মিয়ানমারের সঙ্গে ইইউর সম্পর্ক বিবেচনার আহ্বান
মিয়ানমারের
সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একটি প্রতিনিধিদল। মিয়ানমার সফর শেষে ফিরে গিয়ে এক
বিবৃতিতে এই আহ্বান জানিয়েছে প্রতিনিধিদলটি। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই
প্রতিনিধিদল প্রথমে বাংলাদেশ সফর করে। ১১ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই
সফরে তারা কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে
ঢাকায় একটি সংবাদ সম্মেলনও করে তারা। এরপর ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত
তারা মিয়ানমার সফর করে। এ দলে ছিলেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক
উপকমিটির (ডিআরওআই) সদস্যরা। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের পররাষ্ট্রবিষয়ক ও
বাণিজ্যবিষয়ক কমিটির সদস্যরাও ছিলেন প্রতিনিধিদলটিতে। এ ছাড়া তাঁদের সঙ্গে
যোগ দেন আসিয়ানের একটি প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। বিবৃতিতে প্রতিনিধিদলটি
বলেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে
রোহিঙ্গারা গণহারে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতির উন্নয়নে
দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করা ইইউর জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে। একই
সঙ্গে মিয়ানমারের ব্যাপারে প্রতিটি খাতে নতুন করে নীতিও প্রণয়ন করতে হবে।
বিবৃতিতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদলটি বলেছে, ‘আমাদের দৃষ্টিতে
মিয়ানমারের স্বার্থে জনগণের কল্যাণে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক সংস্কারের
গতি দ্রুততর করতে হবে।’ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে
গত ২৩ নভেম্বর স্বাক্ষরিত চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের ওপরও গুরুত্বারোপ
করেছে দলটি। একই সঙ্গে এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের শরণার্থী
সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) বলিষ্ঠ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করারও আহ্বান জানানো হয়েছে
বিবৃতিতে।
রাখাইন রাজ্যে গত আগস্টের পর থেকে যে নৃশংস ঘটনাগুলো ঘটেছে,
সেগুলোর স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্তেরও আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয়
পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদলটি। প্রতিনিধিদলটির প্রধান পিয়ের আন্তোনিও
পানজেরি বলেন, মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট
উদ্বিগ্ন। ওই সফরের পরও উদ্বেগ রয়ে গেছে। কারণ, দেশটির বিভিন্ন এলাকায়
মানবাধিকার সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও
জাতিগত নৃগোষ্ঠী এতে আক্রান্ত হচ্ছে। মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিকেরাও রেহাই
পাচ্ছেন না। মিয়ানমার সফরে গিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদলটি
সেখানকার নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সংগঠন এবং ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে। এ
সময় মিয়ানমার গণতন্ত্রে উত্তরণের ক্ষেত্রে যেসব জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি
হচ্ছে, তা উঠে আসে। প্রতিনিধিদলটি মিয়ানমারের প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ বেশ
কয়েকজন মন্ত্রী ও পার্লামেন্টের সদস্যদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করে।
প্রতিনিধিদলটি বলেছে, মিয়ানমারের বর্তমান অবস্থা সেখানে গণতন্ত্রে উত্তরণের
বিষয়ে তাদের আত্মবিশ্বাসী করতে ব্যর্থ হয়েছে। চলমান প্রক্রিয়া আরও ধীর হয়ে
এসেছে বলে তাঁরা লক্ষ করেছেন।
No comments