গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন: বহিরাগত ইস্যুতে জাহাঙ্গীর-হাসান পাল্টাপাল্টি by ইকবাল আহমদ সরকার
গাজীপুর
সিটি করপোরেশ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে নানা কৌশলে প্রতিপক্ষকে
ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। নিজেদের বাক্সে ভোট বাড়াতে চলছে প্রতিশ্রুতির
ফুলঝুরি। পাশাপাশি নানা ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি অভিযোগও করছে প্রতিদ্বন্দ্বী
প্রার্থীরা। গতকাল বহিরাগত ইস্যুতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গাজীপুর সিটি।
নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মী পরিচয়ে বহিরাগতদের প্রবেশে নিজের জীবন
নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর
আলম। এর জবাবে বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার অনুরোধ করে বলেছেন,
নির্বাচনে দাঁড়িয়ে হাজারো-লক্ষ লোকের সামনে যেন এত বড় মিথ্যা কথা না বলেন।
শুক্রবার সকালে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বেশিসংখ্যক ভোটারের কাছে ছুটে যেতে সকাল সকালই বাসা থেকে বেরিয়ে যান বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। ভোটের মাঠে বের হয়ে নগরের ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের গাজীপুরা এলাকা থেকে তিনি প্রচারণা শুরু করেন। সাতইশসহ বিভিন্ন স্থানে করেন পথসভা। এসময় তার সঙ্গে স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে পথসভায় উপস্থিত ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। গাজীপুরকে পরিকল্পিত আধুনিক নগর গড়তে এলাকার উন্নয়নে জলাবদ্ধতা, যানজট নিরসন, শ্রমিকদের কর্মবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলাসহ নানা প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন তিনি। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীর নির্বাচনী মাঠে তার সঙ্গে রয়েছেন জানিয়ে জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করেন, আমরা আতঙ্কে রয়েছি, কেননা আপনারা জানেন এই মাটিতেই একজন সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টারকে খুন করা হয়েছে। দলীয় পরিচয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গাজীপুরের বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে এবং বিভিন্ন জায়গায় অপরাধীদের জড়ো করছে বিএনপি। অপরাধীদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় হতে পারে না। আজকে আমাকে, নৌকাকে বিজয়ী করতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসছেন। তিনি আরো বলেন, এখানে চীন এবং জাপানের সহযোগিতায় আমি একটি আধুনিক শহর করতে চাই। সে হিসেবে আমি ৫৭টি ওয়ার্ড নিয়ে একটি মাস্টার প্লান করতে চাই। সে জন্য আমি সবার কাছে ভোট চাই, সহযোগিতা চাই। নির্বাচনী প্রচারে নেমে সকাল থেকে জাহাঙ্গীর আলম যেখানে গেছেন, সেখানেই স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা। বড় আকারের দলীয় প্রতীক হাতে নিয়ে মিছিল করছেন তরুণরা। পথসভা এমনকি যে পথে তিনি গেছেন সেসব পথে পথে তরুণদের ঢল নামে নৌকার পক্ষে, জাহাঙ্গীরের পক্ষে। জাহাঙ্গীর আলমের এই অভিযোগের জবাবে বলেন, একজন অপরাধী বা সন্ত্রাসীর নাম তিনি বলুক। তিনি বলেন, আমি তাকে অনুরোধ করবো- নির্বাচনে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুষের সামনে যেন এত বড় মিথ্যা কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, মাইকিং, বিলবোর্ড, পোস্টার ও অধিকসংখ্যক নির্বাচনী অফিস করেসহ তারা পদে পদে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তিনি অবিলম্বে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যারা অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য নয়, এমন অনেক লোক তাদের সময় অস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছে। সকাল আটটার আগেই বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বেরিয়ে যান নির্বাচনী প্রচারে। দিনের শুরুতেই তিনি নগরের ভাওয়াল গাজীপুর এলাকা থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। প্রচারে নেমে জুমার নামাজের আগেই বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে তিনি হাতিয়াব, ভাওরাইদ, পোড়াবাড়ী বাজারে পথসভা করেন। পরে তিনি নগরের উত্তর এলাকার গাজরিয়াপাড়া, বাংলাবাজার, ভীমবাজার, মাস্টারবাড়ী, কাউলতিয়া, জোলারপাড়া, বিপ্রবর্থা, মিরেরগাঁও, জালামার্কেট, সালনা, কাথোরা শৈশানবাড়ী বাজার ও মজলিসপুর এলাকায় নির্বাচনী প্রচার চালান তিনি। হাসান সরকার সারা দিনে অন্তত ১৫টি স্থানে পথসভা করেন। নির্বাচনী প্রচারপত্র ধানের শীষের লিফলেট তুলে দেন ভোটারদের হাতে। বর্তমান মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানের অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। হাসান সরকারের এসব পথসভায় প্রবীণ শ্রেণির লোকজনের উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে। এক বৃদ্ধাকে দেখা গেছে হাসান সরকারের পথসভায় এসে তার মাথায় হাত বুলাতে। পথসভাগুলোতে তিনি নানা প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন, প্রশাসনকে তিনি আবারও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান। আর নিরপেক্ষ ভোট না হলে তিনি প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন বলে হুমকি দেন।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে গণসংযোগে প্রার্থীরা
শুক্রবার আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের সাতাইশ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে মুসল্লিদের উদ্দেশে কথা বলেন। তিনি জুমার নামাজের পূর্বে ৫০ ও ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী মোজাম্মেল হক সড়ক এবং সাতাইশ রোডে গণসংযোগ করেন। গাজীপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে, সিকদার মার্কেট, বাইগার টেক, সাতাইশ রোডের ভিয়েলাটেক্স কারখানার সামনে, খরতৈল মোড়, সাতাইশ চৌরাস্তায় পথসভায় বক্তব্য দেন। প্রচারণা চলার সময়ে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি শুরু হয়। নেতাকর্মীরা বৃষ্টিতে ভিজেই গণসংযোগ অব্যাহত রাখেন। পরে সাতাইশ স্কুলে কেন্দ্র কমিটির আহ্বায়ক, সচিব এবং সদস্যদের সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠকে নেতৃবৃন্দ ঘরে ঘরে ভোট চাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। বিকালে ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের মিলগেটে পথসভার মাধ্যমে প্রচারণার শুরু হয়। পরে লামাবাজার, মুন্নু গেট, স্টেশন রোড, নোয়াগাঁও, তিস্তার গেট, হকের মোড়, দত্তপাড়া চেরাগ আলী মার্কেটের সামনে পথসভায় বক্তব্য দেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য কাজী মোজাম্মেল হক, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মতিউর রহমান মতি, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইলিয়াস আহমেদ, অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন মহি, উপদেষ্টা জালাল উদ্দিন মাস্টার, টঙ্গী থানা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রজব আলী, ৫০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আবু বকর, ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নুরুল ইসলাম, ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, টঙ্গী থানা যুবলীগ সহ-সভাপতি কাজী শহিদুল ইসলাম, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম, জাতীয় পার্টি মহানগর সাধারণ সম্পাদক মো. জয়নাল আবেদীন, বাংলাদেশ ইমাম সমিতি গাজীপুর শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ, ৫০নং ওয়ার্ড যুবলীগ সা. সম্পাদক কাজী জামাল, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল আলীম, গাজীপুর জেলা শ্রমজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি আবুল হাসেম মোল্লা, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও শিল্প শ্রমিক ঐক্যপরিষদের গাজীপুর জেলা সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ সংযুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডরেশন গাজীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক নাসরিন আক্তার, টঙ্গী থানা ছাত্রলীগ সভাপতি কাজী মঞ্জুর, সা. সম্পাদক রেজাউল করিম, প্রাইভেট মাদরাসা সমন্বয় পরিষদের সভাপতি মাওলানা এইচএম শাহ আলম, গাজীপুরস্থ রংপুর বিভাগ জনকল্যাণ সংস্থার সভাপতি আশরাফ আহমদ খান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে দিনভর বিএনপির প্রার্থী হাসান সরকারের গণসংযোগে তার সঙ্গে ছিলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কেন্দ্রীয় নেতা কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, গাজীপুর জেলা বিএনপির সহসভাপতি শাহজাহান ফকির, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন, কাপাসিয়া থানা বিএনপির সেক্রেটারি সাখাওয়াত হোসেন সেলিম, গাজীপুর বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতান উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিদ্দিকুর রহমান, শ্রীপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক জেলা যুবদলের সভাপতি অ্যাডভোকেট এমদাদ খান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক। নগরীর ১৮নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম। তার সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা ভিপি হারুনূর রশিদ, মশিউর রহমান বিপ্লব, শাহানা আক্তার, আব্দুল খালেক হাওলাদার, ডা. হারেছ মোল্লা, আবুল কালাম, যুবদল নেতা সবুজ, মাহিম, হাবিব, ওয়ার্ড সমন্বয়কারী হজরত আলী প্রমুখ। নগরীর ৩১ নং ওয়ার্ডে প্রচার কাজ করেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ। তার অ্যাডভোকেট ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা ফিরোজ উজ জামান, হাবিবা, শামীম, ছাত্রনেতা জাহাঙ্গীর প্রমুখ। নগরীর ২নং ওয়ার্ডে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে প্রচার কাজ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় শিশুবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, পেশাজীবী গাজীপুর জেলার সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল মামুন, যুবনেতা আনোয়ার হোসেন। নগরীর ১১ নং ওয়ার্ডে প্রচার কাজ করেন বিএনপি কেন্দ্রীয়সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল খান, কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তফা খান সফরী, মিজানুর রহমান সরকার, নাজমুল হাসান, কাজী সামসুল হুদা প্রমুখ। নগরীর ২৫ নং ওয়ার্ডে প্রচার কাজ করেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য একরামুল হক বিপ্লব, সালাউদ্দিন ভূঁইয়া, বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা কামাল আনোয়ার, ভিপি ইব্রাহিম, ছাত্রনেতা টিটু, তন্ময় হাসান প্রমুখ। নগরীর ৪১নং ওয়ার্ডে প্রচার কাজ করেন বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল জুমার নামাযের পর ঘরে ঘরে গিয়ে ধানের শীষের পক্ষে ভোট চান।
সিপিবির প্রার্থীর ইশতেহার
অপরদিকে নির্বাচনের বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ মনোনীত মেয়র প্রার্থী কাজী মো. রুহুল আমিন বাসযোগ্য, উন্নত, মানবিক সিটি গড়ার লক্ষ্যে ৯ দফা কর্মপরিকল্পনার ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। নগরের জয়দেবপুরের রাজবাড়ী রোডের সিপিবি জেলা কার্যালয়ের সামনে ইশতেহার ঘোষণার সময় সিপিবির কেন্দ্রীয় সম্পাদক কমরেড সর্দার রুহিন হোসেন প্রিন্স, সম্পাদক কমরেড সাজ্জাদ জহির চন্দন, আহসান হাবিব লাবলু, বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা বজলুর রশিদ ফিরোজ, সিপিবির জেলা সভাপতি জয়নাল অবেদিন খান, বাসদের জেলা সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট আব্দুল কাইয়ুম, জিয়াউল কবিরসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ইশতেহার ঘোষণার সময় সিপিবি ও বাসদের প্রার্থী কাজী মো. রুহুল আমিন, বলেন, যথার্থ পরিকল্পনা ও কার্যক্রমের অভাবে এই শহরটি যানজট, জলাবদ্ধতাসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে অচল শহরে পরিণত হয়েছে। এমতাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতান বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সবার জন্য মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদিকে মেয়র পদে মোমবাতি মার্কায় ভোট চাইতে সকাল থেকেই ছুটছেন ইসলামি ফ্রন্টের প্রার্থী অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন। তিনি জয়দেবপুরের ছায়াবীথি, বরুদা, পানির ট্যাঙ্কিসহ ২৮ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করে ভোট প্রার্থনা করেন। তার পক্ষে লিফলেট হাতে নিয়ে মইনীয়া মহিলা ফোরামের নিবেদিত প্রাণ কর্মীরাও বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভোটের জন্য মাঠে ছুটছেন।
অন্যদিকে, ইসলামী ঐক্যজোট মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী মাওলানা ফজলুর রহমানের শুক্রবার সকালে শালনা এলাকায় ওলামায়ে কেরামের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে টঙ্গী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন এবং জুমার খুতবার আগে মুসুল্লিগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ও মিনার প্রতীকে সকলের দুয়া ও সমর্থন কামনা করেন। বিকালে টঙ্গী কলেট গেট ও আশপাশের এলাকায় গণসংযোগে করেন। এ সময় ইসলামী ঐক্যজোটের জেলার মহাসচিব মাওলানা ফয়জুল্লাহ ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুখলেছুর রহমান মাওলানা মুফতী আব্দুল কাদের মোল্লা, মাওলান শফিকুল ইসলাম এলাকায় দলের স্থ্ানীয় নেতাকর্মীরা সঙ্গে ছিলেন। তার পক্ষে
ইসলামী ছাত্র খেলাফতের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আমবাগ, নছের মার্কেট, হাজি মার্কেট, নূর মার্কেট এলাকায় গণসংযোগ করেন ও হ্যান্ডবিল বিলি করেন।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থী ছাড়াও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এসময় তাদের কর্মী ও সমর্থকরা বিভিন্ন স্লোগানে নিজেদেরে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। নগরের ৩৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোটের লড়াইয়ে জমজমাট হয়ে উঠছে। ইতিমধ্যে ‘নৌকা’ ও ‘ধানের শীষ’-এর জমজমাট প্রচারণায় যেমন জমজমাট হয়ে উঠছে তেমনি আবার প্রার্থী ও সমর্থকদের বাইরে সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ছে উত্তাপ। মেয়র প্রার্থী ছাড়াও কাউন্সিলর প্রার্থীরাও প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হুমকি, কালো টাকা ও নানা কৌশলে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ তুলছেন এরই মধ্যে। তারাও চাচ্ছেন ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ। নগরের ৫৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে একটি ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পর এখন ৫৬টি সাধারণ ওয়ার্ডে ২৫৫ জন সাধারন ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৮৪ জন সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাদের নিজ নিজ ওয়ার্ডে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট চাইছেন। এ সিটিতে ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে ১৫ই মে।
শুক্রবার সকালে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বেশিসংখ্যক ভোটারের কাছে ছুটে যেতে সকাল সকালই বাসা থেকে বেরিয়ে যান বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। ভোটের মাঠে বের হয়ে নগরের ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের গাজীপুরা এলাকা থেকে তিনি প্রচারণা শুরু করেন। সাতইশসহ বিভিন্ন স্থানে করেন পথসভা। এসময় তার সঙ্গে স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে পথসভায় উপস্থিত ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। গাজীপুরকে পরিকল্পিত আধুনিক নগর গড়তে এলাকার উন্নয়নে জলাবদ্ধতা, যানজট নিরসন, শ্রমিকদের কর্মবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলাসহ নানা প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন তিনি। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীর নির্বাচনী মাঠে তার সঙ্গে রয়েছেন জানিয়ে জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করেন, আমরা আতঙ্কে রয়েছি, কেননা আপনারা জানেন এই মাটিতেই একজন সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টারকে খুন করা হয়েছে। দলীয় পরিচয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গাজীপুরের বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে এবং বিভিন্ন জায়গায় অপরাধীদের জড়ো করছে বিএনপি। অপরাধীদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় হতে পারে না। আজকে আমাকে, নৌকাকে বিজয়ী করতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসছেন। তিনি আরো বলেন, এখানে চীন এবং জাপানের সহযোগিতায় আমি একটি আধুনিক শহর করতে চাই। সে হিসেবে আমি ৫৭টি ওয়ার্ড নিয়ে একটি মাস্টার প্লান করতে চাই। সে জন্য আমি সবার কাছে ভোট চাই, সহযোগিতা চাই। নির্বাচনী প্রচারে নেমে সকাল থেকে জাহাঙ্গীর আলম যেখানে গেছেন, সেখানেই স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা। বড় আকারের দলীয় প্রতীক হাতে নিয়ে মিছিল করছেন তরুণরা। পথসভা এমনকি যে পথে তিনি গেছেন সেসব পথে পথে তরুণদের ঢল নামে নৌকার পক্ষে, জাহাঙ্গীরের পক্ষে। জাহাঙ্গীর আলমের এই অভিযোগের জবাবে বলেন, একজন অপরাধী বা সন্ত্রাসীর নাম তিনি বলুক। তিনি বলেন, আমি তাকে অনুরোধ করবো- নির্বাচনে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুষের সামনে যেন এত বড় মিথ্যা কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, মাইকিং, বিলবোর্ড, পোস্টার ও অধিকসংখ্যক নির্বাচনী অফিস করেসহ তারা পদে পদে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তিনি অবিলম্বে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যারা অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য নয়, এমন অনেক লোক তাদের সময় অস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছে। সকাল আটটার আগেই বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বেরিয়ে যান নির্বাচনী প্রচারে। দিনের শুরুতেই তিনি নগরের ভাওয়াল গাজীপুর এলাকা থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। প্রচারে নেমে জুমার নামাজের আগেই বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে তিনি হাতিয়াব, ভাওরাইদ, পোড়াবাড়ী বাজারে পথসভা করেন। পরে তিনি নগরের উত্তর এলাকার গাজরিয়াপাড়া, বাংলাবাজার, ভীমবাজার, মাস্টারবাড়ী, কাউলতিয়া, জোলারপাড়া, বিপ্রবর্থা, মিরেরগাঁও, জালামার্কেট, সালনা, কাথোরা শৈশানবাড়ী বাজার ও মজলিসপুর এলাকায় নির্বাচনী প্রচার চালান তিনি। হাসান সরকার সারা দিনে অন্তত ১৫টি স্থানে পথসভা করেন। নির্বাচনী প্রচারপত্র ধানের শীষের লিফলেট তুলে দেন ভোটারদের হাতে। বর্তমান মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানের অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। হাসান সরকারের এসব পথসভায় প্রবীণ শ্রেণির লোকজনের উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে। এক বৃদ্ধাকে দেখা গেছে হাসান সরকারের পথসভায় এসে তার মাথায় হাত বুলাতে। পথসভাগুলোতে তিনি নানা প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন, প্রশাসনকে তিনি আবারও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান। আর নিরপেক্ষ ভোট না হলে তিনি প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন বলে হুমকি দেন।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে গণসংযোগে প্রার্থীরা
শুক্রবার আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের সাতাইশ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে মুসল্লিদের উদ্দেশে কথা বলেন। তিনি জুমার নামাজের পূর্বে ৫০ ও ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী মোজাম্মেল হক সড়ক এবং সাতাইশ রোডে গণসংযোগ করেন। গাজীপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে, সিকদার মার্কেট, বাইগার টেক, সাতাইশ রোডের ভিয়েলাটেক্স কারখানার সামনে, খরতৈল মোড়, সাতাইশ চৌরাস্তায় পথসভায় বক্তব্য দেন। প্রচারণা চলার সময়ে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি শুরু হয়। নেতাকর্মীরা বৃষ্টিতে ভিজেই গণসংযোগ অব্যাহত রাখেন। পরে সাতাইশ স্কুলে কেন্দ্র কমিটির আহ্বায়ক, সচিব এবং সদস্যদের সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠকে নেতৃবৃন্দ ঘরে ঘরে ভোট চাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। বিকালে ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের মিলগেটে পথসভার মাধ্যমে প্রচারণার শুরু হয়। পরে লামাবাজার, মুন্নু গেট, স্টেশন রোড, নোয়াগাঁও, তিস্তার গেট, হকের মোড়, দত্তপাড়া চেরাগ আলী মার্কেটের সামনে পথসভায় বক্তব্য দেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য কাজী মোজাম্মেল হক, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মতিউর রহমান মতি, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইলিয়াস আহমেদ, অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন মহি, উপদেষ্টা জালাল উদ্দিন মাস্টার, টঙ্গী থানা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রজব আলী, ৫০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আবু বকর, ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নুরুল ইসলাম, ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, টঙ্গী থানা যুবলীগ সহ-সভাপতি কাজী শহিদুল ইসলাম, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম, জাতীয় পার্টি মহানগর সাধারণ সম্পাদক মো. জয়নাল আবেদীন, বাংলাদেশ ইমাম সমিতি গাজীপুর শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ, ৫০নং ওয়ার্ড যুবলীগ সা. সম্পাদক কাজী জামাল, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল আলীম, গাজীপুর জেলা শ্রমজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি আবুল হাসেম মোল্লা, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও শিল্প শ্রমিক ঐক্যপরিষদের গাজীপুর জেলা সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ সংযুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডরেশন গাজীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক নাসরিন আক্তার, টঙ্গী থানা ছাত্রলীগ সভাপতি কাজী মঞ্জুর, সা. সম্পাদক রেজাউল করিম, প্রাইভেট মাদরাসা সমন্বয় পরিষদের সভাপতি মাওলানা এইচএম শাহ আলম, গাজীপুরস্থ রংপুর বিভাগ জনকল্যাণ সংস্থার সভাপতি আশরাফ আহমদ খান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে দিনভর বিএনপির প্রার্থী হাসান সরকারের গণসংযোগে তার সঙ্গে ছিলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কেন্দ্রীয় নেতা কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, গাজীপুর জেলা বিএনপির সহসভাপতি শাহজাহান ফকির, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন, কাপাসিয়া থানা বিএনপির সেক্রেটারি সাখাওয়াত হোসেন সেলিম, গাজীপুর বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতান উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিদ্দিকুর রহমান, শ্রীপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক জেলা যুবদলের সভাপতি অ্যাডভোকেট এমদাদ খান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক। নগরীর ১৮নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম। তার সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা ভিপি হারুনূর রশিদ, মশিউর রহমান বিপ্লব, শাহানা আক্তার, আব্দুল খালেক হাওলাদার, ডা. হারেছ মোল্লা, আবুল কালাম, যুবদল নেতা সবুজ, মাহিম, হাবিব, ওয়ার্ড সমন্বয়কারী হজরত আলী প্রমুখ। নগরীর ৩১ নং ওয়ার্ডে প্রচার কাজ করেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ। তার অ্যাডভোকেট ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা ফিরোজ উজ জামান, হাবিবা, শামীম, ছাত্রনেতা জাহাঙ্গীর প্রমুখ। নগরীর ২নং ওয়ার্ডে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে প্রচার কাজ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় শিশুবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, পেশাজীবী গাজীপুর জেলার সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল মামুন, যুবনেতা আনোয়ার হোসেন। নগরীর ১১ নং ওয়ার্ডে প্রচার কাজ করেন বিএনপি কেন্দ্রীয়সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল খান, কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তফা খান সফরী, মিজানুর রহমান সরকার, নাজমুল হাসান, কাজী সামসুল হুদা প্রমুখ। নগরীর ২৫ নং ওয়ার্ডে প্রচার কাজ করেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য একরামুল হক বিপ্লব, সালাউদ্দিন ভূঁইয়া, বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা কামাল আনোয়ার, ভিপি ইব্রাহিম, ছাত্রনেতা টিটু, তন্ময় হাসান প্রমুখ। নগরীর ৪১নং ওয়ার্ডে প্রচার কাজ করেন বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল জুমার নামাযের পর ঘরে ঘরে গিয়ে ধানের শীষের পক্ষে ভোট চান।
সিপিবির প্রার্থীর ইশতেহার
অপরদিকে নির্বাচনের বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ মনোনীত মেয়র প্রার্থী কাজী মো. রুহুল আমিন বাসযোগ্য, উন্নত, মানবিক সিটি গড়ার লক্ষ্যে ৯ দফা কর্মপরিকল্পনার ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। নগরের জয়দেবপুরের রাজবাড়ী রোডের সিপিবি জেলা কার্যালয়ের সামনে ইশতেহার ঘোষণার সময় সিপিবির কেন্দ্রীয় সম্পাদক কমরেড সর্দার রুহিন হোসেন প্রিন্স, সম্পাদক কমরেড সাজ্জাদ জহির চন্দন, আহসান হাবিব লাবলু, বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা বজলুর রশিদ ফিরোজ, সিপিবির জেলা সভাপতি জয়নাল অবেদিন খান, বাসদের জেলা সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট আব্দুল কাইয়ুম, জিয়াউল কবিরসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ইশতেহার ঘোষণার সময় সিপিবি ও বাসদের প্রার্থী কাজী মো. রুহুল আমিন, বলেন, যথার্থ পরিকল্পনা ও কার্যক্রমের অভাবে এই শহরটি যানজট, জলাবদ্ধতাসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে অচল শহরে পরিণত হয়েছে। এমতাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতান বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সবার জন্য মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদিকে মেয়র পদে মোমবাতি মার্কায় ভোট চাইতে সকাল থেকেই ছুটছেন ইসলামি ফ্রন্টের প্রার্থী অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন। তিনি জয়দেবপুরের ছায়াবীথি, বরুদা, পানির ট্যাঙ্কিসহ ২৮ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করে ভোট প্রার্থনা করেন। তার পক্ষে লিফলেট হাতে নিয়ে মইনীয়া মহিলা ফোরামের নিবেদিত প্রাণ কর্মীরাও বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভোটের জন্য মাঠে ছুটছেন।
অন্যদিকে, ইসলামী ঐক্যজোট মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী মাওলানা ফজলুর রহমানের শুক্রবার সকালে শালনা এলাকায় ওলামায়ে কেরামের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে টঙ্গী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন এবং জুমার খুতবার আগে মুসুল্লিগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ও মিনার প্রতীকে সকলের দুয়া ও সমর্থন কামনা করেন। বিকালে টঙ্গী কলেট গেট ও আশপাশের এলাকায় গণসংযোগে করেন। এ সময় ইসলামী ঐক্যজোটের জেলার মহাসচিব মাওলানা ফয়জুল্লাহ ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুখলেছুর রহমান মাওলানা মুফতী আব্দুল কাদের মোল্লা, মাওলান শফিকুল ইসলাম এলাকায় দলের স্থ্ানীয় নেতাকর্মীরা সঙ্গে ছিলেন। তার পক্ষে
ইসলামী ছাত্র খেলাফতের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আমবাগ, নছের মার্কেট, হাজি মার্কেট, নূর মার্কেট এলাকায় গণসংযোগ করেন ও হ্যান্ডবিল বিলি করেন।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থী ছাড়াও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এসময় তাদের কর্মী ও সমর্থকরা বিভিন্ন স্লোগানে নিজেদেরে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। নগরের ৩৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোটের লড়াইয়ে জমজমাট হয়ে উঠছে। ইতিমধ্যে ‘নৌকা’ ও ‘ধানের শীষ’-এর জমজমাট প্রচারণায় যেমন জমজমাট হয়ে উঠছে তেমনি আবার প্রার্থী ও সমর্থকদের বাইরে সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ছে উত্তাপ। মেয়র প্রার্থী ছাড়াও কাউন্সিলর প্রার্থীরাও প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হুমকি, কালো টাকা ও নানা কৌশলে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ তুলছেন এরই মধ্যে। তারাও চাচ্ছেন ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ। নগরের ৫৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে একটি ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পর এখন ৫৬টি সাধারণ ওয়ার্ডে ২৫৫ জন সাধারন ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৮৪ জন সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাদের নিজ নিজ ওয়ার্ডে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট চাইছেন। এ সিটিতে ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে ১৫ই মে।
No comments