জিন্নাহকে ‘মহাপুরুষ’ বললেন বিজেপি এমপি সাবিত্রী বাই, মিশ্র প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকে
‘মহাপুরুষ’ বলে অভিহিত করেছেন বিজেপি এমপি সাবিত্রী বাই ফুলে। বিজেপি’র
জিন্নাহবিরোধী অবস্থানের সম্পূর্ণ বিরোধী অবস্থানে গিয়ে সাবিত্রী বাই ফুলের
এমন মন্তব্যে বিজেপি’র মধ্যে অস্বস্তি বেড়েছে।
সাবিত্রী বাই
ফুলে বলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে যে সমস্ত মহাপুরুষের অবদান আছে, জাত-পাত
ব্যতিরেকে তাদেরকে শ্রদ্ধা করা উচিত। জিন্নাহর মতো মহাপুরুষের ছবি যেখানে
প্রয়োজন সেখানে শ্রদ্ধাসহকারে বসাতে হবে। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় থেকেই
জিন্নাহকে শ্রদ্ধা করা হচ্ছে। লোকসভাতেও ওর ছবি রয়েছে। শ্রদ্ধা সহকারে তার
নাম নেয়া উচিত।’
ডা. মশিহুর রহমান |
এ প্রসঙ্গে
পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতার ‘মীযান’ পত্রিকার সম্পাদক ডা. মশিহুর রহমান আজ
(শনিবার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘সাবিত্রী দেবী জিন্নাহকে মহান মানুষ বলে
অভিহিত করেছেন। এর আগেও বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদবানী জিন্নাহকে ‘সেক্যুলার’
বলে উল্লেখ করেছেন। এজন্য আরএসএস তার রাজনৈতিক জীবনকে ‘সাইলেন্ট’ করে
দিয়েছে। বিজেপি নেতা যশোবন্ত সিংহ ‘জিন্নাহ: ইন্ডিয়া-পার্টিশন-ইন্ডিপেন্ডে ন্স’
নামক যে বই লিখেছেন তাতেও জিন্নাহর ইতিবাচক দিক তুলে ধরেছেন। সেজন্য
বিজেপি তার রাজনৈতিক জীবন একদম শেষ করে দিয়েছে। ওই কথাগুলোর মধ্যে যে
সত্যতা নেই তা নয়। তাদের মতো জ্ঞানী মানুষরা যখন একথা বলেন, তার মধ্যে
অবশ্যই বাস্তবতা আছে।’ডা. মশিহুর রহমান
ডা. মশিহুর রহমান বলেন, আলীগড় মুসলিম
বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপ-রাষ্ট্রপতি ড. হামিদ আনসারিকে আজীবন সদস্যপদ দেয়ার
অনুষ্ঠান পরিকল্পনাকে পণ্ড করতে সেখানে হিন্দু যুব বাহিনীর সদস্যরা আক্রমণ
চালিয়েছিল। সেই ঘটনা থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে জিন্নাহর ছবিকে ইস্যু করা হয়েছে।
তিনি
বলেন, ‘কর্ণাটকের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি রাজনৈতিক সুবিধা পেতে ওই
ঘটনাকে ইস্যু হিসেবে তুলে ধরেছে। বিজেপি’র রাজনৈতিক শক্তির একটা পা হল
মুসলিম বিরোধিতা। তারা মুসলিম বিরোধী ও মুসলিম বিদ্বেষী ইস্যুগুলো সবসময়
সামনে নিয়ে এসে সামাজিক বিভাজন করে। মুসলিম বিরোধী ইস্যু না থাকলে আর একটি
পায়ের উপর ভর করে তারা ভারতে রাজনৈতিক ফায়দা লাভ করতে পারবে না। এসব বিষয়
তাদের চিরাচরিত এজেন্ডার মধ্যে আছে। এজন্য তারা বাবর মসজিদ ইস্যু,
সংখ্যালঘু তোষণ ইস্যু তুলে ধরে। মুসলিম পার্সোনাল ল’কে তুলে দেয়ার জন্য
আন্দোলন করে। এজনই মোদি ট্রিপল তালাকের বিষয় এনেছেন, সেরকম আজ জিন্নাহকে
আনা হচ্ছে, টিপু সুলতান ইস্যু আছে। আগামীদিনে এধরণের আরো ইস্যু চলতে
থাকবে।’
তিনি
বলেন, ‘এই যে মুসলিম বিরোধিতা ও উগ্র জাতীয়তাবাদের সংমিশ্রণ এজন্য যে যাতে
করে তারা রাজনৈতিক ফায়দা লাভ করতে পারে এবং উভয় সম্প্রদায়ের
মধ্যে মেরুকরণের চিন্তাভাবনা। এটি আর এস এসের চিন্তাভাবনা এবং এ থেকে
বিজেপি কখনো সরে আসতে পারবে না। বিজেপি তার রাজনৈতিক স্বার্থে এটা করবেই।
নেতিবাচক রাজনীতি তাদের করতেই হবে, অন্যথায় রাজনৈতিকভাবে তারা কখনো সফল হতে
পারবে না।’
পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ
ভারতের আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের
ছাত্র ইউনিয়নের দফতরে থাকা মুহাম্মদ আলি জিন্নাহর ছবি অপসারণের দাবিতে
আন্দোলন চালাচ্ছে হিন্দুত্ববাদীরা। ছাত্র সংসদের আজীবন সদস্য হিসেবে ১৯৩৮
সাল থেকেই জিন্নাহর ছবি রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। ‘হিন্দু যুব বাহিনী’র
সদস্যরা তার ছবি অপসারণের দাবিতে মাঠে নামায় আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়
চত্বরে সহিংসতা ছড়ায়।
আলীগড়ের বিজেপি এমপি সতীশ গৌতম সম্প্রতি
আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরকে চিঠি লিখে জানতে
চেয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন জিন্নাহর ছবি রাখা হবে? এরপরেই ওই ইস্যুতে
হিন্দুত্ববাদীরা মাঠে নেমে আন্দোলন শুরু করেছে।
অন্যদিকে, বিজেপি’র
এমপি শত্রুঘ্ন সিনহাও জিন্নাহ ইস্যুতে দলীয় অবস্থানের বিপরীতে মন্তব্য
করেছেন। তিনি বলেছেন, আচমকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের নাম পরিবর্তন ও কিছু লোক ছবি
অপসারণের দাবি করছেন। কিন্তু কেন অপসারণ করা হবে? এত বছর ধরে সেখানে ওই ছবি
আছে এবং সবকিছু তো ঠিকঠাক চলছিল।
বিজেপি’র এমপি শত্রুঘ্ন সিনহা
বিজেপি’র উদ্দেশ্যে উপদেশ দিয়ে শত্রুঘ্ন
সিনহা বলেন, বিজেপি’র ওই ঘটনা সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করা উচিত যাতে
গো-রক্ষার নাম করে দেশের বিভিন্ন অংশে নিরীহ লোকেদের হত্যা করা হয়েছে।
অন্যদিকে, জিন্নাহ
ইস্যুতে এবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়য়ের মুখপাত্র মুহাম্মদ ফয়সাল
প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘পাকিস্তান ও মুসলিমদের প্রতি ভারতের
অসহিষ্ণুতা যে বাড়ছে, এটা তারই প্রমাণ।’
ফয়সালের বক্তব্য,
পাকিস্তানে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর ছবি বা ভাস্কর্য রাখা নিয়ে ইসলামাবাদে
কখনো প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। প্রসঙ্গত, ভারতের জাতির জনক হিসেবে
গান্ধীজি ভারতে শ্রদ্ধার আসনে রয়েছেন।
No comments