মিয়ানমারে সহিংসতার শিকার সবার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা উচিত নিরাপত্তা পরিষদের by পরম-প্রীত সিং
আন্তর্জাতিক
অপরাধ আদালত (আইসিসি) ২৬ জুন ঘোষণা করেছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে
দু’দফা সহিংসতার সময় যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তা তদন্তের জন্য এই আদালতের
বিচারকদের কাছে অনুরোধ করবেন প্রসিকিউটর ফাতো বেনসুদা। আইসিসির সদস্য নয়
মিয়ানমার। মিয়ানমার আইসিসির সদস্য না হলেও তাদের বিরুদ্ধে বিচার করা যাবে
বলে গত বছরে এই আদালত নিশ্চিত করেছে। কারণ, যেসব ঘটনা ঘটেছে তার শিকার
হয়েছে বাংলাদেশ এবং ২০১০ সালের জুন থেকে আইসিসির সদস্য বাংলাদেশ।
জাতিসংঘ মিয়ানমারের সব অপরাধের তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ ও তা সংরক্ষণের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে। নির্যাতনের এসব তথ্যপ্রমাণ ভবিষ্যত বিচারে ব্যবহার করা হবে। জাতিসংঘের ওই কমিটি গঠনের পরে রাখাইনে নির্যাতনের শিকার, বেঁচে থাকা মানুষ ও তাদের পরিবারের পক্ষে প্রসিকিউটরের উদ্যোগ ন্যায়বিচারের পক্ষে আরো একধাপ এগিয়ে যাওয়া। নির্যাতিত এসব মানুষ ও পরিবারের বেশির ভাগই রোহিঙ্গা মুসলিম।
এখন পর্যন্ত মিয়ানমার ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে যে প্রহসনমুলক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, এ দুটি উদ্যোগই তা থেকে দ্রুত স্বস্তি দেবে। মিয়ানমার নৃশংসতার অভিযোগ তদন্তে নামমাত্র কমিশন গঠন করেছিল। ডিসেম্বরে সেই কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছিলেন, ভয়াবহ নির্যাতনের অভিযোগকে সমর্থন করার মতো যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ পায় নি কমিশন। ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের নারী অধিকার বিষয়ক কমিটিতে মিয়ানমার বলেছে, ২০১৭ সালে অপারেশন চালানোর সময় সেনাবাহিনী নৃশংস ও ব্যাপক যৌন সহিংসতা চালিয়েছিল বলে যে ‘উদ্ভট অভিযোগ’ আছে তার পক্ষে কোনোই তথ্যপ্রমাণ নেই। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার অভিযোগ নিজেরাই তদন্ত করে সেনাবাহিনীর নিজেদের সৃষ্ট সামরিক আদালত। তারাও তদন্ত করে একই রকম রিপোর্ট দেয়। এতে জবাবদিহিতা না থাকার যে রেকর্ড আছে মিয়ানমারে, সেখান থেকে তারা তাদের বিচার করে।
কিন্তু মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নৃশংসতার যে দীর্ঘ তালিকা আছে তার প্রেক্ষিতে আরো বড় পদক্ষেপ দাবি করা যেতে পারে। জাতিসংঘ নিয়োজিত ফ্যাক্ট ফাইন্ডাররা গত আগস্টে তাদের রিপোর্টে বলে যে, রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে গণহত্যা এবং রাখাইন, কাচিন ও শান রাজ্যে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের জন্য মিয়ানমারের কমান্ডার ইন চিফ সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং সহ শীর্ষস্থানীয় জেনারেলদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিচার করা উচিত। যদি আইসিসির প্রসিকিউটরের প্রস্তাবিত তদন্ত সামনে অগ্রসর হয় তাহলে তিনি এসব অপরাধের বেশিরভাগের নাগাল পাবেন না। কারণ, এগুলো সংঘটিত হয়েছে মিয়ানমারের ভিতরে।
যদিও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের উচিত মিয়ানমারের এই পুরো বিষয়কে আইসিসিতে পাঠানো, তবু ঠিক এই মুহূর্তে তা একেবারেই ঘটবে না বলে মনে হয়। কারণ, নিরাপত্তা পরিষদের উল্লেখযোগ্য সদস্য চীন ও রাশিয়ার এতে বিরোধিতা রয়েছে। এ অবস্থায় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা সহ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর উচিত মিয়ানমারকে আইসিসিতে পাঠানোর জন্য অব্যাহতভাবে আহ্বান জানানো। এটা করে মনোযোগ রাখতে হবে তাদের ওপর, যারা একই মতের সঙ্গে রয়েছে। যদিও এক্ষেত্রে রাজনৈতিক উচ্চমূল্য দিতে হবে। বর্তমানে নিরাপত্তা পরিষদের অকার্যকারিতার কারণে নিয়মের তোয়াক্কা করে না এমন ব্যক্তি বা রাষ্ট্রকে ফ্রি পাস দেয়া যাবে না। মিয়ানমারে সবচেয়ে নিকৃষ্ট অপরাধের দায়মুক্তি দেয়া থেকে নিরাপত্তা পরিষদকে
দায়মুক্তি দেয়া যেতে পারে না।
(পরম-প্রীত সিং, অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর, ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস প্রোগ্রাম। তার এ লেখাটি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মূল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত)
জাতিসংঘ মিয়ানমারের সব অপরাধের তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ ও তা সংরক্ষণের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে। নির্যাতনের এসব তথ্যপ্রমাণ ভবিষ্যত বিচারে ব্যবহার করা হবে। জাতিসংঘের ওই কমিটি গঠনের পরে রাখাইনে নির্যাতনের শিকার, বেঁচে থাকা মানুষ ও তাদের পরিবারের পক্ষে প্রসিকিউটরের উদ্যোগ ন্যায়বিচারের পক্ষে আরো একধাপ এগিয়ে যাওয়া। নির্যাতিত এসব মানুষ ও পরিবারের বেশির ভাগই রোহিঙ্গা মুসলিম।
এখন পর্যন্ত মিয়ানমার ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে যে প্রহসনমুলক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, এ দুটি উদ্যোগই তা থেকে দ্রুত স্বস্তি দেবে। মিয়ানমার নৃশংসতার অভিযোগ তদন্তে নামমাত্র কমিশন গঠন করেছিল। ডিসেম্বরে সেই কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছিলেন, ভয়াবহ নির্যাতনের অভিযোগকে সমর্থন করার মতো যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ পায় নি কমিশন। ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের নারী অধিকার বিষয়ক কমিটিতে মিয়ানমার বলেছে, ২০১৭ সালে অপারেশন চালানোর সময় সেনাবাহিনী নৃশংস ও ব্যাপক যৌন সহিংসতা চালিয়েছিল বলে যে ‘উদ্ভট অভিযোগ’ আছে তার পক্ষে কোনোই তথ্যপ্রমাণ নেই। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার অভিযোগ নিজেরাই তদন্ত করে সেনাবাহিনীর নিজেদের সৃষ্ট সামরিক আদালত। তারাও তদন্ত করে একই রকম রিপোর্ট দেয়। এতে জবাবদিহিতা না থাকার যে রেকর্ড আছে মিয়ানমারে, সেখান থেকে তারা তাদের বিচার করে।
কিন্তু মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নৃশংসতার যে দীর্ঘ তালিকা আছে তার প্রেক্ষিতে আরো বড় পদক্ষেপ দাবি করা যেতে পারে। জাতিসংঘ নিয়োজিত ফ্যাক্ট ফাইন্ডাররা গত আগস্টে তাদের রিপোর্টে বলে যে, রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে গণহত্যা এবং রাখাইন, কাচিন ও শান রাজ্যে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের জন্য মিয়ানমারের কমান্ডার ইন চিফ সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং সহ শীর্ষস্থানীয় জেনারেলদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিচার করা উচিত। যদি আইসিসির প্রসিকিউটরের প্রস্তাবিত তদন্ত সামনে অগ্রসর হয় তাহলে তিনি এসব অপরাধের বেশিরভাগের নাগাল পাবেন না। কারণ, এগুলো সংঘটিত হয়েছে মিয়ানমারের ভিতরে।
যদিও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের উচিত মিয়ানমারের এই পুরো বিষয়কে আইসিসিতে পাঠানো, তবু ঠিক এই মুহূর্তে তা একেবারেই ঘটবে না বলে মনে হয়। কারণ, নিরাপত্তা পরিষদের উল্লেখযোগ্য সদস্য চীন ও রাশিয়ার এতে বিরোধিতা রয়েছে। এ অবস্থায় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা সহ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর উচিত মিয়ানমারকে আইসিসিতে পাঠানোর জন্য অব্যাহতভাবে আহ্বান জানানো। এটা করে মনোযোগ রাখতে হবে তাদের ওপর, যারা একই মতের সঙ্গে রয়েছে। যদিও এক্ষেত্রে রাজনৈতিক উচ্চমূল্য দিতে হবে। বর্তমানে নিরাপত্তা পরিষদের অকার্যকারিতার কারণে নিয়মের তোয়াক্কা করে না এমন ব্যক্তি বা রাষ্ট্রকে ফ্রি পাস দেয়া যাবে না। মিয়ানমারে সবচেয়ে নিকৃষ্ট অপরাধের দায়মুক্তি দেয়া থেকে নিরাপত্তা পরিষদকে
দায়মুক্তি দেয়া যেতে পারে না।
(পরম-প্রীত সিং, অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর, ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস প্রোগ্রাম। তার এ লেখাটি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মূল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত)
No comments