অমিত মুহুরীর জিন সৌরভের ঘাড়ে! জবাব খুঁজতে মাঠে সোহেল তাজ by আবু আজাদ
বিশ্বায়নের
এই যুগে কেউ জিন-ভূতে বিশ্বাস করুক আর না করুক আপাতত চট্টগ্রামের মানুষকে
তা নিয়ে ভাবতেই হচ্ছে। কারাগারের ভেতর যুবলীগ ক্যাডার অমিত মুহুরী হত্যার
ঘটনায় অভিযুক্ত কারাবন্দি রিপন নাথ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আদালতকে
জানিয়েছিলেন, ‘জিনের ভয়ে’ অমিত মুহুরীকে খুন করেছেন তিনি! সেই রেশ কাটতে না
কাটতে আবারও জিন ভর করেছে বন্দরনগরীতে। এবার সোহেল তাজের ভাগ্নে সৌরভ
নিখোঁজের ঘটনাতেও আলোচনায় ‘জিন তত্ত্ব’!
এই যখন বন্দরনগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি- তখন থানায় অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা, সংবাদ সম্মেলনের পরে মামাতো বোনের ছেলে (ভাগ্নে) সৈয়দ ইফতেখার আলম প্রকাশ সৌরভ নিখোঁজের ঘটনায় নিজেই মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ।
মঙ্গলবার (১৮ জুন) সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে তিনি এ ঘোষণা দেন। এ সময় সোহেল তাজের সঙ্গে ছিলেন তার মামাতো বোন ও নিখোঁজ সৌরভের মা সৈয়দা ইয়াসমিন আরজুমান ও বাবা মো. ইদ্রিস আলী।
১৯ মিনিট ১০ সেকেন্ডের ফেসবুক লাইভের শুরুতেই সোহেল তাজ বলেন, ‘ফেসবুকে এটাই হচ্ছে আমার প্রথম লাইভ ব্রডকাস্ট। আপনারা সবাই জানেন আমার মামাতো বোনের ছেলে সৌরভ গত ৯ দিন ধরে নিখোঁজ। তো আমরা সার্বিকভাবে চাই সৌরভকে (ইফতেখার) অক্ষত অবস্থায়, জীবিত অবস্থায়, সুস্থ অবস্থায় ফেরত চাই। তার বাবা আমার সঙ্গেই আছেন। আমার বাসায়। তো আমার পেছনে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন আমার মায়ের ছবি। এ বাসাতেই আমি এখন ভাড়া থাকি। কারণ বাংলাদেশে আমি অনেক সময় দিচ্ছি, কয়েকটা প্রজেক্ট করছি। কিছু ভালো কাজ করার জন্য। সেটা আগে আপনাদের জানিয়েছি। এ রকম একটা কাজের মাঝখানে এমন একটা দুর্ঘটনার সম্মুখীন আমরা হয়েছি। আমি নিজেই তদন্ত করব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করব। আমরা যতটুকু তথ্য সংগ্রহ করতে পারি, ততটুকু সংগ্রহ করে তাদের কাছে পৌঁছি দেয়ার চেষ্টা করব। সেই উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করব।’
জিনদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে নিখোঁজ সৌরভ
সোহেল তাজের ফেসবুক লাইভে সৌরভের মা সৈয়দা ইয়াসমিন আরজুমান জানান, এর আগে ঢাকার বনানী থেকে একটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাম করে সৌরভকে নিয়ে যাওয়া হলেও তাকে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়া হয়। ওই বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা সৌরভের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। তিনি আরও দাবি করেন, ওই বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের ‘জিন’ হিসেবে পরিচয় দেন।
সৈয়দা ইয়াসমিন আরজুমান জানান, নিখোঁজ হওয়ার আগে নিজেদের জিনের সদস্য পরিচয় দিয়ে চাকরি দেয়ার কথা বলে ফোন করে সৌরভকে ডেকে নেয়া হয়। কথিত জিনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েই নিখোঁজ হন সৌরভ। ফেসবুক লাইভে সোহেল তাজ তার মামাতো বোন সৈয়দা ইয়াসমিন আরজুমানের কাছে জানতে চান, ‘ইয়াসমিন (সৌরভের মা) আপা আপনাকে কী বলে গিয়েছিল সৌরভ?’
জবাবে সৈয়দা ইয়াসমিন বলেন, ‘হ্যাঁ জিজ্ঞাস করেছি। যারা তাকে এর আগে উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। তারা সৌরভকে বলেছে, তোমার তো কোনো দোষ নেই, আমরা যদি তোমাকে একটা ভালো জায়গা প্রোভাইড করি। তখন সৌরভ বলেছিল তাদের, আপনারা যা প্রয়োজন করেন তবুও এই যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করেন।’
সোহেল তাজ আবারও প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘তার মানে আপনাকে মূলত সৌরভ বলে গিয়েছে যে, ওই যে মে মাসের ১৬ তারিখে যারা উঠিয়ে নিয়েছিল তারাই তাকে চাকরি দেয়ার কথা বলেছে।’
সৈয়দা ইয়াসমিন বলেন, ‘সৌরভ নাকি চোখবাঁধা অবস্থায় জিজ্ঞাস করেছিল, আমি আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করব কীভাবে? তখন সৌরভকে তারা বলেছে, তোমার যোগাযোগ করতে হবে না, আমরাই তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করব। সৌরভ আরও বলেছে, জিন জিন করে জপতে থাকলেই তারা চলে আসবেন। তারা প্রত্যেকে ইংলিশে কথা বলছিল, প্রত্যেকে শিক্ষিত ও তাদের কাছে ওয়াকিটকি ও আর্মস ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেদিন সৌরভ গুম হলো, এর একদিন আগে আবার সেই নম্বর থেকে সৌরভের কাছে আসে। তখন তাকে সার্টিফিকেট নিয়ে যেতে বলে তারা চাকরি দেবে বলে। তখন সৌরভ বলে, আমার মা অসুস্থ আজ পারব না। তখন তারা আবার ফোন করে বলে, আমাদের দুইজন অফিসার তোমার সঙ্গে বসবে। তাদের কাছে তুমি তোমার পাসপোর্টে ও এনআইডি কার্ডের ফটোকপি দিয়ে আসবে। পরে সৌরভ ফটোকপি করতে গেলে গুম হয়ে যায়।’
সৌরভের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে না পুলিশ!
ফেসবুক লাইভে সোহেল তাজ জানান, সৌরভ নিখোঁজের বিষয়ে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও এরপর থেকে সৌরভের পরিবারের সঙ্গে পুলিশ যোগাযোগ করেনি। উল্টো তার বাবা মো. ইদ্রিস আলীর কাছে ওসি জানতে চেয়েছেন, সংবাদ সম্মেলনের পর কেউ যোগাযোগ করেছিল কি না।
সৌরভের বাবা ইদ্রিস আলী ওরফে মানিক ফেসবুক লাইভে বলেন, ‘আমার সঙ্গে থানা থেকে যোগাযোগ করা হয়নি, আমি নিজে থেকেই যোগাযোগ করেছি। তখন ফোনে ওসি সাহেব (চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানা) আমাকে বলেন, আপনারা কোথাও থেকে কোনো ধরনের তথ্য পেয়েছেন কি না? তখন আমি বললাম, আমরা তো কোনো তথ্য পাইনি। পরে এক পর্যায়ে আমি ওসিকে বলাম, সমস্ত ফুটেজ থেকে শুরু করে সবকিছু তো আপনাদের কাছে আছে।’
লাইভ ভিডিওতে সৌরভের বাবা ইদ্রিস আলী পুলিশ তার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি- এমন অভিযোগ করলেও পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাসেম ভূঁইয়া জাগো নিউজের কাছে দাবি করেন, ‘পুলিশ যোগাযোগ করেনি এমন কোনো কথা ভিডিওতে বলাই হয়নি!’
ওসি বলেন, সকালেও উনার সঙ্গে (সৌরভের বাবা) আমার কথা হয়েছে। আমি পুরো ভিডিও দেখেছি। তিনি কোথাও এমন কথা বলেননি।
কী আছে ভিডিও ফুটেজে?
ফেসবুক লাইভে সোহেল তাজের এক প্রশ্নের জবাবে সৌরভের বাবা ইদ্রিস আলী বলেন, ‘উনাদের ফুটেজে দেখা যায় ৬টা কত মিনিটে আমার ছেলে আগোরার সুপার মার্কেটের পাশে দাঁড়িয়েছিল। কত মিনিটে তাদের (অপহরণকারীরা) লোক তার সঙ্গে যোগাযোগ করলো।’
সৌরভের বাবা মো. ইদ্রিস আলী সোহেল তাজকে আরও বলেন, ‘ফুটেজে দেখা গেছে একটি প্রাডো গাড়িতে পাঁচ-ছয়জন এসে ইফতেখারকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। ফুটেজ পরিষ্কার। গাড়ি কার এবং ভেতরে কারা সেটা চেষ্টা করলেই শনাক্ত করা যাবে।’
এ সময় সোহেল তাজ ইদ্রিস আলীর কাছে জানতে চান, আপনার জানামতে সৌরভকে ৯ তারিখে (৯ জুন) কে ফোন করেছিল? উত্তরে ইদ্রিস আলী বলেন, ‘এই ফোনটা ঢাকা থেকে করা হয়েছিল। যারা ঢাকা থেকে রমজান মাসে আমার ছেলেকে বনানীর বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। পরে একদিন রেখে বনানীর বাসায় রাতে দিয়ে গিয়েছিল।’
সোহেল তাজ ইদ্রিস আলীর কাছে আবারও জানতে চান, ‘বনানীর বাসায় যারা তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, তারা কী পরিচয় দিয়েছিল?’ উত্তরে ইদ্রিস আলী বলেন, ‘তারা র্যাব-১ এর পরিচয় দিয়েছিল। এ সময় একটি কাগজও দিয়েছিল আমাদের।’
এ সময় সোহেল তাজকে বলতে শোনা যায়, ‘আচ্ছা তার মানে মে মাসের ১৬ তারিখে সৌরভকে তুলে নিয়ে যায় ২৪ ঘণ্টার জন্য। ফিরিয়ে দেয়ার সময় একটি কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছিল। আর সেই কাগজটি র্যাব-১ এর প্রাপ্তিস্বীকার ফরম ছিল।’ জবাবে ইদ্রিস আলী বলেন, ‘উনারা (র্যাব-১) তখন বলেন, সে সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ দেয়া হয়েছে সব ফেইক।’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের ছেলে ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ তার মামাতো বোনের ছেলেকে (ভাগ্নে) সৈয়দ ইফতেখার আলম প্রকাশ (সৌরভ) অপহরণের অভিযোগ করেছেন। শুক্রবার রাত ১টায় নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেয়া এক পোস্টে তিনি এ অভিযোগ করেন। তিনি জানান, গত ৯ জুন চট্টগ্রামে চাকরির সিভি জমা দিতে গিয়ে নগরের মিমি মার্কেট এলাকা থেকে নিখোঁজ হন সৈয়দ ইফতেখার আলম ওরফে সৌরভ।
সৌরভের পরিবার চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানাধীন সুন্নিয়া মাদরাসা এলাকার বাসিন্দা। সৌরভ ব্র্যাক ও ইউনিসেফের জনসচেতনতামূলক শর্টফিল্ম বানাতেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট।
এই যখন বন্দরনগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি- তখন থানায় অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা, সংবাদ সম্মেলনের পরে মামাতো বোনের ছেলে (ভাগ্নে) সৈয়দ ইফতেখার আলম প্রকাশ সৌরভ নিখোঁজের ঘটনায় নিজেই মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ।
মঙ্গলবার (১৮ জুন) সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে তিনি এ ঘোষণা দেন। এ সময় সোহেল তাজের সঙ্গে ছিলেন তার মামাতো বোন ও নিখোঁজ সৌরভের মা সৈয়দা ইয়াসমিন আরজুমান ও বাবা মো. ইদ্রিস আলী।
১৯ মিনিট ১০ সেকেন্ডের ফেসবুক লাইভের শুরুতেই সোহেল তাজ বলেন, ‘ফেসবুকে এটাই হচ্ছে আমার প্রথম লাইভ ব্রডকাস্ট। আপনারা সবাই জানেন আমার মামাতো বোনের ছেলে সৌরভ গত ৯ দিন ধরে নিখোঁজ। তো আমরা সার্বিকভাবে চাই সৌরভকে (ইফতেখার) অক্ষত অবস্থায়, জীবিত অবস্থায়, সুস্থ অবস্থায় ফেরত চাই। তার বাবা আমার সঙ্গেই আছেন। আমার বাসায়। তো আমার পেছনে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন আমার মায়ের ছবি। এ বাসাতেই আমি এখন ভাড়া থাকি। কারণ বাংলাদেশে আমি অনেক সময় দিচ্ছি, কয়েকটা প্রজেক্ট করছি। কিছু ভালো কাজ করার জন্য। সেটা আগে আপনাদের জানিয়েছি। এ রকম একটা কাজের মাঝখানে এমন একটা দুর্ঘটনার সম্মুখীন আমরা হয়েছি। আমি নিজেই তদন্ত করব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করব। আমরা যতটুকু তথ্য সংগ্রহ করতে পারি, ততটুকু সংগ্রহ করে তাদের কাছে পৌঁছি দেয়ার চেষ্টা করব। সেই উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করব।’
জিনদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে নিখোঁজ সৌরভ
সোহেল তাজের ফেসবুক লাইভে সৌরভের মা সৈয়দা ইয়াসমিন আরজুমান জানান, এর আগে ঢাকার বনানী থেকে একটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাম করে সৌরভকে নিয়ে যাওয়া হলেও তাকে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়া হয়। ওই বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা সৌরভের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। তিনি আরও দাবি করেন, ওই বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের ‘জিন’ হিসেবে পরিচয় দেন।
সৈয়দা ইয়াসমিন আরজুমান জানান, নিখোঁজ হওয়ার আগে নিজেদের জিনের সদস্য পরিচয় দিয়ে চাকরি দেয়ার কথা বলে ফোন করে সৌরভকে ডেকে নেয়া হয়। কথিত জিনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েই নিখোঁজ হন সৌরভ। ফেসবুক লাইভে সোহেল তাজ তার মামাতো বোন সৈয়দা ইয়াসমিন আরজুমানের কাছে জানতে চান, ‘ইয়াসমিন (সৌরভের মা) আপা আপনাকে কী বলে গিয়েছিল সৌরভ?’
জবাবে সৈয়দা ইয়াসমিন বলেন, ‘হ্যাঁ জিজ্ঞাস করেছি। যারা তাকে এর আগে উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। তারা সৌরভকে বলেছে, তোমার তো কোনো দোষ নেই, আমরা যদি তোমাকে একটা ভালো জায়গা প্রোভাইড করি। তখন সৌরভ বলেছিল তাদের, আপনারা যা প্রয়োজন করেন তবুও এই যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করেন।’
সোহেল তাজ আবারও প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘তার মানে আপনাকে মূলত সৌরভ বলে গিয়েছে যে, ওই যে মে মাসের ১৬ তারিখে যারা উঠিয়ে নিয়েছিল তারাই তাকে চাকরি দেয়ার কথা বলেছে।’
সৈয়দা ইয়াসমিন বলেন, ‘সৌরভ নাকি চোখবাঁধা অবস্থায় জিজ্ঞাস করেছিল, আমি আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করব কীভাবে? তখন সৌরভকে তারা বলেছে, তোমার যোগাযোগ করতে হবে না, আমরাই তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করব। সৌরভ আরও বলেছে, জিন জিন করে জপতে থাকলেই তারা চলে আসবেন। তারা প্রত্যেকে ইংলিশে কথা বলছিল, প্রত্যেকে শিক্ষিত ও তাদের কাছে ওয়াকিটকি ও আর্মস ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেদিন সৌরভ গুম হলো, এর একদিন আগে আবার সেই নম্বর থেকে সৌরভের কাছে আসে। তখন তাকে সার্টিফিকেট নিয়ে যেতে বলে তারা চাকরি দেবে বলে। তখন সৌরভ বলে, আমার মা অসুস্থ আজ পারব না। তখন তারা আবার ফোন করে বলে, আমাদের দুইজন অফিসার তোমার সঙ্গে বসবে। তাদের কাছে তুমি তোমার পাসপোর্টে ও এনআইডি কার্ডের ফটোকপি দিয়ে আসবে। পরে সৌরভ ফটোকপি করতে গেলে গুম হয়ে যায়।’
সৌরভের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে না পুলিশ!
ফেসবুক লাইভে সোহেল তাজ জানান, সৌরভ নিখোঁজের বিষয়ে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও এরপর থেকে সৌরভের পরিবারের সঙ্গে পুলিশ যোগাযোগ করেনি। উল্টো তার বাবা মো. ইদ্রিস আলীর কাছে ওসি জানতে চেয়েছেন, সংবাদ সম্মেলনের পর কেউ যোগাযোগ করেছিল কি না।
সৌরভের বাবা ইদ্রিস আলী ওরফে মানিক ফেসবুক লাইভে বলেন, ‘আমার সঙ্গে থানা থেকে যোগাযোগ করা হয়নি, আমি নিজে থেকেই যোগাযোগ করেছি। তখন ফোনে ওসি সাহেব (চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানা) আমাকে বলেন, আপনারা কোথাও থেকে কোনো ধরনের তথ্য পেয়েছেন কি না? তখন আমি বললাম, আমরা তো কোনো তথ্য পাইনি। পরে এক পর্যায়ে আমি ওসিকে বলাম, সমস্ত ফুটেজ থেকে শুরু করে সবকিছু তো আপনাদের কাছে আছে।’
লাইভ ভিডিওতে সৌরভের বাবা ইদ্রিস আলী পুলিশ তার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি- এমন অভিযোগ করলেও পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাসেম ভূঁইয়া জাগো নিউজের কাছে দাবি করেন, ‘পুলিশ যোগাযোগ করেনি এমন কোনো কথা ভিডিওতে বলাই হয়নি!’
ওসি বলেন, সকালেও উনার সঙ্গে (সৌরভের বাবা) আমার কথা হয়েছে। আমি পুরো ভিডিও দেখেছি। তিনি কোথাও এমন কথা বলেননি।
কী আছে ভিডিও ফুটেজে?
ফেসবুক লাইভে সোহেল তাজের এক প্রশ্নের জবাবে সৌরভের বাবা ইদ্রিস আলী বলেন, ‘উনাদের ফুটেজে দেখা যায় ৬টা কত মিনিটে আমার ছেলে আগোরার সুপার মার্কেটের পাশে দাঁড়িয়েছিল। কত মিনিটে তাদের (অপহরণকারীরা) লোক তার সঙ্গে যোগাযোগ করলো।’
সৌরভের বাবা মো. ইদ্রিস আলী সোহেল তাজকে আরও বলেন, ‘ফুটেজে দেখা গেছে একটি প্রাডো গাড়িতে পাঁচ-ছয়জন এসে ইফতেখারকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। ফুটেজ পরিষ্কার। গাড়ি কার এবং ভেতরে কারা সেটা চেষ্টা করলেই শনাক্ত করা যাবে।’
এ সময় সোহেল তাজ ইদ্রিস আলীর কাছে জানতে চান, আপনার জানামতে সৌরভকে ৯ তারিখে (৯ জুন) কে ফোন করেছিল? উত্তরে ইদ্রিস আলী বলেন, ‘এই ফোনটা ঢাকা থেকে করা হয়েছিল। যারা ঢাকা থেকে রমজান মাসে আমার ছেলেকে বনানীর বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। পরে একদিন রেখে বনানীর বাসায় রাতে দিয়ে গিয়েছিল।’
সোহেল তাজ ইদ্রিস আলীর কাছে আবারও জানতে চান, ‘বনানীর বাসায় যারা তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, তারা কী পরিচয় দিয়েছিল?’ উত্তরে ইদ্রিস আলী বলেন, ‘তারা র্যাব-১ এর পরিচয় দিয়েছিল। এ সময় একটি কাগজও দিয়েছিল আমাদের।’
এ সময় সোহেল তাজকে বলতে শোনা যায়, ‘আচ্ছা তার মানে মে মাসের ১৬ তারিখে সৌরভকে তুলে নিয়ে যায় ২৪ ঘণ্টার জন্য। ফিরিয়ে দেয়ার সময় একটি কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছিল। আর সেই কাগজটি র্যাব-১ এর প্রাপ্তিস্বীকার ফরম ছিল।’ জবাবে ইদ্রিস আলী বলেন, ‘উনারা (র্যাব-১) তখন বলেন, সে সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ দেয়া হয়েছে সব ফেইক।’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের ছেলে ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ তার মামাতো বোনের ছেলেকে (ভাগ্নে) সৈয়দ ইফতেখার আলম প্রকাশ (সৌরভ) অপহরণের অভিযোগ করেছেন। শুক্রবার রাত ১টায় নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেয়া এক পোস্টে তিনি এ অভিযোগ করেন। তিনি জানান, গত ৯ জুন চট্টগ্রামে চাকরির সিভি জমা দিতে গিয়ে নগরের মিমি মার্কেট এলাকা থেকে নিখোঁজ হন সৈয়দ ইফতেখার আলম ওরফে সৌরভ।
সৌরভের পরিবার চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানাধীন সুন্নিয়া মাদরাসা এলাকার বাসিন্দা। সৌরভ ব্র্যাক ও ইউনিসেফের জনসচেতনতামূলক শর্টফিল্ম বানাতেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট।
No comments