শহরে শব্দসন্ত্রাস
১৯৯৭
সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে শহরকে পাঁচ ভাগে ভাগ করে শব্দের মাত্রা বেঁধে
দেওয়া হলেও সেটি কেউ মানছেন বল ে মনে হয় না। শহরে শব্দের মাত্রা বেঁধে
দেওয়া হয়েছে যথাক্রমে আবাসিক এলাকায় ৫০ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় ৭০
ডেসিবেল, শিল্প এলাকায় ৭৫ ডেসিবেল, নীরব এলাকায় ৪৫ ডেসিবেল, আবাসিক কাম
বাণিজ্যিক এলাকায় ৬০ ডেসিবেল এবং রাতেরজন্য সর্বত্র ১০ ডেসিবেল। কিন্তু
রাজনৈত িক মঞ্চ থেকে সামাজিক অনুষ্ঠান—সর্বত্র উচ্চস্বরে মাইক বাজানো
হচ্ছে।পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে শব্দদূষণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে সম্প্রতি
একজন হৃদ্রোগীকে জীবন দিতে হয়েছে। এ রকম জীবনঘাতী ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সে
জন্য নাগরিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগের বিষয়ে এগিয়ে আসতে
হবে সরকার তথা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে।গত শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স
ইউনিটিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনসহ কয়েকটি সংস্থা আয়োজিত আলোচনা সভায় যেসব
সুপারিশ করা হয়েছে, সেগুলো শব্দদূষণ বন্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বঁাধবে কে? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
মতে, ‘৬০ ডেসিবেল শব্দে মানুষের সাময়িক শ্রবণশক্তি নষ্ট হতে পারে আর ১০০
ডেসিবেল শব্দে মানুষ চিরতরে শ্রবণশক্তি হারাতে পারে।
অথচ ঢাকায় শব্দদূষণের
মাত্রা তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। আইন অনুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,
সরকার–নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত এলাকাকে নীরব
এলাকা চিহ্নিত করা হলেও তা মানা হচ্ছে না। এর পাশাপাশি হাইড্রোলিক হর্নের
ব্যবহারও বাড়ছে, যা আইনত নিষিদ্ধ।স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, শব্দদূষণ
যেকোনো মানুষের জন্য ক্ষতিকর হলেও এতে শিশু ও নারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত
হচ্ছে। এ ছাড়া ট্রাফিক পুলিশ, রিকশা বা গাড়িচালক, রাস্তার নিকটস্থ শ্রমিক
বা বসবাসকারী মানুষ অধিক হারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাজধানীতে বসবাসরত
মানুষের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি লাঘবে নীরব ঘাতক শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে এখনই
কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। আর যাঁরা আইন মানবেন না, তাঁদের
শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
No comments