আমিনুল হত্যায় একজনের মৃত্যুদণ্ড

পোশাক শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যা মামলায় মোস্তাফিজুর রহমান (২৩) নামে এক যুবককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সে মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার কাদিরপাড়া গ্রামের শমসের কারিগরের ছেলে। গতকাল টাঙ্গাইলের বিশেষ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ওয়াহিদুজ্জামান শিকদার এ দণ্ডাদেশ দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত মোস্তাফিজ পলাতক রয়েছেন। তার অনুপস্থিতিতেই আদালত এই আদেশ দেন।
নিহত আমিনুল ইসলাম বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির (বিসিডব্লিউএস) সংগঠক ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের নেতা ছিলেন। তার বাড়ি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার হিজলহাটি গ্রামে। তার পিতার নাম মফিজ উদ্দিন আকন্দ।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, ২০১২ সালের ৪ঠা এপ্রিল আশুলিয়ার অফিস থেকে বোরকা পরিহিত এক নারী ও মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক ব্যক্তি আমিনুলকে ডেকে নিয়ে যায়। রাতে সে বাড়ি ফিরে না এলে আমিনুলের স্ত্রী ও কন্যা ৬ই এপ্রিল আশুলিা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। এদিকে ৫ই এপ্রিল সকালে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ব্রাহ্মণশাসন মহিলা কলেজের সামনে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের পাশ থেকে ঘাটাইল থানার পুলিশ অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে। পরে ঘাটাইল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহীন মিয়া থানায় মামলা করেন। নিহতের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারিশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়। বিভিন্ন পত্রিকায় লাশ উদ্ধার সংক্রান্ত সংবাদ পড়ে আমিনুলের স্ত্রী হোসনে আরা, মেয়ে ফাহিমা ও ছোট ভাই রফিকুল ইসলাম ঘাটাইল থানায় এসে থানায় রক্ষিত ছবি দেখে লাশ শনাক্ত করেন।
পরে রফিকুল লাশ উত্তোলনের জন্য আদালতে আবেদন করেন। ৯ই এপ্রিল টাঙ্গাইল কবরস্থান থেকে লাশ উত্তোলন করে আমিনুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি গাজীপুর জেলার হিজলহাটি গ্রামে নিয়ে পুনরায় দাফন করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে ঘাটাইল থানায় মামলা করেন।
ঘাটাইল থানার এসআই আবুল বাশার মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেন, পরে টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির ও উপপরিদর্শক দুলাল হোসেন মামলাটি তদন্ত করেন। সর্বশেষ ঢাকা মেট্রোপলিটনের কোতোয়ালি ইউনিটের সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার ফজলুল কবির তদন্তের দায়িত্ব পান। দির্ঘদিন তদন্ত শেষে তিনি মোস্তাফিজুর রহমানকে একমাত্র আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এ ব্যাপারে বিশেষ জেলা ও দায়েরা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মুলতান উদ্দিন বলেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা। নিহত আমিনুল ইসলাম আশুলিয়ার শ্রমিদের পক্ষে কাজ করতেন। যাতে তিনি শ্রমিকদের পক্ষে কাজ করতে না পারেন- এজন্য তাকে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলা হয়। এই হত্যা মামলায় ২৫ জন ব্যক্তি সাক্ষী দেয়। দীর্ঘ শুনানি শেষে গতকাল আদালত এই হত্যা মামলায় ফাঁসি দেন। এতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তবে রাষ্ট্রকর্তৃক নিয়োজিত আসামি পক্ষের আইনজীবী গোলাম মোস্তফা মিয়া বলেন, এ মামলায় সাক্ষী দ্বারা আসামির বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের অপরাধ প্রমানিত হয় নাই। আদালত ভাবাবেগের বশবর্তী হইয়া আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। আশা করি উচ্চ আদালতে আসামি খালাস পাবেন।

No comments

Powered by Blogger.