ঠিকানায় নেই অভিযুক্তরা
পানামা,
অফশোর ও প্যারাডাইস পেপারসে বিভিন্ন সময়ে নাম আসা বাংলাদেশি নাগরিকেরা
অর্থ পাচারের সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করছেন না। কর ফাঁকির
স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অফশোর কোম্পানি খুলতে
বাংলাদেশি নাগরিকেরা এ দেশের যে ঠিকানা দিয়েছেন, সেখানে গিয়ে অধিকাংশ
ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি। যে দু-একজনকে পাওয়া গেছে তাঁদের ভাষ্য, কোনোভাবেই
তাঁরা অর্থ পাচারের মতো কাজের সঙ্গে যুক্ত নন। প্যারাডাইস পেপারসের মাল্টা
কেলেঙ্কারিতে নতুন করে আসা ২০ জন বাংলাদেশির ঠিকানা ধরে গত তিন দিন তাঁদের
সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে প্রথম আলো। এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামের নয়জন
ব্যক্তির ঠিকানায় সরাসরি যাওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে ঢাকায় ও চট্টগ্রামের দুই
ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়। বাকি সাতজনকে তাঁদের ঠিকানায় পাওয়া
যায়নি। এই সাত ব্যক্তি হলেন মাহতাবা রহমান, ফারহান আকিবুর রহমান, খন্দকার
আসাদুল ইসলাম, আমানুল্লাহ চাগলা, ফজলে এলাহী চৌধুরী, জুলফিকার আহমেদ, এরিক
জোহান এনডারস উইলসন। তালিকায় নাম থাকা বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের
বিরুদ্ধে সন্দেহজনক লেনদেনের জন্য তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন,
বিভিন্ন দেশে এসব তালিকায় যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে
অনেক ক্ষেত্রেই দোষ প্রমাণিত হয়েছে। তালিকায় নাম আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের
বিরুদ্ধে তদন্ত করার তাই যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে। শাহদীন মালিক আরও বলেন,
যারাই করুক,
বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার যে হচ্ছে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এ
বিষয়ে সংসদে আলোচনা হতে পারে, সরকার আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিতে পারে। কিন্তু
এসবের কোনোটাই করা হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক
সাংবাদিকদের জোট দ্য ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ
জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) ‘প্যারাডাইস পেপারস’ কেলেঙ্কারির সাম্প্রতিক তথ্যে
২০ বাংলাদেশি নাগরিকের নাম আসে। এসব ব্যক্তির কেউ নিজের নামে, কেউ
ভিনদেশির নামে, কেউ আবার দেশ-বিদেশের একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে
মিলে মাল্টায় কোম্পানি খুলেছেন। তাঁরা শিপিং, বস্ত্র, তথ্যপ্রযুক্তি,
শিক্ষা ও শেয়ারবাজার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আইসিআইজের তথ্য পর্যালোচনা করে
দেখা গেছে, ১৯৯৩ থেকে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে দক্ষিণ ইউরোপের
দ্বীপরাষ্ট্র মাল্টায় কোম্পানিগুলো খোলা হয়। মূলত অর্থ পাচারের জন্যই এভাবে
কোম্পানি খোলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ও সুইডেনের নাম উল্লেখ করে প্যারাডাইস
পেপারসে নাম আসা এরিক জোহান এনডারস উইলসনের খোঁজ জানতে গতকাল রোববার ঢাকার
উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর সড়কের একটি বাসায় যান এ প্রতিবেদক। ওই
বাসায় গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। বাড়িটির প্রহরী মকবুল হোসেন জানান, এরিক
জোহান এনডারস উইলসন এই বাসায় ভাড়া থাকতেন। পাঁচ থেকে ছয় বছর আগেই এরিক
জোহান এই বাসা ছেড়ে চলে গেছেন। ডব্লিউএমজি লিমিটেড নামের মাল্টায় নিবন্ধিত
একটি কোম্পানির শেয়ারধারী হিসেবে এরিক জোহানের নাম আইসিআইজের তালিকায়
এসেছে। ২০০৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর এ কোম্পানির নিবন্ধন করা হয়।
No comments