প্রশাসনে পদোন্নতি আগের নিয়মেই তো সব চলছে, পরিবর্তনের ইঙ্গিত কই
প্রশাসনে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি হয়েছে। আর পদোন্নতি মানেই পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য অনেকে বঞ্চিত হবেন—এটাই যেন স্বাভাবিক। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তবে সবচেয়ে বড় কথা, সামগ্রিক প্রশাসনিক কাঠামো বিবেচনায় না রেখে এ ধরনের পদোন্নতি ও প্রশাসন পরিচালনার ফলে কাঠামো কার্যত ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। ভারসাম্যহীন একটি কাঠামো দিয়ে সুষ্ঠু প্রশাসন পরিচালনা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। প্রত্যাশা ছিল যে পদোন্নতি ও প্রশাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে অতীতের যে ধারা চলে আসছিল, তার অবসান হবে। কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না। এই পদোন্নতির মধ্যে সরকারের সদিচ্ছার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি।
এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে প্রশাসনের বর্তমান যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তা কার্যত নব্বই-পরবর্তী সরকারগুলোর দীর্ঘদিনের অপকর্মের ফল। পদোন্নতির ক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে কাউকে বঞ্চিত করা, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বা বেসামরিক প্রশাসনে সামরিক কর্মকর্তাদের নিয়োগ—এই বিষয়গুলোকে স্বাভাবিকভাবে প্রশাসনের এই বর্তমান দুরবস্থার জন্য দায়ী করা হয়ে থাকে। দিনবদলের সরকার এই পরিস্থিতি থেকে অন্তত উঠে আসার চেষ্টা করছে—এমন কোনো ইঙ্গিত এই পদোন্নতির মধ্য দিয়ে রাখতে পারেনি।
নোংরাভাবে দলীয়করণের অভিযোগে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারকে দায়ী করা হয়ে থাকে। এবার পদোন্নতির ক্ষেত্রে দেখা গেল, বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারও সেই একই পথ বেছে নিয়েছে। প্রশাসনের তিন স্তরে যে পদোন্নতি দেওয়া হলো তাতে দেখা গেল, ৫২৬ জন পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন। এই কর্মকর্তারা কেন বঞ্চিত হলেন বা যাঁরা তাঁদের ডিঙিয়ে পদোন্নতি পেলেন, তাঁরা কোন বিবেচনায় পেলেন তা স্পষ্ট নয়। কী প্রক্রিয়ায় এই পদোন্নতি হয়েছে, তা কেউ জানে না। পদোন্নতিবঞ্চিতদের তালিকা বিশ্লেষণ করলে এমন অনেককেই পাওয়া যাবে, যাঁরা তাঁদের যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রমাণ অতীতে রেখেছেন। তাঁরা কেন পদোন্নতিবঞ্চিত হলেন? রাজনৈতিক বিবেচনা কাজ না করলে এমন হওয়ার কথা নয়।
‘সুবিধাভোগী’ ও ‘বঞ্চিত’—এ ধরনের বিভক্তি প্রশাসনে কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। দলীয় রাজনীতিকেন্দ্রিক এই বিভক্তি প্রশাসনের যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা, ক্ষোভ ও অসন্তোষের জন্ম দেয়। ইচ্ছা না থাকলেও অনেকে এই রাজনৈতিক চক্রের মধ্যে ঢুকে পড়তে বাধ্য হন। সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুবিধাভোগীরা বঞ্চিত আর বঞ্চিতরা সুবিধাভোগীতে পরিণত হন। আর যাঁরা নিজেদের মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে এর বাইরে থাকতে চান, তাঁরা সব সরকারের আমলেই বঞ্চিত হন।
সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় বেসামরিক প্রশাসন একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে কর্মকর্তাদের রদবদল বা পদোন্নতির কোনো সম্পর্ক থাকে না। পেশাগত দক্ষতা ও যোগ্যতাই প্রশাসন পরিচালনার ভিত্তি হতে হবে। আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারেও সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বর্তমান পদোন্নতিতে একদিকে যেমন যোগ্য অনেকে বঞ্চিত হয়েছেন, তেমনি প্রশাসনিক কাঠামো ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। এই পদোন্নতির ফলে যে প্রশাসনের উচ্চপদে ও নিম্নপদে কর্মকর্তার সংখ্যা কমে মধ্যম পদে জনবল বেড়ে যাবে, তা সরকারের বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল। আর সচিব পর্যায়ের পাঁচজনসহ মোট ৪৩৪ জন কর্মকর্তা ওএসডি হয়ে থাকবেন—এটাই কতটুকু স্বাভাবিক?
সরকার যদি প্রশাসনকে গতিশীল ও দক্ষ করার ব্যাপারে সত্যিই আন্তরিক হয়, তবে বিষয়টিকে সামগ্রিকভাবে দেখতে হবে ও পরিকল্পনা হতে হবে সুদূরপ্রসারী। পদোন্নতির ক্ষেত্রে দলীয় রাজনৈতিক বিবেচনা একেবারে বাদ দিয়ে স্বচ্ছতা ও মেধা-যোগ্যতাকে মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এবারের পদোন্নতির ক্ষেত্রে তা নিশ্চিত করা গেলে সরকার একটি ইতিবাচক সংকেত দিতে পারত। অন্যদিকে পদবিন্যাস করে কাঠামোর ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টিও সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে।
এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে প্রশাসনের বর্তমান যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তা কার্যত নব্বই-পরবর্তী সরকারগুলোর দীর্ঘদিনের অপকর্মের ফল। পদোন্নতির ক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে কাউকে বঞ্চিত করা, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বা বেসামরিক প্রশাসনে সামরিক কর্মকর্তাদের নিয়োগ—এই বিষয়গুলোকে স্বাভাবিকভাবে প্রশাসনের এই বর্তমান দুরবস্থার জন্য দায়ী করা হয়ে থাকে। দিনবদলের সরকার এই পরিস্থিতি থেকে অন্তত উঠে আসার চেষ্টা করছে—এমন কোনো ইঙ্গিত এই পদোন্নতির মধ্য দিয়ে রাখতে পারেনি।
নোংরাভাবে দলীয়করণের অভিযোগে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারকে দায়ী করা হয়ে থাকে। এবার পদোন্নতির ক্ষেত্রে দেখা গেল, বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারও সেই একই পথ বেছে নিয়েছে। প্রশাসনের তিন স্তরে যে পদোন্নতি দেওয়া হলো তাতে দেখা গেল, ৫২৬ জন পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন। এই কর্মকর্তারা কেন বঞ্চিত হলেন বা যাঁরা তাঁদের ডিঙিয়ে পদোন্নতি পেলেন, তাঁরা কোন বিবেচনায় পেলেন তা স্পষ্ট নয়। কী প্রক্রিয়ায় এই পদোন্নতি হয়েছে, তা কেউ জানে না। পদোন্নতিবঞ্চিতদের তালিকা বিশ্লেষণ করলে এমন অনেককেই পাওয়া যাবে, যাঁরা তাঁদের যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রমাণ অতীতে রেখেছেন। তাঁরা কেন পদোন্নতিবঞ্চিত হলেন? রাজনৈতিক বিবেচনা কাজ না করলে এমন হওয়ার কথা নয়।
‘সুবিধাভোগী’ ও ‘বঞ্চিত’—এ ধরনের বিভক্তি প্রশাসনে কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। দলীয় রাজনীতিকেন্দ্রিক এই বিভক্তি প্রশাসনের যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা, ক্ষোভ ও অসন্তোষের জন্ম দেয়। ইচ্ছা না থাকলেও অনেকে এই রাজনৈতিক চক্রের মধ্যে ঢুকে পড়তে বাধ্য হন। সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুবিধাভোগীরা বঞ্চিত আর বঞ্চিতরা সুবিধাভোগীতে পরিণত হন। আর যাঁরা নিজেদের মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে এর বাইরে থাকতে চান, তাঁরা সব সরকারের আমলেই বঞ্চিত হন।
সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় বেসামরিক প্রশাসন একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে কর্মকর্তাদের রদবদল বা পদোন্নতির কোনো সম্পর্ক থাকে না। পেশাগত দক্ষতা ও যোগ্যতাই প্রশাসন পরিচালনার ভিত্তি হতে হবে। আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারেও সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বর্তমান পদোন্নতিতে একদিকে যেমন যোগ্য অনেকে বঞ্চিত হয়েছেন, তেমনি প্রশাসনিক কাঠামো ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। এই পদোন্নতির ফলে যে প্রশাসনের উচ্চপদে ও নিম্নপদে কর্মকর্তার সংখ্যা কমে মধ্যম পদে জনবল বেড়ে যাবে, তা সরকারের বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল। আর সচিব পর্যায়ের পাঁচজনসহ মোট ৪৩৪ জন কর্মকর্তা ওএসডি হয়ে থাকবেন—এটাই কতটুকু স্বাভাবিক?
সরকার যদি প্রশাসনকে গতিশীল ও দক্ষ করার ব্যাপারে সত্যিই আন্তরিক হয়, তবে বিষয়টিকে সামগ্রিকভাবে দেখতে হবে ও পরিকল্পনা হতে হবে সুদূরপ্রসারী। পদোন্নতির ক্ষেত্রে দলীয় রাজনৈতিক বিবেচনা একেবারে বাদ দিয়ে স্বচ্ছতা ও মেধা-যোগ্যতাকে মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এবারের পদোন্নতির ক্ষেত্রে তা নিশ্চিত করা গেলে সরকার একটি ইতিবাচক সংকেত দিতে পারত। অন্যদিকে পদবিন্যাস করে কাঠামোর ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টিও সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে।
No comments