সিয়াম সাধনার মাস ধর্ম মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান মানুষকে পরিশীলিত করার জন্য রোজা
মানুষের জীবনকে সুখী-সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করার জন্য ইসলামের বিধানগুলো এসেছে। রোজার উদ্দেশ্য শরীরকে দুর্বল করে অকর্মণ্য করা নয়, বরং শরীরকে সামান্য কষ্ট দিয়ে অভ্যাসের কিছু বিরুদ্ধাচরণ করে ক্রোধ, লোভ ইত্যাদি রিপুুকে বশ করে নফসকে শায়েস্তা করা এবং কষ্টসহিষ্ণুতার অভ্যাস করে বড় বড় কষ্টের কাজে নিজেকে ঢুকিয়ে ক্রমেই জীবন এবং সমাজকে সত্ ও মহত্ করে গড়ে তোলা।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সত্ কাজ করে, তবে তা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর যদি তোমরা উপলব্ধি করতে, তবে বুঝতে রোজা পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণপ্রদ।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৪)
মাহে রমজানের সিয়াম সাধনার মধ্যে রোজাদারদের জন্য রয়েছে অশেষ কল্যাণ ও উপকার। স্বাস্থ্যগতভাবে এবং মানসিক উত্কর্ষ সাধনের ক্ষেত্রেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। রোজার মাধ্যমে মানুষের আত্মিক ও নৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটে। লোভ-লালসা, হিংসা-ঈর্ষা, প্রতিহিংসা ও বিদ্বেষমুক্ত হয়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিশ্বমানবসমাজ ও সম্প্রদায়কে সুন্দর করে গড়ে তোলার জন্য মাহে রমজান এক নিয়ামক শক্তি। রমজান মাসের রোজার মধ্যে এমন একটি অপ্রতিরোধ্য চেতনাশক্তি আছে, এমন এক বরকতময় ও কল্যাণকর উপাদান আছে, যা মানুষকে সব রকমের পাপাচার, অনাচার থেকে ঢালস্বরূপ রক্ষা করে, তেমনি তাকে পাপের কালিমামুক্ত এক পবিত্র পরিশুদ্ধ খাঁটি মানুষ করে তোলে; য্রে মানুষ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও তাঁর নৈকট্য লাভে সৌভাগ্যবান একজন খাঁটি মুত্তাকি। রোজার মাহাত্ম্য সম্পর্কে নবী করিম (সা.) যথার্থই বলেছেন, ‘সিয়াম হচ্ছে ঢালস্বরূপ, সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মূর্খের মতো কাজ করবে না।’ (বুখারী)
মানবজীবনের সামগ্রিক কল্যাণলাভের প্রত্যক্ষ প্রশিক্ষণব্যবস্থা রমজান মাসের সিয়ামের মধ্যে নিহিত রয়েছে। রোজার মৌলিক উদ্দেশ্যই হচ্ছে জীবনকে পবিত্র ও পরিশীলিত রাখা। আর একটি পবিত্র পরিশীলিত জীবন সর্বদাই সমাজ ও মানবতার জন্য নিবেদিত হয়ে থাকে। তাই নফসের সঙ্গে যুদ্ধ করাকে মহানবী (সা.) ‘জিহাদ আল-আকবর’ বা সবচেয়ে বড় যুদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। রোজাদার মাহে রমজানের মাসব্যাপী নফসের সঙ্গে রীতিমতো যুদ্ধ করেন, যার ফলে পরিশুদ্ধতার সৌকর্য-শোভায় তিনি সুশোভিত হওয়ার সুযোগ লাভ করেন।
সুবহে সাদিক বা সূর্যোদয়ের পূর্ব মুহূর্ত হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকা, ইফতার ও সেহরির মধ্যেই কেবল মাহে রমজানের গুরুত্ব ও তাত্পর্য সীমাবদ্ধ নয়। সারা দিন রোজা রাখা, সময়মতো ইফতার করা, সেহরি গ্রহণ করা, তারাবি নামাজ আদায় করা—এগুলো তো পালন করতেই হবে। এসবের কোনোটি বাধ্যতামূলক, আর কোনোটি ঐচ্ছিক। সেই সঙ্গে মিথ্যা কথা, পরচর্চা, ঝগড়া-বিবাদ এবং সব রকম অন্যায়-অনাচার থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। অন্যের ওপর জুলুম করা হতে, অপচয় হতে বিরত থাকা সিয়াম সাধনার অন্যতম প্রধান দাবি। হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আছে, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘সে পানাহার ও কাম প্রবৃত্তি পরিত্যাগ করে। রোজা আমার জন্য এবং আমি এর পুরস্কার প্রদান করব।’ (বুখারী)
মাহে রমজানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষের মধ্যে মনুষত্ববোধ জাগ্রত করে পারস্পরিক প্রেম-ভালোবাসা, ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির সুমধুর ও নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলে এ পৃথিবীকে শান্তির স্বর্গে পরিণত করা, তা যদি না হয় আর মানুষের ভেতর যদি মানবিক গুণাবলি সৃষ্টি করা না যায়, তাহলে সে রোজা উপবাস বই কিছু নয়। এ সম্পর্কে রাসূলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘বহু রোজাদার এমন রয়েছে, রোজার বিনিময়ে অনাহারে থাকা ছাড়া সে আর কিছুই লাভ করতে পারে না। আবার অনেক রাত্রি জাগরণকারী এমন রয়েছে, যারা নিশি জাগরণের কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পায় না।’ (ইবনে মাজা)
রোজা পালনের মধ্য দিয়ে মানুষ পরিশুদ্ধতার শীর্ষে পৌঁছাতে পারে। মাহে রমজানের সুদীর্ঘ মাসের প্রতিটি দিন, সকাল-সন্ধ্যা-রাত একজন মানুষকে পরিশীলিত মানুষে রূপান্তর করার সর্বাত্মক আয়োজন করে। তারাই পরিশুদ্ধ, মুত্তাকি মুসলিম, আত্মসমর্পিত সংঘবদ্ধ মানুষ। ইসলামে সেই মুত্তাকি মানুষ তৈরির জন্য শুদ্ধ ও সুষ্ঠু কিছু ধর্মীয় কৃচ্ছ্রসাধনা ও পদ্ধতি প্রণীত হয়েছে। তাই রোজাদারদের স্মরণ রাখা প্রয়োজন, তারা যদি নিজেদের মধ্যে আত্মসংশোধন না আনতে পারে এবং আগের মতো পাপাচারে লিপ্ত থেকে রোজা পালন করে, তাহলে এ ধরনের সিয়াম সাধনার কোনো মূল্যই আল্লাহর কাছে পাওয়া যাবে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা পরিত্যাগ করতে পারল না, এমন ব্যক্তির পানাহার পরিত্যাগ করার আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (বুখারী)
কেউ যদি কোনো অন্যায় বা পাপ কাজ করে ফেলে, তাহলে সে সিয়াম সাধনা বা রোজা পালন করে তওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে অনুশোচনা করবে ও অনুতপ্ত হবে। সে তার রিপুকে দমন করতে সচেষ্ট হবে। এভাবে সেই রোজাদার মনে প্রশান্তি পাবে এবং তার অন্তর পরিশুদ্ধ হবে। এমনকি একপর্যায়ে তার ইচ্ছাশক্তি নিজের নিয়ন্ত্রণে এসে যাবে। তখন সে পুনরায় অন্যায়-অপরাধ বা পাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকবে। প্রকৃতপক্ষে সব কাজকর্মের মধ্য দিয়ে মানুষ মূলত আল্লাহর আদেশ-নিষেধগুলোকে মেনে চলার চেষ্টা করে। একসময় এতে সে সফলকাম হয়। তখন সে আল্লাহর সন্তুষ্টিও অর্জন করে। এভাবেই সে মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে এগিয়ে যায় এবং এটাই হলো মাহে রমজানে মানুষের পরম লক্ষ্য।
ইসলামের যেকোনো ধর্মীয় দিকনির্দেশনা ও ইবাদতের মর্মকথা হলো মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সমীপে নিঃশর্ত সমর্পণ। তাই মাহে রমজানে দিবসে পানাহার বর্জন যেমন পুণ্যময় ইবাদত, সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করাও তেমনি নূরময় নেক আমল। এখানে খানাপিনা গ্রহণ বা বর্জনটা মুখ্য নয়। লক্ষ্য হলো আল্লাহর নির্দেশের প্রতি নিঃশব্দ আনুগত্য। অবশ্য সেই আনুগত্যের মধ্য দিয়ে যে রোজাদারদের পশুপ্রবৃত্তি দমিত হয়, খানাপিনা ও যৌন সম্ভোগ পরিহারের মধ্য দিয়ে যে মানুষ নিষ্পাপ ফেরেশতাসুলভ চরিত্র চর্চা করার সুযোগ পায়, তা-ই সিয়াম সাধনার অনিবার্য ফসল।
রমজান মাস যেন মানুষে মানুষে সম্প্র্রীতি ও ভালোবাসা গড়ে ওঠার অবলম্ব্বন হয়। সমাজ থেকে যেন সব ধরনের অরাজকতা-অনাচার দূরীভূত হয়, মানুষ যেন খুঁজে পায় সত্য, সুন্দর ও মুক্তির পথ। আল্লাহ তাআলা আমাদের যথাযথভাবে মাহে রমজানের গুরুত্ব উপলব্ধি করার এবং এ মাসের মূল উদ্দেশ্য মানবজীবনকে সুন্দর-সুশৃঙ্খল ও পরিশীলিত করার জন্য বেশি বেশি নেক আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমী, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়।
dr.munimkhan@yahoo.com
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সত্ কাজ করে, তবে তা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর যদি তোমরা উপলব্ধি করতে, তবে বুঝতে রোজা পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণপ্রদ।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৪)
মাহে রমজানের সিয়াম সাধনার মধ্যে রোজাদারদের জন্য রয়েছে অশেষ কল্যাণ ও উপকার। স্বাস্থ্যগতভাবে এবং মানসিক উত্কর্ষ সাধনের ক্ষেত্রেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। রোজার মাধ্যমে মানুষের আত্মিক ও নৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটে। লোভ-লালসা, হিংসা-ঈর্ষা, প্রতিহিংসা ও বিদ্বেষমুক্ত হয়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিশ্বমানবসমাজ ও সম্প্রদায়কে সুন্দর করে গড়ে তোলার জন্য মাহে রমজান এক নিয়ামক শক্তি। রমজান মাসের রোজার মধ্যে এমন একটি অপ্রতিরোধ্য চেতনাশক্তি আছে, এমন এক বরকতময় ও কল্যাণকর উপাদান আছে, যা মানুষকে সব রকমের পাপাচার, অনাচার থেকে ঢালস্বরূপ রক্ষা করে, তেমনি তাকে পাপের কালিমামুক্ত এক পবিত্র পরিশুদ্ধ খাঁটি মানুষ করে তোলে; য্রে মানুষ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও তাঁর নৈকট্য লাভে সৌভাগ্যবান একজন খাঁটি মুত্তাকি। রোজার মাহাত্ম্য সম্পর্কে নবী করিম (সা.) যথার্থই বলেছেন, ‘সিয়াম হচ্ছে ঢালস্বরূপ, সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মূর্খের মতো কাজ করবে না।’ (বুখারী)
মানবজীবনের সামগ্রিক কল্যাণলাভের প্রত্যক্ষ প্রশিক্ষণব্যবস্থা রমজান মাসের সিয়ামের মধ্যে নিহিত রয়েছে। রোজার মৌলিক উদ্দেশ্যই হচ্ছে জীবনকে পবিত্র ও পরিশীলিত রাখা। আর একটি পবিত্র পরিশীলিত জীবন সর্বদাই সমাজ ও মানবতার জন্য নিবেদিত হয়ে থাকে। তাই নফসের সঙ্গে যুদ্ধ করাকে মহানবী (সা.) ‘জিহাদ আল-আকবর’ বা সবচেয়ে বড় যুদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। রোজাদার মাহে রমজানের মাসব্যাপী নফসের সঙ্গে রীতিমতো যুদ্ধ করেন, যার ফলে পরিশুদ্ধতার সৌকর্য-শোভায় তিনি সুশোভিত হওয়ার সুযোগ লাভ করেন।
সুবহে সাদিক বা সূর্যোদয়ের পূর্ব মুহূর্ত হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকা, ইফতার ও সেহরির মধ্যেই কেবল মাহে রমজানের গুরুত্ব ও তাত্পর্য সীমাবদ্ধ নয়। সারা দিন রোজা রাখা, সময়মতো ইফতার করা, সেহরি গ্রহণ করা, তারাবি নামাজ আদায় করা—এগুলো তো পালন করতেই হবে। এসবের কোনোটি বাধ্যতামূলক, আর কোনোটি ঐচ্ছিক। সেই সঙ্গে মিথ্যা কথা, পরচর্চা, ঝগড়া-বিবাদ এবং সব রকম অন্যায়-অনাচার থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। অন্যের ওপর জুলুম করা হতে, অপচয় হতে বিরত থাকা সিয়াম সাধনার অন্যতম প্রধান দাবি। হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আছে, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘সে পানাহার ও কাম প্রবৃত্তি পরিত্যাগ করে। রোজা আমার জন্য এবং আমি এর পুরস্কার প্রদান করব।’ (বুখারী)
মাহে রমজানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষের মধ্যে মনুষত্ববোধ জাগ্রত করে পারস্পরিক প্রেম-ভালোবাসা, ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির সুমধুর ও নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলে এ পৃথিবীকে শান্তির স্বর্গে পরিণত করা, তা যদি না হয় আর মানুষের ভেতর যদি মানবিক গুণাবলি সৃষ্টি করা না যায়, তাহলে সে রোজা উপবাস বই কিছু নয়। এ সম্পর্কে রাসূলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘বহু রোজাদার এমন রয়েছে, রোজার বিনিময়ে অনাহারে থাকা ছাড়া সে আর কিছুই লাভ করতে পারে না। আবার অনেক রাত্রি জাগরণকারী এমন রয়েছে, যারা নিশি জাগরণের কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পায় না।’ (ইবনে মাজা)
রোজা পালনের মধ্য দিয়ে মানুষ পরিশুদ্ধতার শীর্ষে পৌঁছাতে পারে। মাহে রমজানের সুদীর্ঘ মাসের প্রতিটি দিন, সকাল-সন্ধ্যা-রাত একজন মানুষকে পরিশীলিত মানুষে রূপান্তর করার সর্বাত্মক আয়োজন করে। তারাই পরিশুদ্ধ, মুত্তাকি মুসলিম, আত্মসমর্পিত সংঘবদ্ধ মানুষ। ইসলামে সেই মুত্তাকি মানুষ তৈরির জন্য শুদ্ধ ও সুষ্ঠু কিছু ধর্মীয় কৃচ্ছ্রসাধনা ও পদ্ধতি প্রণীত হয়েছে। তাই রোজাদারদের স্মরণ রাখা প্রয়োজন, তারা যদি নিজেদের মধ্যে আত্মসংশোধন না আনতে পারে এবং আগের মতো পাপাচারে লিপ্ত থেকে রোজা পালন করে, তাহলে এ ধরনের সিয়াম সাধনার কোনো মূল্যই আল্লাহর কাছে পাওয়া যাবে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা পরিত্যাগ করতে পারল না, এমন ব্যক্তির পানাহার পরিত্যাগ করার আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (বুখারী)
কেউ যদি কোনো অন্যায় বা পাপ কাজ করে ফেলে, তাহলে সে সিয়াম সাধনা বা রোজা পালন করে তওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে অনুশোচনা করবে ও অনুতপ্ত হবে। সে তার রিপুকে দমন করতে সচেষ্ট হবে। এভাবে সেই রোজাদার মনে প্রশান্তি পাবে এবং তার অন্তর পরিশুদ্ধ হবে। এমনকি একপর্যায়ে তার ইচ্ছাশক্তি নিজের নিয়ন্ত্রণে এসে যাবে। তখন সে পুনরায় অন্যায়-অপরাধ বা পাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকবে। প্রকৃতপক্ষে সব কাজকর্মের মধ্য দিয়ে মানুষ মূলত আল্লাহর আদেশ-নিষেধগুলোকে মেনে চলার চেষ্টা করে। একসময় এতে সে সফলকাম হয়। তখন সে আল্লাহর সন্তুষ্টিও অর্জন করে। এভাবেই সে মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে এগিয়ে যায় এবং এটাই হলো মাহে রমজানে মানুষের পরম লক্ষ্য।
ইসলামের যেকোনো ধর্মীয় দিকনির্দেশনা ও ইবাদতের মর্মকথা হলো মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সমীপে নিঃশর্ত সমর্পণ। তাই মাহে রমজানে দিবসে পানাহার বর্জন যেমন পুণ্যময় ইবাদত, সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করাও তেমনি নূরময় নেক আমল। এখানে খানাপিনা গ্রহণ বা বর্জনটা মুখ্য নয়। লক্ষ্য হলো আল্লাহর নির্দেশের প্রতি নিঃশব্দ আনুগত্য। অবশ্য সেই আনুগত্যের মধ্য দিয়ে যে রোজাদারদের পশুপ্রবৃত্তি দমিত হয়, খানাপিনা ও যৌন সম্ভোগ পরিহারের মধ্য দিয়ে যে মানুষ নিষ্পাপ ফেরেশতাসুলভ চরিত্র চর্চা করার সুযোগ পায়, তা-ই সিয়াম সাধনার অনিবার্য ফসল।
রমজান মাস যেন মানুষে মানুষে সম্প্র্রীতি ও ভালোবাসা গড়ে ওঠার অবলম্ব্বন হয়। সমাজ থেকে যেন সব ধরনের অরাজকতা-অনাচার দূরীভূত হয়, মানুষ যেন খুঁজে পায় সত্য, সুন্দর ও মুক্তির পথ। আল্লাহ তাআলা আমাদের যথাযথভাবে মাহে রমজানের গুরুত্ব উপলব্ধি করার এবং এ মাসের মূল উদ্দেশ্য মানবজীবনকে সুন্দর-সুশৃঙ্খল ও পরিশীলিত করার জন্য বেশি বেশি নেক আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমী, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়।
dr.munimkhan@yahoo.com
No comments