প্রস্তাবিত টিপাইমুখ বাঁধ আকবর আলি খান টিপাইমুখ বাঁধ ও বাংলাদেশের স্বার্থ
টিপাইমুখ প্রকল্প অভিন্ন নদীর পানির হিসসা নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত বিরোধের সর্বোচ্চ পর্যায়ও নয়, সর্বশেষ বিরোধও নয়। প্রস্তাবিত টিপাইমুখ বাঁধ ভারত-বাংলাদেশ বিরোধপূর্ণ সম্পর্কের হিমশৈলের ভাসমান চূড়ামাত্র। নিমজ্জমান বিরোধগুলো ক্রমেই প্রকাশিত হবে। এর কারণ দুটি। প্রথমত, ভারতে সস্তায় উত্পাদিত জলবিদ্যুতের প্রয়োজন অত্যন্ত তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে। ২০০৭ অর্থবছরে ভারতের অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে, ভারতে দেড় লাখ মেগাওয়াটের বেশি জলবিদ্যুতের সম্ভাবনা আছে। এর মাত্র ২১ শতাংশ উত্পাদিত হচ্ছে এবং অদূর ভবিষ্যতে এ হার ৩১ শতাংশে উন্নীত হবে। উত্তর-পূর্ব ভারত জলবিদ্যুত্ উত্পাদনে পিছিয়ে আছে। এখানে ৯৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন সম্ভব, কিন্তু প্রকৃত উত্পাদন অতি নগণ্য। ভারত তাই উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে জলবিদ্যুেকন্দ্র ও বাঁধ নির্মাণ করবে। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ডিহিং বহুমুখী বাঁধ প্রকল্প (ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদীর ওপর), সুবানসিঁড়ি বহুমুখী বাঁধ প্রকল্প (ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদীর ওপর), লোহিত বহুমুখী বাঁধ প্রকল্প (ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদীর ওপর), যদুকাটা বহুমুখী বাঁধ প্রকল্প (মেঘনার শাখা নদীর ওপর), সোমেশ্বরী বহুমুখী বাঁধ প্রকল্প (মেঘনার শাখা নদীর ওপর), ভৈরবী বহুমুখী বাঁধ প্রকল্প (বরাক নদীর শাখার ওপর), নোয়া ডিহিং বহুমুখী বাঁধ প্রকল্প (ব্রহ্মপুত্রের শাখার ওপর), কুলশী বহুমুখী বাঁধ প্রকল্প (ব্রহ্মপুত্রের শাখার ওপর) ইত্যাদি। প্রত্যেকটি প্রকল্পেই কমবেশি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। টিপাইমুখ নিয়ে হইচই করতে করতে বাকি প্রকল্পগুলো নীরবে এগিয়ে যাবে। বিশেষ করে যদুকাটা ও সোমেশ্বরী বাঁধ প্রকল্প দুটি নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের হাওড় এলাকায় বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। শুধু টিপাইমুখ নয়, সব প্রকল্প নিয়েই অবিলম্বে ভারতের সঙ্গে আলোচনা শুরু করা দরকার।
দ্বিতীয় সমস্যা হলো, ভারতের সব নদী নিয়ে একটি জল সরবরাহ ব্যবস্থায় রূপান্তরের প্রচেষ্টা চলছে। এই মহা প্রকল্পের নাম আন্তঃঅববাহিকায় নদীসংযোগ (Interlinking of river Basins)। প্রকৃতপক্ষে আসামে সেচের জন্য যে পানির প্রয়োজন তাতে বাংলাদেশের আপত্তি থাকার কোনো কারণ নেই। কিন্তু আসাম থেকে অন্যত্র পানি প্রত্যাহারের চেষ্টা অনৈতিক, অন্যায় ও অবাস্তব। অথচ বিজেপি সরকার এ প্রকল্পকে তাদের পানিসম্পদ উন্নয়নের মূল কৌশল হিসেবে গ্রহণ করেছিল। এ ধরনের প্রকল্প ভারত-বাংলাদেশের তীব্র বিরোধ অনিবার্য করে তুলবে। সৌভাগ্যের বিষয়, কোনো কোনো ভারতীয় পানিবিশেষজ্ঞ এর অসারতা বুঝতে পেরেছেন (পূর্ব উদ্ধৃত Iyer-এর বইতে দেখুন)। কংগ্রেস সরকার প্রকল্পটি পর্যালোচনা করছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রকল্পটি প্রত্যাখ্যান করা হলে বাংলাদেশের মতো ক্ষুদ্র প্রতিবেশী রাষ্ট্রের আস্থা ভারতের ওপর অনেক বেড়ে যাবে।
ভারতের মতে, টিপাইমুখ বাঁধ ভারত ও বাংলাদেশ উভয়ের জন্য লাভজনক। ভারত পাবে জলবিদ্যুত্, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, মত্স্য উত্পাদন ও পর্যটনের সুফল। ভারতের মতে, এ প্রকল্পের ফলে বর্ষাকালে সিলেট অঞ্চলে বন্যার প্রকোপ কমবে আর শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ বাড়বে। এ রকম সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরামর্শকেরা ১৯৯৪ সালে সমর্থন করেছিলেন। অবশ্য এটি ছিল একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন। প্রতিবেদনটির পূর্ণ শিরোনাম হলো, Initial Environmental Evaluation: Appendix to Northeast Regional Water Management Plan (NERPFAP-6)। গত ১৫ বছরে টিপাইমুখ প্রকল্পের পরিবর্তন হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট নদীগুলোর প্রবাহে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। কাজেই ১৯৯৪ সালের এ প্রতিবেদন এখন অপ্রাসঙ্গিক।
তবে সাধারণ জ্ঞানের ভিত্তিতেই এ কথা প্রমাণ করা সম্ভব যে এ ধরনের প্রকল্পে বাংলাদেশ উপকৃত হবে না। ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে জলাধার নির্মাণ করে বাংলাদেশে বন্যার তীব্রতা হ্রাস-সম্পর্কিত প্রস্তাব পরীক্ষা করে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক Peter Rogers-এর নেতৃত্বে USAID-এর একটি কারিগরি দল। তাদের প্রতিবেদন Eastern Waters Study শিরোনামে ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত হয়। এই সমীক্ষায় অভিমত প্রকাশ করা হয়, দুটি কারণে উত্তর-পূর্ব ভারতে জলাধার নির্মাণ করে বাংলাদেশে বর্ষাকালে বন্যার প্রকোপ হ্রাস করা যাবে না (পৃষ্ঠা ৪৭-৫০)। প্রথমত, বাংলাদেশে বন্যা হ্রাস করার জন্য এ ধরনের জলাধারে বিপুল পরিমাণ পানি সংরক্ষণ করতে হবে। বাংলাদেশে এক মিটার বন্যা হ্রাসের জন্য ৬৬ বিলিয়ন কিউসিক পানি জমাতে হবে। এ ধরনের প্রকল্প অবাস্তব। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে দূরে জলাধারে পানি রাখলে তার প্রভাব বাংলাদেশের বন্যার ওপর পড়বে না। বাঁধের নিচে যেসব ভারতীয় অঞ্চলের মধ্য দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়, সেসব অঞ্চলের পানি গড়িয়ে এসে বর্ষাকালে বাংলাদেশে পানির সরবরাহ বাড়িয়ে দেবে। Peter Rogers ও তাঁর সহকর্মীরা লিখেছেন, ‘Water that now floods land on the plains in India would drain out into rivers because of the reduced flows. The net effect of this would be little or no reduction in the flood peak in Bangladesh.’ (P-48) (নদীতে পানি কমে যাওয়ায় ভারতের সমতল ভূমিতে যেসব অঞ্চল প্লাবিত হবে সেসব অঞ্চলের পানি গড়িয়ে নদীতে চলে এলে নিট প্রভাব হবে: বাংলাদেশে বন্যার সর্বোচ্চ সীমা আদৌ হ্রাস পাবে না কিংবা নগণ্য হ্রাস পাবে।) উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, বর্ষাকালে টিপাইমুখের ওপর বরাক নদীর পানি আটকে রাখলেও বাঁধের ভাটিতে কাছাড়, হাইলাকান্দি ও করিমগঞ্জে যেসব নিম্নাঞ্চল বৃষ্টির ফলে প্লাবিত হবে, সেসব পানি নদী দিয়ে বাংলাদেশের দিকে নেমে যাবে। উল্লেখ্য, সমতল এ তিনটি জেলায় চাতলার বিল, শন বিল, জবদা হাওড়, লুককা হাওড়, রকবির হাওড়, আনাইর হাওড় প্রভৃতি অবস্থিত। এসব বিল ও হাওড়ের পানি বাংলাদেশে পানির প্রবাহ বাড়াবে।
টিপাইমুখ প্রকল্পে অনুমান করা হয়েছে, বাঁধের ওপর জলাধারে নদীর বাড়তি পানি জমিয়ে রাখা যাবে। যখন জলাধার পূর্ণ থাকে তখন বন্যা হলে বন্যার পানি ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। সে ধরনের পরিস্থিতিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য টিপাইমুখ বাঁধ ভারত বা বাংলাদেশের কোনো কাজেই লাগবে না। শুষ্ক মৌসুম সম্পর্কে ভারতের দাবি হলো, বাঁধের জলাধার থেকে সমানতালে জল ছাড়ার ফলে শুষ্ক মৌসুমে অতিরিক্ত পানি ছাড়া সম্ভব। পূর্বে উল্লিখিত বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরামর্শকদের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শীতকালে টিপাইমুখ বাঁধের দুটি প্রভাব দেখা দেবে। প্রথমত, নদীর পানির উচ্চতা ১.৫ মিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, এপ্রিল-জুন সময়কালে নদীর পানি উঁচু থাকলে যদি বৃষ্টির ফলে আকস্মিক বন্যা হয়, তবে ফসল রক্ষার জন্য যেসব নিমজ্জনক্ষম (submersible) বাঁধ নির্মাণ করা হয় তারা অকার্যকর হয়ে পড়বে। এসব বাঁধ উচু করতে হবে। তাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে কি না তাও পরীক্ষা করতে হবে।
আসলে শুষ্ক মৌসুমে সুরমা ও কুশিয়ারায় জলের প্রবাহ নির্ভর করবে টিপাইমুখ জলাধারে পানি জমিয়ে রাখার ক্ষমতার ওপর। নিয়মিত বৃষ্টি হলে এটি সম্ভব। যদি পরপর কয়েক বছর খরা দেখা দেয় তখন এ ধরনের অতিরিক্ত প্রবাহ সম্ভব হবে না। উপরন্তু শুষ্ক মৌসুমে পলি পড়ে নদীতে কী ধরনের চর পড়বে তাও জলপ্রবাহের নিয়ন্ত্রক হতে পারে।
টিপাইমুখ জলবিদ্যুেকন্দ্র চালু হলে জলাধার থেকে নিসৃত বরাক নদীর পানিতে দুটি পরিবর্তন দেখা দেবে। প্রথমত, বাঁধ থেকে নিসৃত পানি হবে উষ্ণ। গরম পানিতে মাছের ডিম মরে যাবে। বরাক নদীতে মাছের প্রজননক্ষেত্র হবে বিপন্ন। উপরন্তু যেসব মাছ বাঁধের উজান থেকে ভাটিতে যায় অথবা ভাটি থেকে উজানে যায় সেসব মাছের চলাচলের ক্ষেত্র সংকীর্ণ হবে। এর ফলে অনেক প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাবে। বিশেষ করে মহাশির মাছ, যা পার্বত্য অঞ্চল থেকে আসে তা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। অবশ্য মাছের চলাচলের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা (fish ladder) এ প্রকল্পে প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এ ধরনের ব্যবস্থা কোথাও উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেনি। দ্বিতীয়ত, জলাধার থেকে টারবাইনের ভেতর দিয়ে যে জল আসবে তা হবে পলিমুক্ত। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে পলির গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের নদীগুলো দিয়ে বছরে ২.৪ বিলিয়ন টন পলি আসে। অর্থাত্ বাংলাদেশের নদীগুলো দিয়ে বিশ্বের ১৮.৫ শতাংশ পলি পরিবাহিত হয়। অথচ বাংলাদেশের আয়তন পৃথিবীর ভূখণ্ডের এক হাজার ভাগের এক ভাগের চেয়ে কম। চীনের কিছু অঞ্চল ছাড়া কোথাও নদীতে পলির পরিমাণ এত বেশি নয়। পলির আধিক্যের ফলে উজানে নির্মিত জলাধারগুলো অতিদ্রুত পলিতে ভরে অকার্যকর হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে ইতিপূর্বে গোমতী বাঁধ ও লোকটাক বাঁধের অভিজ্ঞতা আলোচিত হয়েছে।
বরাক নদীতে পলির পরিমাণ হ্রাসের প্রভাব দুই ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে: তাত্ক্ষণিক ও দীর্ঘস্থায়ী। পলিশূন্য পানির তাত্ক্ষণিক প্রভাবে বাঁধের নিচে পানির স্রোত তীব্রতর হবে এবং নদীর খাদে জমে থাকা বালি ভেসে যাবে এবং বাঁধের নিচে নদীর পাড় ভাঙতে থাকবে। এ ধরনের ভাঙন যদি ভারতের ভেতরে বেশি হয় তবে টিপাইমুখ বাঁধের ফলে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অঞ্চল থেকে বাংলাদেশের ভেতরে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে চর পড়ে পানির প্রবাহ কমে যাবে। এর ফলে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের হাওড় অঞ্চলে কম পানি আসবে। দ্বিতীয় একটি আশঙ্কা হলো, নদীভাঙন শুধু ভারতে সীমাবদ্ধ না থেকে বাংলাদেশের ভেতর অনেক দূর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে এবং বাংলাদেশের ভেতরে মেঘনা অঞ্চলে চর পড়বে। এর ফলে বাংলাদেশের নদীতে ড্রেজিংয়ের ব্যয় বাড়বে এবং পানির জোগান কমে যেতে পারে।
পলি কমে যাওয়ার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব কী হতে পারে তা নির্ণয় করার জন্য গাণিতিক ও ভৌত মডেলিং করতে হবে। তবে তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ থেকেই এ কথা সুস্পষ্ট যে এর প্রভাব অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। এখানে স্মরণ করা যেতে পারে, ভূতাত্ত্বিক গঠনের ফলে সিলেটের একটি বড় অঞ্চলে ভূমির অধোগমন (subduction or subsidence) হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের অধোগমন চলছে। তবে সঙ্গে সঙ্গে এ অঞ্চলে পানির সঙ্গে প্রচুর পলি আসছে। এসব পলি জমে ভূমির অধোগমন ঠেকিয়ে রেখেছে। তার ফলে দীর্ঘ সময় ধরে এ অঞ্চলের হাওড়গুলোয় একটি সমস্থিতি (equilibrium) বিরাজ করছে। পলি জমে বিলগুলো ভরে যাচ্ছে, কিন্তু হাওড় ভরে যাচ্ছে না (দেখুন Banglapedia Vol V. P.7)। ৭০০ বছর আগে পরিব্রাজক ইবনে বতুতা হাওড়ে যে অবস্থা দেখেছেন তা আজও বিরাজমান, কারণ নিয়মিত পলি আসায় ভূমির অধোগমন ঘটছে না। এ প্রবণতা শুধু বাংলাদেশে সীমাবদ্ধ নয়। ভারতীয় পানিবিজ্ঞানী কে এল রাওয়ের মতে, আসামের সুবানসিঁড়ি নদী-অঞ্চলেও এ প্রবণতা রয়েছে। (কে এল রাও, ইন্ডিয়াস ওয়াটার ওয়েলথ, পৃ. ৭১)
যদি নদীতে পলি কমে যায়, তবে হাওড়গুলো নিচের দিকে নামতে থাকবে। ফলে হাওড় অঞ্চলে জলাবদ্ধতা বেড়ে যেতে পারে। সারা দেশে পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। প্রকৃতি কীভাবে এ ক্ষেত্রে প্রতিশোধ নেবে, বিস্তারিত গবেষণা ছাড়া সে সম্পর্কে সুষ্ঠু আলোকপাত সম্ভব নয়। হয়তো দীর্ঘমেয়াদে এটিই হবে বাংলাদেশের জন্য টিপাইমুখ প্রকল্পের সবচেয়ে বড় অভিশাপ।
টিপাইমুখ বাঁধের ভাটিতে বাঁধের প্রভাব বিশ্লেষণের জন্য আমরা গোমতী বাঁধের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করতে পারি। ভারতে গোমতী বাঁধ নির্মাণের পর বাংলাদেশে গোমতীর বন্যা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। অথচ শুষ্ক মৌসুমে গোমতীর পানিপ্রবাহ কমে গেছে। এর ফলে তিতাস ও বুড়ি নদীর মতো গোমতীর শাখা নদীগুলো গত তিন দশকে হারিয়ে গেছে। গোমতী বাঁধ গোমতীর গলাটিপে ধরায় তিতাস নদী এখন বিলুপ্ত হওয়ার পথে। বাস্তবে তিতাস মৃত, তিতাস নদী শুধু অদ্বৈত মল্লবর্মণের উপন্যাসে আর ঋত্বিক ঘটকের চলচ্চিত্রে বেঁচে আছে। গোমতীর অভিজ্ঞতা থেকে প্রতীয়মান হয়, টিপাইমুখ বাঁধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বরাক নদী অববাহিকায় বর্ষা মৌসুমে বন্যার প্রকোপ কমবে না এবং শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ কমে যাবে।
আগামীকাল: এ সমস্যা সংকটের হিমশৈলের ভাসমান চূড়ামাত্র
আকবর আলি খান: গবেষক। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা; অর্থ, বন ও পরিবেশ এবং মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব; এ ছাড়া পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।
দ্বিতীয় সমস্যা হলো, ভারতের সব নদী নিয়ে একটি জল সরবরাহ ব্যবস্থায় রূপান্তরের প্রচেষ্টা চলছে। এই মহা প্রকল্পের নাম আন্তঃঅববাহিকায় নদীসংযোগ (Interlinking of river Basins)। প্রকৃতপক্ষে আসামে সেচের জন্য যে পানির প্রয়োজন তাতে বাংলাদেশের আপত্তি থাকার কোনো কারণ নেই। কিন্তু আসাম থেকে অন্যত্র পানি প্রত্যাহারের চেষ্টা অনৈতিক, অন্যায় ও অবাস্তব। অথচ বিজেপি সরকার এ প্রকল্পকে তাদের পানিসম্পদ উন্নয়নের মূল কৌশল হিসেবে গ্রহণ করেছিল। এ ধরনের প্রকল্প ভারত-বাংলাদেশের তীব্র বিরোধ অনিবার্য করে তুলবে। সৌভাগ্যের বিষয়, কোনো কোনো ভারতীয় পানিবিশেষজ্ঞ এর অসারতা বুঝতে পেরেছেন (পূর্ব উদ্ধৃত Iyer-এর বইতে দেখুন)। কংগ্রেস সরকার প্রকল্পটি পর্যালোচনা করছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রকল্পটি প্রত্যাখ্যান করা হলে বাংলাদেশের মতো ক্ষুদ্র প্রতিবেশী রাষ্ট্রের আস্থা ভারতের ওপর অনেক বেড়ে যাবে।
ভারতের মতে, টিপাইমুখ বাঁধ ভারত ও বাংলাদেশ উভয়ের জন্য লাভজনক। ভারত পাবে জলবিদ্যুত্, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, মত্স্য উত্পাদন ও পর্যটনের সুফল। ভারতের মতে, এ প্রকল্পের ফলে বর্ষাকালে সিলেট অঞ্চলে বন্যার প্রকোপ কমবে আর শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ বাড়বে। এ রকম সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরামর্শকেরা ১৯৯৪ সালে সমর্থন করেছিলেন। অবশ্য এটি ছিল একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন। প্রতিবেদনটির পূর্ণ শিরোনাম হলো, Initial Environmental Evaluation: Appendix to Northeast Regional Water Management Plan (NERPFAP-6)। গত ১৫ বছরে টিপাইমুখ প্রকল্পের পরিবর্তন হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট নদীগুলোর প্রবাহে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। কাজেই ১৯৯৪ সালের এ প্রতিবেদন এখন অপ্রাসঙ্গিক।
তবে সাধারণ জ্ঞানের ভিত্তিতেই এ কথা প্রমাণ করা সম্ভব যে এ ধরনের প্রকল্পে বাংলাদেশ উপকৃত হবে না। ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে জলাধার নির্মাণ করে বাংলাদেশে বন্যার তীব্রতা হ্রাস-সম্পর্কিত প্রস্তাব পরীক্ষা করে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক Peter Rogers-এর নেতৃত্বে USAID-এর একটি কারিগরি দল। তাদের প্রতিবেদন Eastern Waters Study শিরোনামে ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত হয়। এই সমীক্ষায় অভিমত প্রকাশ করা হয়, দুটি কারণে উত্তর-পূর্ব ভারতে জলাধার নির্মাণ করে বাংলাদেশে বর্ষাকালে বন্যার প্রকোপ হ্রাস করা যাবে না (পৃষ্ঠা ৪৭-৫০)। প্রথমত, বাংলাদেশে বন্যা হ্রাস করার জন্য এ ধরনের জলাধারে বিপুল পরিমাণ পানি সংরক্ষণ করতে হবে। বাংলাদেশে এক মিটার বন্যা হ্রাসের জন্য ৬৬ বিলিয়ন কিউসিক পানি জমাতে হবে। এ ধরনের প্রকল্প অবাস্তব। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে দূরে জলাধারে পানি রাখলে তার প্রভাব বাংলাদেশের বন্যার ওপর পড়বে না। বাঁধের নিচে যেসব ভারতীয় অঞ্চলের মধ্য দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়, সেসব অঞ্চলের পানি গড়িয়ে এসে বর্ষাকালে বাংলাদেশে পানির সরবরাহ বাড়িয়ে দেবে। Peter Rogers ও তাঁর সহকর্মীরা লিখেছেন, ‘Water that now floods land on the plains in India would drain out into rivers because of the reduced flows. The net effect of this would be little or no reduction in the flood peak in Bangladesh.’ (P-48) (নদীতে পানি কমে যাওয়ায় ভারতের সমতল ভূমিতে যেসব অঞ্চল প্লাবিত হবে সেসব অঞ্চলের পানি গড়িয়ে নদীতে চলে এলে নিট প্রভাব হবে: বাংলাদেশে বন্যার সর্বোচ্চ সীমা আদৌ হ্রাস পাবে না কিংবা নগণ্য হ্রাস পাবে।) উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, বর্ষাকালে টিপাইমুখের ওপর বরাক নদীর পানি আটকে রাখলেও বাঁধের ভাটিতে কাছাড়, হাইলাকান্দি ও করিমগঞ্জে যেসব নিম্নাঞ্চল বৃষ্টির ফলে প্লাবিত হবে, সেসব পানি নদী দিয়ে বাংলাদেশের দিকে নেমে যাবে। উল্লেখ্য, সমতল এ তিনটি জেলায় চাতলার বিল, শন বিল, জবদা হাওড়, লুককা হাওড়, রকবির হাওড়, আনাইর হাওড় প্রভৃতি অবস্থিত। এসব বিল ও হাওড়ের পানি বাংলাদেশে পানির প্রবাহ বাড়াবে।
টিপাইমুখ প্রকল্পে অনুমান করা হয়েছে, বাঁধের ওপর জলাধারে নদীর বাড়তি পানি জমিয়ে রাখা যাবে। যখন জলাধার পূর্ণ থাকে তখন বন্যা হলে বন্যার পানি ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। সে ধরনের পরিস্থিতিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য টিপাইমুখ বাঁধ ভারত বা বাংলাদেশের কোনো কাজেই লাগবে না। শুষ্ক মৌসুম সম্পর্কে ভারতের দাবি হলো, বাঁধের জলাধার থেকে সমানতালে জল ছাড়ার ফলে শুষ্ক মৌসুমে অতিরিক্ত পানি ছাড়া সম্ভব। পূর্বে উল্লিখিত বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরামর্শকদের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শীতকালে টিপাইমুখ বাঁধের দুটি প্রভাব দেখা দেবে। প্রথমত, নদীর পানির উচ্চতা ১.৫ মিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, এপ্রিল-জুন সময়কালে নদীর পানি উঁচু থাকলে যদি বৃষ্টির ফলে আকস্মিক বন্যা হয়, তবে ফসল রক্ষার জন্য যেসব নিমজ্জনক্ষম (submersible) বাঁধ নির্মাণ করা হয় তারা অকার্যকর হয়ে পড়বে। এসব বাঁধ উচু করতে হবে। তাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে কি না তাও পরীক্ষা করতে হবে।
আসলে শুষ্ক মৌসুমে সুরমা ও কুশিয়ারায় জলের প্রবাহ নির্ভর করবে টিপাইমুখ জলাধারে পানি জমিয়ে রাখার ক্ষমতার ওপর। নিয়মিত বৃষ্টি হলে এটি সম্ভব। যদি পরপর কয়েক বছর খরা দেখা দেয় তখন এ ধরনের অতিরিক্ত প্রবাহ সম্ভব হবে না। উপরন্তু শুষ্ক মৌসুমে পলি পড়ে নদীতে কী ধরনের চর পড়বে তাও জলপ্রবাহের নিয়ন্ত্রক হতে পারে।
টিপাইমুখ জলবিদ্যুেকন্দ্র চালু হলে জলাধার থেকে নিসৃত বরাক নদীর পানিতে দুটি পরিবর্তন দেখা দেবে। প্রথমত, বাঁধ থেকে নিসৃত পানি হবে উষ্ণ। গরম পানিতে মাছের ডিম মরে যাবে। বরাক নদীতে মাছের প্রজননক্ষেত্র হবে বিপন্ন। উপরন্তু যেসব মাছ বাঁধের উজান থেকে ভাটিতে যায় অথবা ভাটি থেকে উজানে যায় সেসব মাছের চলাচলের ক্ষেত্র সংকীর্ণ হবে। এর ফলে অনেক প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাবে। বিশেষ করে মহাশির মাছ, যা পার্বত্য অঞ্চল থেকে আসে তা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। অবশ্য মাছের চলাচলের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা (fish ladder) এ প্রকল্পে প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এ ধরনের ব্যবস্থা কোথাও উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেনি। দ্বিতীয়ত, জলাধার থেকে টারবাইনের ভেতর দিয়ে যে জল আসবে তা হবে পলিমুক্ত। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে পলির গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের নদীগুলো দিয়ে বছরে ২.৪ বিলিয়ন টন পলি আসে। অর্থাত্ বাংলাদেশের নদীগুলো দিয়ে বিশ্বের ১৮.৫ শতাংশ পলি পরিবাহিত হয়। অথচ বাংলাদেশের আয়তন পৃথিবীর ভূখণ্ডের এক হাজার ভাগের এক ভাগের চেয়ে কম। চীনের কিছু অঞ্চল ছাড়া কোথাও নদীতে পলির পরিমাণ এত বেশি নয়। পলির আধিক্যের ফলে উজানে নির্মিত জলাধারগুলো অতিদ্রুত পলিতে ভরে অকার্যকর হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে ইতিপূর্বে গোমতী বাঁধ ও লোকটাক বাঁধের অভিজ্ঞতা আলোচিত হয়েছে।
বরাক নদীতে পলির পরিমাণ হ্রাসের প্রভাব দুই ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে: তাত্ক্ষণিক ও দীর্ঘস্থায়ী। পলিশূন্য পানির তাত্ক্ষণিক প্রভাবে বাঁধের নিচে পানির স্রোত তীব্রতর হবে এবং নদীর খাদে জমে থাকা বালি ভেসে যাবে এবং বাঁধের নিচে নদীর পাড় ভাঙতে থাকবে। এ ধরনের ভাঙন যদি ভারতের ভেতরে বেশি হয় তবে টিপাইমুখ বাঁধের ফলে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অঞ্চল থেকে বাংলাদেশের ভেতরে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে চর পড়ে পানির প্রবাহ কমে যাবে। এর ফলে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের হাওড় অঞ্চলে কম পানি আসবে। দ্বিতীয় একটি আশঙ্কা হলো, নদীভাঙন শুধু ভারতে সীমাবদ্ধ না থেকে বাংলাদেশের ভেতর অনেক দূর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে এবং বাংলাদেশের ভেতরে মেঘনা অঞ্চলে চর পড়বে। এর ফলে বাংলাদেশের নদীতে ড্রেজিংয়ের ব্যয় বাড়বে এবং পানির জোগান কমে যেতে পারে।
পলি কমে যাওয়ার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব কী হতে পারে তা নির্ণয় করার জন্য গাণিতিক ও ভৌত মডেলিং করতে হবে। তবে তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ থেকেই এ কথা সুস্পষ্ট যে এর প্রভাব অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। এখানে স্মরণ করা যেতে পারে, ভূতাত্ত্বিক গঠনের ফলে সিলেটের একটি বড় অঞ্চলে ভূমির অধোগমন (subduction or subsidence) হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের অধোগমন চলছে। তবে সঙ্গে সঙ্গে এ অঞ্চলে পানির সঙ্গে প্রচুর পলি আসছে। এসব পলি জমে ভূমির অধোগমন ঠেকিয়ে রেখেছে। তার ফলে দীর্ঘ সময় ধরে এ অঞ্চলের হাওড়গুলোয় একটি সমস্থিতি (equilibrium) বিরাজ করছে। পলি জমে বিলগুলো ভরে যাচ্ছে, কিন্তু হাওড় ভরে যাচ্ছে না (দেখুন Banglapedia Vol V. P.7)। ৭০০ বছর আগে পরিব্রাজক ইবনে বতুতা হাওড়ে যে অবস্থা দেখেছেন তা আজও বিরাজমান, কারণ নিয়মিত পলি আসায় ভূমির অধোগমন ঘটছে না। এ প্রবণতা শুধু বাংলাদেশে সীমাবদ্ধ নয়। ভারতীয় পানিবিজ্ঞানী কে এল রাওয়ের মতে, আসামের সুবানসিঁড়ি নদী-অঞ্চলেও এ প্রবণতা রয়েছে। (কে এল রাও, ইন্ডিয়াস ওয়াটার ওয়েলথ, পৃ. ৭১)
যদি নদীতে পলি কমে যায়, তবে হাওড়গুলো নিচের দিকে নামতে থাকবে। ফলে হাওড় অঞ্চলে জলাবদ্ধতা বেড়ে যেতে পারে। সারা দেশে পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। প্রকৃতি কীভাবে এ ক্ষেত্রে প্রতিশোধ নেবে, বিস্তারিত গবেষণা ছাড়া সে সম্পর্কে সুষ্ঠু আলোকপাত সম্ভব নয়। হয়তো দীর্ঘমেয়াদে এটিই হবে বাংলাদেশের জন্য টিপাইমুখ প্রকল্পের সবচেয়ে বড় অভিশাপ।
টিপাইমুখ বাঁধের ভাটিতে বাঁধের প্রভাব বিশ্লেষণের জন্য আমরা গোমতী বাঁধের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করতে পারি। ভারতে গোমতী বাঁধ নির্মাণের পর বাংলাদেশে গোমতীর বন্যা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। অথচ শুষ্ক মৌসুমে গোমতীর পানিপ্রবাহ কমে গেছে। এর ফলে তিতাস ও বুড়ি নদীর মতো গোমতীর শাখা নদীগুলো গত তিন দশকে হারিয়ে গেছে। গোমতী বাঁধ গোমতীর গলাটিপে ধরায় তিতাস নদী এখন বিলুপ্ত হওয়ার পথে। বাস্তবে তিতাস মৃত, তিতাস নদী শুধু অদ্বৈত মল্লবর্মণের উপন্যাসে আর ঋত্বিক ঘটকের চলচ্চিত্রে বেঁচে আছে। গোমতীর অভিজ্ঞতা থেকে প্রতীয়মান হয়, টিপাইমুখ বাঁধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বরাক নদী অববাহিকায় বর্ষা মৌসুমে বন্যার প্রকোপ কমবে না এবং শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ কমে যাবে।
আগামীকাল: এ সমস্যা সংকটের হিমশৈলের ভাসমান চূড়ামাত্র
আকবর আলি খান: গবেষক। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা; অর্থ, বন ও পরিবেশ এবং মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব; এ ছাড়া পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।
No comments