ইরানে হালাল ইন্টারনেট
ইরানের
নাগরিকদের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর অনেক বিধিনিষেধ রয়েছে। সরকার
মুক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করার পাশাপাশি নাগরিকদের
জন্য তৈরি করেছে একটি বিশেষ ইন্টারনেট ব্যবস্থা যেটিকে বলা হচ্ছে ‘হালাল’
বা বৈধ ইন্টারনেট। সে কারণে ইরানি জনগণের জন্য মুক্ত তথ্যপ্রবাহের সুবিধা
ভোগ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবাধ বিচরণ করা সম্ভব হচ্ছে না অভিযোগ রয়েছে।
গত কয়েক বছরে ইরানের সরকার নাগরিকদের ইন্টারনেট সংযোগসহ মোবাইল ফোন
ব্যবহারের বিষয়ে উদার হলেও বিষয়টি সরকারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি
করেছে। এ বছরের শুরুতে যে আন্দোলন হয়েছে দেশটিতে তার পেছনেও বড় অবদান ছিল
স্মার্ট ফোনের। আন্দোলন ঠেকাতে সরকার একপর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও
জনপ্রিয় একটি মেসেজিং অ্যাপ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। মূলত এ ধরনের
পরিস্থিতির কথা চিন্তা করেই চালু করা হয়েছে তথাকথিত ‘হালাল’ ইন্টারনেট।
২০০৯ সালে ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের আগেই ইউটিউব নিষিদ্ধ ছিল। ২৬ বছর
বয়সী তরুণ নেদা আঘা সুলতানের গুলিতে নিহত হওয়ার ভিডিও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে
পড়লে সরকার আরো কঠোর হয়ে ওঠে। ওই বিক্ষোভের পর ফেসবুক, টুইটারসহ অনেক
সামাজিক যোগাযোগ ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে অনেক ইরানি ভার্চুয়াল
প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএনের মাধ্যমে সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইন্টারনেট
ব্যবহার করে। তবে ২০০৯ সালের সাথে এখনকার সময়ের পার্থক্য হলো এখন স্মার্ট
ফোনের যুগ। এখন কমপক্ষে চার কোটি ৮০ লাখ ইরানি নাগরিকের হাতে স্মার্ট ফোন
রয়েছে।
স্মার্ট ফোন ব্যাবহারে এই বিপ্লবের পেছনে ইরানের বর্তমান
প্রেসিডেন্ট ও অপেক্ষাকৃত উদার নেতা হাসান রুহানির প্রশাসনের একটি ভূমিকা
ছিল। তার সময়ই দেশটিতে থ্রি-জি ও ফোর জি ইন্টারনেট সার্ভিস চালু হয়েছে।
বাসাবাড়িতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতিও বেড়েছে অনেক। এর ফলে দেশটিতে
টেলিগ্রাম নামে একটি বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপস ব্যাপকহারে জনপ্রিয়তা লাভ
করেছে। চার কোটির বেশি লোক এটি ব্যবহার করে বলে জানা গেছে। চলতি বছরের
শুরুতে ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সময় বিক্ষোভকারীরা এই অ্যাপসটি ব্যবহার
করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করেছে। এর ফরে সরকার অস্থায়ীভাবে টেলিগ্রাম ও
ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। তবে টেলিগ্রাম ব্যবহারের ফলে ব্যাপক
ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো, যারা এটি ব্যবহার করে তাদের
পণ্যে প্রচারের কাজে। তবে প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি প্রাত্যহিক জীবনের
প্রয়োজনীয় একটি জিনিস ব্যবহার নিষিদ্ধ করার বিষয়টিকে যুক্তিযুক্ত মনে করেন
না। রুহানি বলেন, ব্লক করে নয় বরং ইন্টারনেটকে সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় করে
তুলতে হবে। ২০১১ সালে ইরান নাগরিকদের জন্য হালাল বা অনুমোদন যোগ্য
ইন্টারনেট নামক একটি ধারণা নিয়ে আসে জনগণের সামনে। ন্যাশনাল ইনফরমেশন
নেটওয়ার্ক নামে একটি সেবার আওতায় সরকার অনুমোদিত ৫০০ ওয়েবসাইট রয়েছে সেখানে
যেগুলো বিদেশী ওয়েবসাইটের তুলনায় অনেক বেশি দ্রুতগতি সম্পন্ন। ইচ্ছে করেই
বিদেশী ওয়েবসাইটগুলোর গতি কমিয়ে দিয়েছে ইরানি কর্তৃপক্ষ।
No comments