তিন বছরেও হয়নি চার্জশিট কাঁদছে মিতুর আত্মা by ইব্রাহিম খলিল
তিন
বছর হলো তবুও চার্জশিট হয়নি। চট্টগ্রামের আলোচিত হত্যাকাণ্ড সাবেক পুলিশ
সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার। গত বছর থেকে
চার্জশিট এই দিচ্ছি, মনোভাবের কথা বহুবার বলেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। কিন্তু
না, দাখিল হয়নি এখনো। গত ৫ই জুন মিতু হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পূর্ণ হলো। অথচ
কাঁদছেন মিতুর বাবা-মাও। যন্ত্রণা পোহাচ্ছেন বাবুল আক্তারও। তাদের সকলের
দাবি দ্রুত চার্জশিট দেয়া হোক এ মামলার।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মাহবুবর রহমান এ প্রসঙ্গ বলেন, তদন্তের কাজ একেবারেই শেষ পর্যায়ে, কিছুটা যাচাই-বাছাই শেষে চার্জশিট দেয়া হবে। আমরা এ মামলার একটি উপসংহার টানছি এখন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কামরুজ্জামান বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। তা একেবারেই শেষ পর্যায়ে। চার্জশিট জমা দেয়া হলে বিস্তারিত জানা যাবে। তবে কবে চার্জশিট দেওয়া হবে সেটা এখন বলতে পারছি না।
নগর পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, মামলার তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে এক বছর আগে। কিন্তু শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশনা না পাওয়ায় আদালতে জমা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে তদন্তে গ্রেপ্তার অন্য আসামিদের জবানবন্দিতে নির্দেশদাতা হিসেবে ওঠে আসা মুসা শিকদারের হদিসও পায়নি ডিবি।
মুসার স্ত্রী পান্না আক্তারের দাবি, মিতু খুন হওয়ার পরপরই বন্দর থানার কাটগড় এলাকা থেকে পুলিশ তার স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে। এর পর কোন হদিস দিচ্ছে না পুলিশ।
তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, মুসাকে গ্রেপ্তারের প্রশ্নই উঠে না। তদন্তে মুসাই নির্দেশদাতা হিসেবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাকে গ্রেপ্তারে আমরা অভিযান চালাচ্ছি। তাকে গ্রেপ্তার করতে পারলে এ খুনের মাস্টারমাইন্ড কে তা চিহ্নিত হতো।
এদিকে, এ বছরের মার্চ মাসে আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সিএমপির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, মিতু হত্যা মামলার চার্জশিট দ্রুত জমা দেওয়ার জন্য তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই নির্দেশও বাস্তবায়ন হয়নি এখনো। সব মিলিয়ে এ হত্যামামলার সুষ্ঠু তদন্ত নিয়ে সন্দিহান মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, আমরা শুরু থেকে বলে আসছি যে বা যারা মিতুকে হত্যা করে থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত চার্জশিট দিতে। কিন্তু পুলিশ এখনও জানাতেই পারেনি কার নির্দেশে মিতুকে হত্যা করা হয়েছে। বিষয়টি বের করে আনতে এতো সময় লাগার কথা নয়। তিনি বলেন, কোনো এক রহস্যজনক কারণে পুলিশ নির্দেশদাতাকে শনাক্ত করতে পারেনি। চার্জশিটও দিচ্ছে না। আমি দ্রুত তদন্ত শেষ করে হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। তারা অনেক সময় এ খুনের পিছনে মিতুর স্বামী বাবুল আক্তারের সমপৃক্তারও অভিযোগ তুলেছেন। তাদের দাবি, মূল আসামিকে বাঁচাতে দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে এ মামলার তদন্ত। তারা এ হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে মিতুর স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকেই ইঙ্গিত করছেন। যদিও তদন্তকারী সংস্থা নগর গোয়েন্দা পুলিশ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলছে না। হত্যাকাণ্ডের পর বাবুলের শ্বশুর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন জামাতার পক্ষে কথা বললেও পরে তার মেয়ের হত্যাকাণ্ডের পেছনে জামাতার পরকীয়া সমপর্কের সন্দেহের ইঙ্গিত করে তদন্তের দাবি জানান। বাবুল আক্তারের সঙ্গে উন্নয়নকর্মী গায়ত্রী সিং ও রাজধানীর বনানীর বিনতে বসির বর্ণি নামে দুই নারীর সমপর্কের কথা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেন তিনি। তবে উল্টো শ্বশুরপক্ষ তাকে ঘায়েল করতে চাচ্ছেন অভিযোগ করে সঠিক তদন্তেই হত্যাকান্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন হবে বলে দাবি করেন বাবুল আক্তার।
তিনি বলেন, আমিও চাই এ মামলার চার্জশিট দ্রুত দেয়া হোক। কয়েক দিন আগেও আমার সঙ্গে আইওর কথা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে চার্জশিট দেয়া হবে। আমি মিতু হত্যা মামলার বিচার চাই। শ্বশুরের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একসময় আমি ওনাদের খুব প্রিয় ছিলাম। তাদের কথা না শোনায় গত দুই বছর থেকে খারাপ হয়ে গেলাম। আসলে উনি কী বলে নিজেও জানে না। এসব নিয়ে আমি কথা বলতেও আগ্রহী না।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে জঙ্গি দমন অভিযানের জন্য আলোচিত বাবুল আক্তার সিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি থেকে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে যোগ দেন। এর কয়েক দিনের মাথায় ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় ২০১৬ সালের ৫ই জুন সকালে চট্টগ্রামের ওআর নিজাম রোডের বাসা থেকে কয়েকশ গজ দূরে নগরীর জিইসি মোড়ে খুন হন বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু। মোটরসাইকেলে করে আসা কয়েকজন সেখানে ছেলের সামনে তাকে প্রথমে ছুরিকাঘাত করে। পরে গুলি করে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের পর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন বাবুল আক্তার। মামলায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও তিন বছরে অধরা মূল অভিযুক্ত নির্দেশদাতা মুসা। গ্রেপ্তার অন্য আসামিরা হলেন, আনোয়ার, ওয়াসিম, এহতেশামুল হক ভোলা, সাইদুল ইসলাম সিকদার ওরফে সাকু, শাহজাহান, আবু নাসের গুন্নু ও শাহজামান ওরফে রবিন। এর মধ্যে আবু নাসের গুন্নু ও শাহজামান ওরফে রবিনের এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে সমপৃক্ততা পাওয়া যায়নি বলে তৎকালীন সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। অপর চারজনের মধ্যে সাইদুল ইসলাম ওরফে সাকুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, হত্যায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি তিনিই সরবরাহ করেছেন তার বড় ভাই মুসা সিকদার ওরফে আবু মুসাকে। মুসা এ মোটরসাইকেল চালিয়েই মিতু হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেয়। অপর তিনজনের মধ্যে এহতেশামুল হক ভোলা মিতু হত্যাকান্ডে অস্ত্র সরবরাহকারী। শাহজাহান, ওয়াসিম ও আনোয়ার হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত ছিল। এ ছাড়া মিতু হত্যায় সন্দেহভাজনদের মধ্যে রাশেদ ও নবী নামে দুজন রাঙ্গুনিয়ায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।
বর্তমানে পলাতক আছে মুসা সিকদার ও কালু নামে দুজন। ওই সময়ে পলাতক মুসাকে ধরতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে সিএমপি। তবে এরপরও সে ধরা পড়েনি। গ্রেপ্তারদের মধ্যে ওয়াসিম ও আনোয়ার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। মুসার পরিকল্পনায় তারা মিতুকে খুন করেছে। এদিকে চট্টগ্রামে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে বাবুল আক্তারের সমপৃক্ততাও মিতু হত্যাকাণ্ডের সম্ভাব্য কারণ হতে পারে ধরে নিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তবে অল্পদিনেই সে ধারণা থেকে সরে আসেন তদন্তকারীরা। হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানা গুঞ্জনের মধ্যে ওই বছরে ২৪শে জুন রাতে ঢাকার বনশ্রীতে শ্বশুরের বাসা থেকে বাবুল আক্তারকে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে প্রায় ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন তার কাছ থেকে জোর করে পদত্যাগপত্র নেওয়ার খবর ছড়ালেও সে বিষয়ে কেউ মুখ খুলছিলেন না। তার ২০ দিন পর ২০১৬ সালের ১৪ই আগস্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, বাবুলের অব্যাহতির আবেদন তার কাছে রয়েছে। আরও ২২ দিন পর ৬ই সেপ্টেম্বর বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নানা আলোচনা সমালোচনার মধ্যে চুপ থাকা বাবুল আক্তার হত্যাকাণ্ডের দুই মাস পর ফেসবুকে স্ত্রীকে নিয়ে আবেগঘন একটি স্ট্যাটাস দিয়ে আবার আলোচনায় আসেন। মিতু হত্যার পর থেকে বাবুল ঢাকায় শ্বশুরবাড়িতে থাকলেও নতুন চাকরিতে (বেসরকারি) যোগ দেয়ার পর দুই সন্তান নিয়ে ঢাকার মগবাজারে আলাদা বাসা নিয়ে থাকতে শুরু করেন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মাহবুবর রহমান এ প্রসঙ্গ বলেন, তদন্তের কাজ একেবারেই শেষ পর্যায়ে, কিছুটা যাচাই-বাছাই শেষে চার্জশিট দেয়া হবে। আমরা এ মামলার একটি উপসংহার টানছি এখন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কামরুজ্জামান বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। তা একেবারেই শেষ পর্যায়ে। চার্জশিট জমা দেয়া হলে বিস্তারিত জানা যাবে। তবে কবে চার্জশিট দেওয়া হবে সেটা এখন বলতে পারছি না।
নগর পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, মামলার তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে এক বছর আগে। কিন্তু শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশনা না পাওয়ায় আদালতে জমা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে তদন্তে গ্রেপ্তার অন্য আসামিদের জবানবন্দিতে নির্দেশদাতা হিসেবে ওঠে আসা মুসা শিকদারের হদিসও পায়নি ডিবি।
মুসার স্ত্রী পান্না আক্তারের দাবি, মিতু খুন হওয়ার পরপরই বন্দর থানার কাটগড় এলাকা থেকে পুলিশ তার স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে। এর পর কোন হদিস দিচ্ছে না পুলিশ।
তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, মুসাকে গ্রেপ্তারের প্রশ্নই উঠে না। তদন্তে মুসাই নির্দেশদাতা হিসেবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাকে গ্রেপ্তারে আমরা অভিযান চালাচ্ছি। তাকে গ্রেপ্তার করতে পারলে এ খুনের মাস্টারমাইন্ড কে তা চিহ্নিত হতো।
এদিকে, এ বছরের মার্চ মাসে আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সিএমপির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, মিতু হত্যা মামলার চার্জশিট দ্রুত জমা দেওয়ার জন্য তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই নির্দেশও বাস্তবায়ন হয়নি এখনো। সব মিলিয়ে এ হত্যামামলার সুষ্ঠু তদন্ত নিয়ে সন্দিহান মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, আমরা শুরু থেকে বলে আসছি যে বা যারা মিতুকে হত্যা করে থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত চার্জশিট দিতে। কিন্তু পুলিশ এখনও জানাতেই পারেনি কার নির্দেশে মিতুকে হত্যা করা হয়েছে। বিষয়টি বের করে আনতে এতো সময় লাগার কথা নয়। তিনি বলেন, কোনো এক রহস্যজনক কারণে পুলিশ নির্দেশদাতাকে শনাক্ত করতে পারেনি। চার্জশিটও দিচ্ছে না। আমি দ্রুত তদন্ত শেষ করে হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। তারা অনেক সময় এ খুনের পিছনে মিতুর স্বামী বাবুল আক্তারের সমপৃক্তারও অভিযোগ তুলেছেন। তাদের দাবি, মূল আসামিকে বাঁচাতে দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে এ মামলার তদন্ত। তারা এ হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে মিতুর স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকেই ইঙ্গিত করছেন। যদিও তদন্তকারী সংস্থা নগর গোয়েন্দা পুলিশ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলছে না। হত্যাকাণ্ডের পর বাবুলের শ্বশুর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন জামাতার পক্ষে কথা বললেও পরে তার মেয়ের হত্যাকাণ্ডের পেছনে জামাতার পরকীয়া সমপর্কের সন্দেহের ইঙ্গিত করে তদন্তের দাবি জানান। বাবুল আক্তারের সঙ্গে উন্নয়নকর্মী গায়ত্রী সিং ও রাজধানীর বনানীর বিনতে বসির বর্ণি নামে দুই নারীর সমপর্কের কথা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেন তিনি। তবে উল্টো শ্বশুরপক্ষ তাকে ঘায়েল করতে চাচ্ছেন অভিযোগ করে সঠিক তদন্তেই হত্যাকান্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন হবে বলে দাবি করেন বাবুল আক্তার।
তিনি বলেন, আমিও চাই এ মামলার চার্জশিট দ্রুত দেয়া হোক। কয়েক দিন আগেও আমার সঙ্গে আইওর কথা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে চার্জশিট দেয়া হবে। আমি মিতু হত্যা মামলার বিচার চাই। শ্বশুরের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একসময় আমি ওনাদের খুব প্রিয় ছিলাম। তাদের কথা না শোনায় গত দুই বছর থেকে খারাপ হয়ে গেলাম। আসলে উনি কী বলে নিজেও জানে না। এসব নিয়ে আমি কথা বলতেও আগ্রহী না।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে জঙ্গি দমন অভিযানের জন্য আলোচিত বাবুল আক্তার সিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি থেকে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে যোগ দেন। এর কয়েক দিনের মাথায় ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় ২০১৬ সালের ৫ই জুন সকালে চট্টগ্রামের ওআর নিজাম রোডের বাসা থেকে কয়েকশ গজ দূরে নগরীর জিইসি মোড়ে খুন হন বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু। মোটরসাইকেলে করে আসা কয়েকজন সেখানে ছেলের সামনে তাকে প্রথমে ছুরিকাঘাত করে। পরে গুলি করে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের পর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন বাবুল আক্তার। মামলায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও তিন বছরে অধরা মূল অভিযুক্ত নির্দেশদাতা মুসা। গ্রেপ্তার অন্য আসামিরা হলেন, আনোয়ার, ওয়াসিম, এহতেশামুল হক ভোলা, সাইদুল ইসলাম সিকদার ওরফে সাকু, শাহজাহান, আবু নাসের গুন্নু ও শাহজামান ওরফে রবিন। এর মধ্যে আবু নাসের গুন্নু ও শাহজামান ওরফে রবিনের এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে সমপৃক্ততা পাওয়া যায়নি বলে তৎকালীন সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। অপর চারজনের মধ্যে সাইদুল ইসলাম ওরফে সাকুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, হত্যায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি তিনিই সরবরাহ করেছেন তার বড় ভাই মুসা সিকদার ওরফে আবু মুসাকে। মুসা এ মোটরসাইকেল চালিয়েই মিতু হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেয়। অপর তিনজনের মধ্যে এহতেশামুল হক ভোলা মিতু হত্যাকান্ডে অস্ত্র সরবরাহকারী। শাহজাহান, ওয়াসিম ও আনোয়ার হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত ছিল। এ ছাড়া মিতু হত্যায় সন্দেহভাজনদের মধ্যে রাশেদ ও নবী নামে দুজন রাঙ্গুনিয়ায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।
বর্তমানে পলাতক আছে মুসা সিকদার ও কালু নামে দুজন। ওই সময়ে পলাতক মুসাকে ধরতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে সিএমপি। তবে এরপরও সে ধরা পড়েনি। গ্রেপ্তারদের মধ্যে ওয়াসিম ও আনোয়ার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। মুসার পরিকল্পনায় তারা মিতুকে খুন করেছে। এদিকে চট্টগ্রামে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে বাবুল আক্তারের সমপৃক্ততাও মিতু হত্যাকাণ্ডের সম্ভাব্য কারণ হতে পারে ধরে নিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তবে অল্পদিনেই সে ধারণা থেকে সরে আসেন তদন্তকারীরা। হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানা গুঞ্জনের মধ্যে ওই বছরে ২৪শে জুন রাতে ঢাকার বনশ্রীতে শ্বশুরের বাসা থেকে বাবুল আক্তারকে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে প্রায় ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন তার কাছ থেকে জোর করে পদত্যাগপত্র নেওয়ার খবর ছড়ালেও সে বিষয়ে কেউ মুখ খুলছিলেন না। তার ২০ দিন পর ২০১৬ সালের ১৪ই আগস্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, বাবুলের অব্যাহতির আবেদন তার কাছে রয়েছে। আরও ২২ দিন পর ৬ই সেপ্টেম্বর বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নানা আলোচনা সমালোচনার মধ্যে চুপ থাকা বাবুল আক্তার হত্যাকাণ্ডের দুই মাস পর ফেসবুকে স্ত্রীকে নিয়ে আবেগঘন একটি স্ট্যাটাস দিয়ে আবার আলোচনায় আসেন। মিতু হত্যার পর থেকে বাবুল ঢাকায় শ্বশুরবাড়িতে থাকলেও নতুন চাকরিতে (বেসরকারি) যোগ দেয়ার পর দুই সন্তান নিয়ে ঢাকার মগবাজারে আলাদা বাসা নিয়ে থাকতে শুরু করেন।
No comments