টার্মিনালে টিকিট গ্যাং by পিয়াস সরকার
রাজধানীর
টার্মিনালগুলো জিম্মি টিকিট ‘গ্যাং’-এর কাছে। শুধু আন্তঃজেলা বাস
টার্মিনালই নয়, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশন সবই এই ‘গ্যাং’-এর নিয়ন্ত্রণে। নানা
কৌশল আর ফন্দি-ফিকিরে যাত্রীর কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে তারা।
নানাভাবে করছে হয়রানিও। নামিদামি পরিবহন থেকে শুরু করে নরমাল পরিবহনের
কাউন্টারেও এই গ্যাং-এর আধিপত্য। এই গ্যাং-এর কৌশলের চিত্র ফুটে ওঠে
বেশক’টি ঘটনায়। গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অতসী বসুনিয়া ও
তার বোন তপসী বসুনিয়া কলেজ গেটের নাবিল কাউন্টারে যান দুটি টিকিট কাটতে।
কিন্তু কাউন্টার থেকে জানানো হয় শেষের দুই সারি ছাড়া আর কোনো টিকিট নেই।
তারা ১লা মার্চ যাবেন রংপুরে। দূরের রাস্তা আবার সড়কের বেহাল দশা জেনেও
বাধ্য হয়ে রাত সাড়ে দশটার বাসের আই ৩, ৪ পেছনের সারির দুটি টিকিট কাটেন
১০০০ টাকায়। টিকিট কেটে বাইরে আসার পরই এক ব্যক্তি তাদের পথ আগলে দাঁড়ায়।
বলে, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার রংপুরের দ্বিতীয় সারির (বি ১, ২) দুটি টিকিট
আছে। অতসী জানায়, টিকিট যে কিনে ফেলেছি। ওই ব্যক্তি বলেন, টিকিট বাতিল করা
সম্ভব এবং এর জন্য কোনো মাশুল গুনতে হবে না। তবে দুটি টিকিটের মূল্য দিতে
হবে ১৫০০ টাকা। বেশকিছু সময় দাম কষাকষির পর ১৩০০ টাকা এবং নিজ দায়িত্বে
টিকিট বাতিল করানোর শর্তে রাজি হন তিনি। এরপর ওই ব্যক্তি টিকিট দুটো নিয়ে
বাতিল করে তাদের হাতে তুলে দেন নতুন টিকিট। এ ব্যাপারে কাউন্টারে জানতে
চাইলে তারা বলেন, আমাদের কাজ টিকিট বিক্রি করা। কে টিকিট নিয়ে ব্যবসা করছে
তা আমাদের দেখার দায়িত্ব নয়। এই ঘটনার বেশ কিছুক্ষণ পর টিকিট মাস্টার ও
গ্যাং সদস্যকে একসঙ্গে চায়ের দোকানে দেখা যায়। তাদের সামনে হাজির হয়ে
প্রশ্ন করলে বলেন, এ তো আমার কাউন্টার স্টাফ। সে কেন টিকিট দালালি করবে?
মহাখালী বাস টার্মিনালে বাসের টিকিটের জন্য আনাগোনা দেখা যায় অনেক যাত্রীর। কিন্তু বেশিরভাগ যাত্রীকে দেয়া হচ্ছে পেছনের সারির টিকিট। এমতাবস্থায় একজন নারী বিশেষ পেশার একজনকে সাহায্যের আবেদন করে বলেন, আমার শরীরে ব্যথা। পেছনের সিটে যাওয়া সম্ভব নয়। সবাই শেষের সারির টিকিট পেলেও তিনি তার পরিচয়পত্র দেখিয়ে তৃতীয় সারির (সি-৩) পৃষ্ঠা ২ কলাম ৫
একটি টিকিট কিনে দেন। কাউন্টার থেকে সামনের সিট ফাঁকা নাই বললেও, তাকে সামনে দিলেন কীভাবে? উত্তরে এনা পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা বলেন, আমাদের বাসে বিশেষ কিছু ব্যক্তির জন্য টিকিটের ব্যবস্থা থাকে।
সূত্র মতে, যাত্রী সেবায় অনেকেই অনলাইনভিত্তিক টিকিট সিস্টেম চালু করেছে। এরমধ্যে অন্যতম সহজ ডটকম, টিকিট বিডি, বাস বিডি। বেশিরভাগ বাসের টিকিট যাত্রীরা ঘরে বসেই ক্রয় করতে পারেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাত বা ছুটির দিনের আগের রাতের টিকিট পাওয়া যায় না অনলাইনে। পাওয়া গেলেও বসতে হয় পেছনের সিটে। তবে কি সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায় আগেই? একজন গাড়ির সুপারভাইজার বলেন, এসব দিনের টিকিট কাউন্টারের কর্তব্যরতরা কেটে ফেলে অনলাইনে এবং বাড়তি দামে বিক্রি করে।
এ ব্যাপারে হানিফ, নাবিল, শ্যামলী, দেশ, সাকুরা, গোল্ডেন লাইনের কাউন্টারের কর্তারা কিছু জানেন না বলে মন্তব্য করেন।
দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম লঞ্চ। বাসে বিশেষ দিনের বিশেষ সময়ের টিকিট গ্যাং-এর কথা উঠলেও দূরপাল্লার লঞ্চও এ থেকে মুক্ত নয়। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান নিলয়ের বাড়ি বরিশাল। প্রায়ই যাতায়াত করেন লঞ্চে। বলেন, লঞ্চে যেদিন একটু ভিড় থাকে সেদিন সুযোগ নেয় তারা। টিকিট কাউন্টারে গেলে টিকিট মেলে না। কিন্তু গ্যাং-এর কাছে ঠিকই পাওয়া যায় টিকিট। দ্বিগুণ দাম হাঁকে এবং উপায় না থাকায় কিনেও ফেলেন যাত্রীরা।
শিক্ষার্থী নিলয়ের কথা অনুযায়ী বরিশালগামী সুন্দরবন-১০ ও পটুয়াখালীগামী সুন্দরবন-৯ এবং কুয়াকাটা-১ লঞ্চে বিকাল চারটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত সরজমিন দেখা যায়, সুন্দরবন-১০ এ ডাবল কেবিন মিললেও মিলছে না সিঙ্গেল কেবিন। কিন্তু টিকিট কাউন্টার থেকে মুখ ফেরাতেই কানে এলো সিঙ্গেল কেবিন লাগবে? হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়াতেই, একটু পাশে নিয়ে গেলেন। দাম চাইলেন ১৮০০ টাকা। দরদামের পর ১৬০০ টাকায় দিতে রাজি হলেন। এমন দৃশ্য চোখে পড়ে পটুয়াখালীগামী দুটি লঞ্চেও। টিকিট কাউন্টারে এই গ্যাং-এর বিষয়ে জানতে চাইলে সুন্দরবন-১০ এর টিকিট মাস্টার বলেন, ব্যস্ত আছি পরে আসেন এবং কুয়াকাটা-১ লঞ্চের টিকিট মাস্টার শুনেও না শোনার ভান করে চলে যান। সুন্দরবন-৯ এর মাস্টার বলেন, আমাদের নানান দিকে ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই খোঁজ রাখার সময় পাই না। আর যখন টিকিট কাটতে আসেন যতক্ষণ টিকিট থাকে ততক্ষণ আমরা দেই। টিকিট কে নিলো সেটা আমাদের দেখার কথা নয়। টিকিট মাস্টারের সঙ্গে কথোপকথন শেষ করে যাবার সময় একজন কুলি ডেকে বলেন, তারা যাত্রীর চাপ বেশি দেখলে কেবিন রেখে দেয়। আর এই টিকিট গ্যাং-এর মাধ্যমে বিক্রি করে। এতে তারাও লাভবান হয়।
কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টার ঘুরে দেখা যায় একদিন পরের ট্রেন কিংবা রাতের ট্রেনের টিকিট সকালে অনায়াসেই পাচ্ছেন যাত্রীরা। তবে ট্রেন ছাড়ার আগ মুহূর্তে টিকিট শেষ হলে একজন কানের কাছে আস্তে করে বলেন ‘টিকিট লাগবে?’ সামান্য লাভেই বিক্রি করে দিচ্ছেন টিকিট। পূবালী ব্যাংকে কর্মরত আশরাফ খোকন বলেন, হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেই বাড়ি যাবো। তাই আগে থেকে টিকিট কাটতে পারিনি। এখানে এসেই পেয়ে গেলাম। চট্টগ্রাম যেতে শোভন চেয়ারের টিকিট মূল্য ৩৪৫ টাকা; আমি ৪০০ টাকা দিয়ে কিনেছি। সূত্র মতে, প্রতিটি টার্মিনাল এই গ্যাং-এর নিয়ন্ত্রণে। এ সিন্ডিকেটের ইশারায় চলে কাউন্টারগুলো। আর এতে যাত্রীরা হচ্ছেন হয়রানির শিকার।
মহাখালী বাস টার্মিনালে বাসের টিকিটের জন্য আনাগোনা দেখা যায় অনেক যাত্রীর। কিন্তু বেশিরভাগ যাত্রীকে দেয়া হচ্ছে পেছনের সারির টিকিট। এমতাবস্থায় একজন নারী বিশেষ পেশার একজনকে সাহায্যের আবেদন করে বলেন, আমার শরীরে ব্যথা। পেছনের সিটে যাওয়া সম্ভব নয়। সবাই শেষের সারির টিকিট পেলেও তিনি তার পরিচয়পত্র দেখিয়ে তৃতীয় সারির (সি-৩) পৃষ্ঠা ২ কলাম ৫
একটি টিকিট কিনে দেন। কাউন্টার থেকে সামনের সিট ফাঁকা নাই বললেও, তাকে সামনে দিলেন কীভাবে? উত্তরে এনা পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা বলেন, আমাদের বাসে বিশেষ কিছু ব্যক্তির জন্য টিকিটের ব্যবস্থা থাকে।
সূত্র মতে, যাত্রী সেবায় অনেকেই অনলাইনভিত্তিক টিকিট সিস্টেম চালু করেছে। এরমধ্যে অন্যতম সহজ ডটকম, টিকিট বিডি, বাস বিডি। বেশিরভাগ বাসের টিকিট যাত্রীরা ঘরে বসেই ক্রয় করতে পারেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাত বা ছুটির দিনের আগের রাতের টিকিট পাওয়া যায় না অনলাইনে। পাওয়া গেলেও বসতে হয় পেছনের সিটে। তবে কি সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায় আগেই? একজন গাড়ির সুপারভাইজার বলেন, এসব দিনের টিকিট কাউন্টারের কর্তব্যরতরা কেটে ফেলে অনলাইনে এবং বাড়তি দামে বিক্রি করে।
এ ব্যাপারে হানিফ, নাবিল, শ্যামলী, দেশ, সাকুরা, গোল্ডেন লাইনের কাউন্টারের কর্তারা কিছু জানেন না বলে মন্তব্য করেন।
দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম লঞ্চ। বাসে বিশেষ দিনের বিশেষ সময়ের টিকিট গ্যাং-এর কথা উঠলেও দূরপাল্লার লঞ্চও এ থেকে মুক্ত নয়। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান নিলয়ের বাড়ি বরিশাল। প্রায়ই যাতায়াত করেন লঞ্চে। বলেন, লঞ্চে যেদিন একটু ভিড় থাকে সেদিন সুযোগ নেয় তারা। টিকিট কাউন্টারে গেলে টিকিট মেলে না। কিন্তু গ্যাং-এর কাছে ঠিকই পাওয়া যায় টিকিট। দ্বিগুণ দাম হাঁকে এবং উপায় না থাকায় কিনেও ফেলেন যাত্রীরা।
শিক্ষার্থী নিলয়ের কথা অনুযায়ী বরিশালগামী সুন্দরবন-১০ ও পটুয়াখালীগামী সুন্দরবন-৯ এবং কুয়াকাটা-১ লঞ্চে বিকাল চারটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত সরজমিন দেখা যায়, সুন্দরবন-১০ এ ডাবল কেবিন মিললেও মিলছে না সিঙ্গেল কেবিন। কিন্তু টিকিট কাউন্টার থেকে মুখ ফেরাতেই কানে এলো সিঙ্গেল কেবিন লাগবে? হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়াতেই, একটু পাশে নিয়ে গেলেন। দাম চাইলেন ১৮০০ টাকা। দরদামের পর ১৬০০ টাকায় দিতে রাজি হলেন। এমন দৃশ্য চোখে পড়ে পটুয়াখালীগামী দুটি লঞ্চেও। টিকিট কাউন্টারে এই গ্যাং-এর বিষয়ে জানতে চাইলে সুন্দরবন-১০ এর টিকিট মাস্টার বলেন, ব্যস্ত আছি পরে আসেন এবং কুয়াকাটা-১ লঞ্চের টিকিট মাস্টার শুনেও না শোনার ভান করে চলে যান। সুন্দরবন-৯ এর মাস্টার বলেন, আমাদের নানান দিকে ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই খোঁজ রাখার সময় পাই না। আর যখন টিকিট কাটতে আসেন যতক্ষণ টিকিট থাকে ততক্ষণ আমরা দেই। টিকিট কে নিলো সেটা আমাদের দেখার কথা নয়। টিকিট মাস্টারের সঙ্গে কথোপকথন শেষ করে যাবার সময় একজন কুলি ডেকে বলেন, তারা যাত্রীর চাপ বেশি দেখলে কেবিন রেখে দেয়। আর এই টিকিট গ্যাং-এর মাধ্যমে বিক্রি করে। এতে তারাও লাভবান হয়।
কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টার ঘুরে দেখা যায় একদিন পরের ট্রেন কিংবা রাতের ট্রেনের টিকিট সকালে অনায়াসেই পাচ্ছেন যাত্রীরা। তবে ট্রেন ছাড়ার আগ মুহূর্তে টিকিট শেষ হলে একজন কানের কাছে আস্তে করে বলেন ‘টিকিট লাগবে?’ সামান্য লাভেই বিক্রি করে দিচ্ছেন টিকিট। পূবালী ব্যাংকে কর্মরত আশরাফ খোকন বলেন, হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেই বাড়ি যাবো। তাই আগে থেকে টিকিট কাটতে পারিনি। এখানে এসেই পেয়ে গেলাম। চট্টগ্রাম যেতে শোভন চেয়ারের টিকিট মূল্য ৩৪৫ টাকা; আমি ৪০০ টাকা দিয়ে কিনেছি। সূত্র মতে, প্রতিটি টার্মিনাল এই গ্যাং-এর নিয়ন্ত্রণে। এ সিন্ডিকেটের ইশারায় চলে কাউন্টারগুলো। আর এতে যাত্রীরা হচ্ছেন হয়রানির শিকার।
No comments