ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের রায়
দক্ষিণ
ভারতের কাবেরী নদীর পানিবণ্টন মামলায় ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের রায়টি
নিঃসন্দেহে সুবিবেচনাপ্রসূত ও মানবকল্যাণকর। এই রায়ে বলা হয়েছে- নদী কারও
একার নয়, কোনো রাজ্য নদীর পানির অধিকার একা ভোগ করতে পারে না। বলাবাহুল্য,
ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের এই রায় তিস্তা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে যে অচলাবস্থা
চলছে দীর্ঘদিন থেকে, তা দূর করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। তিস্তার পানিবণ্টন
নিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের টানাপোড়েন চলছে। বস্তুত পশ্চিমবঙ্গের
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তির কারণেই তিস্তার পানিবণ্টন বিষয়ে
দু’দেশের মধ্যে চুক্তি সম্পাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। মমতা ব্যানার্জি ভারতীয়
সংবিধানের দোহাই পেড়ে বলেছিলেন, যুক্তরাজ্য কাঠামোয় কৃষকদের স্বার্থে
তিস্তার পানি ইস্যুতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অধিকারকে গুরুত্ব দিতে হবে। তার এ
বক্তব্যের পর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানি নিয়ে
চুক্তি করতে পারছে না। গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময়ও
চুক্তির ব্যাপারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আশাবাদ ব্যক্ত
করেছিলেন; কিন্তু মমতা ব্যানার্জির আপত্তির কারণে তা এখনও সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের রায়ের পর এবার নিশ্চয়ই দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার মমতা
ব্যানার্জিকে বাস্তবতা উপলব্ধি করাতে সক্ষম হবে এবং তাহলেই দুই দেশের
মধ্যে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। উপরন্তু, সুপ্রিমকোর্টের রায়ের
পরও যদি পশ্চিমবঙ্গ সরকার গোঁ ধরে থাকে, তাহলেও রায়ের সুবাদেই কেন্দ্রীয়
সরকারের চুক্তি করতে কোনো বাধা থাকবে না। আমরা আশা করব, মমতা ব্যানার্জি
তার দেশের সুপ্রিমকোর্টের রায়টি হৃদয়ঙ্গম করে তার পুরনো অবস্থান থেকে সরে
আসবেন। তিনি এতদিন যে অবস্থানে অনড় ছিলেন, তা মোটেও যুক্তিসঙ্গত নয়।
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ীও কোনো একক দেশ সতত প্রবহমান নদীর পানির ওপর
একচেটিয়াত্ব আরোপ করতে পারে না। প্রকৃতি প্রদত্ত পানির ওপর সবারই অধিকার
রয়েছে। বাংলাদেশ ভাটিতে অবস্থান করছে বলে তিস্তার উজানের পানি আটকে দেয়ার
অধিকার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের থাকতে পারে না। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার
প্রশ্নটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সুসম্পর্কের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের অকৃত্রিম সহযোগিতার জন্য এ
দেশবাসী সেদেশের সরকার ও জনগণের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। তাদের অবদানের কথা আমরা
সবসময়ই স্বীকার করে থাকি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, অন্য কোনো ন্যায়সঙ্গত
ইস্যুতে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে বৈরী আচরণ করবে। তাছাড়া ভারতের কেন্দ্রীয়
সরকার যেখানে তিস্তার পানিবণ্টন ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রতি সংবেদনশীল,
সেখানে একটি রাজ্য সরকারের ভিন্ন অবস্থান কাম্য হতে পারে না। আমরা ভারতীয়
সুপ্রিমকোর্টের রায়কে স্বাগত জানাই। এই রায় তিস্তা ইস্যুতে দেশটির
কেন্দ্রীয় সরকারের হাতকে শক্তিশালী করবে নিশ্চয়ই। কেন্দ্রীয় সরকারের এখন
উচিত হবে, ইস্যুটি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে
সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছে তা কার্যকর করা। আমরা মনে করি, তিস্তার
পানিবণ্টন ইস্যুতে একটি ন্যায়সঙ্গত সমাধানে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ
সৃষ্টি হয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।
No comments