নির্বাচন প্রশ্নে ঐক্যের আহ্বান ড. কামালের
দল-মত
নির্বিশেষে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন
সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। গতকাল সুপ্রিম
কোর্টে শামসুল হক চৌধুরী (১নং) হলে ‘আইনের শাসন ও গণতন্ত্র শীর্ষক’
মতবিনিময় সভায় এই আহ্বান জানান তিনি। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি এ আলোচনা
সভার আয়োজন করে। আলোচনা সভায় পেশাজীবী বিশিষ্টজনরা বর্তমান সরকারের কঠোর
সমালোচনা করে বলেন, দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও
সুশাসন নেই। সরকার স্বৈরাচারী মনোভাবে দেশ শাসন করছে। জনগণের অধিকার কেড়ে
নিয়েছে। মানুষের বাকস্বাধীনতাকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। বক্তারা বলেন, এমন
অবস্থায় জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে
গণআন্দোলন করতে হবে। আর সেই আন্দোলনে সামনে বদরুদ্দোজা চৌধুরী (বিকল্পধারার
চেয়ারম্যান) ও ড. কামাল হোসেনকে নেতৃত্ব দেয়ার আহ্বান জানান তারা। আলোচনা
সভায় সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল
আবেদীন। সঞ্চালনা করেন সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন।
সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে ঐক্যের ডাক দিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, ঐক্যের ডাক আমরা দিয়ে রেখেছি। বদরুদ্দোজা চৌধুরী সাহেব আমি আমরা সবাই মিলে এই ডাক দিয়েছি। আসেন সবাই। সাত দফা সেখানে দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে সাতের মধ্যে আট হতে পারে। মূল কথাগুলো সবই আছে। তিনি আরো বলেন, আসুন, আমরা এটা নিশ্চিত করি যে, দলমত নির্বিশেষে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, আমরা পাহারা দেই এবং বাইরে থেকেও দেখবে সবাই বলবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। আর সেই নির্বাচন ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির মতো না। তিনি বলেন, কি লজ্জার ব্যাপার বাইরে থেকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বলে দিচ্ছে, এরকম নির্বাচন দেবেন না, দেবেন সুষ্ঠু নির্বাচন। আমাদের এই দায়িত্ব পালন করতে হবে। জনগণের পক্ষে প্রহরীর ভূমিকা সারাজীবন রেখে এসেছি এবারো প্রহরীর ভূমিকা রাখার জন্য আপনারা এগিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, যে বাংলাদেশ আমরা একাত্তরে পেয়েছিলাম সেই বাংলাদেশকে নিয়ে আমরা আগামীতে এগিয়ে যাবো। জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করবে, সুশাসন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে, সংবিধানকে রক্ষা করবে। আর যারা দুর্নীতি করে, রাজনীতির নামে অন্য জিনিস করে তাদের ব্যাপারে জনগণ, রাষ্ট্র, দেশকে রক্ষা করবেন। কোটা আন্দোলনকারী ছাত্রদের অভিনন্দন জানিয়ে আলোচনা সভায় ড. কামাল হোসেন বলেন, ছাত্রদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ নেই। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাগ্রত হয়েছে। তাদের অভিনন্দন জানাই। সরকার জেনে নিক, এই দেশে স্বৈরাচার কোনোদিন টিকে থাকতে পারবে না, গণতন্ত্রের পরিবর্তে স্বৈরতন্ত্র কেউ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। এটা আমার বিশ্বাস। এটা আমরা একবার না বহুবার প্রমাণ করেছি। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভূমিকার বিষয়টি গতকাল আলোচনাসভায় স্মরণ করেন সমিতির সাবেক এই সভাপতি। তিনি বলেন, অন্তত বাংলাদেশের আইনজীবীরা একবার না বহুবার প্রমাণ করেছে যে, দেশে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিবেককে জাগ্রত করা, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা, আন্দোলন করার ব্যাপারে আইনজীবীরা অগ্রণী, প্রসংশনীয় ভূমিকা রেখেছে। সেই জিনিসটি আমাদের মধ্যে আছে। সেই কারণে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আমরা সামনে দেখতে পাচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের অসাধারণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এর পূর্ব শর্ত হলো সুশাসন, আইনের শাসন, গণতন্ত্র। কেননা, জবাবদিহিতা যদি না থাকে, যদি পাইকারিভাবে চুরিচামারি হয়, যদি দুই নাম্বারি কায়দায় কন্ট্রাক্ট দেয়া হয়, বিভিন্নভাবে সরকারের যে ক্ষমতা এটা কোনো নীতির মধ্যে না থেকে যদি দুর্নীতির মধ্যে চলে যায়, দুঃশাসনের মধ্যে চলে যায়, দলীয়করণের মধ্যে চলে যায়, সবচেয়ে বড় রোগ আমাদের রাজনীতিতে ঢুকেছে। তা হলো দলীয়করণ।
২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের পর একটি অংশগ্রহণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি বর্তমান সরকার রক্ষা করেনি এমন অভিযোগ করে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ২০১৪ তে ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের পর আমাকে আদালতের অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ডাকা হয়েছিল। আমি বললাম পেছনের দিকে না তাকিয়ে, তারা (সরকার) নিজেই বলেছে কিছুদিনের মধ্যে সবার সঙ্গে আলোচনা করে আরেকটা নির্বাচন দেয়া হবে। আমি আদালতকে বললাম এটা করতে পারলেতো আর কিছু বলার থাকে না। ওরা নিজেরাই যখন বলছে তখন সুন্দরভাবে হয়ে যাক। তিনি বলেন, ২০১৪ গেল, ১৫ গেল, ১৬ গেল, ১৭ গেল। নির্লজ্জায় এরা দাঁড়িয়েছে। লজ্জা নাই, দায়িত্ববোধ নাই, নীতি নাই, বিবেক নাই, কিচ্ছু নাই। তিনি বলেন, এরা আমাদের ওপর চাপিয়ে বসবে আর আমরা এটা মেনে নেব? চলেন আমরা জেলায় জেলায় মানুষকে জানাই একটা সুষ্ঠু নির্বাচন লাগবে। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র সিনহা ও আপিল বিভাগের সাবেক জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার পদত্যাগ প্রসঙ্গে ড. কামাল হোসেন বলেন, একজনের আড়াই মাস ছিল। সরকার কি রকম অনৈতিক কাজ করলো! ওনাকে অপমান করলো। সরিয়ে দিলো। এটা ওনার অপমান তো না, সারা জাতির অপমান হয়েছে। আমাদের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধানকে অন্যায়ভাবে এভাবে অপমান যারা করেছে তারা অসাংবিধানিক কাজ করেছে। আজকে হোক কালকে হোক তাদের বিচার হতে হবে। আমরা বিচার করা ভুলে গেছি বলে এই অন্যায় বার বার হচ্ছে। ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়ের দিকে ইঙ্গিত করে ড. কামাল হোসেন বলেন, সাত জন বিচারপতি করলো (রায় দিলেন)। সাহস থাকলে বাকি ছয় জনকে বাদ দেয়া হচ্ছে না কেন? কোনো যুক্তি নাই। আমি বলি না যে তাদের বাদ দাও। কিন্তু এই সরকার কত অনৈতিক, কত নীতিহীন, কত স্বৈরাচার।
আলোচনায় অংশ নিয়ে গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্ট্রি ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশে এখন ভেজাল গণতন্ত্র চলছে। আমাদের দেখতে হবে এই ভেজাল গণতন্ত্রের জন্য খায়রুল হকের (সাবেক প্রধান বিচারপতি) ভূমিকা কতটুকু। তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিল করে ১৬ মাস পর রায় লিখলেন। আজকের ভেজাল গণতন্ত্রের শুরু সেখান থেকেই। তিনি বলেন, আজকে দেশে কঠিন পরিস্থিতি। এই কঠিন পরিস্থিতিতে ড. কামাল হোসেনদের সামনে আসতে হবে। ভেজাল গণতন্ত্রমুক্ত দেশ প্রতিষ্ঠায় কামাল হোসেন, বি চৌধুরীদের দায়িত্ব আছে। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, প্রত্যেকটা জায়গায় দলীয় লেজুরবৃত্তির কারণে যারা কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করতে চায়, তাদের আমরা সফলতা এনে দিয়েছি। এতটা লেজুরবৃত্তি আগে কখনো ছিল না। এই লেজুরবৃত্তির কারণে এবং রাজনীতিতে অসমতার কারণে এখন সমাজ সাংঘাতিকভবে বিভাজিত। রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণেই এ বিভাজন। তিনি বলেন, যেসব দেশে বিভাজন শার্প হয় সেসব দেশে নির্বাচন হয় না, গণতন্ত্র থাকে না- এটাই সোজা কথা। তিনি বলেন, পেশাজীবীদের মধ্যে লেজুরবৃত্তি কিছুটা হলেও কমাতে হবে। কিছু কিছু জায়গায় নিজেদের স্বার্থেই ঐক্যমতে আসতে হবে। ড. শাহদীন মালিক বলেন, সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগে আইন হতে হবে, নীতিমালা দিয়ে হবে না। এই আইনের ব্যাপারে আমরা বিভাজনটা একটু কমাতে পারি কি না।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশে আইনের শাসন নেই। আর আইনের শাসন প্রতিবিধান করার মতো কোনো আইন নেই। তিনি বলেন, আজকের মূল দাবি হলো একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। বিএনপির পেশাজীবী নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, গণতন্ত্র যদি মনে করেন পাঁচ বছর পরে একটি ভোট। তাহলে আমি নাই। আপনারা বলেন, আপনারা একটা ভোট করবেন সমাজের পরিবর্তন ও গণতান্ত্রিক অধিকারের পরিপূর্ণ নিশ্চয়তা, অন্ন বস্ত্রের নিশ্চয়তার আন্দোলন যদি হয় তাহলে সেই লড়াইয়ে আমি নিঃশঙ্কচিত্তে, নিঃশর্তভাবে আমি আছি। সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ বলেন, পুরো সমাজকে যখন ভীতি গ্রাস করে তখন গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সুশাসন থাকে না। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার তার ক্ষমতা যতক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারছে না ততক্ষণ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, দেশ চলবে আইন অনুসারে এবং আইন প্রয়োগ হবে সমভাবে। কিন্তু আমরা আজকে যে বাংলাদেশ দেখি সেখানে গুমের বিচার দেখি না, ক্রসফায়ারের বিচার দেখি না, ব্যাংকলুটের বিচার দেখি না। তাহলে এখানে আইন কিভাবে প্রয়োগ হবে। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি সমস্ত জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। কিন্তু আজকে এত অন্যায়, এত অবিচার সবাই বলেন আজকে কত রকমের অন্যায় হচ্ছে কিন্তু কোন রাজনৈতিক, আইনজীবী ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সবাই মিলে, জনগণের ভোটে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে- কেন এ রকম হয় না। আমি মনে করি প্রকৃত ও অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে বাংলাদেশের সংবিধানই থাকে না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই থাকে না। আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, সুব্রত চৌধুরী, বাংলদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, ঢাকা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. গোলাম মোস্তফা খান প্রমুখ।
সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে ঐক্যের ডাক দিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, ঐক্যের ডাক আমরা দিয়ে রেখেছি। বদরুদ্দোজা চৌধুরী সাহেব আমি আমরা সবাই মিলে এই ডাক দিয়েছি। আসেন সবাই। সাত দফা সেখানে দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে সাতের মধ্যে আট হতে পারে। মূল কথাগুলো সবই আছে। তিনি আরো বলেন, আসুন, আমরা এটা নিশ্চিত করি যে, দলমত নির্বিশেষে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, আমরা পাহারা দেই এবং বাইরে থেকেও দেখবে সবাই বলবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। আর সেই নির্বাচন ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির মতো না। তিনি বলেন, কি লজ্জার ব্যাপার বাইরে থেকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বলে দিচ্ছে, এরকম নির্বাচন দেবেন না, দেবেন সুষ্ঠু নির্বাচন। আমাদের এই দায়িত্ব পালন করতে হবে। জনগণের পক্ষে প্রহরীর ভূমিকা সারাজীবন রেখে এসেছি এবারো প্রহরীর ভূমিকা রাখার জন্য আপনারা এগিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, যে বাংলাদেশ আমরা একাত্তরে পেয়েছিলাম সেই বাংলাদেশকে নিয়ে আমরা আগামীতে এগিয়ে যাবো। জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করবে, সুশাসন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে, সংবিধানকে রক্ষা করবে। আর যারা দুর্নীতি করে, রাজনীতির নামে অন্য জিনিস করে তাদের ব্যাপারে জনগণ, রাষ্ট্র, দেশকে রক্ষা করবেন। কোটা আন্দোলনকারী ছাত্রদের অভিনন্দন জানিয়ে আলোচনা সভায় ড. কামাল হোসেন বলেন, ছাত্রদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ নেই। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাগ্রত হয়েছে। তাদের অভিনন্দন জানাই। সরকার জেনে নিক, এই দেশে স্বৈরাচার কোনোদিন টিকে থাকতে পারবে না, গণতন্ত্রের পরিবর্তে স্বৈরতন্ত্র কেউ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। এটা আমার বিশ্বাস। এটা আমরা একবার না বহুবার প্রমাণ করেছি। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভূমিকার বিষয়টি গতকাল আলোচনাসভায় স্মরণ করেন সমিতির সাবেক এই সভাপতি। তিনি বলেন, অন্তত বাংলাদেশের আইনজীবীরা একবার না বহুবার প্রমাণ করেছে যে, দেশে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিবেককে জাগ্রত করা, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা, আন্দোলন করার ব্যাপারে আইনজীবীরা অগ্রণী, প্রসংশনীয় ভূমিকা রেখেছে। সেই জিনিসটি আমাদের মধ্যে আছে। সেই কারণে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আমরা সামনে দেখতে পাচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের অসাধারণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এর পূর্ব শর্ত হলো সুশাসন, আইনের শাসন, গণতন্ত্র। কেননা, জবাবদিহিতা যদি না থাকে, যদি পাইকারিভাবে চুরিচামারি হয়, যদি দুই নাম্বারি কায়দায় কন্ট্রাক্ট দেয়া হয়, বিভিন্নভাবে সরকারের যে ক্ষমতা এটা কোনো নীতির মধ্যে না থেকে যদি দুর্নীতির মধ্যে চলে যায়, দুঃশাসনের মধ্যে চলে যায়, দলীয়করণের মধ্যে চলে যায়, সবচেয়ে বড় রোগ আমাদের রাজনীতিতে ঢুকেছে। তা হলো দলীয়করণ।
২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের পর একটি অংশগ্রহণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি বর্তমান সরকার রক্ষা করেনি এমন অভিযোগ করে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ২০১৪ তে ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের পর আমাকে আদালতের অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ডাকা হয়েছিল। আমি বললাম পেছনের দিকে না তাকিয়ে, তারা (সরকার) নিজেই বলেছে কিছুদিনের মধ্যে সবার সঙ্গে আলোচনা করে আরেকটা নির্বাচন দেয়া হবে। আমি আদালতকে বললাম এটা করতে পারলেতো আর কিছু বলার থাকে না। ওরা নিজেরাই যখন বলছে তখন সুন্দরভাবে হয়ে যাক। তিনি বলেন, ২০১৪ গেল, ১৫ গেল, ১৬ গেল, ১৭ গেল। নির্লজ্জায় এরা দাঁড়িয়েছে। লজ্জা নাই, দায়িত্ববোধ নাই, নীতি নাই, বিবেক নাই, কিচ্ছু নাই। তিনি বলেন, এরা আমাদের ওপর চাপিয়ে বসবে আর আমরা এটা মেনে নেব? চলেন আমরা জেলায় জেলায় মানুষকে জানাই একটা সুষ্ঠু নির্বাচন লাগবে। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র সিনহা ও আপিল বিভাগের সাবেক জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার পদত্যাগ প্রসঙ্গে ড. কামাল হোসেন বলেন, একজনের আড়াই মাস ছিল। সরকার কি রকম অনৈতিক কাজ করলো! ওনাকে অপমান করলো। সরিয়ে দিলো। এটা ওনার অপমান তো না, সারা জাতির অপমান হয়েছে। আমাদের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধানকে অন্যায়ভাবে এভাবে অপমান যারা করেছে তারা অসাংবিধানিক কাজ করেছে। আজকে হোক কালকে হোক তাদের বিচার হতে হবে। আমরা বিচার করা ভুলে গেছি বলে এই অন্যায় বার বার হচ্ছে। ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়ের দিকে ইঙ্গিত করে ড. কামাল হোসেন বলেন, সাত জন বিচারপতি করলো (রায় দিলেন)। সাহস থাকলে বাকি ছয় জনকে বাদ দেয়া হচ্ছে না কেন? কোনো যুক্তি নাই। আমি বলি না যে তাদের বাদ দাও। কিন্তু এই সরকার কত অনৈতিক, কত নীতিহীন, কত স্বৈরাচার।
আলোচনায় অংশ নিয়ে গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্ট্রি ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশে এখন ভেজাল গণতন্ত্র চলছে। আমাদের দেখতে হবে এই ভেজাল গণতন্ত্রের জন্য খায়রুল হকের (সাবেক প্রধান বিচারপতি) ভূমিকা কতটুকু। তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিল করে ১৬ মাস পর রায় লিখলেন। আজকের ভেজাল গণতন্ত্রের শুরু সেখান থেকেই। তিনি বলেন, আজকে দেশে কঠিন পরিস্থিতি। এই কঠিন পরিস্থিতিতে ড. কামাল হোসেনদের সামনে আসতে হবে। ভেজাল গণতন্ত্রমুক্ত দেশ প্রতিষ্ঠায় কামাল হোসেন, বি চৌধুরীদের দায়িত্ব আছে। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, প্রত্যেকটা জায়গায় দলীয় লেজুরবৃত্তির কারণে যারা কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করতে চায়, তাদের আমরা সফলতা এনে দিয়েছি। এতটা লেজুরবৃত্তি আগে কখনো ছিল না। এই লেজুরবৃত্তির কারণে এবং রাজনীতিতে অসমতার কারণে এখন সমাজ সাংঘাতিকভবে বিভাজিত। রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণেই এ বিভাজন। তিনি বলেন, যেসব দেশে বিভাজন শার্প হয় সেসব দেশে নির্বাচন হয় না, গণতন্ত্র থাকে না- এটাই সোজা কথা। তিনি বলেন, পেশাজীবীদের মধ্যে লেজুরবৃত্তি কিছুটা হলেও কমাতে হবে। কিছু কিছু জায়গায় নিজেদের স্বার্থেই ঐক্যমতে আসতে হবে। ড. শাহদীন মালিক বলেন, সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগে আইন হতে হবে, নীতিমালা দিয়ে হবে না। এই আইনের ব্যাপারে আমরা বিভাজনটা একটু কমাতে পারি কি না।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশে আইনের শাসন নেই। আর আইনের শাসন প্রতিবিধান করার মতো কোনো আইন নেই। তিনি বলেন, আজকের মূল দাবি হলো একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। বিএনপির পেশাজীবী নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, গণতন্ত্র যদি মনে করেন পাঁচ বছর পরে একটি ভোট। তাহলে আমি নাই। আপনারা বলেন, আপনারা একটা ভোট করবেন সমাজের পরিবর্তন ও গণতান্ত্রিক অধিকারের পরিপূর্ণ নিশ্চয়তা, অন্ন বস্ত্রের নিশ্চয়তার আন্দোলন যদি হয় তাহলে সেই লড়াইয়ে আমি নিঃশঙ্কচিত্তে, নিঃশর্তভাবে আমি আছি। সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ বলেন, পুরো সমাজকে যখন ভীতি গ্রাস করে তখন গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সুশাসন থাকে না। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার তার ক্ষমতা যতক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারছে না ততক্ষণ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, দেশ চলবে আইন অনুসারে এবং আইন প্রয়োগ হবে সমভাবে। কিন্তু আমরা আজকে যে বাংলাদেশ দেখি সেখানে গুমের বিচার দেখি না, ক্রসফায়ারের বিচার দেখি না, ব্যাংকলুটের বিচার দেখি না। তাহলে এখানে আইন কিভাবে প্রয়োগ হবে। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি সমস্ত জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। কিন্তু আজকে এত অন্যায়, এত অবিচার সবাই বলেন আজকে কত রকমের অন্যায় হচ্ছে কিন্তু কোন রাজনৈতিক, আইনজীবী ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সবাই মিলে, জনগণের ভোটে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে- কেন এ রকম হয় না। আমি মনে করি প্রকৃত ও অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে বাংলাদেশের সংবিধানই থাকে না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই থাকে না। আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, সুব্রত চৌধুরী, বাংলদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, ঢাকা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. গোলাম মোস্তফা খান প্রমুখ।
No comments