‘বন্দুকযুদ্ধে’ নয়ন বন্ড নিহত
পুলিশের
সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে বরগুনায় প্রকাশ্যে রিফাত শরীফ (২৫)কে
কুপিয়ে হত্যার মূলহোতা ও এই মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড। গতকাল ভোর সোয়া
চারটার দিকে বরগুনা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটা ফেরিঘাট এলাকায় এ
ঘটনা ঘটে। বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই নয়ন বন্ড পলাতক ছিলেন।
নিহত সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড বরগুনা পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম কলেজ রোড এলাকার মৃত মো. আবুবক্কর সিদ্দিকের ছেলে এবং রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি। এ ছাড়া আরো ১১টি মামলায় অভিযুক্ত আসামি নয়ন। রিফাত হত্যায় জড়িত আরেক ঘাতক ও নয়ন বন্ড গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড রিফাত ফরাজী এখনো পলাতক। ওদিকে নয়ন বন্ড নিহত হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন নিহত রিফাতের স্ত্রী মিন্নি ও বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ।
গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে বরগুনা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে যে, রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা পুরাকাটা এলাকায় অবস্থান করছে।
তারা পুরাকাটা সংলগ্ন পায়রা নদী দিয়ে ট্রলারযোগে বরগুনা সদর উপজেলা ত্যাগ করে অন্যত্র পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে বরগুনার পাথরঘাটা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিএম আশ্রাফ উল্যাহ তাহেরের নেতৃত্বে ভোর ৪টা ১৫ মিনিটের দিকে পুরাকাটার ঘটনাস্থলে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় নয়ন বন্ড তার ৫-৭ জন সহযোগীকে নিয়ে পুলিশের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার জন্য পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। দুই পক্ষের গুলি বিনিময়ের একপর্যায়ে পুলিশের ওপর গুলিবর্ষণকারীরা পিছু হটলে পুরাকাটা এলাকার মজিদ মিলিটারির বাড়ির পূর্বপাশে পায়রা নদীর বেড়িবাঁধের পাশে তল্লাশি চলাকালে গুলিবিদ্ধ একটি মরদেহ দেখতে পায় পুলিশ। এদিকে গোলাগুলির শব্দ পেয়ে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে উদ্ধার হওয়া মরদেহটি রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ডের বলে শনাক্ত করেন তারা। বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, এক রাউন্ড পিস্তলের গুলি, দুটি শর্টগানের কার্তুজের খালি খোসা ও ৩টি দেশীয় ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনার চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যায় মামলার এজাহারভুক্ত ১১ নম্বর আসামি অলি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা অভিযুক্ত তানভীর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সোমবার বিকালে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর কাছে স্বেচ্ছায় তারা এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
এছাড়া আটক নাজমুল হাসান, সাগর ও সাইমুন নামে অপর তিনজন বর্তমানে পুলিশি রিমান্ডে রয়েছেন। এদিকে মামলার ১২ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয় আটক হওয়ার কথা শুনা গেলেও তিনি বরগুনা জেলা পুলিশের কাছে নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ সূত্র।
নয়ন বন্ডের বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এসব মামলায় নয়ন বন্ডকে অভিযুক্ত করে বিভিন্ন সময় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। এসব মামলার মধ্যে দুইটি মাদক মামলা, একটি অস্ত্র মামলা এবং হত্যাচেষ্টাসহ পাঁচটি মারামারির মামলা রয়েছে।
অপরদিকে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার দুই প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন ও রিফাত ফরাজীর বিরুদ্ধে সোমবার ল্যাপটপ ছিনতাইচেষ্টা এবং শারীরিকভাবে জখম ও হুমকি দেয়ার পৃথক আরেকটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। বরগুনার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. নাহিদ হোসেন এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, নয়ন বন্ডকে জীবিত গ্রেপ্তার করা গেলে তার নিজ হাতে গড়া গ্রুপ ০০৭ এর সদস্যদের সম্পর্কে সব তথ্য পাওয়া যেতো। এক্ষেত্রে পুলিশ ব্যর্থ হয়েছে। নয়নকে যারা প্রশ্রয় দিয়েছে এবং তার গ্রুপে যারা সদস্য হিসেবে যুক্ত ছিলেন তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
রিফাতের বাবার বক্তব্য: পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নয়ন বন্ড নিহত হওয়ার খবরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার শিকার রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ। তিনি বলেন, নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে, এতে আমার ছেলের আত্মা যদি একটু শান্তি পায়।
রিফাতের স্ত্রী মিন্নির বক্তব্য: রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার খবরে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানিয়েছেন রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। বরগুনা সদরের পূর্ব বুড়িরচর গ্রামে বন্দুকযুদ্ধে নয়ন বন্ড নিহত হয়েছেন বলে বাবার কাছ থেকে প্রথমে জানতে পারেন মিন্নি। নয়ন বন্ডের নিহত হওয়ার খবরে স্বস্তি প্রকাশ করে মিন্নি বলেন, শোকে বিধ্বস্ত আমি, ঠিক এমন একটা খবরের অপেক্ষায় ছিলাম। কারণ বিচারের জন্য আদালতে দৌড়াতে হলো না। বিচার হবে কি হবে না তা নিয়ে ছিল আতঙ্ক। নয়নের নিহতের মধ্য দিয়ে সব শঙ্কা এবং আতঙ্ক দূর হয়েছে।
মরদেহ দেখতে বরগুনায় মানুষের ঢল: আসামি বন্দুকযুদ্ধে নিহত নয়ন বন্ডের মরদেহ দেখতে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে ঢল নেমেছে সাধারণ মানুষের। সেই ঢল সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে পুলিশকেও। পরে লাইনে দাঁড় করে কয়েক হাজার সাধারণ মানুষকে নয়ন বন্ডের মরদেহ দেখার সুযোগ করে দেয় পুলিশ। এ সময় নয়ন বন্ডের মরদেহ দেখতে আসা সাধারণ মানুষের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার সংবাদ জানাজানির পরপরই বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গ ও এর আশপাশ এলাকায় অবস্থান নেয় উৎসুক সাধারণ মানুষ। পরে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাস্থল থেকে সকাল ৭টার দিকে নয়ন বন্ডের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে আসে পুলিশ।
আদালতে আসামি অলি ও তানভীরের জবানবন্দি: রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি অলি ও জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার তানভীর। সোমবার বিকাল তিনটার দিকে রিফাত হত্যা মামলার পাঁচ আসামিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। বিকাল ৫টার দিকে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি অলি ও জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার তানভীর আদালতে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী আসামিদের জবানবন্দি শেষে জেল হাজতে পাঠান। এ সময় অন্য তিন আসামির পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন তিনি।
স্বীকারোক্তিতে আসামি অলি আদালতকে জানায়, হত্যার আগের দিনের প্ল্যান অনুযায়ী ২৬ তারিখ সকালে রাকিবুল ইসলাম রিফাতের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা অস্ত্র নিয়ে কলেজ রোড এলাকায় রিফাত ফরাজীর কাছে পৌঁছে দেয় সে। রিফাত ফরাজী অস্ত্রের ব্যাগ একটি টিনের চালার ওপর রাখে। পরে ওই অস্ত্র নিয়ে রিফাত ফরাজী, রিফাত ও টিকটক হৃদয় নয়ন বন্ডের সঙ্গে হামলায় অংশ নেয়। রিফাত শরীফকে মারধরের সময় হত্যাকারীদের সহায়তা করে বলেও আদালতকে জানায় অলি।
অন্য আসামি তানভীর হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতকে জানায়, রিফাতকে হত্যার আগে বরগুনা সরকারি কলেজ মাঠে তাদের ০০৭ গ্রুপের একটি বৈঠক হয়। সেখানে রিশান ফরাজী তাকে ২৬ তারিখ কলেজ রোড এলাকায় আসতে বলে। কি জন্য আসতে হবে জানতে চায় তানভীর। পরে রিশান তাকে জানায় রিফাত শরীফকে খুন করা হবে। রিশান ফরাজীর নির্দেশনা অনুযায়ী ২৬ তারিখ ৯টার সময় কলেজ রোড এলাকায় হাজির হয় তানভীর। হামলা ও মারধরের সময় যাতে রিফাত শরীফ পালাতে না পারে এ জন্য তানভীর প্রতিটি গলিতে মানুষ রেডি করে রাখে। সবার অবস্থান নিশ্চিত করার দায়িত্ব ছিল তার ওপর। আদালতে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া কয়েকজনের নামও জানায় তানভীর। জড়িতদের মধ্যে রয়েছে, সাব্বির আহমেদ নয়ন (নয়ন বন্ড), রিফাত ফরাজী, রিশান ফরাজী, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রাকিবুল ইসলাম রিফাত, রাব্বি আকন ও রায়হান। হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতার জন্য অজ্ঞাত আরো অনেকে ছিল বলে জানায় তানভীর।
নিহত সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড বরগুনা পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম কলেজ রোড এলাকার মৃত মো. আবুবক্কর সিদ্দিকের ছেলে এবং রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি। এ ছাড়া আরো ১১টি মামলায় অভিযুক্ত আসামি নয়ন। রিফাত হত্যায় জড়িত আরেক ঘাতক ও নয়ন বন্ড গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড রিফাত ফরাজী এখনো পলাতক। ওদিকে নয়ন বন্ড নিহত হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন নিহত রিফাতের স্ত্রী মিন্নি ও বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ।
গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে বরগুনা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে যে, রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা পুরাকাটা এলাকায় অবস্থান করছে।
তারা পুরাকাটা সংলগ্ন পায়রা নদী দিয়ে ট্রলারযোগে বরগুনা সদর উপজেলা ত্যাগ করে অন্যত্র পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে বরগুনার পাথরঘাটা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিএম আশ্রাফ উল্যাহ তাহেরের নেতৃত্বে ভোর ৪টা ১৫ মিনিটের দিকে পুরাকাটার ঘটনাস্থলে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় নয়ন বন্ড তার ৫-৭ জন সহযোগীকে নিয়ে পুলিশের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার জন্য পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। দুই পক্ষের গুলি বিনিময়ের একপর্যায়ে পুলিশের ওপর গুলিবর্ষণকারীরা পিছু হটলে পুরাকাটা এলাকার মজিদ মিলিটারির বাড়ির পূর্বপাশে পায়রা নদীর বেড়িবাঁধের পাশে তল্লাশি চলাকালে গুলিবিদ্ধ একটি মরদেহ দেখতে পায় পুলিশ। এদিকে গোলাগুলির শব্দ পেয়ে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে উদ্ধার হওয়া মরদেহটি রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ডের বলে শনাক্ত করেন তারা। বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, এক রাউন্ড পিস্তলের গুলি, দুটি শর্টগানের কার্তুজের খালি খোসা ও ৩টি দেশীয় ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনার চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যায় মামলার এজাহারভুক্ত ১১ নম্বর আসামি অলি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা অভিযুক্ত তানভীর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সোমবার বিকালে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর কাছে স্বেচ্ছায় তারা এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
এছাড়া আটক নাজমুল হাসান, সাগর ও সাইমুন নামে অপর তিনজন বর্তমানে পুলিশি রিমান্ডে রয়েছেন। এদিকে মামলার ১২ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয় আটক হওয়ার কথা শুনা গেলেও তিনি বরগুনা জেলা পুলিশের কাছে নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ সূত্র।
নয়ন বন্ডের বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এসব মামলায় নয়ন বন্ডকে অভিযুক্ত করে বিভিন্ন সময় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। এসব মামলার মধ্যে দুইটি মাদক মামলা, একটি অস্ত্র মামলা এবং হত্যাচেষ্টাসহ পাঁচটি মারামারির মামলা রয়েছে।
অপরদিকে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার দুই প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন ও রিফাত ফরাজীর বিরুদ্ধে সোমবার ল্যাপটপ ছিনতাইচেষ্টা এবং শারীরিকভাবে জখম ও হুমকি দেয়ার পৃথক আরেকটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। বরগুনার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. নাহিদ হোসেন এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, নয়ন বন্ডকে জীবিত গ্রেপ্তার করা গেলে তার নিজ হাতে গড়া গ্রুপ ০০৭ এর সদস্যদের সম্পর্কে সব তথ্য পাওয়া যেতো। এক্ষেত্রে পুলিশ ব্যর্থ হয়েছে। নয়নকে যারা প্রশ্রয় দিয়েছে এবং তার গ্রুপে যারা সদস্য হিসেবে যুক্ত ছিলেন তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
রিফাতের বাবার বক্তব্য: পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নয়ন বন্ড নিহত হওয়ার খবরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার শিকার রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ। তিনি বলেন, নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে, এতে আমার ছেলের আত্মা যদি একটু শান্তি পায়।
রিফাতের স্ত্রী মিন্নির বক্তব্য: রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার খবরে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানিয়েছেন রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। বরগুনা সদরের পূর্ব বুড়িরচর গ্রামে বন্দুকযুদ্ধে নয়ন বন্ড নিহত হয়েছেন বলে বাবার কাছ থেকে প্রথমে জানতে পারেন মিন্নি। নয়ন বন্ডের নিহত হওয়ার খবরে স্বস্তি প্রকাশ করে মিন্নি বলেন, শোকে বিধ্বস্ত আমি, ঠিক এমন একটা খবরের অপেক্ষায় ছিলাম। কারণ বিচারের জন্য আদালতে দৌড়াতে হলো না। বিচার হবে কি হবে না তা নিয়ে ছিল আতঙ্ক। নয়নের নিহতের মধ্য দিয়ে সব শঙ্কা এবং আতঙ্ক দূর হয়েছে।
মরদেহ দেখতে বরগুনায় মানুষের ঢল: আসামি বন্দুকযুদ্ধে নিহত নয়ন বন্ডের মরদেহ দেখতে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে ঢল নেমেছে সাধারণ মানুষের। সেই ঢল সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে পুলিশকেও। পরে লাইনে দাঁড় করে কয়েক হাজার সাধারণ মানুষকে নয়ন বন্ডের মরদেহ দেখার সুযোগ করে দেয় পুলিশ। এ সময় নয়ন বন্ডের মরদেহ দেখতে আসা সাধারণ মানুষের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার সংবাদ জানাজানির পরপরই বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গ ও এর আশপাশ এলাকায় অবস্থান নেয় উৎসুক সাধারণ মানুষ। পরে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাস্থল থেকে সকাল ৭টার দিকে নয়ন বন্ডের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে আসে পুলিশ।
আদালতে আসামি অলি ও তানভীরের জবানবন্দি: রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি অলি ও জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার তানভীর। সোমবার বিকাল তিনটার দিকে রিফাত হত্যা মামলার পাঁচ আসামিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। বিকাল ৫টার দিকে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি অলি ও জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার তানভীর আদালতে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী আসামিদের জবানবন্দি শেষে জেল হাজতে পাঠান। এ সময় অন্য তিন আসামির পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন তিনি।
স্বীকারোক্তিতে আসামি অলি আদালতকে জানায়, হত্যার আগের দিনের প্ল্যান অনুযায়ী ২৬ তারিখ সকালে রাকিবুল ইসলাম রিফাতের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা অস্ত্র নিয়ে কলেজ রোড এলাকায় রিফাত ফরাজীর কাছে পৌঁছে দেয় সে। রিফাত ফরাজী অস্ত্রের ব্যাগ একটি টিনের চালার ওপর রাখে। পরে ওই অস্ত্র নিয়ে রিফাত ফরাজী, রিফাত ও টিকটক হৃদয় নয়ন বন্ডের সঙ্গে হামলায় অংশ নেয়। রিফাত শরীফকে মারধরের সময় হত্যাকারীদের সহায়তা করে বলেও আদালতকে জানায় অলি।
অন্য আসামি তানভীর হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতকে জানায়, রিফাতকে হত্যার আগে বরগুনা সরকারি কলেজ মাঠে তাদের ০০৭ গ্রুপের একটি বৈঠক হয়। সেখানে রিশান ফরাজী তাকে ২৬ তারিখ কলেজ রোড এলাকায় আসতে বলে। কি জন্য আসতে হবে জানতে চায় তানভীর। পরে রিশান তাকে জানায় রিফাত শরীফকে খুন করা হবে। রিশান ফরাজীর নির্দেশনা অনুযায়ী ২৬ তারিখ ৯টার সময় কলেজ রোড এলাকায় হাজির হয় তানভীর। হামলা ও মারধরের সময় যাতে রিফাত শরীফ পালাতে না পারে এ জন্য তানভীর প্রতিটি গলিতে মানুষ রেডি করে রাখে। সবার অবস্থান নিশ্চিত করার দায়িত্ব ছিল তার ওপর। আদালতে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া কয়েকজনের নামও জানায় তানভীর। জড়িতদের মধ্যে রয়েছে, সাব্বির আহমেদ নয়ন (নয়ন বন্ড), রিফাত ফরাজী, রিশান ফরাজী, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রাকিবুল ইসলাম রিফাত, রাব্বি আকন ও রায়হান। হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতার জন্য অজ্ঞাত আরো অনেকে ছিল বলে জানায় তানভীর।
No comments