শোচনীয় বায়ুদূষণ
যুক্তরাষ্ট্রের
পরিবেশ সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থা ইপিএর প্রতিবেদনে বিশ্বের দূষিত বায়ুর
দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের যে অবস্থানের কথা বলা হয়েছে, তা সত্যিই
উদ্বেগজনক। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাতাস দূষিত এমন দেশগুলোর মধ্যে
বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গত এক
যুগে ৫৪ ধাপ নিচে নেমেছে। শুধু ইপিএর প্রতিবেদনেই নয়, অন্যান্য সংস্থার
করা জরিপ বা গবেষণার ফলাফলে বাংলাদেশের বায়ু পরিস্থিতির প্রায় একই ধরনের
চিত্র পাওয়া যায়। বোস্টনভিত্তিক হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউটের বৈশ্বিক বায়ু
পরিস্থিতি ২০১৭ প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি বায়ু দূষিত শহরের তালিকায়
ঢাকার স্থান দ্বিতীয়। এতেই বোঝা যায়, বায়ুদূষণ নিয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের
খুব একটা মাথাব্যথা নেই। মাথাব্যথা থাকলে দেশের বায়ুদূষণের মাত্রা এতটা
খারাপ পর্যায়ে পৌঁছাত না। পরিবেশ অধিদপ্তরের মতে, ঢাকার আশপাশসহ দেশের
বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ইটভাটা। এসব ইটভাটা বায়ুদূষণের জন্য ৫৮
শতাংশ দায়ী। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ফসলি জমি ও আবাসিক এলাকায় গড়ে
তোলা হচ্ছে এসব ইটভাটা। ইটভাটাগুলোতে বেআইনিভাবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ফলে
দূষিত হচ্ছে বায়ু। ছাড়পত্রবিহীন এসব ইটভাটা নিয়ন্ত্রণে সরকারের সে অর্থে
তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। বায়ুদূষণের কারণগুলোর মধ্যে ইটভাটার পরই রয়েছে
ধুলাবালি। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ভবন।
কিন্তু এসব স্থাপনা তৈরির সময় মানা হচ্ছে না ইমারত নির্মাণবিধি। ভবন তৈরির
সময় সেগুলো কোনো কিছু দিয়ে ঢেকে দেওয়া বা পানি ছিটিয়ে কাজ করার প্রবণতা
একদম নেই। এসব তদারকের কার্যকরী ব্যবস্থা বা নীতিমালার অভাবও লক্ষণীয়। ফলে
ধুলা উড়ছে বাতাসে। দূষিত হচ্ছে বায়ু। এ ছাড়া ফুটপাতের উন্নয়ন, ইউলুপ ও
উড়ালসেতু নির্মাণ, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্য খোঁড়াখুঁড়ি তো চলছেই। এসব
উন্নয়ন প্রত্যাশিত হলেও দেখা যায় কোনো কাজই নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না। ফলে
বায়ু দূষিত হচ্ছে।
ঢাকা শহরসহ অন্যান্য বড় শহরে অনেক সময় দেখা যায়, ড্রেনের
ময়লাগুলো রাস্তার পাশে জমিয়ে রাখা হয়। একসময় এগুলো শুকিয়ে ধূলিকণায় পরিণত
হয় এবং পরিবেশ দূষিত করে। আবার সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িগুলো ময়লা বহনের
সময় অধিকাংশ সময় না ঢেকেই বহন করে, ফলে বায়ুদূষণ হয়। বোঝাই যাচ্ছে
বায়ুদূষণের পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। ফলে এই সমস্যা সমাধানে একটি
সামগ্রিক চিন্তা ও পরিকল্পনা জরুরি। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও কর্তৃপক্ষ
সমন্বিতভাবে কোনো উদ্যোগ নিতে না পারলে পরিস্থিতি সামনের দিনগুলোতে ভয়াবহ
আকার ধারণ করবে। দূষিত বায়ু জনস্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। বিশ্ব
স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ধূলিকণা মানবদেহের ভেতরে ঢুকে ফুসফুসে গেঁথে থাকে
এবং একনাগাড়ে এসব উপাদানের ভেতর দিয়ে চলাচল করলে হৃদ্রোগ, হাঁপানি ও
ফুসফুসের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বায়ুদূষণ রোধসহ পরিবেশ রক্ষায়
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের আওতায় পরিবেশ অধিদপ্তর
‘নির্মল বায়ু এবং টেকসই পরিবেশ প্রকল্প’ বাস্তবায়নের পথে থাকলে শুধু এই
প্রকল্প দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। যেসব সুনির্দিষ্ট কারণে বায়ুর
দূষণ হচ্ছে সরকারকে সেসব দিকে মনোযোগ দিতে হবে। সনাতন পদ্ধতির
ইটভাটাগুলোকে জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব ইটভাটায় রূপান্তর করা গেলে
৭০ থেকে ৮০ শতাংশ দূষণ কমানো সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের মতামত, জনগণকে সম্পৃক্ত
করে সুপারিশমালা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন শুরু করলে এ দেশের বায়ু দূষণমুক্ত হবেই
হবে। এ জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ
করতে হবে।
No comments