ইতিহাসের সাক্ষী হতে নির্ঘুম রাত by কাজী সোহাগ
চূড়ান্ত
ক্ষণগণনা প্রায় শেষের দিকে। এ সময় থমকে গেল সেকেন্ডের কাঁটা। রকেটের
যাত্রা শুরু হওয়ার সময়েই তা বন্ধ হয়ে গেল। জানানো হলো, আপাতত উড়ছে না
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট। সামান্য কারিগরি সমস্যার কথা উল্লেখ করে
বৃহস্পতিবার রাতে নির্ধারিত সময়ের এক মিনিট আগে স্থগিত করা হয় উৎক্ষেপণ।
তবে শুক্রবার দিবাগত রাত বাংলাদেশ সময় ২টা ১৪ মিনিটে স্যাটেলাইটটি আবার
উৎক্ষেপণের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। স্পেসএক্স টুইট বার্তায় জানিয়েছে, শেষ
মিনিটে কিছু কারিগরি সমস্যার কারণে উৎক্ষেপণ স্থগিত রাখা হয়েছে। রকেট ও
স্যাটেলাইট ভালো অবস্থায় আছে। ঐতিহাসিক এই মুহূর্তের সাক্ষী হতে নির্ঘুম
রাত কেটেছে অনেকের। টেলিভিশন ও অনলাইনের লাইভে চোখ ছিলো সবার। প্রায় সব
সংবাদ মাধ্যমের চোখও ছিলো স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের দিকে। স্যাটেলাইট
উৎক্ষেপণের মুহূর্তটি বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ দেশের সব ক’টি বেসরকারি টেলিভিশন
সরাসরি সমপ্রচার করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলো। দুর্লভ এ মুহূর্ত
সরাসরি প্রচারের ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ দেশের সব জেলা ও উপজেলা
প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে রেখেছিলো। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী
প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সও উৎক্ষেপণ মুহূর্তটি সরাসরি সমপ্রচার করার আগাম ঘোষণা
দেয়। এদিকে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ নিয়ে সারা দেশের মানুষের
মধ্যেও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের দৃশ্য
দেখতে গভীর রাতে ঢাকার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও ব্র্যাক
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টেলিভিশনের বড় পর্দার সামনে ছিলেন। এমন দৃশ্য
চট্টগ্রাম, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে। বাংলাদেশ থেকে ওই
অনুষ্ঠান কাভার করতে যাওয়া কয়েক সাংবাদিক মানবজমিনকে জানিয়েছেন ঐতিহাসিক ওই
মুহূর্তের সাক্ষী হতে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস
সেন্টারে হাজির ছিলেন চার শতাধিক বাংলাদেশি।
তাদের কেউ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী, আবার কেউ বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। তারা জানান, কেনেডি স্পেস সেন্টারের দু’টি স্থান থেকে দর্শনার্থীদের জন্য স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ সরাসরি দেখার ব্যবস্থা ছিল। একটি স্থান অ্যাপোলো বা স্যাটার্ন-৫ সেন্টার, উৎক্ষেপণস্থল থেকে যার দূরত্ব ৬ দশমিক ২৭ কিলোমিটার। এ ছাড়া কেনেডি স্পেস সেন্টারের মূল দর্শনার্থী ভবন (মেইন ভিজিটর কমপ্লেক্স) থেকেও স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ দেখার ব্যবস্থা ছিল। উৎক্ষেপণস্থল থেকে এটির দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সকালে বাংলাদেশের গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে যাওয়া হয় লঞ্চিং প্যাড, স্যাটেলাইট ও রকেট পরিদর্শনে। একই সময়ে লঞ্চিং প্যাড দেখতে আসেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদসহ বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। এদিকে, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ স্থগিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। উৎক্ষেপণের মোক্ষম সময়ের জন্য অপেক্ষা করা খুবই সাধারণ বিষয় এবং এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই বলে তিনি জানান ওই পোস্টে।
বাংলায় দেয়া পোস্টে সজীব ওয়াজেদ জয় লিখেছেন, উৎক্ষেপণের শেষ মুহূর্তগুলো কম্পিউটার দ্বারা সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। হিসাবে যদি একটুও এদিক-সেদিক পাওয়া যায়, তাহলে কম্পিউটার উৎক্ষেপণ থেকে বিরত থাকে। আজ যেমন নির্ধারিত সময়ের ঠিক ৪২ সেকেন্ড আগে নিয়ন্ত্রণকারী কম্পিউটার উৎক্ষেপণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। স্পেসএক্স সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আগামীকাল (শুক্রবার) একই সময়ে আবারও আমাদের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বহনকারী রকেটটি উৎক্ষেপণের চেষ্টা চালাবে। যেহেতু এই ধরনের বিষয়ে কোনো ঝুঁকি নেয়া যায় না, সেহেতু উৎক্ষেপণের মোক্ষম সময়ের জন্য অপেক্ষা করা খুবই সাধারণ বিষয়, চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। তিনি এ নিয়ে ইংরেজিতেও পোস্ট দিয়েছেন। বিটিআরসি জানিয়েছে, সাধারণত স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানোর ক্ষেত্রে সব সময়ই একটি অতিরিক্ত দিন হাতে রাখা হয়। কারণ, প্রথম দিন কোনো সমস্যা হলে যাতে দ্বিতীয় দিনটি কাজে লাগানো যায়। আগে থেকেই স্পেসএক্স জানিয়ে রেখেছিল, দ্বিতীয় দিনটি (ব্যাকআপ ডে) শুক্রবার। এদিকে উৎক্ষেপণ স্থগিতের পর পরই সংবাদ সম্মেলন করেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ।
তিনি বলেন, আপনাদের মনে রাখতে হবে স্যাটেলাইট ও রকেট সবকিছু কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এখানে মানুষের হাত দেয়ার কোনো উপায় নাই। কম্পিউটারেই বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। সেই সিস্টেমের মধ্যেই হঠাৎ সামান্য ত্রুটি দেখা দেয়। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের দায়িত্বে থাকা স্পেসএক্স-এর বরাত দিয়ে জানানো হয়, ভালো খবর হলো- স্যাটেলাইটও ঠিক আছে, রকেটও ঠিক আছে, সেখানে কোনো সমস্যা নেই। তবে গ্রাউন্ড সিস্টেমে সামান্য একটু ত্রুটি দেখা গেছে। এ কারণে রিজার্ভ ডে শুক্রবার আবার তারা উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উড়ানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিলো। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্যদিয়ে ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইটের মালিক দেশগুলোর অভিজাত ক্লাবে যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। স্পেসএক্সের যে মহাকাশযানে করে স্যাটেলাইটটি মহাকাশে যাবে, সেটি হলো ফ্যালকন ৯ ব্লক ৫। দু’টি পর্যায়ে এ উৎক্ষেপণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার কথা। প্রথম পর্যায়টি সম্পন্ন হতে সময় লাগবে ১০ দিন এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে লাগবে ২০ দিনের মতো। বিটিআরসি জানিয়েছে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবার সমপ্রসারণ করা সম্ভব হবে। দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনায় নতুন মাত্রা যোগ হবে। স্যাটেলাইটভিত্তিক টেলিভিশন সেবা ডিটিএইচ (ডিরেক্ট টু হোম) ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজেও এ স্যাটেলাইটকে কাজে লাগানো যাবে। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের অবস্থান হবে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। এই কক্ষপথ থেকে বাংলাদেশ ছাড়াও সার্কভুক্ত সব দেশ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমিনস্তান ও কাজাখস্তানের কিছু অংশ এই স্যাটেলাইটের আওতায় আসবে। দেশের প্রথম এ স্যাটেলাইট তৈরিতে খরচ ধরা হয় ২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার ও বাকি ১ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে নেয়া হয়েছে। এ ঋণ দিয়েছে বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি। তবে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মূল অবকাঠামো তৈরি করেছে ফ্রান্সের মহাকাশ সংস্থা থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস। স্যাটেলাইট তৈরির কাজ শেষে গত ৩০শে মার্চ এটি উৎক্ষেপণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় পাঠানো হয়। সেখানে আরেক মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্সের রকেটে করে স্যাটেলাইটটি শুক্রবার রাতে মহাকাশে যেতে পারে। স্যাটেলাইট তৈরি এবং ওড়ানোর কাজটি বিদেশে হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে বাংলাদেশ থেকেই। এজন্য গাজীপুরের জয়দেবপুরে তৈরি গ্রাউন্ড কনট্রোল স্টেশন (ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা) স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণের মূল কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। আর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হবে রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়া গ্রাউন্ড স্টেশন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে এবং বাকিগুলো ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে নেপাল, মিয়ানমার ও ভুটানের কাছে স্যাটেলাইট সেবা দিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের কেউ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী, আবার কেউ বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। তারা জানান, কেনেডি স্পেস সেন্টারের দু’টি স্থান থেকে দর্শনার্থীদের জন্য স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ সরাসরি দেখার ব্যবস্থা ছিল। একটি স্থান অ্যাপোলো বা স্যাটার্ন-৫ সেন্টার, উৎক্ষেপণস্থল থেকে যার দূরত্ব ৬ দশমিক ২৭ কিলোমিটার। এ ছাড়া কেনেডি স্পেস সেন্টারের মূল দর্শনার্থী ভবন (মেইন ভিজিটর কমপ্লেক্স) থেকেও স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ দেখার ব্যবস্থা ছিল। উৎক্ষেপণস্থল থেকে এটির দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সকালে বাংলাদেশের গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে যাওয়া হয় লঞ্চিং প্যাড, স্যাটেলাইট ও রকেট পরিদর্শনে। একই সময়ে লঞ্চিং প্যাড দেখতে আসেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদসহ বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। এদিকে, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ স্থগিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। উৎক্ষেপণের মোক্ষম সময়ের জন্য অপেক্ষা করা খুবই সাধারণ বিষয় এবং এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই বলে তিনি জানান ওই পোস্টে।
বাংলায় দেয়া পোস্টে সজীব ওয়াজেদ জয় লিখেছেন, উৎক্ষেপণের শেষ মুহূর্তগুলো কম্পিউটার দ্বারা সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। হিসাবে যদি একটুও এদিক-সেদিক পাওয়া যায়, তাহলে কম্পিউটার উৎক্ষেপণ থেকে বিরত থাকে। আজ যেমন নির্ধারিত সময়ের ঠিক ৪২ সেকেন্ড আগে নিয়ন্ত্রণকারী কম্পিউটার উৎক্ষেপণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। স্পেসএক্স সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আগামীকাল (শুক্রবার) একই সময়ে আবারও আমাদের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বহনকারী রকেটটি উৎক্ষেপণের চেষ্টা চালাবে। যেহেতু এই ধরনের বিষয়ে কোনো ঝুঁকি নেয়া যায় না, সেহেতু উৎক্ষেপণের মোক্ষম সময়ের জন্য অপেক্ষা করা খুবই সাধারণ বিষয়, চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। তিনি এ নিয়ে ইংরেজিতেও পোস্ট দিয়েছেন। বিটিআরসি জানিয়েছে, সাধারণত স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানোর ক্ষেত্রে সব সময়ই একটি অতিরিক্ত দিন হাতে রাখা হয়। কারণ, প্রথম দিন কোনো সমস্যা হলে যাতে দ্বিতীয় দিনটি কাজে লাগানো যায়। আগে থেকেই স্পেসএক্স জানিয়ে রেখেছিল, দ্বিতীয় দিনটি (ব্যাকআপ ডে) শুক্রবার। এদিকে উৎক্ষেপণ স্থগিতের পর পরই সংবাদ সম্মেলন করেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ।
তিনি বলেন, আপনাদের মনে রাখতে হবে স্যাটেলাইট ও রকেট সবকিছু কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এখানে মানুষের হাত দেয়ার কোনো উপায় নাই। কম্পিউটারেই বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। সেই সিস্টেমের মধ্যেই হঠাৎ সামান্য ত্রুটি দেখা দেয়। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের দায়িত্বে থাকা স্পেসএক্স-এর বরাত দিয়ে জানানো হয়, ভালো খবর হলো- স্যাটেলাইটও ঠিক আছে, রকেটও ঠিক আছে, সেখানে কোনো সমস্যা নেই। তবে গ্রাউন্ড সিস্টেমে সামান্য একটু ত্রুটি দেখা গেছে। এ কারণে রিজার্ভ ডে শুক্রবার আবার তারা উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উড়ানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিলো। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্যদিয়ে ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইটের মালিক দেশগুলোর অভিজাত ক্লাবে যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। স্পেসএক্সের যে মহাকাশযানে করে স্যাটেলাইটটি মহাকাশে যাবে, সেটি হলো ফ্যালকন ৯ ব্লক ৫। দু’টি পর্যায়ে এ উৎক্ষেপণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার কথা। প্রথম পর্যায়টি সম্পন্ন হতে সময় লাগবে ১০ দিন এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে লাগবে ২০ দিনের মতো। বিটিআরসি জানিয়েছে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবার সমপ্রসারণ করা সম্ভব হবে। দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনায় নতুন মাত্রা যোগ হবে। স্যাটেলাইটভিত্তিক টেলিভিশন সেবা ডিটিএইচ (ডিরেক্ট টু হোম) ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজেও এ স্যাটেলাইটকে কাজে লাগানো যাবে। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের অবস্থান হবে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। এই কক্ষপথ থেকে বাংলাদেশ ছাড়াও সার্কভুক্ত সব দেশ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমিনস্তান ও কাজাখস্তানের কিছু অংশ এই স্যাটেলাইটের আওতায় আসবে। দেশের প্রথম এ স্যাটেলাইট তৈরিতে খরচ ধরা হয় ২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার ও বাকি ১ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে নেয়া হয়েছে। এ ঋণ দিয়েছে বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি। তবে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মূল অবকাঠামো তৈরি করেছে ফ্রান্সের মহাকাশ সংস্থা থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস। স্যাটেলাইট তৈরির কাজ শেষে গত ৩০শে মার্চ এটি উৎক্ষেপণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় পাঠানো হয়। সেখানে আরেক মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্সের রকেটে করে স্যাটেলাইটটি শুক্রবার রাতে মহাকাশে যেতে পারে। স্যাটেলাইট তৈরি এবং ওড়ানোর কাজটি বিদেশে হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে বাংলাদেশ থেকেই। এজন্য গাজীপুরের জয়দেবপুরে তৈরি গ্রাউন্ড কনট্রোল স্টেশন (ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা) স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণের মূল কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। আর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হবে রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়া গ্রাউন্ড স্টেশন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে এবং বাকিগুলো ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে নেপাল, মিয়ানমার ও ভুটানের কাছে স্যাটেলাইট সেবা দিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
No comments