ইভিএম বাতিল ও সেনা মোতায়েনের দাবি বিএনপির

আসন্ন গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনা মোতায়েন চেয়েছে বিএনপি। সেই সঙ্গে  নির্বাচনে যাতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার না করা হয় সে দাবিও তুলেছে দলটি। গতকাল সকালে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ এ দাবি জানান। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারের দলীয় বাহিনীর মতো কাজ করছে। ভোটাররা তাদের ওপর আস্থা পাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী মোতায়েন অত্যাবশ্যক। কেবল তাই নয়, ইভিএম ব্যবহারে জনগণের আগ্রহ না থাকলেও নির্বাচন কমিশন অনেক সেন্টারে ইভিএম ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছে। আমরা মনে করি, এগুলো সবই সরকারের ইচ্ছারই প্রতিফলন। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে অবিলম্বে দুই সিটি নির্বাচনী এলাকায় ইভিএম বাতিল ও সেনাবাহিনী মোতায়েনের জোর দাবি জানাচ্ছি। গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে না- নির্বাচন কমিশনারের এ বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন আদৌ দুই সিটির নির্বাচন সুষ্ঠু চায় কি-না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বক্তব্যে সরকারি ইচ্ছার প্রতিফলন দেখা যায়। নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি না করে, সরকারি ফর্মুলায় নির্বাচন করতেই ইসি আগাম মন্তব্য করলেন কি-না সে প্রশ্নটি এখন ক্রমাগত সমপ্রসারিত হচ্ছে। রিজভী আহমেদ বলেন, দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলে কিছু নেই। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে। ক্ষমতাসীন দল ও সন্ত্রাসীদের হাতে বৈধ ও অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি। সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা মিছিল করছে, মিটিং করছে, সমাবেশ করছে বীরদর্পে। অন্যদিকে বিএনপিকে সভা-সমাবেশ দূরের কথা নেতাকর্মীরা কেউই বাড়িতে রাতে ঘুমাতে পারছেন না। তাদের জীবন কাটছে জেলখানায় কিংবা আদালতের বারান্দায়। আমি অবিলম্বে দুই সিটিতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত এবং বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার বন্ধ করে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জোর দাবি জানাচ্ছি। বিএনপির মুুখপাত্র অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী হতে ইচ্ছুক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ত্রিশের ঊর্ধ্বে শতাধিক রাজনৈতিক মামলা রয়েছে। সারাক্ষণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের তাড়া করছে। কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন- সব দল না এলে নির্বাচন ভালো হয় না। সিইসি’র ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, সিইসি’র প্রধান দায়িত্ব যেকোনো নির্বাচনে সব দলকে নির্বাচনে নিয়ে আসার জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা। এটা তারই প্রধান দায়িত্ব। সরকার যদি সিইসি’র প্রতি সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার মতো আচরণ করতে চায় তাহলে তিনি নিজ নীতিতে অটল থেকে শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বে সাহসী দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। প্রয়োজনে সরকারের অন্যায়ের চাপের প্রতিবাদে পদত্যাগ করবেন, তাতে দেশের জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় আপনার পাশে এসে দাঁড়াবে। রিজভী বলেন, আপনারা দেখেছেন প্রায় দু’মাস ধরে কারারুদ্ধ জনতার ভালোবাসায় সিক্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে প্রকৃত পরীক্ষা-নিরীক্ষার চিকিৎসা না দিয়ে শনিবার সম্পূর্ণ প্রহসন করতে পিজি হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরাও সুযোগ পাননি তাকে চিকিৎসা দেয়ার। পুলিশি হিংসাত্মক আচরণ ও নির্বিচারে গ্রেপ্তারের আতঙ্কজনক পরিবেশেও আপসহীন নেত্রী কেমন আছেন সেটুকু দেখার জন্য উদগ্রীব ছিল দেশের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা। রিজভী বলেন, অসুস্থতা সত্ত্বেও গণমাধ্যমের কল্যাণে জাতি দেখলো দৃঢ়তর এক উন্নত মম শির। মুহূর্তে তার অন্তর্বার্তা পৌঁছে গেছে কোটি কোটি জনগণের হৃদয়ে। সে বার্তা হচ্ছে- ‘আপনারা প্রস্তুত হোন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের তীব্র আন্দোলনে। দুর্নীতিপরায়ণ কলুষ থেকে দেশমাতৃকাকে মুক্ত করুন। হিংসার কারণে কারাদণ্ড দিয়ে শাসকগোষ্ঠী ভেবেছিল আমি অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে টলে পড়বো বা রোগে শোকে কাতর হয়ে যাবো। কিন্তু সরকারের সে আশা কখনই সফল হবে না।’ রিজভী বলেন, পিজি হাসপাতালে গাড়ি থেকে নামার পর জনতা দেখলো সাহসী দৃঢ়চেতা আর আস্থায় অবিচল দেশনেত্রীকে। মানুষ উপলব্ধি করলো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে আপসহীন নেত্রীর অকুতোভয় দুর্জয় সাহস। রিজভী বলেন, কারাগারের উদ্দেশ্যে গাড়িতে তোলার সময় কেবিন ব্লকের বারান্দাগুলোতে রোগী, নার্স ও চিকিৎসকসহ উৎসুক হাজারো জনতা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সংগ্রামী এই নেত্রীকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। কারাগারের স্যাঁতসেঁতে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরও এতটুকু দমে যাননি খালেদা জিয়া। শনিবারের হাস্যোজ্জ্বল অভিব্যক্তি সে বার্তাই জানান দিলো। রিজভী আহমেদ বলেন, নারায়ণগঞ্জ কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের প্রতি অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে। একটি ছোট অন্ধকার কক্ষে তাকে রাখা হয়েছে। বন্দি মানুষ হিসেবে যতটুকু অধিকার পাওয়া দরকার সেটিও দেয়া হচ্ছে না। তার জামিন প্রক্রিয়া প্রলম্বিত করছে সরকার। আমরা শিমুল বিশ্বাসের প্রতি সরকারের এহেন আচরণের নিন্দা জানাচ্ছি। রিজভী বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখান থেকে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীরা হলেন- ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইফতেখারুজ্জামান শিমুল ও নাসির উদ্দিন শাওন, ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম তুহিন ও যুগ্ম সম্পাদক আতিকুর রহমান রাসেল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতা শাহিন আলম, ঢাকা মহানগর পশ্চিম ছাত্রদল সহ-সম্পাদক হাবিবুর রহমান হিমেল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতা আবির, মহানগর যুবদল নেতা রাকিব হোসেন, শ্যামপুর থানা যুবদল সভাপতি আলিম আল বারি প্রমুখ। অন্যদিকে গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে পুলিশ ও সরকারদলীয় কর্মীরা হামলা করে ভাঙচুরসহ পরিবারের ৫ সদস্যকে আহত করে। ওদিকে জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আজিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। আমি দলের পক্ষ থেকে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার, আতাউর রহমান ঢালী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, আবদুল খালেক, সাইফুল ইসলাম পটু ও কাজী রফিক সংবাদ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.