ইন্দোনেশীয় প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর
রোহিঙ্গা
সংকট নিরসনে আসিয়ান সদস্যভুক্ত ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো
উইদোদোর আন্তরিক ইচ্ছা প্রকাশ করার বিষয়টিকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে
বিবেচনা করতে চাই। যেসব বন্ধুপ্রতিম দেশকে রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশ তার
পাশে পেয়েছে, ইন্দোনেশিয়া তার একটি। অন্যতম বৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে
তাদের জনগণের মধ্যে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা লাঘবে বিরাট সহমর্মিতা রয়েছে।গত
সেপ্টেম্বরে দেশটির বিদেশমন্ত্রী রেত্নো মারসুদি মিয়ানমারের নেত্রী অং সান
সু চি ও শীর্ষ জেনারেলের সঙ্গে আলোচনা শেষে ঢাকা সফর করেছিলেন। মিয়ানমারে
যাওয়ার আগে তিনি দেশটির শীর্ষস্থানীয় ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গেও বৈঠকে
বসেছিলেন। যদিও সফরটি দ্বিপক্ষীয় নিয়মিত বৈঠকের অংশ, কিন্তু তাঁর সফর র
োহিঙ্গা সংকটের ওপর বিশেষভাবে আলো ফেলেছে। রোহিঙ্গা সংকট একটি
আন্তর্জাতিক মানব বিপর্যয়। এটা লক্ষণীয় যে গণহত্যার শিকার হওয়া একটি
জনগোষ্ঠীর ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হলেও সরেজমিনে এ পর্যন্ত বিদেশি
রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের ছুটে আসা বিরল থেকে গেছে। সেদিক থেকেও
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের সরেজমিনে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন
খুবই ইতিবাচক ঘটনা।জাকার্তার সরকার নিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থা বলেছে,
ইন্দোনেশীয় নেতা ঢাকায় ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তিতে’ দ্রুত রোহিঙ্গা
সংকট সমাধানে গুরুত্বারোপ করেছেন। এ কথা তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উল্লেখ করেছেন বলে পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হকও
সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। আমরা অবশ্যই জাকার্তার এই দৃষ্টিভঙ্গির যৌক্তিকতা
খুঁজে পাই এবং বাংলাদেশ সেই লক্ষ্যেই ইতিমধ্যে প্রত্যাবাসন চুক্তি করেছে।
কিন্তু চুক্তির বাস্তবায়ন ও তার ফলাফলের দিকে ইন্দোনেশিয়ার মতো অকৃত্রিম
ভ্রাতৃপ্রতিম রাষ্ট্রের নজর থাকবে সেটা আমাদের প্রত্যাশিত। এতে সন্দেহ
সামান্য যে শুধু দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে ‘দ্রুত’ কিংবা কোনো ‘চিরস্থায়ী’
সমাধানের আশা সুদূরপরাহত। এটা গুরুত্বপূর্ণ যে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল
গত নভেম্বরে এক বিবৃতিতে বলেছিল, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ইন্দোনেশিয়ার
‘ক্ষমতা’ রয়েছে। তারা তাদের ‘কৌশলগত ভূমিকা’ পালন করতেও আহ্বান জানিয়েছিল।
আমরা বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে চাই। এ প্রসঙ্গে
অ্যামনেস্টির ইন্দোনেশীয় পরিচালক হামিদ উসমানের বক্তব্যকেও আমরা স্মরণ
করতে পারি। তিনি বলেছিলেন, জাকার্তার উচিত হবে এই সমস্যা মোকাবিলায়
আসিয়ানের একটি জরুরি বৈঠক ডাকার ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়া। আমরা মনে করি, এর
প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়নি। ইন্দোনেশীয় প্রেসিডেন্ট আশ্বস্ত করেছেন যে
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে তাঁর সরকার এই সংকট নিরসনে ভূমিকা
রাখবে।তাঁর সফরকালে পাঁচটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হওয়া ইঙ্গিত করে যে
ঢাকা-জাকার্তা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উত্তরোত্তর এগিয়ে নিতে দুই দেশের মধ্যে
চমৎকার রাজনৈতিক বোঝাপড়া প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ সফরের জন্য
প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোকে আমরা অভিবাদন জানাই।
No comments