চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে ভূমিকা রেখেছিলেন যে গোপন দূত
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgPm2inUsPdQI5rtXfcKMVfV8iFzJciU8-h998f6aKTDftZO2hLmAO2qKNl9V1m_Ld8UoXo8nGHWDfWV275EzU0yFtKZM2hg1sY4iJr6aBIhIDJvsZ2b2X1EFIXcDkf13M705SAdJ0LE7fF/s400/%25E0%25A6%259A%25E0%25A7%2580%25E0%25A6%25A8-%25E0%25A6%25AF%25E0%25A7%2581%25E0%25A6%2595%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25A4%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25B7%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%259F%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B0%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%25B0+%25E0%25A6%25B8%25E0%25A6%25AE%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25AA%25E0%25A6%25B0%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%2595%25E0%25A7%2587+%25E0%25A6%25AD%25E0%25A7%2582%25E0%25A6%25AE%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%2595%25E0%25A6%25BE+%25E0%25A6%25B0%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%2596%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%259B%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25B2%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%25A8+%25E0%25A6%25AF%25E0%25A7%2587+%25E0%25A6%2597%25E0%25A7%258B%25E0%25A6%25AA%25E0%25A6%25A8+%25E0%25A6%25A6%25E0%25A7%2582%25E0%25A6%25A4.jpg)
গত
সপ্তাহে যখন আনা শেনওয়াল্ট ৯৪ বছর বয়সে মারা যান, তখন বিশ্বের খুব কম
মানুষই জানতে পেরেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র, চীন বা তাইওয়ানের মতো দেশের মাঝে
মধ্যস্থতা করার মতো অত্যন্ত প্রভাবশালী একজন ব্যক্তিকে বিশ্ব হারিয়েছে। তার
চীনা নাম চেন জিয়ানজেমি, যার ওয়াশিংটন ডিসির কূটনীতিক মহলে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ
ছিল। সেই সঙ্গে যোগাযোগ ছিল চীন আর তাইওয়ানের সরকারের সঙ্গেও।
তিনি ছিলেন একজন অনানুষ্ঠানিক কূটনীতিক কর্মকর্তা, যিনি বিংশ শতকের রাজনীতির নানা ক্ষেত্রে বিচরণ করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি আর রিচার্ড নিক্সনের সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছিল। চীনের নেতা ডেং জিয়াওপিং আর তাইওয়ানের চিয়াং কাইশেকের সঙ্গেও তার বৈঠক হয়েছে।
যুদ্ধের সময়ের ভালোবাসা
তাকে কমিউনিজম বিরোধী বলে আমেরিকানরা জানতো। কিন্তু চীনে তাকে বিবেচনা করা হতো নামী একজন যোদ্ধার বিধবা স্ত্রী হিসাবে। আর তাইওয়ানের কাছে তিনি গুরুত্বপূর্ণ একজন লবিয়িস্ট, যে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন আদায়ে ভূমিকা রেখেছেন। ১৯২৩ সালে বেইজিংয়ে একটি শিক্ষিত আর ধনী পরিবারে তার জন্ম। হংকংয়ে পড়াশোনা শেষে একটি চীনা বার্তা সংস্থায় প্রতিবেদক হিসাবে কাজ শুরু করেন।
১৯৪৪ সালে তিনি এমন একটি দায়িত্ব পান, যা তার জীবনকে বদলে দেয়। কুনমিংয়ে মার্কিন মেজর জেনারেল ক্লারেল শেনওয়াল্টের সাক্ষাৎকার নেয়ার দায়িত্ব পান। শেনওয়াল্ট তখন মার্কিন বিমানচালকদের একটি স্বেচ্ছাসেবী গ্রুপ, ফ্লায়িং টাইগারের দায়িত্বে ছিলেন, যারা জাপানী হামলা থেকে চীনকে রক্ষায় কাজ করছিল। দু’জনের মধ্যে তিন দশক বয়সের ব্যবধান থাকলেও, দুজনে প্রেমে পড়ে যান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর স্ত্রীকে তালাক দিয়ে চেন শিয়ানজেমিকে বিয়ে করেন শেনওয়াল্ট। তার নতুন নাম হয় আনা শেনওয়াল্ট।
তখন নিজের দুই কন্যাকে নিয়ে ওয়াশিংটনে পাড়ি জমান ৩৫ বছরের আনা। সেখানেও তিনি সাংবাদিক, অনুবাদক আর পরে স্বামীর বিমান পরিবহন ব্যবসা দেখাশোনা করেন। তার পেন্ট হাউজ অ্যাপার্টমেন্ট ছিল ওয়াটার গেট কমপ্লেক্সে, যে ভবনেই ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারিরও জন্ম হয়। সেখানে তার দেয়া পার্টিতে এসেছিলেন রিচার্ড নিক্সনও, যিনি তাকে 'ড্রাগন লেডি' বলে ডাকতেন। তবে তিনি পুরোপুরি বিতর্কের বাইরেও ছিলেন না। তার মৃত স্বামীর একটি কো¤পানি পরে সিআইএ কিনে নেয়। বলা হয়, সেটি কমিউনিজম বিরোধী কর্মকা-ে ব্যবহার করা হয়েছে। এফবিআইয়ের একটি গোপন রেকর্ডিয়ে জানা যায়, তিনি তৎকালীন দক্ষিণ ভিয়েতনামের সরকারকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যেন তারা প্যারিসে শান্তি আলোচনা বর্জন করে, যা রিচার্ড নিক্সনের নির্বাচনী প্রচারণায় সহায়তা করেছিল। তার বিরুদ্ধে এ জন্য অভিযোগ আনা হলেও, পরে নিক্সন ক্ষমতায় আসার পর সেটি আর এগোয় নি।
বন্ধুত্বের দূত
চীনে আনা শেনওয়াল্টকে দেখা হয় খানিকটা আলাদাভাবে। চীনে এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ফ্লাইং টাইগার্স আর মেজর জেনারেল ক্লারেল শেনওয়াল্টকে সম্মানের চোখে দেখা হয়। আর তাই আনাকেও দেখা হয় তাদের সম্মানের ধারক হিসাবেই। এমনকি ২০১৫ সালে তাকে একটি সম্মানসূচক পদকও দিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পর যুক্তরাষ্ট্র-চীন স¤পর্ক তৈরিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। চীনা বার্তা সংস্থা সিনহুয়া তার বিষয়ে লিখেছে ‘তিনি এমন একজন চীনা-আমেরিকান যিনি চীন আর আমেরিকার বন্ধুত্বের দূত হিসাবে কাজ করেছেন।’ তাকে দেখা হতো প্রথম চীনা নাগরিক হিসাবে যিনি হোয়াইট হাউজে কোন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কিন্তু বরাবরই কম্যুনিজমের বিরোধী ছিলেন আনা। চীনের গৃহযুদ্ধের পর যখন কুয়োমিনটাং নেতারা তাইওয়ানে সরকার গঠন করে, তাদের নেতা চিয়াং কাইশেকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ স¤পর্ক ছিল আনার। দীর্ঘদিন তাইওয়ানের হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেন দরবার করেন আনা শেনওয়াল্ট।
তবে ১৯৭৯ সালে চীনের কম্যুনিস্ট সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতির পর তারও অবস্থান পাল্টায়। ১৯৮১ সালে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগ্যানের অনানুষ্ঠানিক দূত হিসাবে চীনে যান এবং দুই দেশের স¤পর্ক তৈরিতে ভূমিকা রাখেন। একই সময় তিনি তাইওয়ানের সঙ্গেও স¤পর্ক রাখেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে তাইওয়ানের স্বার্থে কাজ করে যান। পরবর্তী জীবনে এই তিন ভিন্ন ঘরানার দেশের মধ্যে স¤পর্ক বৃদ্ধিতে অব্যাহতভাবে কাজ করে যান। বলা হয়, কোন আনুষ্ঠানিক পদে না থেকেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত সফল একজন কূটনীতিক।
১৯৯০ সালে তার মধ্যস্থতাতেই তাইওয়ানের প্রথম একটি ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দল মেইন ল্যান্ড চীন সফর করে। ২০০২ সালে চীনের সাংবাদিকদের দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে নিজের এই জীবন নিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাসনে থাকার সময়, সাংবাদিক হিসাবে কাজ করার সময়, যুক্তরাষ্ট্রে একা থাকার সময় আমার অনেক অ¤¬মধুর অভিজ্ঞতা হয়েছে আর সেগুলোই আমার কাজে লেগেছে। আটজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের মেয়াদে আমি অনেক বিনা বেতনের কাজ করেছি আর সেসব ছিল খুবই বৈচিত্রময়। তাই তার বদলে আমি কিছু আশাও করিনি।’
তিনি ছিলেন একজন অনানুষ্ঠানিক কূটনীতিক কর্মকর্তা, যিনি বিংশ শতকের রাজনীতির নানা ক্ষেত্রে বিচরণ করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি আর রিচার্ড নিক্সনের সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছিল। চীনের নেতা ডেং জিয়াওপিং আর তাইওয়ানের চিয়াং কাইশেকের সঙ্গেও তার বৈঠক হয়েছে।
যুদ্ধের সময়ের ভালোবাসা
তাকে কমিউনিজম বিরোধী বলে আমেরিকানরা জানতো। কিন্তু চীনে তাকে বিবেচনা করা হতো নামী একজন যোদ্ধার বিধবা স্ত্রী হিসাবে। আর তাইওয়ানের কাছে তিনি গুরুত্বপূর্ণ একজন লবিয়িস্ট, যে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন আদায়ে ভূমিকা রেখেছেন। ১৯২৩ সালে বেইজিংয়ে একটি শিক্ষিত আর ধনী পরিবারে তার জন্ম। হংকংয়ে পড়াশোনা শেষে একটি চীনা বার্তা সংস্থায় প্রতিবেদক হিসাবে কাজ শুরু করেন।
১৯৪৪ সালে তিনি এমন একটি দায়িত্ব পান, যা তার জীবনকে বদলে দেয়। কুনমিংয়ে মার্কিন মেজর জেনারেল ক্লারেল শেনওয়াল্টের সাক্ষাৎকার নেয়ার দায়িত্ব পান। শেনওয়াল্ট তখন মার্কিন বিমানচালকদের একটি স্বেচ্ছাসেবী গ্রুপ, ফ্লায়িং টাইগারের দায়িত্বে ছিলেন, যারা জাপানী হামলা থেকে চীনকে রক্ষায় কাজ করছিল। দু’জনের মধ্যে তিন দশক বয়সের ব্যবধান থাকলেও, দুজনে প্রেমে পড়ে যান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর স্ত্রীকে তালাক দিয়ে চেন শিয়ানজেমিকে বিয়ে করেন শেনওয়াল্ট। তার নতুন নাম হয় আনা শেনওয়াল্ট।
তখন নিজের দুই কন্যাকে নিয়ে ওয়াশিংটনে পাড়ি জমান ৩৫ বছরের আনা। সেখানেও তিনি সাংবাদিক, অনুবাদক আর পরে স্বামীর বিমান পরিবহন ব্যবসা দেখাশোনা করেন। তার পেন্ট হাউজ অ্যাপার্টমেন্ট ছিল ওয়াটার গেট কমপ্লেক্সে, যে ভবনেই ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারিরও জন্ম হয়। সেখানে তার দেয়া পার্টিতে এসেছিলেন রিচার্ড নিক্সনও, যিনি তাকে 'ড্রাগন লেডি' বলে ডাকতেন। তবে তিনি পুরোপুরি বিতর্কের বাইরেও ছিলেন না। তার মৃত স্বামীর একটি কো¤পানি পরে সিআইএ কিনে নেয়। বলা হয়, সেটি কমিউনিজম বিরোধী কর্মকা-ে ব্যবহার করা হয়েছে। এফবিআইয়ের একটি গোপন রেকর্ডিয়ে জানা যায়, তিনি তৎকালীন দক্ষিণ ভিয়েতনামের সরকারকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যেন তারা প্যারিসে শান্তি আলোচনা বর্জন করে, যা রিচার্ড নিক্সনের নির্বাচনী প্রচারণায় সহায়তা করেছিল। তার বিরুদ্ধে এ জন্য অভিযোগ আনা হলেও, পরে নিক্সন ক্ষমতায় আসার পর সেটি আর এগোয় নি।
বন্ধুত্বের দূত
চীনে আনা শেনওয়াল্টকে দেখা হয় খানিকটা আলাদাভাবে। চীনে এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ফ্লাইং টাইগার্স আর মেজর জেনারেল ক্লারেল শেনওয়াল্টকে সম্মানের চোখে দেখা হয়। আর তাই আনাকেও দেখা হয় তাদের সম্মানের ধারক হিসাবেই। এমনকি ২০১৫ সালে তাকে একটি সম্মানসূচক পদকও দিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পর যুক্তরাষ্ট্র-চীন স¤পর্ক তৈরিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। চীনা বার্তা সংস্থা সিনহুয়া তার বিষয়ে লিখেছে ‘তিনি এমন একজন চীনা-আমেরিকান যিনি চীন আর আমেরিকার বন্ধুত্বের দূত হিসাবে কাজ করেছেন।’ তাকে দেখা হতো প্রথম চীনা নাগরিক হিসাবে যিনি হোয়াইট হাউজে কোন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কিন্তু বরাবরই কম্যুনিজমের বিরোধী ছিলেন আনা। চীনের গৃহযুদ্ধের পর যখন কুয়োমিনটাং নেতারা তাইওয়ানে সরকার গঠন করে, তাদের নেতা চিয়াং কাইশেকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ স¤পর্ক ছিল আনার। দীর্ঘদিন তাইওয়ানের হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেন দরবার করেন আনা শেনওয়াল্ট।
তবে ১৯৭৯ সালে চীনের কম্যুনিস্ট সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতির পর তারও অবস্থান পাল্টায়। ১৯৮১ সালে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগ্যানের অনানুষ্ঠানিক দূত হিসাবে চীনে যান এবং দুই দেশের স¤পর্ক তৈরিতে ভূমিকা রাখেন। একই সময় তিনি তাইওয়ানের সঙ্গেও স¤পর্ক রাখেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে তাইওয়ানের স্বার্থে কাজ করে যান। পরবর্তী জীবনে এই তিন ভিন্ন ঘরানার দেশের মধ্যে স¤পর্ক বৃদ্ধিতে অব্যাহতভাবে কাজ করে যান। বলা হয়, কোন আনুষ্ঠানিক পদে না থেকেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত সফল একজন কূটনীতিক।
১৯৯০ সালে তার মধ্যস্থতাতেই তাইওয়ানের প্রথম একটি ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দল মেইন ল্যান্ড চীন সফর করে। ২০০২ সালে চীনের সাংবাদিকদের দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে নিজের এই জীবন নিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাসনে থাকার সময়, সাংবাদিক হিসাবে কাজ করার সময়, যুক্তরাষ্ট্রে একা থাকার সময় আমার অনেক অ¤¬মধুর অভিজ্ঞতা হয়েছে আর সেগুলোই আমার কাজে লেগেছে। আটজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের মেয়াদে আমি অনেক বিনা বেতনের কাজ করেছি আর সেসব ছিল খুবই বৈচিত্রময়। তাই তার বদলে আমি কিছু আশাও করিনি।’
No comments