মিয়ানমারে কার সাহস আছে মুখ খোলার
মিয়ানমারে
গণমাধ্যম স্বাধীনতার টুঁটি চেপে ধরে রেখেছে নামে গণতান্ত্রিক অং সান সু চি
সরকার। দেশটির গণমাধ্যম এখনও স্বৈরাচারী যুগে পড়ে রয়েছে। সরকারবিরোধী কোনো
প্রতিবেদন হলেই কারাগারে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে অথবা মামলার বোঝা চাপিয়ে দেয়া
হচ্ছে। এতে স্পষ্ট যে, মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে বন্ধ
হয়ে আসছে। একসময় স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়া সু চিই এখন স্বৈরাচার আচরণ
করছেন। মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে কারও মুখ খোলার সাহস নেই। গত ১২
ডিসেম্বর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে আটক
করেছে। তারা হলেন ওয়া লোন এবং কিয়াও সোয়ে। রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা লঙ্ঘনের
অভিযোগে তারা আটক হওয়ার পর থেকেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিষয়টি বেশ আলোচিত
হয়েছে। মিয়ানমার সরকার বলছে, ওই সাংবাদিকরা অতি গোপন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ
করেছিল, যা দেশটির সম্মান ক্ষুণ্ণ করবে। সে কারণে তাদের বিচার হওয়া দরকার।
সুইডেনের একটি সাময়িকীর জন্য রোহিঙ্গা ইস্যুতে কাজ করছিলেন ওই দুই
সাংবাদিক। তাদের তৈরি করা প্রতিবেদনে ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যার বিষয়ে বিস্তারিত
তুলে ধরা হয়। দ্য ডিপ্লোম্যাট ম্যাগাজিন বলছে, ওয়া লোন এবং কিয়াও সোয়ে
সত্য বলতে কখনও ভিতু ছিলেন না।
২০১২ সাল থেকে একসঙ্গে বিভিন্ন গবেষণা
প্রতিবেদন নিয়ে কাজ করেছেন দুই বন্ধু। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর
সেনাবাহিনীর বর্বরতা নিয়ে করা প্রতিবেদন তাদের সম্মান দিয়েছে। আন্তর্জাতিক
অঙ্গনে পেয়েছেন স্বীকৃতি। ২০১৬ সালে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে
এশিয়ার প্রকাশনা সোসাইটি থেকে সম্মাননা পেয়েছেন ওয়া লোন। কিয়াও সোয়ে নিজেই
রাখাইনের বৌদ্ধ নাগরিক। রাখাইন রাজ্যের নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত
নিয়ে কাজ করেন তিনি। কিন্তু মিয়ানমারে সত্য নিয়ে কাজ করার জন্য প্রতিহিংসার
মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়। ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৯ জন সাংবাদিককে গ্রেফতার
করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৩ সালের টেলিযোগাযোগ আইনের ৬৬(ঘ) ধারা অনুসারে ২১
সাংবাদিকের ওপর অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। ৬৬(ঘ) ধারায় বলা হচ্ছে, মানহানিকর,
অপমানজনক, কোনো ব্যক্তিকে হুমকি দিতে বা সরকারি গোপন বিষয়ে প্রতিবেদন
প্রকাশের অভিযোগে সাংবাদিক এবং অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টকে তিন বছরের কারাদণ্ড
ভোগ করতে হবে। মিয়ানমারে স্বৈরশাসক আমলে গণমাধ্যমকে যেভাবে দমন করে রাখা
হয়েছিল, গণতান্ত্রিক সরকার এসেও একই ধারা অব্যাহত রয়েছে।
No comments