শিশুর রিকেটস by ডা: মিজানুর রহমান কল্লোল
ভিটামিন
শব্দটির সাথে কম বেশি আমরা সবাই পরিচিত। এই ভিটামিন আবার কয়েক ধরনের।
যেমন- ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ডি প্রভৃতি। প্রতিটি
ভিটামিনেরই রয়েছে আলাদা ভূমিকা। এ কারণেই ‘এ’ ভিটামিনের কাজ ‘বি’ বা ‘সি’
ভিটামিন করতে পারে না। তেমনি অন্য কারো কাজ করতে পারে না ‘এ’ ভিটামিন। যা
হোক, এক ধরনের ভিটামিন রয়েছে যার অভাবে হাড়ের রোগ হয়ে থাকে। বড়দের এই
ভিটামিনের অভাবে যে রোগটি হয়, তার নাম হলো অস্টিওম্যালাসিয়া।
অস্টিওম্যালাসিয়া রোগের প্রকোপ তেমন দেখা যায় না। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এই
ভিটামিনের অভাবে যে রোগটি হয়, তা কিন্তু বেশ পরিচিত, রিকেটস। যে ভিটামিনটির
অভাবে এই রোগ হয়, তার নাম ভিটামিন-ডি।
ভিটামিন-ডি’র কাজ হলো দেহের ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসকে তাদের কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে সাহায্য করা। এ কারণে ভিটামিন-ডি’র অভাব হলে দাঁত ও হাড়ে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অবক্ষেপণ হতে পারে না। ফলে দাঁত ও হাড়ে এদের পরিমাণ বেশ কমে যায়। ভিটামিন-ডি’র সাহায্যে ক্ষুদ্রান্ত্র খাদ্য থেকে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসকে শোষণ করে থাকে। এই ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস লবণের আকারে হাড়ে জমা হয়। এদের কারণে হাড় হয় সুস্থ, সবল এবং মজবুত। এদের অভাব হলে দাঁত এবং হাড়ের স্বাস্থ্য দুর্বল হয়ে পড়ে। বলা বাহুল্য, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অবক্ষেপণ এবং দাঁত-হাড়ে অবস্থান নির্ভর করে ভিটামিন-ডি’র ওপর।
আগেই উল্লেখ করেছি, ভিটামিন-ডি’র অভাবে রিকেটস হয়ে থাকে। রিকেটস শিশুদের ছয় মাস বয়স থেকে দুই বছরের মধ্যে বেশি হতে দেখা যায়। রিকেটসের মূল কারণগুলো হলো-
১. অপর্যাপ্ত সূর্যালোক।
২. অপর্যাপ্ত ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার।
৩. ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস- এ দুটো খনিজ লবণের অভাব।
৪. দেহে স্নেহ পদার্থের অভাব- কেননা স্নেহ পদার্থেই ভিটামিন-ডি দ্রবীভূত হয়। স্নেহ পদার্থের অভাবে ভিটামিন-ডি পর্যাপ্ত পরিমাণে শোষিত হতে পারে না এবং দেহের কাজে লাগে না।
**এ ছাড়া যকৃত ও কিডনির রোগ এবং খিঁচুনি নিরোধক ওষুধের কারণেও দেহে ভিটামিন-ডি’র অভাব দেখা দিতে পারে।
আমাদের দেশে অনেক মা-ই জানেন না যে, সূর্যালোকই হচ্ছে ভিটামিন-ডি’র প্রধান উৎস। অনেক মা শিশুর গায়ে রোদ লাগাতে দেন না। এটি মোটেও ঠিক নয়। শিশুকে প্রতিদিন অন্তত ঘণ্টাখানেকের জন্য রোদে রাখা দরকার। এতে শিশু তার দেহের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন-ডি সূর্যের আলো থেকেই সংগ্রহ করতে পারবে। শীতপ্রধান দেশে বছরের বেশির ভাগ সময় সূর্যালোক প্রায় দেখাই যায় না। সে সব দেশে শিশুকে রোদে রাখার প্রশ্নই আসে না। এসব দেশে শিশুকে দেহের চাহিদা অনুযায়ী ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো হয়। ভিটামিন ডি সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় মাছের তেলে। এ কারণে শিশুর ভিটামিন-ডি’র অভাব পূরণের জন্য কডলিভার ওয়েল খাওয়ানো হয়। মাছের তেল ছাড়াও ভিটামিন-ডি পাওয়া যায় দুধ, মাখন, ডিম এবং যকৃতে।
আক্রান্ত শিশুরা প্রচুর ঘামে, বিশেষ করে কপালে এদের ঘাম বেশি দেখা যায়। শিশু ফনটানেল সঠিক সময়ে বন্ধ হয় না। শিশুর করোটির হাড়ের গঠন এবং মিলন ঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না।
শিশুর দেহের সব ভর পায়ের ওপর পড়ে বলে পা এবং হাঁটুর মাঝখানের হাড় ধনুকের মতো বেঁকে যায়। এ অবস্থাকে বলা হয় ‘নক নী’ বা বো-লেগস।
রিকেটস আক্রান্ত শিশুদের পাঁজরের হাড়গুলো হয় দুর্বল, অপুষ্ট এবং চাকা। ফলে এদের বক্ষদেশ হয় সরু। এরকম অবস্থাকে বলা হয় পিজিয়ন চেস্ট। পেট স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে বড় দেখা যায়।
রিকেটস আক্রান্ত শিশুদের কপাল ও বুকের হাড় উঁচু দেখা যায়। বুকের হাড় সরু, নরম ও উঁচু দেখা যায় বলে অনেকটা মোরগির বুকের মতো দেখায়। দাঁতের হাড়ে খনিজ লবণের (ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস) অবক্ষেপণ হয় না বলে দাঁত বিলম্বে ওঠে কিংবা কখনোই ওঠে না। শিশুর কব্জি, হাঁটু এবং অন্য জয়েন্টগুলো মোটা থাকে এবং ফোলা দেখা যায়।
রিকেটস আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা না হলে এক সময় মেরুদণ্ডের হাড়গুলো এঁকেবেঁকে যায়। এ অবস্থাকে বলা হয় কাইফোসিস। শিশুর হাড়ের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় বলে দেহের বৃদ্ধিও কমে যায়। ফলে শিশু বামন বা ক্ষুদ্রাকৃতির হয়। রিকেটস থেকে আপনার শিশুকে রক্ষা করার সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে গায়ে ভালো করে তেল মেখে শিশুকে অন্তত ঘণ্টাখানেকের জন্য রোদে রাখা। শিশুদের বয়স পাঁচ মাস পূর্ণ হওয়ার পর তাকে মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতে দিতে হবে। এ ছাড়া শিশুকে দিতে হবে পরিমিত স্নেহ এবং খনিজ পদার্থ (বিশেষ করে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস) সমৃদ্ধ খাবার।
শিশুর শরীরে রিকেটস রোগের লক্ষণ দেখা দিলে বিলম্ব না করে শিশু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। চিকিৎসক আপনার শিশুকে পরীক্ষা করে দেবেন প্রয়োজনীয় পরামর্শ।
ভিটামিন-ডি’র কাজ হলো দেহের ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসকে তাদের কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে সাহায্য করা। এ কারণে ভিটামিন-ডি’র অভাব হলে দাঁত ও হাড়ে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অবক্ষেপণ হতে পারে না। ফলে দাঁত ও হাড়ে এদের পরিমাণ বেশ কমে যায়। ভিটামিন-ডি’র সাহায্যে ক্ষুদ্রান্ত্র খাদ্য থেকে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসকে শোষণ করে থাকে। এই ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস লবণের আকারে হাড়ে জমা হয়। এদের কারণে হাড় হয় সুস্থ, সবল এবং মজবুত। এদের অভাব হলে দাঁত এবং হাড়ের স্বাস্থ্য দুর্বল হয়ে পড়ে। বলা বাহুল্য, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অবক্ষেপণ এবং দাঁত-হাড়ে অবস্থান নির্ভর করে ভিটামিন-ডি’র ওপর।
আগেই উল্লেখ করেছি, ভিটামিন-ডি’র অভাবে রিকেটস হয়ে থাকে। রিকেটস শিশুদের ছয় মাস বয়স থেকে দুই বছরের মধ্যে বেশি হতে দেখা যায়। রিকেটসের মূল কারণগুলো হলো-
১. অপর্যাপ্ত সূর্যালোক।
২. অপর্যাপ্ত ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার।
৩. ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস- এ দুটো খনিজ লবণের অভাব।
৪. দেহে স্নেহ পদার্থের অভাব- কেননা স্নেহ পদার্থেই ভিটামিন-ডি দ্রবীভূত হয়। স্নেহ পদার্থের অভাবে ভিটামিন-ডি পর্যাপ্ত পরিমাণে শোষিত হতে পারে না এবং দেহের কাজে লাগে না।
**এ ছাড়া যকৃত ও কিডনির রোগ এবং খিঁচুনি নিরোধক ওষুধের কারণেও দেহে ভিটামিন-ডি’র অভাব দেখা দিতে পারে।
আমাদের দেশে অনেক মা-ই জানেন না যে, সূর্যালোকই হচ্ছে ভিটামিন-ডি’র প্রধান উৎস। অনেক মা শিশুর গায়ে রোদ লাগাতে দেন না। এটি মোটেও ঠিক নয়। শিশুকে প্রতিদিন অন্তত ঘণ্টাখানেকের জন্য রোদে রাখা দরকার। এতে শিশু তার দেহের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন-ডি সূর্যের আলো থেকেই সংগ্রহ করতে পারবে। শীতপ্রধান দেশে বছরের বেশির ভাগ সময় সূর্যালোক প্রায় দেখাই যায় না। সে সব দেশে শিশুকে রোদে রাখার প্রশ্নই আসে না। এসব দেশে শিশুকে দেহের চাহিদা অনুযায়ী ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো হয়। ভিটামিন ডি সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় মাছের তেলে। এ কারণে শিশুর ভিটামিন-ডি’র অভাব পূরণের জন্য কডলিভার ওয়েল খাওয়ানো হয়। মাছের তেল ছাড়াও ভিটামিন-ডি পাওয়া যায় দুধ, মাখন, ডিম এবং যকৃতে।
আক্রান্ত শিশুরা প্রচুর ঘামে, বিশেষ করে কপালে এদের ঘাম বেশি দেখা যায়। শিশু ফনটানেল সঠিক সময়ে বন্ধ হয় না। শিশুর করোটির হাড়ের গঠন এবং মিলন ঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না।
শিশুর দেহের সব ভর পায়ের ওপর পড়ে বলে পা এবং হাঁটুর মাঝখানের হাড় ধনুকের মতো বেঁকে যায়। এ অবস্থাকে বলা হয় ‘নক নী’ বা বো-লেগস।
রিকেটস আক্রান্ত শিশুদের পাঁজরের হাড়গুলো হয় দুর্বল, অপুষ্ট এবং চাকা। ফলে এদের বক্ষদেশ হয় সরু। এরকম অবস্থাকে বলা হয় পিজিয়ন চেস্ট। পেট স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে বড় দেখা যায়।
রিকেটস আক্রান্ত শিশুদের কপাল ও বুকের হাড় উঁচু দেখা যায়। বুকের হাড় সরু, নরম ও উঁচু দেখা যায় বলে অনেকটা মোরগির বুকের মতো দেখায়। দাঁতের হাড়ে খনিজ লবণের (ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস) অবক্ষেপণ হয় না বলে দাঁত বিলম্বে ওঠে কিংবা কখনোই ওঠে না। শিশুর কব্জি, হাঁটু এবং অন্য জয়েন্টগুলো মোটা থাকে এবং ফোলা দেখা যায়।
রিকেটস আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা না হলে এক সময় মেরুদণ্ডের হাড়গুলো এঁকেবেঁকে যায়। এ অবস্থাকে বলা হয় কাইফোসিস। শিশুর হাড়ের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় বলে দেহের বৃদ্ধিও কমে যায়। ফলে শিশু বামন বা ক্ষুদ্রাকৃতির হয়। রিকেটস থেকে আপনার শিশুকে রক্ষা করার সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে গায়ে ভালো করে তেল মেখে শিশুকে অন্তত ঘণ্টাখানেকের জন্য রোদে রাখা। শিশুদের বয়স পাঁচ মাস পূর্ণ হওয়ার পর তাকে মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতে দিতে হবে। এ ছাড়া শিশুকে দিতে হবে পরিমিত স্নেহ এবং খনিজ পদার্থ (বিশেষ করে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস) সমৃদ্ধ খাবার।
শিশুর শরীরে রিকেটস রোগের লক্ষণ দেখা দিলে বিলম্ব না করে শিশু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। চিকিৎসক আপনার শিশুকে পরীক্ষা করে দেবেন প্রয়োজনীয় পরামর্শ।
>>>লেখক :
সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমা বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ
ও হাসপাতাল। চেম্বার : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিঃ, ২, ইংলিশ রোড,
ঢাকা।
ফোন: ০১৭২২৯১৬৪৭৯ (সঞ্জয়)
ফোন: ০১৭২২৯১৬৪৭৯ (সঞ্জয়)
No comments