ঈদুল ফিতর সার্বজনীন আনন্দ উত্সব by মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
সারা বিশ্বে মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উত্সব পবিত্র ঈদুল ফিতর অনাবিল আনন্দ-উল্লাসের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হয়। ঈদুল ফিতরের দিনটি প্রতিটি মুসলমান নারী ও পুরুষের জীবনে অশেষ তাত্পর্য ও মহিমায় অনন্য। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস মাহে রমজানের মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা শেষে শাওয়ালের বাঁকা চাঁদ নিয়ে আসে পরম আনন্দ ও খুশির ঈদ। সিয়াম পালনের দ্বারা রোজাদার যে পরিচ্ছন্নতার ও পবিত্রতার সৌকর্য দ্বারা অভিষিক্ত হন, যে আত্মশুদ্ধি, আত্মসংযম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, উদারতা, বদান্যতা, মহানুভবতা এবং মানবতার গুণাবলি দ্বারা উদ্ভাসিত হন, এর গতিধারার প্রবাহ অক্ষুণ্ন রাখার শপথ গ্রহণের দিন হিসেবে ঈদুল ফিতর সমাগত হয়। এই দিনে যে আনন্দধারা প্রবাহিত হয়, তা অফুরন্ত পুণ্যদ্বারা পরিপূর্ণ।
ঈদ ধনী-গরিব সব মানুষের মহামিলনের বার্তা বহন করে। ঈদ মানবসমাজের ধনী-গরিব ব্যবধান ভুলিয়ে দেওয়ার একটি দিন। ঈদের দিনে সবাই সমান। এক কাতারে দাঁড়িয়ে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের একসঙ্গে নামাজ পড়ার সুযোগ এনে দেয় ঈদ। ঈদের খুশির এক অন্যতম উপকরণ হচ্ছে এ ঈদের নামাজ। ইসলামি শরিয়তে একে ওয়াজিব, মতান্তরে সুন্নাত বলে অভিহিত করা হয়। এক মাস আল্লাহপাকের হুকুমে তাঁরই সন্তুষ্টি হাসিলের উদ্দেশ্যে রোজা রাখার পর ঈদের নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে মাঠে গেলে, একে অপরের হাতে হাত, বুকে বুক রাখলে মুসলমানরা সারা মাসের রোজার কারণে ক্ষুধা-তৃষ্ণার কষ্ট ভুলে যায়। ঈদের দুই রাকাত নামাজ হলো বার্ষিক নামাজ। বছরান্তে সমাজের সর্বস্তরের মুসলমান ঈদের জামাতে সানন্দে উপস্থিত হন। এ যেন একে অন্যের সঙ্গে সাক্ষাত্ ও কুশল বিনিময়ের এক অপূর্ব সুযোগ। তখন ছোট-বড়, ধনী-গরিব, আমির-ফকির, শিক্ষিত-অশিক্ষিতের মধ্যে কোনো রকম ভেদাভেদ থাকে না। এক মাস সংযম সাধনার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির যে নিরলস প্রচেষ্টা বিশ্বাসীরা চালান, ঈদুল ফিতর এরই পূর্ণতার সুসংবাদ। ঈদুল ফিতরের তাত্পর্য হলো সিয়ামের দাবি পূর্ণ করে নতুন অবস্থায় উত্তীর্ণ হওয়ার খুশি। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সংযম সাধনার পর ঈদের দিনে রোজাদারগণ শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে যান।’
ঈদের দিনে ধনী-গরিব, বাদশা-ফকির, মালিক-শ্রমিক নির্বিশেষে সব মুসলমান এক কাতারে ঈদের নামাজ আদায় ও একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করে সাম্যের জয়ধ্বনি করে। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘যারা ঈদের নামাজ আদায় করার জন্য ময়দানে একত্রিত হয়, আল্লাহ তাআলা তাদের সম্পর্কে ফেরেশতাদের জিজ্ঞাসা করেন, যারা স্বেচ্ছায় দায়িত্ব পালন করে আজ এখানে উপস্থিত হয়েছে তাদের কি প্রতিদান দেওয়া উচিত? ফেরেশতারা বলেন, তাঁদের পুণ্যময় কাজের সম্পূর্ণ পারিশ্রমিক দেওয়া উচিত। তখন আল্লাহ তাআলা তাঁর মর্যাদার শপথ করে বলেন, অবশ্যই তিনি তাদের প্রার্থনা কবুল করবেন। এরপর আল্লাহ তাআলা ঈদের নামাজ সমাপনকারী তাঁর নেক বান্দাদের উদ্দেশে ঘোষণা করেন, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। আর তোমাদের কৃত অতীত পাপকে পুণ্যে পরিণত করে দিয়েছি।’
রোজার পুণ্যময় মাস যেন একটি স্বচ্ছ সলিল সরোবর, যার জলের নির্মলতায় মানুষের অভ্যন্তরীণ যাবতীয় কাম-ক্রোধ, লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ ও বিভেদের সব কালিমা ধুয়ে-মুছে যায়। মুসলমানগণ পুণ্যস্নাত ঈদের মধ্য দিয়ে সমর্পিত হয়, সেই নির্মলতার সীমানায় উত্তীর্ণ হয়। কামাচার, পানাহার, পাপাচার, মিথ্যাচার থেকে বিরত থেকে মাহে রমজানের এক মাস সম্পূর্ণ দিবাভাগে অর্থাত্ সুবহে সাদিকের পূর্বক্ষণ থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজাদার আত্মশুদ্ধির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হন, যা তাঁর জীবন-চেতনায় বয়ে আনে পরিশীলিত অনুভূতি। পুরো এক মাস সিয়াম সাধনার পর আনন্দ ও উত্সবমুখর পরিবেশে সারা দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হয়। পবিত্র রমজান মাসে সংযম ও আত্মশুদ্ধি অনুশীলনের পর ঈদুল ফিতর ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব শ্রেণীর মানুষকে আরও ঘনিষ্ঠ বন্ধনে আবদ্ধ করে, গড়ে তোলে সবার মধ্যে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও ঐক্যের বন্ধন। ঈদের দিন মসজিদে, ময়দানে ঈদের নামাজে বিপুলসংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসল্লির সমাগম হয়ে থাকে। সবাই সুশৃঙ্খলভাবে কাতারবদ্ধ হয়ে ঈদের নামাজ পড়েন। নামাজ শেষে ধনী-নির্ধন, পরিচিত-অপরিচিত সবাই সানন্দে কোলাকুলি করেন। রাজধানীতে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সব ঈদগাহ ও মসজিদে ঈদের জামাতে পার্থিব সুখ-শান্তি, স্বস্তি আর পারলৌকিক মুক্তি কামনা করে মহান আল্লাহ তাআলার দরবারে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। সেই সঙ্গে বিশ্বশান্তি এবং দেশ-জাতি ও মুসলিম উম্মাহর উত্তরোত্তর শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ও সংহতি কামনা করা হয়।
ঈদ মানেই আনন্দ ও খুশির উত্সব। ‘ঈদ’ শব্দটি আরবি, শব্দমূল ‘আউদ’, এর অর্থ এমন উত্সব যা ফিরে ফিরে আসে, পুনরায় অনুষ্ঠিত হয়, রীতি হিসেবে গণ্য হয় প্রভৃতি। এর অন্য অর্থ খুশি-আনন্দ। উচ্ছল-উচ্ছ্বাসে হারিয়ে যাওয়ার মুহূর্ত। ঈদ প্রতিবছর চান্দ্র বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী নির্দিষ্ট মাসের নির্দিষ্ট তারিখে নির্দিষ্ট রীতিতে এক অনন্য আনন্দ-বৈভব বিলাতে ফিরে আসে। এক মাস কঠোর সিয়াম সাধনার মাধ্যমে নানা নিয়মকানুন পালনের পর উদ্যাপিত হয় ঈদুল ফিতর; অন্য কথায় রোজার ঈদ। ‘ফিতর’ শব্দের অর্থ ভেঙে দেওয়া। আরেক অর্থে বিজয়। দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর যে উত্সব পালন করা হয়, তা-ই ঈদুল ফিতরের উত্সব। বিজয় শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহূত হয়েছে। গোটা রমজান মাস রোজা রেখে আল্লাহভীরু মানুষ তার ভেতরের সব রকমের বাজে অভ্যাস, খেয়ালখুশিকে দমন করার মাধ্যমে এক রকমের বিজয় অর্জন করে। সেই অর্থে এটি বিজয় হিসেবেও দেখা যায়। সব মিলিয়ে ঈদুল ফিতরকে বিজয় উত্সব বলা যেতে পারে। ঈদুল ফিতরের প্রতিটি অনুশাসনে ইবাদতের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়, তাছাড়া এ দিনে প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে সত্যনিষ্ঠ জীবনযাপনের তাগিদ এবং মানবতার বিজয় বার্তা। তবে প্রচলিত নিয়মে দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর আনন্দ-উত্সবের মাধ্যমে দিনটিকে স্মরণীয় করার নাম ঈদ উত্সব। ‘ঈদুল ফিতর’ শব্দ দুটিও আরবি। যার অর্থ হচ্ছে—উত্সব, আনন্দ, খুশি ও রোজা ভঙ্গকরণ ইত্যাদি। সুদীর্ঘ একটি মাস কঠোর সিয়াম সাধনা ও ইবাদত-বন্দেগির পর বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ রোজা ভঙ্গ করে আল্লাহ তাআলার বিশেষ নিয়ামতের শুকরিয়াস্বরূপ যে আনন্দ উত্সব পালন করেন, সেটিই ঈদুল ফিতর।
প্রকৃতপক্ষে ঈদ ধনী-দরিদ্র, সুখী-অসুখী, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সব মানুষের জন্য কোনো না কোনোভাবে নিয়ে আসে নির্মল আনন্দের আয়োজন। ঈদ ধর্মীয় বিধিবিধানের মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষকে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস নেয় এবং পরস্পরের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের শিক্ষা দেয়। মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে আমাদের কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা হলো, জগতের সব মানুষের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি। বিশ্ব সর্বপ্রকার হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানিমুক্ত হোক! সন্ত্রাসের বিভীষিকা দূর হোক! সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের বন্ধন দৃঢ়তর হোক! আগামী দিনগুলো সুন্দর ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হোক! হাসি-খুশি ও ঈদের আনন্দে ভরে উঠুক প্রতিটি প্রাণ। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সংযম, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পরিবেশ পরিব্যাপ্তি লাভ করুক—এই হোক ঈদ উত্সবের ঐকান্তিক কামনা। তাই আসুন, ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিই সবার প্রাণে-মনে। বুকে বুক মিলিয়ে আসুন সবাই সবার হয়ে যাই। সবাইকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও আন্তরিক অভিনন্দন ‘ঈদ মোবারক আস-সালাম।’
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমী, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়।
dr.munimkhan@yahoo.com
ঈদ ধনী-গরিব সব মানুষের মহামিলনের বার্তা বহন করে। ঈদ মানবসমাজের ধনী-গরিব ব্যবধান ভুলিয়ে দেওয়ার একটি দিন। ঈদের দিনে সবাই সমান। এক কাতারে দাঁড়িয়ে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের একসঙ্গে নামাজ পড়ার সুযোগ এনে দেয় ঈদ। ঈদের খুশির এক অন্যতম উপকরণ হচ্ছে এ ঈদের নামাজ। ইসলামি শরিয়তে একে ওয়াজিব, মতান্তরে সুন্নাত বলে অভিহিত করা হয়। এক মাস আল্লাহপাকের হুকুমে তাঁরই সন্তুষ্টি হাসিলের উদ্দেশ্যে রোজা রাখার পর ঈদের নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে মাঠে গেলে, একে অপরের হাতে হাত, বুকে বুক রাখলে মুসলমানরা সারা মাসের রোজার কারণে ক্ষুধা-তৃষ্ণার কষ্ট ভুলে যায়। ঈদের দুই রাকাত নামাজ হলো বার্ষিক নামাজ। বছরান্তে সমাজের সর্বস্তরের মুসলমান ঈদের জামাতে সানন্দে উপস্থিত হন। এ যেন একে অন্যের সঙ্গে সাক্ষাত্ ও কুশল বিনিময়ের এক অপূর্ব সুযোগ। তখন ছোট-বড়, ধনী-গরিব, আমির-ফকির, শিক্ষিত-অশিক্ষিতের মধ্যে কোনো রকম ভেদাভেদ থাকে না। এক মাস সংযম সাধনার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির যে নিরলস প্রচেষ্টা বিশ্বাসীরা চালান, ঈদুল ফিতর এরই পূর্ণতার সুসংবাদ। ঈদুল ফিতরের তাত্পর্য হলো সিয়ামের দাবি পূর্ণ করে নতুন অবস্থায় উত্তীর্ণ হওয়ার খুশি। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সংযম সাধনার পর ঈদের দিনে রোজাদারগণ শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে যান।’
ঈদের দিনে ধনী-গরিব, বাদশা-ফকির, মালিক-শ্রমিক নির্বিশেষে সব মুসলমান এক কাতারে ঈদের নামাজ আদায় ও একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করে সাম্যের জয়ধ্বনি করে। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘যারা ঈদের নামাজ আদায় করার জন্য ময়দানে একত্রিত হয়, আল্লাহ তাআলা তাদের সম্পর্কে ফেরেশতাদের জিজ্ঞাসা করেন, যারা স্বেচ্ছায় দায়িত্ব পালন করে আজ এখানে উপস্থিত হয়েছে তাদের কি প্রতিদান দেওয়া উচিত? ফেরেশতারা বলেন, তাঁদের পুণ্যময় কাজের সম্পূর্ণ পারিশ্রমিক দেওয়া উচিত। তখন আল্লাহ তাআলা তাঁর মর্যাদার শপথ করে বলেন, অবশ্যই তিনি তাদের প্রার্থনা কবুল করবেন। এরপর আল্লাহ তাআলা ঈদের নামাজ সমাপনকারী তাঁর নেক বান্দাদের উদ্দেশে ঘোষণা করেন, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। আর তোমাদের কৃত অতীত পাপকে পুণ্যে পরিণত করে দিয়েছি।’
রোজার পুণ্যময় মাস যেন একটি স্বচ্ছ সলিল সরোবর, যার জলের নির্মলতায় মানুষের অভ্যন্তরীণ যাবতীয় কাম-ক্রোধ, লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ ও বিভেদের সব কালিমা ধুয়ে-মুছে যায়। মুসলমানগণ পুণ্যস্নাত ঈদের মধ্য দিয়ে সমর্পিত হয়, সেই নির্মলতার সীমানায় উত্তীর্ণ হয়। কামাচার, পানাহার, পাপাচার, মিথ্যাচার থেকে বিরত থেকে মাহে রমজানের এক মাস সম্পূর্ণ দিবাভাগে অর্থাত্ সুবহে সাদিকের পূর্বক্ষণ থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজাদার আত্মশুদ্ধির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হন, যা তাঁর জীবন-চেতনায় বয়ে আনে পরিশীলিত অনুভূতি। পুরো এক মাস সিয়াম সাধনার পর আনন্দ ও উত্সবমুখর পরিবেশে সারা দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হয়। পবিত্র রমজান মাসে সংযম ও আত্মশুদ্ধি অনুশীলনের পর ঈদুল ফিতর ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব শ্রেণীর মানুষকে আরও ঘনিষ্ঠ বন্ধনে আবদ্ধ করে, গড়ে তোলে সবার মধ্যে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও ঐক্যের বন্ধন। ঈদের দিন মসজিদে, ময়দানে ঈদের নামাজে বিপুলসংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসল্লির সমাগম হয়ে থাকে। সবাই সুশৃঙ্খলভাবে কাতারবদ্ধ হয়ে ঈদের নামাজ পড়েন। নামাজ শেষে ধনী-নির্ধন, পরিচিত-অপরিচিত সবাই সানন্দে কোলাকুলি করেন। রাজধানীতে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সব ঈদগাহ ও মসজিদে ঈদের জামাতে পার্থিব সুখ-শান্তি, স্বস্তি আর পারলৌকিক মুক্তি কামনা করে মহান আল্লাহ তাআলার দরবারে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। সেই সঙ্গে বিশ্বশান্তি এবং দেশ-জাতি ও মুসলিম উম্মাহর উত্তরোত্তর শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ও সংহতি কামনা করা হয়।
ঈদ মানেই আনন্দ ও খুশির উত্সব। ‘ঈদ’ শব্দটি আরবি, শব্দমূল ‘আউদ’, এর অর্থ এমন উত্সব যা ফিরে ফিরে আসে, পুনরায় অনুষ্ঠিত হয়, রীতি হিসেবে গণ্য হয় প্রভৃতি। এর অন্য অর্থ খুশি-আনন্দ। উচ্ছল-উচ্ছ্বাসে হারিয়ে যাওয়ার মুহূর্ত। ঈদ প্রতিবছর চান্দ্র বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী নির্দিষ্ট মাসের নির্দিষ্ট তারিখে নির্দিষ্ট রীতিতে এক অনন্য আনন্দ-বৈভব বিলাতে ফিরে আসে। এক মাস কঠোর সিয়াম সাধনার মাধ্যমে নানা নিয়মকানুন পালনের পর উদ্যাপিত হয় ঈদুল ফিতর; অন্য কথায় রোজার ঈদ। ‘ফিতর’ শব্দের অর্থ ভেঙে দেওয়া। আরেক অর্থে বিজয়। দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর যে উত্সব পালন করা হয়, তা-ই ঈদুল ফিতরের উত্সব। বিজয় শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহূত হয়েছে। গোটা রমজান মাস রোজা রেখে আল্লাহভীরু মানুষ তার ভেতরের সব রকমের বাজে অভ্যাস, খেয়ালখুশিকে দমন করার মাধ্যমে এক রকমের বিজয় অর্জন করে। সেই অর্থে এটি বিজয় হিসেবেও দেখা যায়। সব মিলিয়ে ঈদুল ফিতরকে বিজয় উত্সব বলা যেতে পারে। ঈদুল ফিতরের প্রতিটি অনুশাসনে ইবাদতের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়, তাছাড়া এ দিনে প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে সত্যনিষ্ঠ জীবনযাপনের তাগিদ এবং মানবতার বিজয় বার্তা। তবে প্রচলিত নিয়মে দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর আনন্দ-উত্সবের মাধ্যমে দিনটিকে স্মরণীয় করার নাম ঈদ উত্সব। ‘ঈদুল ফিতর’ শব্দ দুটিও আরবি। যার অর্থ হচ্ছে—উত্সব, আনন্দ, খুশি ও রোজা ভঙ্গকরণ ইত্যাদি। সুদীর্ঘ একটি মাস কঠোর সিয়াম সাধনা ও ইবাদত-বন্দেগির পর বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ রোজা ভঙ্গ করে আল্লাহ তাআলার বিশেষ নিয়ামতের শুকরিয়াস্বরূপ যে আনন্দ উত্সব পালন করেন, সেটিই ঈদুল ফিতর।
প্রকৃতপক্ষে ঈদ ধনী-দরিদ্র, সুখী-অসুখী, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সব মানুষের জন্য কোনো না কোনোভাবে নিয়ে আসে নির্মল আনন্দের আয়োজন। ঈদ ধর্মীয় বিধিবিধানের মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষকে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস নেয় এবং পরস্পরের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের শিক্ষা দেয়। মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে আমাদের কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা হলো, জগতের সব মানুষের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি। বিশ্ব সর্বপ্রকার হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানিমুক্ত হোক! সন্ত্রাসের বিভীষিকা দূর হোক! সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের বন্ধন দৃঢ়তর হোক! আগামী দিনগুলো সুন্দর ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হোক! হাসি-খুশি ও ঈদের আনন্দে ভরে উঠুক প্রতিটি প্রাণ। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সংযম, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পরিবেশ পরিব্যাপ্তি লাভ করুক—এই হোক ঈদ উত্সবের ঐকান্তিক কামনা। তাই আসুন, ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিই সবার প্রাণে-মনে। বুকে বুক মিলিয়ে আসুন সবাই সবার হয়ে যাই। সবাইকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও আন্তরিক অভিনন্দন ‘ঈদ মোবারক আস-সালাম।’
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমী, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়।
dr.munimkhan@yahoo.com
No comments