কল্প গল্প: বলদের আত্মকথা by নাজমুস সাদাত পারভেজ
আমি
বলদ। হ্যাঁ, বলদ-ই আমার নাম। রঙচঙে পৃথিবীর এক জনবহুল, ঘটনাবহুল দেশের
মাটিতে আমার জন্ম। পূর্বপুরুষের রক্তের দামে নাকি এই মাটির মুক্তি কেনা
হয়েছিল। আমি পেয়ে গেছি বরের দানে। ইতিহাস বলতে আমি এইটুকু জানি। এরচেয়ে
বেশি জানি না। জানতে ইচ্ছেও করে না। কি হয় অতোসব জেনে? আমি কেবল ফায়দার কথা
ভাবি। চকচকা ফকফকা জীবন নিয়ে আমার যত ভাবনা। আমি আবিষ্কার করেছি-
দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ, দায়বোধ- এসব ভারি ভারি শব্দের আসলে জোর নেই। এসব করে
গলা ফাটিয়ে আখের গোছানো যায় না। আখের গোছাতে স্বার্থ চিনতে হয়। ঠিক বেঠিক
হিসাব করে জ্ঞানীরা। আমি বলদ। আমার হিসাব ভিন্ন। আমি খুঁজি সুবিধা। দিনে
খুঁজি। রাতে খুঁজি। খুঁজতে খুঁজতে টেকনাফ তেতুলিয়া এপার ওপার করে ফেলি।
হঠাৎ একদিন পথমাঝে এক মহাপুরুষের দেখা পাই। শিষ্যত্ব গ্রহণ করে খুলে বলি
মনের আকাঙ্ক্ষা। সব শুনে গুরুজী আমায় জবর কার্যকরী একখানা বুদ্ধি দেন।
বলেন, বেটা বলদ, তুই রাজনীতিতে নেমে পড়। আমি শুধাই, গুরুজী, রাজনীতি কেন?
গুরুজী জিজ্ঞেস করেন- স্বার্থ, সুবিধা, ক্ষমতা এসব দেখলে তোর চোখ কি
শেয়ালের মতো চকচক করে না। সাপের মতো লকলক করে না জিভ? আমি মুখ দিয়ে লোভের
লালা ঝরাতে ঝরাতে বলি- আজ্ঞে, হ্যাঁ গুরুজী! গুরুজী বললেন, সে জন্যই তো
তোকে বলছি। এদেশে রাজনীতি তোর মক্ষম মঞ্চ, যা। লুটেপুটে যা পারিস খা। আমি
খানিকটা চিন্তিত কণ্ঠে বললাম, কিন্তু গুরুজী, রাজনীতি নাকি জনকল্যাণের
জায়গা। সেখানে নাকি দেশের স্বার্থ দেখতে হয়। মানুষের সুবিধা ভাবতে হয়।
গুরুজী উত্তর দিলেন, ব্যাটা, তুই দেশের কথা ভাববি। জনগণের কথাও ভাববি। শুধু
‘কল্যাণ’টা নিজের করবি। দেশটাও তোর। মানুষও তোর। নিজের সুবিধামতো যখন
যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করবি। কে কি বলল না বলল, কার কি হলো না হলো- তাতে তো
তোর কিছু আসবে যাবে না। তুই হলি বলদ। সুবিধাবাদী বলদ। আহ! সেই থেকে আমার
দিব্যদৃষ্টি খুলে গেল। আটঘাট বেঁধে নেমে পড়লাম রাজনীতির ময়দানে। কোমর বেঁধে
ভাষণ দেই। আশ্বাস দেই। স্বপ্ন দেখাই মানুষকে। কখনো মিথ্যার মধ্যে সত্য,
কখনো সত্যের মধ্যে মিথ্যা মিশিয়ে। মানুষগুলোও অদ্ভুত! খালি স্বপ্ন দেখতে
থাকে আমলে আমলে, যুগে যুগে। কিন্তু খোয়াবনামা (স্বপ্নের অর্থ) জানে না।
জানতে চেষ্টাও করে না। আমি ধূসর বলদ এই সুযোগে রঙিন রঙিন ইতিহাসকে টুকরো
টুকরো করে কেটে কেটে খাই। ইতিহাসের খাম্বা দিয়ে সুবিধাযজ্ঞের মণ্ডপ সাজাই।
মাঝে মাঝে বেগ এলে লাল দালানের ‘সেপশাল সেল’-এ বিশ্রামে যাই। দুই-পাঁচদিন
পাবলিকের চেতন থাকে; তারপরে যা তাই।
আমি আছি বেজায় ভালো। বাপ দাদারা রক্ত দিয়ে শোষক তাড়িয়েছে। আর আমি রক্তচোষা ত্রাণকর্তা সবাইকে লুটেপুটে দেশপ্রেমের ডুগডুগি বাজাই। এই উল্টোরথ যাত্রা আমার বড় সুবিধার লাগে। আমার নাম যদিও বলদ, আদতে আমি বড়ই সেয়ানা।
পুনশ্চঃ আমার কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, বলদ যদি সেয়ানা হয়, তবে বোকা কে? উত্তরে বলেছিলাম: যারা আমলে আমলে যুগে যুগে খোয়াব দেখে। কিন্তু খোয়াবনামা জানে না। জানতে চায় না।
আমি আছি বেজায় ভালো। বাপ দাদারা রক্ত দিয়ে শোষক তাড়িয়েছে। আর আমি রক্তচোষা ত্রাণকর্তা সবাইকে লুটেপুটে দেশপ্রেমের ডুগডুগি বাজাই। এই উল্টোরথ যাত্রা আমার বড় সুবিধার লাগে। আমার নাম যদিও বলদ, আদতে আমি বড়ই সেয়ানা।
পুনশ্চঃ আমার কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, বলদ যদি সেয়ানা হয়, তবে বোকা কে? উত্তরে বলেছিলাম: যারা আমলে আমলে যুগে যুগে খোয়াব দেখে। কিন্তু খোয়াবনামা জানে না। জানতে চায় না।
No comments