একই বক্তব্যে অনড় ফয়জুর by ওয়েছ খছরু
রিমান্ডেও
একই কথা বলছে ফয়জুর রহমান। দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে- ‘সে নিজ
থেকেই জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। তার সঙ্গে কারও কোনো যোগাযোগ নেই। প্রফেসর
ড. জাফর ইকবাল সম্পর্কে তার নেগেটিভ ধারণা রয়েছে। তিনি ইসলামে বিশ্বাস
করেন না। এ ধারণা থেকে সে জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালিয়েছে এবং তার লক্ষ্য
ছিল জাফর ইকবালকে হত্যা করা।’ প্রায় আট দিন ধরে রিমান্ডে থাকা ফয়জুর এসব
কথাই বলছে পুলিশকে। এর বাইরে তার সঙ্গে কারো সম্পৃক্ততার বিষয়টি সে স্বীকার
করেনি। পুলিশও তদন্তে তার সঙ্গে বাইরের কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর সম্পর্ক রয়েছে
কি না- সেটিও উদঘাটন করতে পারেনি। ইতিমধ্যে তাকে নিয়ে প্রযুক্তিগত
অনুসন্ধান চালিয়েছে। এসব অনুসন্ধানেও তার নেটওয়ার্ক সম্পর্কে তথ্য মিলেনি।
ফলে পরিবারকেন্দ্রিক তদন্ত চালিয়েছে পুলিশ। ইতিমধ্যে পুলিশ ফয়জুরের পিতা
হাফিজ আতিকুর রহমান ও মা আমিনা বেগমকে রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ
করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে ফয়জুরের নেটওয়ার্ক সম্পর্কে তেমন তথ্য
মিলেনি। এখন পুলিশের কাছে রিমান্ডে রয়েছে ফয়জুর ও তার ভাই এনামুল। দুজনকে
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও জালালাবাদ থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জিজ্ঞাসাবাদ
করছেন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-৩ এর
আদালতের বিচারক হরিদাশ কুমারের কাছে ফয়জুর রহমানের পিতা হাফিজ আতিকুর রহমান
জবানবন্দি দিয়েছেন। ওই জবানবন্দিতে তিনি ফয়জুর সম্পর্কে তেমন তথ্য না
দিলেও জানিয়েছেন- ‘গত তিন বছর ধরে ফয়জুরের গতিবিধি ছিল রহস্যময়। সে
গতানুগতিকভাবে এবাদত করতো না। সালাফি মাযহাবের অনুসারী হয়ে পড়েছিল। সে
ভিন্ন ধারায় নামাজ আদায় করতো। এ কারণে এলাকার মানুষও তাকে ভিন্ন চোখে
দেখতো। মাঝে মধ্যে মসজিদের নামাজে তাকে নিয়ে হট্টগোল হতো। শেষ দিকে সে
মসজিদে কম যেতো।’ আদালতে তিনি জানিয়েছেন- ‘ফয়জুর রহমান মোবাইল ও ট্যাব নিয়ে
প্রায় দুই বছর ধরে ব্যস্ত থাকতো। কথা কম বলতো এবং মানুষের সঙ্গে মিশতো
কম।’ ফয়জুরের পিতা পুলিশের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন- ‘ফয়জুর তার
পরিবারের ব্যয়ভাব বহন করতো না। সে তার ইচ্ছামতো চলে ফেরা করতো। সেখানে
পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে বেশি কথাও বলতেন না।’ আদালত বক্তব্য গ্রহণ শেষে
তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এর দুদিন আগে ফয়জুরের মা আমিনা বেগমও একই
আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ওই জবানবন্দিতেও তিনি ফয়জুর
সম্পর্কে তেমন তথ্য দিতে পারেননি। এছাড়া ফয়জুর জঙ্গিবাদের জড়িয়ে পড়ছে কি
না, সে ব্যাপারেও তার কিছুই জানা নেই বলে জানান তিনি। তবে গত দুই বছর ধরে
তার মতিগতি ভিন্ন ধরনের ছিল। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও বেশি কথা বলতো না।
প্রায় সময় বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতো। কখনো কখনো আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গিয়ে
বসবাস করতো। সিলেটের জালালাবাদ থানার ওসি ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শফিকুল
ইসলাম গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ফয়জুর ইন্টারনেট কিংবা আ্যপসের
মাধ্যমে জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতো কি না- সেটি এখনো পরিষ্কার
নয়। তদন্তে রয়েছে বিষয়টি। প্রযুক্তিগত সবকিছুই পুলিশ খতিয়ে দেখছে।
পাশাপাশি তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় ইতিমধ্যে
ফয়জুরের পিতা-মাতা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। মামা ফয়জুল
ইসলাম আদালতের মাধ্যমে কারাগারে রয়েছে। তারা তিনজনকেই এ মামলায় আসামি করা
হয়েছে। এছাড়া মামলার অপর আসামি এনামুল পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রয়েছে। এদিকে
সিলেট মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ফয়জুরের ভাই এনামুলের কাছ থেকেও
উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য মিলেনি। ঘটনার পর কেন সে পালিয়ে গেলো- সে প্রশ্নের
জবাবে জানিয়েছে ভয়ে সে পালিয়েছে। ঘটনার আগে ফয়জুর ট্যাব ও মোবাইল ফোন তার
কাছে রেখে গিয়েছিল বলে জানায়। ফয়জুরের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না
বলে জানায়। গত ৩রা মার্চ সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে প্রফেসর ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালিয়েছিল
পার্শ্ববর্তী শেখপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ফয়জুর রহমান ফয়জুর। ঘটনার পর
শিক্ষক-শিক্ষার্র্থীরা ফয়জুরকে গণধোলাই দিয়ে আটক করেছিল। পরে র্যাব
সদস্যরা তাকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ওই জিজ্ঞাসাবাদকালেই ফয়জুর র্যাব
কর্মকর্তাদের জানিয়েছিল, সে নিজ থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রফেসর জাফর ইকবালের
ওপর হামলা চালিয়েছিল। কারও প্ররোচনায় সে হামলা করেনি। পুলিশ জানিয়েছে,
ফয়জুর তার ওই কথাতেই অনড় রয়েছে। পুলিশি তদন্তে তার নেটওয়ার্কের খোঁজ
মিলেনি। এখনো পুলিশ অনুসন্ধান চালাচ্ছে। ফয়জুরের বন্ধু সুমন এখনো আটক হয়নি।
ওই সুমনের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, তারা সুমনকে
খুঁজছে। সুমনকে পাওয়া গেলে হয়তো ঘটনার অনেকটা ইতি ঘটবে। ওদিকে প্রফেসর জাফর
ইকবাল এখন ঢাকায়। বুধবার তিনি সিলেটে এসেছিলেন। ওই দিন শাহজালাল বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই মুক্তমঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার তিনি ঢাকায় ফিরে গেছেন। প্রফেসর জাফর ইকবালের একান্ত সহকারী
জয়নাল আবেদীন জানিয়েছেন, আগামী দুই সপ্তাহ প্রফেসর জাফর ইকবাল ঢাকায়
বিশ্রামে থাকবেন। এরপর সিলেটে ফিরে যথারীতি ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নেবেন।
No comments