কোটা সংস্কার আন্দোলন কতটা যৌক্তিক? by এস এম আববাস
কোটা দিয়ে কামলা নয়, মেধা দিয়ে আমলা চাই |
সরকারি
চাকরিতে কোটা বাতিল চায় না কেউ, তবে বিদ্যমান পদ্ধতির সংস্কার চায় সবাই।
সরকার বিষয়টি গুরুত্ব না দেওয়ায় এবং কোটা সংস্কারে কোনও ধরনের উদ্যোগ না
নেওয়ায় নতুন করে সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন জোরদার হয়েছে। আর কোটা
সংস্কারের উদ্যোগ না নিলে বা সংস্কার না করা হলে ছাত্রদের আন্দোলন থামানো
যাবে না বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তান/নাতি-নাতনি কোটা ৩০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, নারী কোটা ১০ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটা পাঁচ শতাংশ। এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে। তবে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, বিভিন্ন করপোরেশন ও দফতরে সরাসরি নিয়োগে জেলার জনসংখ্যার ভিত্তিতে জেলা কোটা পুনঃনির্ধারণ করা হয়।
এই কোটা সংস্কার করে যৌক্তিকভাবে বণ্টন করা উচিত বলে মনে করেন আন্দোলনকারী ও সাধারণ ছাত্ররা। এ কারণে তারা বিগত সময়ে ১০ শতাংশ কোটা বহাল রেখে বিদ্যমান পদ্ধতি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। তবে চলমান আন্দোলনে যুক্ত আন্দোলনকারী ও সাধারণ ছাত্ররা এ দাবি থেকেও আরও খানিকটা সরে এসেছেন। তারা বলছেন, সরকার যৌক্তিকভাবে কোটা পদ্ধতিতে সংস্কার আনুক আমরা সেই দাবিই জানিয়ে আসছি।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ আকবর আলী খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ছাত্রদের কোটা সংস্কারের দাবি যৌক্তিক, সরকারের এটি বিবেচনা করা উচিত। কোনও দেশেই স্থায়ীভাবে কোটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাকা হয় না। কয়েক বছর পর পর রিভিউ করে দেখতে হয় এটা কার্যকর আছে কিনা। আর পঞ্চাশ শতাংশের বেশি কোটা অসাংবিধানিক। পঞ্চাশ শতাংশের নিচে থাকতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা পুরস্কার দেওয়ার জন্য দেওয়া যাবে না। যারা দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা তাদেরকেই দেওয়া যাবে। আমি যে রিপোর্ট করেছি এই ধরনের অনেক নীতিই পিএসসিকে দিয়েছি। পিএসসির কাছ থেকে বিবেচনা করে সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছিল। সরকার এইটা বিবেচনা করে দেখবে।’
কোটা সংস্কারের আন্দোলন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোটা সংস্কার নিয়ে যে আন্দোলন হচ্ছে, তা যৌক্তিকভাবে চলুক। কোনও আন্দোলনই যেন সহিংস রূপ না নেয়, যারা আন্দোলন করছেন এবং যারা আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করছেন তাদের সবাইকেই বিষয়টি নজর রাখতে হবে। এর আগেও আন্দোলন হয়েছে। কেন বার বার আন্দোলন হচ্ছে তা দেখা দরকার। সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এর আগে আরেফিন সিদ্দিক বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, কার জন্য কত শতাংশ রাখা হবে তা পরিসংখ্যানসহ হিসেব করে বণ্টন করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। তা না হলে বারবার আন্দোলন হতে পারে।’
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লিটন নন্দী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জেলা কোটা ও মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংস্কার করা জরুরি। এছাড়া সব মিলিয়ে ৩০ শতাংশ কোটা রেখে বিদ্যমান ব্যবস্থার সংস্কার করা প্রয়োজন।’ যৌক্তিকভাবে সংস্কার না করায় আন্দোলন হচ্ছে বলে মনে করেন লিটন নন্দী। তা না করায় এবার আন্দোলন জোরদার হচ্ছে। আন্দোলন এবং নিয়ন্ত্রণ দুটোই যেন সহিংস না হয়, সেদিকে আন্দোলনকারী ও সরকারের গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন লিটন নন্দী।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা এবং সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রি চক্রবর্তী রিন্টু বলেন, প্রতিবছর শ্রমবাজারে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে ১২ থেকে ১৩ লাখ যুবক। এর মধ্য প্রায় ৪৭ শতাংশ উচ্চশিক্ষিত বেকার। নতুন নতুন কর্মসংস্থান নেই, সরকারি চাকরি খুবই অপ্রতুল। প্রায় চার লাখের মতো পরীক্ষার্থী বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিলেও আসন আছে মাত্র দুই হাজার ২০০ জনের জন্য। তার মধ্যে কোটা খড়গের কারণে মেধার ভিত্তিতে মাত্র ৪৫ শতাংশ সাধারণ শিক্ষার্থী সুযোগ পাচ্ছে। আর বাকি ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী কোটার ভিত্তিতে। বৈষম্য কমানোর দাবিতে কোটা প্রথা চালু করা হলেও কোটায় এখন বৈষম্য তৈরি করছে। তাই কোটা প্রথা সংস্কার এখন সময়ের দাবি।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা বলেন, স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারকে সহযোগিতার জন্য নানা আয়োজন করতে হয়েছে। কিন্তু তাদের সন্তানসহ পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা কোনোভাবে যৌক্তিক হতে পারে না। দ্বিতীয়ত, জেলা কোটার ক্ষেত্রে বৈষম্য কাজ করে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে এ পদ্ধতি চালু থাকায় ছোট জেলাগুলো কোনও কোটা না পাওয়াসহ এ পদ্ধতি ব্যাপক দুর্নীতিতে পর্যবসিত হয়েছে। এজন্য কোটা সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহিদ নিলয় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘কোটা পদ্ধতি সংস্কার না করায় মেধাবীরা নিষ্পেষিত হচ্ছে। কোটার অপব্যবহার হচ্ছে, সরকার বন্ধ করতে পারেনি।’
তিনি জানান, বিগত সময়ে বিদ্যমান কোটার কারণে ২৮তম বিসিএসে ৮১৩টি, ২৯তম বিসিএসে ৭৯২টি, ৩০তম বিসিএসে ৭৮৪টি, ৩১তম বিসিএসে ৭৭৩টি আর ৩৫তম বিসিএসে ৩৩৮টি পদ খালিই থেকেছে।
শাহিদ নিলয় মেধাবী শিক্ষার্থী থাকতেও পদ খালি রাখার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে পদ্ধতি সংস্কার না করায়। কারণ বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির মধ্যে অসামঞ্জস্য রয়েছে। ফাঁস-ফোকর রয়েছে। আমি মনে করি, কোটা সংস্কার না হওয়ায় জনপ্রশাসনে যোগ্য ও মেধাবী অনেক প্রার্থী সুযোগ পাচ্ছেন না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনামিকা সরকার ও প্রিয়াংকা দে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিদ্যমান কোটা সংস্কারে সরকারের উদ্যোগ প্রয়োজন। দ্রুত উদ্যোগ না নেওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছে। সংস্কার না করলে আন্দোলন থেকে থাকবে হয়তো, কিন্তু বন্ধ হবে না। তাই কোটা পদ্ধতির দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।’
মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড এর সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চালু করা এই কোটা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯৯৬ সাল থেকে আবার মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের জন্য কোটা চালু করা হয়। বঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়াদের জন্য কোটা থাকতে হবে। তবে প্রয়োজন হলে তা অবশ্যই সংস্কার করতে হবে। আমরা সংস্কারের বিপক্ষে নই।’
উল্লেখ্য, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১৯৭২ সালে কোটা চালু করেছিলেন উপহার হিসেবে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে নির্মমভাবে হত্যার পর এই কোটা বাতিল করা হয়। পরবর্তী ২৪ বছর মুক্তিযোদ্ধাদের এই কোটা দেওয়া হয়নি। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য আবার কোটা চালু করেন। এছাড়া সমাজের পিছিয়ে পড়াদের জন্য কোটা পদ্ধতি চালু আছে। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলাওয়ারি কোটা নির্ধারণ করা হয়।
সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তান/নাতি-নাতনি কোটা ৩০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, নারী কোটা ১০ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটা পাঁচ শতাংশ। এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে। তবে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, বিভিন্ন করপোরেশন ও দফতরে সরাসরি নিয়োগে জেলার জনসংখ্যার ভিত্তিতে জেলা কোটা পুনঃনির্ধারণ করা হয়।
এই কোটা সংস্কার করে যৌক্তিকভাবে বণ্টন করা উচিত বলে মনে করেন আন্দোলনকারী ও সাধারণ ছাত্ররা। এ কারণে তারা বিগত সময়ে ১০ শতাংশ কোটা বহাল রেখে বিদ্যমান পদ্ধতি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। তবে চলমান আন্দোলনে যুক্ত আন্দোলনকারী ও সাধারণ ছাত্ররা এ দাবি থেকেও আরও খানিকটা সরে এসেছেন। তারা বলছেন, সরকার যৌক্তিকভাবে কোটা পদ্ধতিতে সংস্কার আনুক আমরা সেই দাবিই জানিয়ে আসছি।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ আকবর আলী খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ছাত্রদের কোটা সংস্কারের দাবি যৌক্তিক, সরকারের এটি বিবেচনা করা উচিত। কোনও দেশেই স্থায়ীভাবে কোটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাকা হয় না। কয়েক বছর পর পর রিভিউ করে দেখতে হয় এটা কার্যকর আছে কিনা। আর পঞ্চাশ শতাংশের বেশি কোটা অসাংবিধানিক। পঞ্চাশ শতাংশের নিচে থাকতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা পুরস্কার দেওয়ার জন্য দেওয়া যাবে না। যারা দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা তাদেরকেই দেওয়া যাবে। আমি যে রিপোর্ট করেছি এই ধরনের অনেক নীতিই পিএসসিকে দিয়েছি। পিএসসির কাছ থেকে বিবেচনা করে সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছিল। সরকার এইটা বিবেচনা করে দেখবে।’
কোটা সংস্কারের আন্দোলন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোটা সংস্কার নিয়ে যে আন্দোলন হচ্ছে, তা যৌক্তিকভাবে চলুক। কোনও আন্দোলনই যেন সহিংস রূপ না নেয়, যারা আন্দোলন করছেন এবং যারা আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করছেন তাদের সবাইকেই বিষয়টি নজর রাখতে হবে। এর আগেও আন্দোলন হয়েছে। কেন বার বার আন্দোলন হচ্ছে তা দেখা দরকার। সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এর আগে আরেফিন সিদ্দিক বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, কার জন্য কত শতাংশ রাখা হবে তা পরিসংখ্যানসহ হিসেব করে বণ্টন করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। তা না হলে বারবার আন্দোলন হতে পারে।’
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লিটন নন্দী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জেলা কোটা ও মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংস্কার করা জরুরি। এছাড়া সব মিলিয়ে ৩০ শতাংশ কোটা রেখে বিদ্যমান ব্যবস্থার সংস্কার করা প্রয়োজন।’ যৌক্তিকভাবে সংস্কার না করায় আন্দোলন হচ্ছে বলে মনে করেন লিটন নন্দী। তা না করায় এবার আন্দোলন জোরদার হচ্ছে। আন্দোলন এবং নিয়ন্ত্রণ দুটোই যেন সহিংস না হয়, সেদিকে আন্দোলনকারী ও সরকারের গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন লিটন নন্দী।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা এবং সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রি চক্রবর্তী রিন্টু বলেন, প্রতিবছর শ্রমবাজারে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে ১২ থেকে ১৩ লাখ যুবক। এর মধ্য প্রায় ৪৭ শতাংশ উচ্চশিক্ষিত বেকার। নতুন নতুন কর্মসংস্থান নেই, সরকারি চাকরি খুবই অপ্রতুল। প্রায় চার লাখের মতো পরীক্ষার্থী বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিলেও আসন আছে মাত্র দুই হাজার ২০০ জনের জন্য। তার মধ্যে কোটা খড়গের কারণে মেধার ভিত্তিতে মাত্র ৪৫ শতাংশ সাধারণ শিক্ষার্থী সুযোগ পাচ্ছে। আর বাকি ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী কোটার ভিত্তিতে। বৈষম্য কমানোর দাবিতে কোটা প্রথা চালু করা হলেও কোটায় এখন বৈষম্য তৈরি করছে। তাই কোটা প্রথা সংস্কার এখন সময়ের দাবি।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা বলেন, স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারকে সহযোগিতার জন্য নানা আয়োজন করতে হয়েছে। কিন্তু তাদের সন্তানসহ পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা কোনোভাবে যৌক্তিক হতে পারে না। দ্বিতীয়ত, জেলা কোটার ক্ষেত্রে বৈষম্য কাজ করে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে এ পদ্ধতি চালু থাকায় ছোট জেলাগুলো কোনও কোটা না পাওয়াসহ এ পদ্ধতি ব্যাপক দুর্নীতিতে পর্যবসিত হয়েছে। এজন্য কোটা সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহিদ নিলয় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘কোটা পদ্ধতি সংস্কার না করায় মেধাবীরা নিষ্পেষিত হচ্ছে। কোটার অপব্যবহার হচ্ছে, সরকার বন্ধ করতে পারেনি।’
তিনি জানান, বিগত সময়ে বিদ্যমান কোটার কারণে ২৮তম বিসিএসে ৮১৩টি, ২৯তম বিসিএসে ৭৯২টি, ৩০তম বিসিএসে ৭৮৪টি, ৩১তম বিসিএসে ৭৭৩টি আর ৩৫তম বিসিএসে ৩৩৮টি পদ খালিই থেকেছে।
শাহিদ নিলয় মেধাবী শিক্ষার্থী থাকতেও পদ খালি রাখার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে পদ্ধতি সংস্কার না করায়। কারণ বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির মধ্যে অসামঞ্জস্য রয়েছে। ফাঁস-ফোকর রয়েছে। আমি মনে করি, কোটা সংস্কার না হওয়ায় জনপ্রশাসনে যোগ্য ও মেধাবী অনেক প্রার্থী সুযোগ পাচ্ছেন না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনামিকা সরকার ও প্রিয়াংকা দে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিদ্যমান কোটা সংস্কারে সরকারের উদ্যোগ প্রয়োজন। দ্রুত উদ্যোগ না নেওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছে। সংস্কার না করলে আন্দোলন থেকে থাকবে হয়তো, কিন্তু বন্ধ হবে না। তাই কোটা পদ্ধতির দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।’
মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড এর সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চালু করা এই কোটা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯৯৬ সাল থেকে আবার মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের জন্য কোটা চালু করা হয়। বঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়াদের জন্য কোটা থাকতে হবে। তবে প্রয়োজন হলে তা অবশ্যই সংস্কার করতে হবে। আমরা সংস্কারের বিপক্ষে নই।’
উল্লেখ্য, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১৯৭২ সালে কোটা চালু করেছিলেন উপহার হিসেবে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে নির্মমভাবে হত্যার পর এই কোটা বাতিল করা হয়। পরবর্তী ২৪ বছর মুক্তিযোদ্ধাদের এই কোটা দেওয়া হয়নি। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য আবার কোটা চালু করেন। এছাড়া সমাজের পিছিয়ে পড়াদের জন্য কোটা পদ্ধতি চালু আছে। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলাওয়ারি কোটা নির্ধারণ করা হয়।
No comments