬টি করণীয় বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে স্বল্প (১৮ মাস বা তার কম), মধ্য (পাঁচ বছর বা তার কম) ও দীর্ঘ (১০ বছর বা তার কম) মেয়াদে। এসবের মধ্যে স্বল্প মেয়াদে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করণীয় বিষয়গুলোও চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন—কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ই-সিটিজেন সেবাগুলোতে প্রবেশাধিকারের বন্দোবস্ত করতে বেসরকারি উদ্যোগে ই-সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনার ব্যবস্থা করা, স্বল্পোন্নত এলাকা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সাশ্রয়ী ব্যান্ডউইডথের মাধ্যমে প্রাসঙ্গিক বিষয়াদি, মূল্যবিষয়ক তথ্যাদি প্রদানের ব্যবস্থা করা। দেশের যেকোনো স্থান থেকে জীবিকা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সেবাগুলো অনলাইনে পাওয়ার ব্যবস্থা করা। যথাযথ ইলেকট্রনিক-মাধ্যম ব্যবহার করে সরকারি পর্যায়ের যাবতীয় তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা। জনগণের মতামত গ্রহণের উদ্দেশ্যে সব নতুন প্রণীতব্য নীতিমালা সরকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা। সব উন্মুক্ত দরপত্র অনলাইনে প্রকাশের ব্যবস্থা করা। সরকারি ক্রয় ও নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি সংশ্লিষ্ট ওয়েব পোর্টালে প্রকাশের জন্য একটি আইন প্রণয়ন; দরপত্র ও চাকরির দরখাস্ত অনলাইনে জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা। সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে পূর্বনির্ধারিত ও আন্তর্জতাকিভাবে গ্রহণযোগ্য মানের বিদ্যুত্-সাশ্রয়ী আইসিটি যন্ত্রপাতি ক্রয় বাধ্যতামূলক করা। সব সরকারি দপ্তরে দাপ্তরিক যোগাযোগ, নথি প্রক্রিয়াকরণ, তথ্য আদান-প্রদান ও সংরক্ষণে ইলেকট্রনিক-পদ্ধতির ব্যবহার বাড়িয়ে কাগজের ব্যবহার কমানো। কৃষক ও কৃষিপণ্যের ব্যবসার জন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবস্থা করা। উচ্চগতির ডেটা সংযোগ ও অটোমেশনের মাধ্যমে সরকারি কর্মকাণ্ডের বিকেন্দ্রীকরণ, ইত্যাদি।
ভাবনা, উদ্দেশ্য, কৌশলগত বিষয় ও সময়সীমাভিত্তিক কর্মপরিকল্পনার সমন্বয়ে ২১৪ পৃষ্ঠার নীতিমালাটি বিপুল কর্মজজ্ঞের এক বিরাট প্রতিশ্রুতি। এর অগ্রাধিকারগুলোর ১০ শতাংশও যদি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়, তাহলে দারিদ্র্যক্লিষ্ট, পশ্চাত্পদ, বিষম বাংলাদেশের সামগ্রিক চেহারা বদলে যেতে পারে। একটি ভালো নীতিমালা তৈরি করা হয়তো খুব কঠিন নয়; কিন্তু সে নীতিমালার বাস্তবায়ন অত্যন্ত দুরূহ কাজ। স্মরণ করা যেতে পারে, ২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দেশে প্রথম একটি জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি নীতিমালা বা আইসিটি পলিসি প্রণয়ন করেছিল। ২০০৬ সালের মধ্যে একটি ‘জ্ঞানভিত্তিক সমাজ’ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ব্যক্ত করা হয়েছিল সে নীতিমালায়। তারা তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন ২০০৬ প্রণয়ন ও জারি করেছিল। কিন্তু সেই নীতিমালা বা আইনের বাস্তবায়ন ঘটেনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের তথ্যপ্রযুক্তির দিকে বেশি মনোযোগের প্রকাশ ঘটেছে আগেই। ১৯৯৬—২০০১ মেয়াদে তারা এ ক্ষেত্রে কতকগুলো ভালো কাজ করেছিল: কম্পিউটারের ওপর থেকে শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, সাবমেরিন কেবেলর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক তথ্য-মহাসড়কে বাংলাদেশকে যুক্ত করা, ডিজিটাল টেলিফোন চালু করা, মোবাইল ফোন ব্যবসায় একটি কোম্পানির মনোপলির অবসান ঘটিয়ে আরও তিনটি কোম্পানিকে লাইসেন্স দেওয়া তাদের সেই আমলেই ঘটেছে। ১৯৯৯ সালে তারা জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিবিষয়ক নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে একটি কমিটিও গঠন করেছিল।
সেই ধারাবাহিকতায় এবারের আওয়ামী লীগ সরকারের নয়-দশ মাসে সরকারি সূত্রে কিছু অগ্রগতির খবর ও পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে: সব জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ইন্টারনেট সংযোগসহ ল্যাপটপ কম্পিউটার সরবরাহ করা হয়েছে। ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের মূল্য ৩৩ শতাংশ কমানো হয়েছে। অপটিক ফাইবার নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য সরকার একটি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দিয়েছে। দেশে বর্তমানে ৫০ লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। ঢাকা, সিলেট, পাবনা ও রাজশাহীতে মানুষ মোবাইল ফোন বা অপারেটর কোম্পানির মাধ্যমে বিদ্যুত্, গ্যাস ও টেলিফোন বিল পরিশোধ করতে পারছে। দেশের বিভিন্ন সরকারি স্কুল-কলেজে ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া শুরু হয়েছে। মোবাইল ফোনে ভর্তি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন শুরু করেছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বাবিদ্যালয়। সেখানে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সীমিত পরিসরে ওয়াইম্যাক্স জোন স্থাপন করা হয়েছে। মেডিকেল কলেজগুলোর ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রথমবারের মতো মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। আগামী বছরের জুন থেকে সরকারি ক্রয়, নির্মাণ ইত্যাদি খাতে দরপত্র ব্যবস্থাপনায় কম্পিউটার-প্রযুক্তির ব্যবহার চালু করা হবে, এমন একটি সিদ্ধান্ত সরকার ঘোষণা করেছে।
ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার একটা পদ্ধতিমাত্র। উত্তম, যুগোপযোগী পদ্ধতি সন্দেহ নেই। কিন্তু পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে কী লক্ষ্য অজর্ন করতে চাই, সেই পথে কী কী প্রতিবন্ধকতা দেখা দিতে পারে তা ভেবে দেখা, উপলব্ধি করা প্রয়োজন। ক্ষমতাসীনের ক্ষমতার ব্যবহার, তাদের নিজেদের মানসিক গড়ন, জনগণের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের দিকগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে ন্যায়পরায়ণতা, স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা, জবাবদিহিতার কথা নীতিমালায় বলা হয়েছে, সেসব বলতে সরকার বা ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তিরা আসলে কী বোঝেন। ক্ষমতার চরম কেন্দ্রীকরণ যে মূল সমস্যাগুলোর একটি, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে তার অবসান ঘটিয়ে ‘সরকারি কর্মকাণ্ডের বিকেন্দ্রীকরণ’ যে মানসিকতার কারণেই সহজ নয়, তা উপলব্ধি করা খুব প্রয়োজন। এ দেশে সরকারি প্রশাসনযন্ত্র একটা শক্ত পিরামিড, যার শীর্ষবিন্দুতে বস্তুত সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত। এখানে সরকারি প্রশাসনযন্ত্র অনুঘটকের কাজ করে না, করে উল্টোটা। মুহাম্মদ ইউনূস একবার স্লোগান তুলেছিলেন: পথের বাধা সরিয়ে নিন, মানুষকে এগিয়ে যেতে দিন। কিন্তু জনগণের পথের বাধা সরকারি প্রশাসনযন্ত্র সহজে সরিয়ে নিতে চায় না।
ডিজিটাল বাংলাদেশ যদি একটা ন্যায়ভিত্তিক, উন্নত, সুখী, শান্তিময় বাংলাদেশের রূপকল্প হয়, তাহলে সেই বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রথমেই হাত দিতে হবে সরকারি প্রশাসনযন্ত্রে। সরকারি কর্মসম্পাদনে বা জনপ্রশাসনে যে প্রাচীন ঢিমেতেতালা ভাব কাজ করে, যে অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা, অস্বচ্ছতা, কায়েমি গোপনীয়তা প্রশাসনযন্ত্র বা আমলাতন্ত্রকে প্রকৃত অর্থে জনসেবামুখী হতে বাধাগ্রস্ত করে, হয়রানির কারণ হয়, সেসব কাটিয়ে উঠে সত্যিকারের জনমুখীনতা ও গতিশীলতা অর্জন করার লক্ষ্যেই প্রথমত ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নিতে হবে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ অপরিহার্য: স্থানীয় সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকারের শাখা অফিসের মতো করে রাখলে ডিজিটাল প্রযুক্তি দিয়ে কাজের কাজ কিছুই হবে না। কী কী করা দরকার, নীতিমালায় লেখা আছে। তার বাইরেও অভিজ্ঞ, সমঝদার মানুষ আছেন। রেগুলেটরি রিফর্মস কমিশনের সুপারিশগুলো অবহেলা করায় সরকারের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটেনি।
কখনো কখনো কোনো কোনো শব্দ তার প্রাথমিক বা মূল অর্থ হারিয়ে ফেলে, কখনো বা নেতিবাচক, ব্যঙ্গাত্মক অর্থ পেয়ে যায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের শুরুর দিকে ‘সংস্কার’ ছিল উত্সাহব্যঞ্জক শব্দ। মাঝামাঝি সময়ে সে উত্সাহে ভাটা দেখা দেয়, শেষের দিকে কেউ কেউ সংস্কার ব্যবহার করতেন ব্যঙ্গাত্মক অর্থে। রাজনীতির অঙ্গনে ‘সংস্কারপন্থী’ মানে দাঁড়িয়েছিল ‘বিশ্বাসঘাতক’।
বর্তমান সরকারের অবশিষ্ট মেয়াদে ‘ডিজিটাল’ শব্দটির পরিণতি কী হয়, তা দেখার বিষয়। ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা এগিয়ে নেওয়ার পর নতুন সময়ের নাম হয়েছে ‘ডিজিটাল টাইম’। সরকার কিন্তু বলেনি, এই সময় ডিজিটাল টাইম নামে পরিচিত হবে। এই সরকার যদি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার ঘোষণা না করত, তাহলে হয়তো নতুন সময়ের নাম হতো ‘আওয়ামী টাইম’।
শুধু ঘড়ির কাঁটার কারণে নয়, সরকারের সামগ্রিক পারফরম্যান্স বা কর্মসম্পাদনের পরিণতিতে যদি ‘ডিজিটাল’ শব্দটি ‘আওয়ামী’র সমার্থক হয়ে ওঠে এবং তা ঘটে নেতিবাচক অর্থে, তবে তা হবে দুঃখের বিষয়। এশিয়া ফাউন্ডেশনের জরিপ বলছে, ১০ মাসে সরকারের জনপ্রিয়তা কমে গেছে ২৩ শতাংশ। দ্রব্যমূল্য বেড়ে চলেছে; মানুষের আয় বাড়ছে না। প্রচুরসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান নেই; প্রতিদিন বাড়ছে বেকার তরুণ-যুবকের সংখ্যা। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণসহ নানা ধরনের সংঘবদ্ধ অপরাধ বাড়ছে। মানুষ যেটুকু শান্তি, স্বস্তি ও নিরাপত্তা চায়, তা পাচ্ছে না। অর্থনীতির পূর্বাভাস ভালো নয়, কিন্তু সরকার সেটা মানতে নারাজ। অনিময়, দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি কী মাত্রায় হচ্ছে, ক্ষমতার অপব্যহার করে কে কতটা নিজের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটাচ্ছেন, তা জানার জন্য হয়তো এর পরের অন্য একটা সরকার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। দুদক বরাবরের মতো অতীতে ঘটে যাওয়া দুর্নীতির অভিযোগগুলোর বাছাই করা অংশ নিয়ে ব্যস্ত। বর্তমান নিয়ে তাদের মাথাব্যথা কখনো ছিল না, এখনো নেই।
সবকিছু মিলিয়ে যদি জনগণের জীবনযাত্রায় একটুখানি উন্নতি না ঘটে, আর যদি ক্ষমতাসীনেরা সদলবলে ধনে-প্রতিপত্তিতে আরও ফুলেফেঁপে ওঠেন, তাহলে ডিজিটাল বাংলাদেশের অর্থ একদম বাঁকা হয়ে যাবে। ডিজিটাল দুর্নীতিবাজ, ডিজিটাল টেন্ডারবাজ ইত্যাদি কথা ছড়িয়ে পড়বে। বলা হবে, সরকার ডিজিটালি ফেইল করেছে। এই বিবেচনায় ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে যে উত্সাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে শুরু হয়েছে, তা সুসমন্বিতভাবে সামনের বছরগুলোতে অব্যাহত থাকলে অনেক সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। বিশেষত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহ ও তত্পরতায় মনে হয়, ‘ডিজিটাল’ আন্দোলনের যে একটা অভিঘাত সৃষ্টি হবে, তার ফলে বাংলাদেশ অবশ্যই কিছুটা এগিয়ে যাবে।
মশিউল আলম: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
কথা হলো, ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে কী। আওয়ামী লীগ সরকার ‘রূপকল্প ২০২১: ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে যে ‘জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি নীতিমালা ২০০৯’ গ্রহণ ও তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন ২০০৯’ (সংশোধিত) পাস করেছে, তার লক্ষ্য কী? নীতিমালায় উদ্দেশ্যের তালিকায় লেখা হয়েছে: উত্পাদনশীলতা বাড়ানো, জনসেবা প্রদানে স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা, জবাবদিহিতা ও অধিকতর দক্ষতা অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানি বাড়ানো, সব নাগরিকের জন্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা ইত্যাদি। এসবের মধ্য দিয়ে আমরা যে বড় লক্ষ্যে পৌঁছাব, সেটা হলো ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করা। আরও দূরপ্রসারী লক্ষ্য: ৩০ বছরের মধ্যে এই দেশকে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সারিতে নিয়ে যাওয়া। সামাজিক সাম্য বা সোশ্যাল ইকুইটির কথাও বলা হয়েছে: সবাইকে নিয়ে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়পরায়ণতা, সাম্য, লিঙ্গসমতা, সমসুযোগ ও সম-অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
নীতিমালার আওতায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, সব মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনের জন্য মোট ৩০৬টি করণীয় বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে স্বল্প (১৮ মাস বা তার কম), মধ্য (পাঁচ বছর বা তার কম) ও দীর্ঘ (১০ বছর বা তার কম) মেয়াদে। এসবের মধ্যে স্বল্প মেয়াদে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করণীয় বিষয়গুলোও চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন—কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ই-সিটিজেন সেবাগুলোতে প্রবেশাধিকারের বন্দোবস্ত করতে বেসরকারি উদ্যোগে ই-সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনার ব্যবস্থা করা, স্বল্পোন্নত এলাকা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সাশ্রয়ী ব্যান্ডউইডথের মাধ্যমে প্রাসঙ্গিক বিষয়াদি, মূল্যবিষয়ক তথ্যাদি প্রদানের ব্যবস্থা করা। দেশের যেকোনো স্থান থেকে জীবিকা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সেবাগুলো অনলাইনে পাওয়ার ব্যবস্থা করা। যথাযথ ইলেকট্রনিক-মাধ্যম ব্যবহার করে সরকারি পর্যায়ের যাবতীয় তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা। জনগণের মতামত গ্রহণের উদ্দেশ্যে সব নতুন প্রণীতব্য নীতিমালা সরকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা। সব উন্মুক্ত দরপত্র অনলাইনে প্রকাশের ব্যবস্থা করা। সরকারি ক্রয় ও নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি সংশ্লিষ্ট ওয়েব পোর্টালে প্রকাশের জন্য একটি আইন প্রণয়ন; দরপত্র ও চাকরির দরখাস্ত অনলাইনে জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা। সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে পূর্বনির্ধারিত ও আন্তর্জতাকিভাবে গ্রহণযোগ্য মানের বিদ্যুত্-সাশ্রয়ী আইসিটি যন্ত্রপাতি ক্রয় বাধ্যতামূলক করা। সব সরকারি দপ্তরে দাপ্তরিক যোগাযোগ, নথি প্রক্রিয়াকরণ, তথ্য আদান-প্রদান ও সংরক্ষণে ইলেকট্রনিক-পদ্ধতির ব্যবহার বাড়িয়ে কাগজের ব্যবহার কমানো। কৃষক ও কৃষিপণ্যের ব্যবসার জন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবস্থা করা। উচ্চগতির ডেটা সংযোগ ও অটোমেশনের মাধ্যমে সরকারি কর্মকাণ্ডের বিকেন্দ্রীকরণ, ইত্যাদি।
ভাবনা, উদ্দেশ্য, কৌশলগত বিষয় ও সময়সীমাভিত্তিক কর্মপরিকল্পনার সমন্বয়ে ২১৪ পৃষ্ঠার নীতিমালাটি বিপুল কর্মজজ্ঞের এক বিরাট প্রতিশ্রুতি। এর অগ্রাধিকারগুলোর ১০ শতাংশও যদি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়, তাহলে দারিদ্র্যক্লিষ্ট, পশ্চাত্পদ, বিষম বাংলাদেশের সামগ্রিক চেহারা বদলে যেতে পারে। একটি ভালো নীতিমালা তৈরি করা হয়তো খুব কঠিন নয়; কিন্তু সে নীতিমালার বাস্তবায়ন অত্যন্ত দুরূহ কাজ। স্মরণ করা যেতে পারে, ২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দেশে প্রথম একটি জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি নীতিমালা বা আইসিটি পলিসি প্রণয়ন করেছিল। ২০০৬ সালের মধ্যে একটি ‘জ্ঞানভিত্তিক সমাজ’ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ব্যক্ত করা হয়েছিল সে নীতিমালায়। তারা তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন ২০০৬ প্রণয়ন ও জারি করেছিল। কিন্তু সেই নীতিমালা বা আইনের বাস্তবায়ন ঘটেনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের তথ্যপ্রযুক্তির দিকে বেশি মনোযোগের প্রকাশ ঘটেছে আগেই। ১৯৯৬—২০০১ মেয়াদে তারা এ ক্ষেত্রে কতকগুলো ভালো কাজ করেছিল: কম্পিউটারের ওপর থেকে শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, সাবমেরিন কেবেলর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক তথ্য-মহাসড়কে বাংলাদেশকে যুক্ত করা, ডিজিটাল টেলিফোন চালু করা, মোবাইল ফোন ব্যবসায় একটি কোম্পানির মনোপলির অবসান ঘটিয়ে আরও তিনটি কোম্পানিকে লাইসেন্স দেওয়া তাদের সেই আমলেই ঘটেছে। ১৯৯৯ সালে তারা জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিবিষয়ক নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে একটি কমিটিও গঠন করেছিল।
সেই ধারাবাহিকতায় এবারের আওয়ামী লীগ সরকারের নয়-দশ মাসে সরকারি সূত্রে কিছু অগ্রগতির খবর ও পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে: সব জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ইন্টারনেট সংযোগসহ ল্যাপটপ কম্পিউটার সরবরাহ করা হয়েছে। ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের মূল্য ৩৩ শতাংশ কমানো হয়েছে। অপটিক ফাইবার নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য সরকার একটি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দিয়েছে। দেশে বর্তমানে ৫০ লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। ঢাকা, সিলেট, পাবনা ও রাজশাহীতে মানুষ মোবাইল ফোন বা অপারেটর কোম্পানির মাধ্যমে বিদ্যুত্, গ্যাস ও টেলিফোন বিল পরিশোধ করতে পারছে। দেশের বিভিন্ন সরকারি স্কুল-কলেজে ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া শুরু হয়েছে। মোবাইল ফোনে ভর্তি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন শুরু করেছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বাবিদ্যালয়। সেখানে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সীমিত পরিসরে ওয়াইম্যাক্স জোন স্থাপন করা হয়েছে। মেডিকেল কলেজগুলোর ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রথমবারের মতো মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। আগামী বছরের জুন থেকে সরকারি ক্রয়, নির্মাণ ইত্যাদি খাতে দরপত্র ব্যবস্থাপনায় কম্পিউটার-প্রযুক্তির ব্যবহার চালু করা হবে, এমন একটি সিদ্ধান্ত সরকার ঘোষণা করেছে।
ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার একটা পদ্ধতিমাত্র। উত্তম, যুগোপযোগী পদ্ধতি সন্দেহ নেই। কিন্তু পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে কী লক্ষ্য অজর্ন করতে চাই, সেই পথে কী কী প্রতিবন্ধকতা দেখা দিতে পারে তা ভেবে দেখা, উপলব্ধি করা প্রয়োজন। ক্ষমতাসীনের ক্ষমতার ব্যবহার, তাদের নিজেদের মানসিক গড়ন, জনগণের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের দিকগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে ন্যায়পরায়ণতা, স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা, জবাবদিহিতার কথা নীতিমালায় বলা হয়েছে, সেসব বলতে সরকার বা ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তিরা আসলে কী বোঝেন। ক্ষমতার চরম কেন্দ্রীকরণ যে মূল সমস্যাগুলোর একটি, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে তার অবসান ঘটিয়ে ‘সরকারি কর্মকাণ্ডের বিকেন্দ্রীকরণ’ যে মানসিকতার কারণেই সহজ নয়, তা উপলব্ধি করা খুব প্রয়োজন। এ দেশে সরকারি প্রশাসনযন্ত্র একটা শক্ত পিরামিড, যার শীর্ষবিন্দুতে বস্তুত সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত। এখানে সরকারি প্রশাসনযন্ত্র অনুঘটকের কাজ করে না, করে উল্টোটা। মুহাম্মদ ইউনূস একবার স্লোগান তুলেছিলেন: পথের বাধা সরিয়ে নিন, মানুষকে এগিয়ে যেতে দিন। কিন্তু জনগণের পথের বাধা সরকারি প্রশাসনযন্ত্র সহজে সরিয়ে নিতে চায় না।
ডিজিটাল বাংলাদেশ যদি একটা ন্যায়ভিত্তিক, উন্নত, সুখী, শান্তিময় বাংলাদেশের রূপকল্প হয়, তাহলে সেই বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রথমেই হাত দিতে হবে সরকারি প্রশাসনযন্ত্রে। সরকারি কর্মসম্পাদনে বা জনপ্রশাসনে যে প্রাচীন ঢিমেতেতালা ভাব কাজ করে, যে অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা, অস্বচ্ছতা, কায়েমি গোপনীয়তা প্রশাসনযন্ত্র বা আমলাতন্ত্রকে প্রকৃত অর্থে জনসেবামুখী হতে বাধাগ্রস্ত করে, হয়রানির কারণ হয়, সেসব কাটিয়ে উঠে সত্যিকারের জনমুখীনতা ও গতিশীলতা অর্জন করার লক্ষ্যেই প্রথমত ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নিতে হবে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ অপরিহার্য: স্থানীয় সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকারের শাখা অফিসের মতো করে রাখলে ডিজিটাল প্রযুক্তি দিয়ে কাজের কাজ কিছুই হবে না। কী কী করা দরকার, নীতিমালায় লেখা আছে। তার বাইরেও অভিজ্ঞ, সমঝদার মানুষ আছেন। রেগুলেটরি রিফর্মস কমিশনের সুপারিশগুলো অবহেলা করায় সরকারের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটেনি।
কখনো কখনো কোনো কোনো শব্দ তার প্রাথমিক বা মূল অর্থ হারিয়ে ফেলে, কখনো বা নেতিবাচক, ব্যঙ্গাত্মক অর্থ পেয়ে যায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের শুরুর দিকে ‘সংস্কার’ ছিল উত্সাহব্যঞ্জক শব্দ। মাঝামাঝি সময়ে সে উত্সাহে ভাটা দেখা দেয়, শেষের দিকে কেউ কেউ সংস্কার ব্যবহার করতেন ব্যঙ্গাত্মক অর্থে। রাজনীতির অঙ্গনে ‘সংস্কারপন্থী’ মানে দাঁড়িয়েছিল ‘বিশ্বাসঘাতক’।
বর্তমান সরকারের অবশিষ্ট মেয়াদে ‘ডিজিটাল’ শব্দটির পরিণতি কী হয়, তা দেখার বিষয়। ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা এগিয়ে নেওয়ার পর নতুন সময়ের নাম হয়েছে ‘ডিজিটাল টাইম’। সরকার কিন্তু বলেনি, এই সময় ডিজিটাল টাইম নামে পরিচিত হবে। এই সরকার যদি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার ঘোষণা না করত, তাহলে হয়তো নতুন সময়ের নাম হতো ‘আওয়ামী টাইম’।
শুধু ঘড়ির কাঁটার কারণে নয়, সরকারের সামগ্রিক পারফরম্যান্স বা কর্মসম্পাদনের পরিণতিতে যদি ‘ডিজিটাল’ শব্দটি ‘আওয়ামী’র সমার্থক হয়ে ওঠে এবং তা ঘটে নেতিবাচক অর্থে, তবে তা হবে দুঃখের বিষয়। এশিয়া ফাউন্ডেশনের জরিপ বলছে, ১০ মাসে সরকারের জনপ্রিয়তা কমে গেছে ২৩ শতাংশ। দ্রব্যমূল্য বেড়ে চলেছে; মানুষের আয় বাড়ছে না। প্রচুরসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান নেই; প্রতিদিন বাড়ছে বেকার তরুণ-যুবকের সংখ্যা। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণসহ নানা ধরনের সংঘবদ্ধ অপরাধ বাড়ছে। মানুষ যেটুকু শান্তি, স্বস্তি ও নিরাপত্তা চায়, তা পাচ্ছে না। অর্থনীতির পূর্বাভাস ভালো নয়, কিন্তু সরকার সেটা মানতে নারাজ। অনিময়, দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি কী মাত্রায় হচ্ছে, ক্ষমতার অপব্যহার করে কে কতটা নিজের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটাচ্ছেন, তা জানার জন্য হয়তো এর পরের অন্য একটা সরকার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। দুদক বরাবরের মতো অতীতে ঘটে যাওয়া দুর্নীতির অভিযোগগুলোর বাছাই করা অংশ নিয়ে ব্যস্ত। বর্তমান নিয়ে তাদের মাথাব্যথা কখনো ছিল না, এখনো নেই।
সবকিছু মিলিয়ে যদি জনগণের জীবনযাত্রায় একটুখানি উন্নতি না ঘটে, আর যদি ক্ষমতাসীনেরা সদলবলে ধনে-প্রতিপত্তিতে আরও ফুলেফেঁপে ওঠেন, তাহলে ডিজিটাল বাংলাদেশের অর্থ একদম বাঁকা হয়ে যাবে। ডিজিটাল দুর্নীতিবাজ, ডিজিটাল টেন্ডারবাজ ইত্যাদি কথা ছড়িয়ে পড়বে। বলা হবে, সরকার ডিজিটালি ফেইল করেছে। এই বিবেচনায় ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে যে উত্সাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে শুরু হয়েছে, তা সুসমন্বিতভাবে সামনের বছরগুলোতে অব্যাহত থাকলে অনেক সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। বিশেষত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহ ও তত্পরতায় মনে হয়, ‘ডিজিটাল’ আন্দোলনের যে একটা অভিঘাত সৃষ্টি হবে, তার ফলে বাংলাদেশ অবশ্যই কিছুটা এগিয়ে যাবে।
মশিউল আলম: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
No comments