বাংলাদেশ ও দরিদ্র দেশগুলোতে উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করছে যুক্তরাষ্ট্র
চীন
ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক লড়াই ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কয়েকদিন আগে
চীনা বাণিজ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক কড়াকড়ির জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের
বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেয় চীন। এরপরও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট
ডনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে চীনা পণ্যের ওপর আরো কড়াকড়ি শুল্ক আরোপ করার হুমকি
দিচ্ছেন। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তারা মনে করছেন, এতে তাদের বাণিজ্য নিম্নতম পর্যায়ে নেমে যাবে। ভোক্তাকে
অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হবে। ন্যাশনাল রিটেইলার ফেডারেশনের প্রধান নির্বাহী
কর্মকর্তা ও প্রেসিডেন্ট ম্যাথিউ শাই বলেছেন, ঢিলটি দিলে পাটকেলটি খেতে হয়
বা পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বিপর্যয় নিয়ে
আসতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বসবাসকারী মার্কিনিদের নিত্যদিনের চাহিদা
মেটানো কঠিন হয়ে পড়বে। অনলাইন কুয়ার্টজ-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা
হয়েছে। এতে বলা হয়, এর ফলে ধারণা করে নেয়া যায় যে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের
মধ্যে এই বাণিজ্যিক অচলাবস্থায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন খুচরা বিক্রেতারা। তবে
এটা বিস্ময়ের বিষয় নয় যে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধেই সবচেয়ে বেশি শুল্ক
বসাতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে এশিয়ার দরিদ্র প্রতিবেশী দেশগুলোতেও তা আরোপিত
হবে। যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ পোশাক ও জুতা রপ্তানি করে বাংলাদেশ ও
ভিয়েতনামের মতো দেশ। এগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে বৈষম্যমূলকভাবে উচ্চ হারে কর
বসানো আছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশন থেকে পাওয়া
ডাটা নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে পিউ রিসার্চ সেন্টার। তাতে দেখা গেছে, বাংলাদেশ,
কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম সহ এমন আরো দেশ উচ্চ হারে
আমদানি শুল্কের মুখে। কারণ, তারা পোশাক ও জুতাশিল্পে পর্যাপ্ত পরিমাণ
বাণিজ্য করে। এসব বাণিজ্যের বেশির ভাগই যায় যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে বাংলাদেশ
এখন তার তৈরি পোশাকের শতকরা ৯৭ ভাগেরও বেশি রপ্তানি করে বাংলাদেশ। সাধারণত
যুক্তরাষ্ট্র যেসব জিনিস বিপুল পরিমাণে আমদানি করে সেক্ষেত্রে যথেষ্ট কম
শুল্ক আরোপ করা থাকে। কিন্তু পিউ রিসার্চ গবেষণায় এর আগেই দেখিয়েছে,
এক্ষেত্রে প্রধান ব্যতিক্রম হলো পোশাক খাত। পরিস্থিতি এমন যে, ব্যক্তিগত
ব্যবহারের গাড়ির পরেই সবচেয়ে বেশি রাজস্ব শুল্ক আসে সোয়েটার আমদানি থেকে।
পিউ রিচার্স বলেছে, বাংলাদেশ থেকে কোনো পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা হলে
প্রায় সব পণ্যেই শুল্ক দিতে হয়। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মোট যে পরিমাণ
অর্থের শিপমেন্ট যায়, সেই শুল্ক মোট অর্থের শতকরা ১৫.২ ভাগের সমান। এটা
হলো ২৩২টি দেশ, অঞ্চল ও যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিশনের
আওতাভুক্ত ব্যবস্থায় এই গড় হার হলো সর্বোচ্চ। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মোট
৫৭০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে শতকরা ৯৫ ভাগ হলো পোশাক,
জুতা, হেডগিয়ার ও সংশ্লিষ্ট পণ্য। উচ্চ হারে শুল্কের কারণ হলো ক্লাসিক।
অনেকেই বলতে পারেন সেকেলে- সংরক্ষণবাদিতা। ২০১৩ সালে ওয়াশিংটন পোস্ট একটি
রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বস্ত্র শিল্পে শেয়ারের
ক্ষীণ অবক্ষয় হয়েছে। এক সময় তা ছিল ছোট পরিসরের প্রস্তুতকারক। কিন্তু তা
সত্ত্বেও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বে তাদের রয়েছে শক্তিশালী অবস্থান, যারা
তাদের বাণিজ্যিক চুক্তির জন্য লড়াই করে। ওয়াশিংটন পোস্টকে সেন্টার ফর
গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট-এর কিম এলিয়ট বলেন, সমন্বিত পরিকল্পনায় এটি হলো একটি
সমস্যার ক্লাসিক কাহিনী। ওই সব খাতের প্রতিনিধিরা খুব কড়া দরকষাকষি করছেন।
শুল্কহার কম হলে আপনি অথবা আমি কিছুটা সুবিধা পেতে পারি। তবে এর ওপরে আমরা
ভোট দিতে যাচ্ছি না। এটা স্বার্থের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ নয়।
এসব নীতি কোনো কাজে এসেছে বলে মনে হয় না। যদিও এসে থাকে, তা হলো যুক্তরাষ্ট্রে জুতা বা পোশাক তৈরির কাজ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা যখন বিদেশি তৈরি একটি স্নিকারস বা জিন্স কিনতে যান তখন তারা প্রতিবারই বুঝতে পারেন বিষয়টি। বাংলাদেশের মতো দেশের কারখানাগুলো অতীব চাপের মুখে। তাদেরকে মূল্য অনেক কম রাখতে এমন চাপ দেয়া হয়, যাতে খুচরা বিক্রেতারা সস্তায় ক্রেতার হাতে পোশাক তুলে দিতে পারেন। এর ফলে বাংলাদেশের ওইসব শ্রমিকের অবস্থা থেকে যাচ্ছে অনিরাপদ। তাদের প্রতিনিধিত্ব করে এমন বড় বড় ব্রান্ড, খুচরা বিক্রেতা বা গ্রুপ যেমন ফুটওয়্যার রিটেইলারস অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউটরস অব আমেরিকা বিভিন্ন সময়ে এসব শুল্কের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। চীন যুক্তরাষ্ট্রের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ চুরি করেছে এমন অজুহাতে ট্রাম্প প্রশাসন চীনকে টার্গেট করছেন। তিনি তাদের পণ্যের ওপর শুল্ক বসিয়েছেন বা বসাতে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় ওই সংস্থা ট্রাম্পের এসব নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছে। তারা চীনা পণ্য এবং বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ দেখতে চান না।
(কুয়ার্টজ-এ প্রকাশিত মার্ক বাইনের লেখা অবলম্বনে)
এসব নীতি কোনো কাজে এসেছে বলে মনে হয় না। যদিও এসে থাকে, তা হলো যুক্তরাষ্ট্রে জুতা বা পোশাক তৈরির কাজ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা যখন বিদেশি তৈরি একটি স্নিকারস বা জিন্স কিনতে যান তখন তারা প্রতিবারই বুঝতে পারেন বিষয়টি। বাংলাদেশের মতো দেশের কারখানাগুলো অতীব চাপের মুখে। তাদেরকে মূল্য অনেক কম রাখতে এমন চাপ দেয়া হয়, যাতে খুচরা বিক্রেতারা সস্তায় ক্রেতার হাতে পোশাক তুলে দিতে পারেন। এর ফলে বাংলাদেশের ওইসব শ্রমিকের অবস্থা থেকে যাচ্ছে অনিরাপদ। তাদের প্রতিনিধিত্ব করে এমন বড় বড় ব্রান্ড, খুচরা বিক্রেতা বা গ্রুপ যেমন ফুটওয়্যার রিটেইলারস অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউটরস অব আমেরিকা বিভিন্ন সময়ে এসব শুল্কের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। চীন যুক্তরাষ্ট্রের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ চুরি করেছে এমন অজুহাতে ট্রাম্প প্রশাসন চীনকে টার্গেট করছেন। তিনি তাদের পণ্যের ওপর শুল্ক বসিয়েছেন বা বসাতে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় ওই সংস্থা ট্রাম্পের এসব নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছে। তারা চীনা পণ্য এবং বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ দেখতে চান না।
(কুয়ার্টজ-এ প্রকাশিত মার্ক বাইনের লেখা অবলম্বনে)
No comments