প্রতারণার নয়া কৌশল by শুভ্র দেব
বাড়ছে
নয়া নয়া কৌশলে প্রতারণা। সর্বস্বান্ত হচ্ছে অনেকেই। মাঝে মধ্যে
ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কিছু প্রতারক গ্রেপ্তার হয়। পরে জামিনে
মুক্তি পেয়ে ধরন পাল্টিয়ে ফের শুরু করে প্রতারণা। বেশির ভাগ প্রতারণার ঘটনা
রাজধানীকেন্দ্রিক। আর এতে ইন্ধন যোগাচ্ছে বিদেশিরাও। গত কয়েক মাসে এ ধরনের
বেশ কিছু ঘটনায় বিদেশিদের তৎপরতা পাওয়া গেছে। আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে
গ্রেপ্তারের পর পাওয়া গেছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ফেনী সকার ক্লাবে নিয়মিত
ফুটবল খেলার পাশাপাশি মোহামেডান ও আবাহনীতে খেলতেন ৫ বিদেশি খেলোয়াড়। তারা
হলেন- ওগোখোয়া ওনোচি (৩২), মরিস (৩৪), ওবিনা (৩৫), হ্যানরি ওরফে শর্ট
হ্যানরি (২৪), এন্থনি কেজিতো অ্যারেঞ্জি (২৬)। কিন্তু খেলাধুলার পাশাপাশি
তারা প্রতারণার কাজে জড়িয়ে যান। তাদের টার্গেট ছিল দেশের ধনাঢ্যরা। কৌশলে
তাদের সঙ্গে শুরু করতেন ঘনিষ্ঠতা। তারপর নানা প্রলোভনে টাকার লেনদেন। বড়
অঙ্কের টাকা নেয়া হলেই লাপাত্তা। প্রতারণার শিকার হয়ে অনেকেই হয়েছেন
সর্বস্বান্ত। নাইজেরিয়ান এই খেলোয়াড়দের সর্বশেষ প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন
নাদিরা আক্তার নামের একজন চিত্রশিল্পী। তিনি তার কিছু ছবি ইংল্যান্ডের একটি
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় পাঠান। সেই ছবিগুলো সংগ্রহ করে ওই প্রতারক চক্র।
পরে ওই চক্রের এক সদস্য থমাস কিং ও শামীমা রহমান চিত্র শিল্পী নাদিরাকে
ফোনে প্রতিযোগিতার একজন কর্মকর্তা হিসাবে পরিচয় দেন। সেই সঙ্গে নাদিরা
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পক্ষ থেকে ৩ লাখ পাউন্ডের পুরস্কার জিতেছেন বলে
তারা জানায়। পুরস্কার চট্টগ্রাম বন্দরে আটকে আছে। ছাড়িয়ে আনার জন্য কিছু
টাকা খরচ হবে। কারণ বন্দর কর্র্তৃপক্ষ পুরস্কারের প্যাকেটটি স্ক্যান করে
ভেতরে পাউন্ড থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন। এখন পুরস্কারটি আটক করে তারা
মামলা করবে। দফায় দফায় থমাস কিং নাদিরাকে ফোন করে পার্সেলটি ছাড়িয়ে নেয়ার
কথা বলে ১ কোটি ১ লাখ ৯৮ হাজার ৪০০ টাকা হাতিয়ে নেয়। কিন্তু এক কোটি টাকার
বেশি টাকা পাঠানোর পরও নাদিরার আর সেই পুরস্কার হাতে আসেনি। পরে তিনি বাধ্য
হয়ে থানায় মামলা করেন। মামলার সূত্র ধরেই পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ
(সিআইডি) প্রতারক ওই ৫ খেলোয়াড়কে আটক করে। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার
মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, এই ঘটনা ছাড়াও এই ৫ অপরাধী আরো বিভিন্ন কৌশলে
মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
৪০ বছর বয়সী হেনরি ইশিকা। নাইজেরিয়ান খেলোয়াড় হিসাবেই পরিচিত। বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে তিনিও ফুটবল খেলতেন। কয়েক বছর আগে প্রতারণার দায়ে জেলে গিয়েছিলেন। সেখানে পরিচয় হয় এক বাংলাদেশি কয়েদির সঙ্গে। জামিনে বের হয়ে তারা আবার জড়িয়ে পড়েন প্রতারণার কাজে। সহজ সরল নারীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। পুলিশের হাতে আটকের পর বেরিয়ে আসে নানা তথ্য। পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, নাইজেরিয়ান ফুটবলার হেনরি ইশিকা পরিকল্পিত ভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ, ইমো, ভাইবার, মেসেঞ্জারের আইডি সংগ্রহ করে সহজ সরল নারীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ান। এরপর উপহার বা অনেক সময় চাকরি দেবার নাম করে আদায় করেন অর্থ। নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নেয়ার পর যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। ঠিক এমনই এক ভোক্তভোগী কাফরুলের তাহমিনা পারভিন। তিনি একজন স্কুল শিক্ষিকা। তাহমিনার ফেসবুকে পরিচয় হয় উইলিয়াম ডেভিড নামের এক বিদেশির সঙ্গে। মেসেঞ্জারের মাধ্যমে তাদের মধ্যে কথাবার্তা শুরু হয়। এক সময় উইলিয়াম ডেভিড তাহমিনার কাছে তার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার চায়। পরে দুজনের হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কথাবার্তা চলত। কিছুদিন যাবার পর উইলিয়াম উপহার পাঠানোর জন্য তাহমিনার কাছে তার বাসার ঠিকানা চায়। পরে তিনি তার বাসার ঠিকানা দেন। কয়েক দিন পর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে বেন কার্লোস নামের এক ব্যক্তি ফোন দিয়ে বলেন তিনি ডেল্টা কুরিয়ার সার্ভিসে চাকরি করেন। উইলিয়াম ডেভিড নামের এক ব্যক্তি ইংল্যান্ড থেকে একটি পার্সেল পাঠিয়েছে। সেই পার্সেলটি পাওয়ার জন্য তাহমিনা ওই প্রতারকদের প্রায় ২ লাখ টাকা দুটি ব্যাংক হিসাবে পাঠিয়েছেন। তারপরও মন গলাতে পারেননি প্রতারকদের। পরে তারা আরো তিন লাখ টাকা পাঠানোর কথা জানালে বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন।
বিদেশিদের প্রতারণার পাশাপাশি দেশি প্রতারকরাও চালিয়ে যাচ্ছে তাদের প্রতারণার ফাঁদ। কিছুদিন আগে এক ব্যাংক কর্তার কাছে সৌদির রিয়াল বিক্রির নামে প্রতারণা করার অভিযোগে তিন প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। যাত্রাবাড়ী থানা সূত্রে জানা গেছে, এক ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে পরিচয় হয় দেলোয়ার নামের এক রাজ মিস্ত্রির। পরিচয়ের একপর্যায়ে সে ওই ব্যাংক কর্মকর্তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর নিয়ে যায়। এর কিছু দিন পর দেলোয়ার ব্যাংক কর্মকর্তার মোবাইলে ফোন দিয়ে বলে তার পরিচিত এক ব্যক্তির কাছে ১১৮৬টি ১০০ টাকার সৌদি রিয়াল আছে। সে এই রিয়ালগুলো কম টাকায় বিক্রি করতে চায়। কম দামে এতগুলো রিয়াল কেনার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান ওই ব্যাংক কর্মকর্তা। পরে দেলোয়ার ও তার সহযোগী রিপন গত মাসের ১৫ তারিখ ব্যাংক কর্মকর্তাকে যাত্রাবাড়ী এলাকার মাওয়া বাসস্ট্যান্ডে নগদ টাকাসহ দেখা করতে বলে। সে মোতাবেক ওইদিন তিনি নগদ ৫ লাখ টাকা নিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করেন। প্রাথমিক কথাবার্তা শেষ করে দেলোয়ার গামছায় পেঁচানো একটি পুঁটলা দিয়ে বলে এর ভেতরেই সৌদির রিয়াল আছে। ব্যাংক কর্মকর্তার কাছ ৫ লাখ টাকা নিয়ে তারা দ্রুত সেই স্থান ত্যাগ করে যায়। তারা চলে যাওয়ার পরে ব্যাংক কর্মকর্তা সেই পুঁটলি খুলে দেখেন ভেতরে কয়েকটি পেপার ও একটি ভিম সাবান রয়েছে। তখন তিনি বুঝতে পারেন ওই তিনজন তার সঙ্গে প্রতারণা করে পালিয়েছে।
সিআইডির কাছে গত সপ্তাহে আটক হন ‘আরজে টেরট বাবা’ নামের এক প্রতারক। যার প্রকৃত নাম এমএম জাহাঙ্গীর রেজা ওরফে রাদবি রেজা। ভৌতিক অনুষ্ঠানের সুবাধে সহজেই একটি শ্রেণির প্রিয় হয়ে উঠেন রাদবি রেজা। মানুষের বিশ্বস্ততার সুযোগ নিয়ে রাদবি রেজা হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ-লাখ টাকা। সিআইডি সূত্রে জানা যায়, এবিসি রেডিওতে ‘টেরট কার্ড সেগমেন্ট’ নামে একটি ভৌতিক অনুষ্ঠান করতেন রাদবি রেজা। নিজের নাম ও ফোন নম্বর দিয়ে সাধারণ মানুষকে এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হতো। এই নাম-পরিচয় অনুযায়ী ফেসবুকে সার্চ করে আগেই আগ্রহী শ্রোতার ব্যক্তিগত তথ্য জেনে নিতেন রাদবি রেজা। পরবর্তীতে ওই ব্যক্তি যখন সমস্যা সমাধানের জন্য তার সঙ্গে দেখা করতে যেতেন তখন শুরুতেই তার বিভিন্ন তথ্য বলে দিতেন রাদবি রেজা। সহজ সরল মানুষ এতেই ভক্ত হয়ে যান তার। এমনকি রাদবি রেজাকে অতি মানবীয় ব্যক্তি ভাবতে থাকেন অনেকে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইউটিউবে জাদু দেখাতেন রাদবি রেজা। জাদু দেখিয়ে বলতেন, তিনি হাত দিয়ে জিন ধরতে পারেন। জিনকে বোতলে ভরতে পারেন। শুধু তাই না, মাথায় বাতি জ্বালানো, খালি হাতে মোমবাতি জ্বালানো দেখিয়ে দাবি করতেন, অতিমানবীয় ক্ষমতার অধিকারী তিনি। এই ক্ষমতা দিয়ে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে পারেন। লটারি জেতাতে পারেন, খেলার আগাম ফলাফলও বলতে পারেন। এমনকি সমস্যা সমাধানের নামে ক্যানসার, পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের চিকিৎসার নামে ডেকে নিতেন তার পরামর্শক প্রতিষ্ঠানে। শুধু পরামর্শ দিয়ে ২০ হাজার ৪০০ টাকা নিতেন রাদবি রেজা। এই টাকা পাঠাতে হতো অগ্রিম, বিকাশের মাধ্যমে। শেষ পর্যন্ত ফেঁসে যান এক নারী ভক্তের সঙ্গে প্রতারণা করে। ওই নারী বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে ৫৭ ধারায় মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।
এ ছাড়াও পত্রিকায় বিভিন্ন দেশের ভিসা প্রসেসিং করা হয় বলে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে। শতভাগ নিশ্চয়তা। ভিসার পরে টাকা নেয়া হবে। ভালো চাকরি পাইয়ে দেয়ার ব্যবস্থাসহ আরো নানা প্রলোভন। সিআইডি হংকং লোক পাঠানোর নামে প্রতারণার দায়ে গতবছর আটক করে কয়েকজনকে। তারা প্রথমে টাকা লাগবে না বলে মানুষের কাছে বিশ্বাস অর্জন করত। সবকিছু ঠিকঠাক করে ফ্লাইটের দিন বিমানবন্দরে গিয়ে কৌশলে বিদেশ যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যেত। এভাবে শত শত লোকের কাছ থেকে তারা কোটি কোটি হাতিয়ে নেয়। পরে ভুক্তভোগীদের করা মামলায় সিআইডি তানভির আহমেদ ও নাজুল হাসান সুমন নামের দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। একইভাবে পত্রিকায় ক্রয়-বিক্রয়ের বিজ্ঞাপন দিয়ে ফাঁদে পড়েছেন সরকারের একজন উপ-সচিব। কমদামে টেলিভিশন কেনার বিজ্ঞাপন দেখে যোগাযোগ করেন। তিনটি টেলিভিশন কেনার জন্য একটি রকেট নম্বরে ২২৫০০ টাকা পাঠান। টাকা পাঠানোর পর আর ওই প্রতারকের সঙ্গে তিনি কোনো যোগযোগ করতে পারেননি। বাধ্য হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি জিডি করেন। এসব প্রতারক চক্রকে আটকের জন্য কাজ করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনেক সময় আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর এসব সদস্যদের হাতে অনেক সংঘবদ্ধ চক্র আটক হয়। মামলা দিয়ে তাদেরকে পাঠানো হয় কারাগারে। কিন্তু কিছুদিন পর তারা ছাড়া পেয়ে ফের প্রতারণার কাজে লেগে যায়। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই আমরা অভিযোগ আমলে নিই।
৪০ বছর বয়সী হেনরি ইশিকা। নাইজেরিয়ান খেলোয়াড় হিসাবেই পরিচিত। বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে তিনিও ফুটবল খেলতেন। কয়েক বছর আগে প্রতারণার দায়ে জেলে গিয়েছিলেন। সেখানে পরিচয় হয় এক বাংলাদেশি কয়েদির সঙ্গে। জামিনে বের হয়ে তারা আবার জড়িয়ে পড়েন প্রতারণার কাজে। সহজ সরল নারীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। পুলিশের হাতে আটকের পর বেরিয়ে আসে নানা তথ্য। পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, নাইজেরিয়ান ফুটবলার হেনরি ইশিকা পরিকল্পিত ভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ, ইমো, ভাইবার, মেসেঞ্জারের আইডি সংগ্রহ করে সহজ সরল নারীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ান। এরপর উপহার বা অনেক সময় চাকরি দেবার নাম করে আদায় করেন অর্থ। নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নেয়ার পর যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। ঠিক এমনই এক ভোক্তভোগী কাফরুলের তাহমিনা পারভিন। তিনি একজন স্কুল শিক্ষিকা। তাহমিনার ফেসবুকে পরিচয় হয় উইলিয়াম ডেভিড নামের এক বিদেশির সঙ্গে। মেসেঞ্জারের মাধ্যমে তাদের মধ্যে কথাবার্তা শুরু হয়। এক সময় উইলিয়াম ডেভিড তাহমিনার কাছে তার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার চায়। পরে দুজনের হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কথাবার্তা চলত। কিছুদিন যাবার পর উইলিয়াম উপহার পাঠানোর জন্য তাহমিনার কাছে তার বাসার ঠিকানা চায়। পরে তিনি তার বাসার ঠিকানা দেন। কয়েক দিন পর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে বেন কার্লোস নামের এক ব্যক্তি ফোন দিয়ে বলেন তিনি ডেল্টা কুরিয়ার সার্ভিসে চাকরি করেন। উইলিয়াম ডেভিড নামের এক ব্যক্তি ইংল্যান্ড থেকে একটি পার্সেল পাঠিয়েছে। সেই পার্সেলটি পাওয়ার জন্য তাহমিনা ওই প্রতারকদের প্রায় ২ লাখ টাকা দুটি ব্যাংক হিসাবে পাঠিয়েছেন। তারপরও মন গলাতে পারেননি প্রতারকদের। পরে তারা আরো তিন লাখ টাকা পাঠানোর কথা জানালে বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন।
বিদেশিদের প্রতারণার পাশাপাশি দেশি প্রতারকরাও চালিয়ে যাচ্ছে তাদের প্রতারণার ফাঁদ। কিছুদিন আগে এক ব্যাংক কর্তার কাছে সৌদির রিয়াল বিক্রির নামে প্রতারণা করার অভিযোগে তিন প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। যাত্রাবাড়ী থানা সূত্রে জানা গেছে, এক ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে পরিচয় হয় দেলোয়ার নামের এক রাজ মিস্ত্রির। পরিচয়ের একপর্যায়ে সে ওই ব্যাংক কর্মকর্তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর নিয়ে যায়। এর কিছু দিন পর দেলোয়ার ব্যাংক কর্মকর্তার মোবাইলে ফোন দিয়ে বলে তার পরিচিত এক ব্যক্তির কাছে ১১৮৬টি ১০০ টাকার সৌদি রিয়াল আছে। সে এই রিয়ালগুলো কম টাকায় বিক্রি করতে চায়। কম দামে এতগুলো রিয়াল কেনার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান ওই ব্যাংক কর্মকর্তা। পরে দেলোয়ার ও তার সহযোগী রিপন গত মাসের ১৫ তারিখ ব্যাংক কর্মকর্তাকে যাত্রাবাড়ী এলাকার মাওয়া বাসস্ট্যান্ডে নগদ টাকাসহ দেখা করতে বলে। সে মোতাবেক ওইদিন তিনি নগদ ৫ লাখ টাকা নিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করেন। প্রাথমিক কথাবার্তা শেষ করে দেলোয়ার গামছায় পেঁচানো একটি পুঁটলা দিয়ে বলে এর ভেতরেই সৌদির রিয়াল আছে। ব্যাংক কর্মকর্তার কাছ ৫ লাখ টাকা নিয়ে তারা দ্রুত সেই স্থান ত্যাগ করে যায়। তারা চলে যাওয়ার পরে ব্যাংক কর্মকর্তা সেই পুঁটলি খুলে দেখেন ভেতরে কয়েকটি পেপার ও একটি ভিম সাবান রয়েছে। তখন তিনি বুঝতে পারেন ওই তিনজন তার সঙ্গে প্রতারণা করে পালিয়েছে।
সিআইডির কাছে গত সপ্তাহে আটক হন ‘আরজে টেরট বাবা’ নামের এক প্রতারক। যার প্রকৃত নাম এমএম জাহাঙ্গীর রেজা ওরফে রাদবি রেজা। ভৌতিক অনুষ্ঠানের সুবাধে সহজেই একটি শ্রেণির প্রিয় হয়ে উঠেন রাদবি রেজা। মানুষের বিশ্বস্ততার সুযোগ নিয়ে রাদবি রেজা হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ-লাখ টাকা। সিআইডি সূত্রে জানা যায়, এবিসি রেডিওতে ‘টেরট কার্ড সেগমেন্ট’ নামে একটি ভৌতিক অনুষ্ঠান করতেন রাদবি রেজা। নিজের নাম ও ফোন নম্বর দিয়ে সাধারণ মানুষকে এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হতো। এই নাম-পরিচয় অনুযায়ী ফেসবুকে সার্চ করে আগেই আগ্রহী শ্রোতার ব্যক্তিগত তথ্য জেনে নিতেন রাদবি রেজা। পরবর্তীতে ওই ব্যক্তি যখন সমস্যা সমাধানের জন্য তার সঙ্গে দেখা করতে যেতেন তখন শুরুতেই তার বিভিন্ন তথ্য বলে দিতেন রাদবি রেজা। সহজ সরল মানুষ এতেই ভক্ত হয়ে যান তার। এমনকি রাদবি রেজাকে অতি মানবীয় ব্যক্তি ভাবতে থাকেন অনেকে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইউটিউবে জাদু দেখাতেন রাদবি রেজা। জাদু দেখিয়ে বলতেন, তিনি হাত দিয়ে জিন ধরতে পারেন। জিনকে বোতলে ভরতে পারেন। শুধু তাই না, মাথায় বাতি জ্বালানো, খালি হাতে মোমবাতি জ্বালানো দেখিয়ে দাবি করতেন, অতিমানবীয় ক্ষমতার অধিকারী তিনি। এই ক্ষমতা দিয়ে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে পারেন। লটারি জেতাতে পারেন, খেলার আগাম ফলাফলও বলতে পারেন। এমনকি সমস্যা সমাধানের নামে ক্যানসার, পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের চিকিৎসার নামে ডেকে নিতেন তার পরামর্শক প্রতিষ্ঠানে। শুধু পরামর্শ দিয়ে ২০ হাজার ৪০০ টাকা নিতেন রাদবি রেজা। এই টাকা পাঠাতে হতো অগ্রিম, বিকাশের মাধ্যমে। শেষ পর্যন্ত ফেঁসে যান এক নারী ভক্তের সঙ্গে প্রতারণা করে। ওই নারী বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে ৫৭ ধারায় মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।
এ ছাড়াও পত্রিকায় বিভিন্ন দেশের ভিসা প্রসেসিং করা হয় বলে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে। শতভাগ নিশ্চয়তা। ভিসার পরে টাকা নেয়া হবে। ভালো চাকরি পাইয়ে দেয়ার ব্যবস্থাসহ আরো নানা প্রলোভন। সিআইডি হংকং লোক পাঠানোর নামে প্রতারণার দায়ে গতবছর আটক করে কয়েকজনকে। তারা প্রথমে টাকা লাগবে না বলে মানুষের কাছে বিশ্বাস অর্জন করত। সবকিছু ঠিকঠাক করে ফ্লাইটের দিন বিমানবন্দরে গিয়ে কৌশলে বিদেশ যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যেত। এভাবে শত শত লোকের কাছ থেকে তারা কোটি কোটি হাতিয়ে নেয়। পরে ভুক্তভোগীদের করা মামলায় সিআইডি তানভির আহমেদ ও নাজুল হাসান সুমন নামের দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। একইভাবে পত্রিকায় ক্রয়-বিক্রয়ের বিজ্ঞাপন দিয়ে ফাঁদে পড়েছেন সরকারের একজন উপ-সচিব। কমদামে টেলিভিশন কেনার বিজ্ঞাপন দেখে যোগাযোগ করেন। তিনটি টেলিভিশন কেনার জন্য একটি রকেট নম্বরে ২২৫০০ টাকা পাঠান। টাকা পাঠানোর পর আর ওই প্রতারকের সঙ্গে তিনি কোনো যোগযোগ করতে পারেননি। বাধ্য হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি জিডি করেন। এসব প্রতারক চক্রকে আটকের জন্য কাজ করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনেক সময় আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর এসব সদস্যদের হাতে অনেক সংঘবদ্ধ চক্র আটক হয়। মামলা দিয়ে তাদেরকে পাঠানো হয় কারাগারে। কিন্তু কিছুদিন পর তারা ছাড়া পেয়ে ফের প্রতারণার কাজে লেগে যায়। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই আমরা অভিযোগ আমলে নিই।
No comments